রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৩

দুর্নীতিবাজরাই ভয় করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে


পাশ্চাত্যের নেতৃত্ব মুসলিম দেশগুলোর সাথে যত সম্প্রীতি ও সুসম্পর্কই বজায় রাখুক না কেন, এ ব্যাপারে তারা সকলেই একমত যে, কোনো মুসলিম দেশকে ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দেয়া যাবে না। এই উদ্দেশ্যে তাদের যত প্রকার অস্ত্র আছে তার সবকিছুই তারা প্রয়োগ করে থাকে। তারা প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রে প্রথমে তাদের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা-সংস্কৃতিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমমনাদেরই ইসলাম ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে কাজে লাগায়। স্থানীয় ঐসব লোক সংশ্লিষ্ট দেশের শিক্ষার বিভিন্ন মাধ্যম সাহিত্য-সাংবাদিকতা, গল্প-কবিতা, নাটক-উপন্যাস, চলচ্চিত্র, টিভি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সামনে ইসলাম, তার আদর্শ, শিক্ষা, মূল্যবোধ, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করার কাজ করে। অপরদিকে তাদের দিয়েই যুব সমাজ ও রাজনৈতিক মহলকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের দীক্ষায় দীক্ষিত করতে সচেষ্ট থাকে।
ইসলামী ভাবধারা বিরোধী এই বহুমুখী কার্যক্রম যাতে অব্যাহত থাকে এ জন্য তারা নানা নামে, নানা পথে আর্থিক, নৈতিক ও অন্যান্য উপায়ে এদের পরোক্ষ মদদ যুগিয়ে যায়। বলাবাহুল্য, প্রত্যেক মুসলিম রাষ্ট্রে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা চালু এবং এর ভিত্তিতে এভাবে সমাজ ও রাষ্ট্র নেতৃত্বদানের উপযোগী লোক তৈরি করতে পারা, অপরদিকে ধর্মীয় মহলকে যুগ চাহিদার উপযোগী শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান লাভের অনুভূতি থেকে সুকৌশলে দূরে রাখা। পাশ্চাত্য শক্তি ও সভ্যতার একটি মস্তবড় সাফল্য। তবে ইসলাম বৈরীদের এ সাফল্য সত্ত্বেও মুসলিম ধর্মীয় মহল শত শত প্রতিকূলতার মাঝেও কোনো দেশে তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় মাদরাসা, মক্তব, ওয়াজ-নসীহত, খানকাহ, পীর-মুরিদ ইত্যাদি উপায়ে ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধের দ্বারা জনগণের মধ্যে অসম্পূর্ণ হলেও ধর্মীয় চেতনা বজায় রাখতে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে আসছে। যদ্দরুন ঐসব দেশের মসজিদগুলোতে এখনো আযানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় কাজ-কর্মগুলো চলছে।
এসব দেশেরই কোনো কোনোটিতে কোনো ধর্মীয় চেতানসম্পন্ন শাসক ক্ষমতায় বসলে এবং প্রশাসনেও ধর্মীয় ভাবধারা দেখলে অথবা সাধারণ নির্বাচনে কোনো কারণে ধর্মীয় মহল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হয়ে গেলে, তখনই ইসলামের আন্তর্জাতিক বৈরী শক্তিগুলোর চোখ হয় চড়কগাছ। তারা তখন সে দেশে তাদের সমমনা সেনাবাহিনী দ্বারা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্বাচিত ধর্মীয় নেতৃত্বের ক্ষমতায় আসার পথে প্রচ- বাধার প্রাচীর দাঁড় করায়। অপরদিকে প্রশাসনযন্ত্রে একই মতের আমলাদের দ্বারা ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকে জোরদার করে। শুধু তাই নয়, ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তা দ্বারা তখন ইসলামী নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ওপর জুলুম-নিপীড়নের স্টিম রোলার চালায়। এভাবে নির্বাচিত দলের নেতা-কর্মী এবং তাদের নির্বাচকম-লী যখন নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন ও সংগ্রামে লিপ্ত হয়, তখন তাদের সন্ত্রাসী চরমপন্থী, দুষ্কৃতকারী, শান্তি ভঙ্গকারী, মৌলবাদী ইত্যাদি অভিধায় আখ্যায়িত করে দুনিয়াবাসীকের তারা ধোঁকা দিতে চায়।
ইসলামের আন্তর্জাতিক বৈরী শক্তিগুলো নেপথ্যে থেকে এভাবে প্রত্যেক মুসলিম দেশে তাদের স্থানীয় এজেন্টদের দ্বারা মুসলিম দেশসমূহে উত্থিত ধর্মীয় রাজনৈতিক মুক্তির বিরুদ্ধে দমননীতি চালিয়ে কিংবা অর্থ বিলিয়ে তাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে দিতে চায়। এটা করতে গিয়ে এসব অপশক্তি নিজেদের বহু বিঘোষিত গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সহনশীলতা, মানবাধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা সকল নীতিকথা সম্পূর্ণরূপে ভুলে যায়। তাই তাদের এসব নীতিকথা আজ সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে ভ-ামিরূপেই চিহ্নিত হচ্ছে।
যেসব মুসলিম দেশের শাসক এবং প্রশাসনযন্ত্রের সেখানকার ইসলামী জনতার আকাক্সক্ষা অনুযায়ী ধর্মীয় ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে নিজেদের দেশকে ইসলামের নীতিমালার ভিত্তিতে কল্যাণ রাষ্ট্র করতে উদ্যোগ নেয়। সেখানে স্থানীয় এজেন্টদের দ্বারা ইসলামের বিরোধিতায় তেমন সফলতার সম্ভাবনা না থাকলে তারা তখন সে দেশের সম্প্রদায় বা দল, উপ-দলকে পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে সাহায্য করে। শিয়া-সুন্নী বা মুসলিম-অমুসলিমদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উস্কানি দেয়। দেশের কোথাও সংখ্যালঘু কোনো সম্প্রদায়ের প্রাধান্য থাকলে তাদের সেখানে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। তাদের গোপনে অস্ত্রশস্ত্র পর্যন্ত সরবরাহ করে। ঐ দেশটিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে একঘরে করে রাখতে চায়। তাতেও কাজ না হলে সীমান্ত সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী কোনো প্রতিবেশী দেশকে সংশ্লিষ্ট ইসলামী দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক তৎপরতা শুরু করার সংকেত দেয়।
ইসলামের আন্তর্জাতিক বৈরী শক্তি মনে করছে, এ দ্বারা তারা সফলকাম হচ্ছে, কিন্তু তাদের এই মুনাফেকি নীতি দুনিয়ার বিশেষ করে খোদ নিজেদের ভাবশিষ্যদের অন্তর থেকেও তাদের যাবতীয় ভাবমূর্তিকে মুছে ফেলতে শুরু করেছে। এই নেতিবাচক ভূমিকা বিশ্বময় ইসলামী পুনর্জাগরণকে কখনো দমাতে সক্ষম হবে না।
কোনো মুসলিম দেশে জনকল্যাণ ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের পথে পাশ্চাত্য শক্তির এখন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষা ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি ঐসব দেশে তারা সেই দূরঅতীত থেকে খৃস্টান মিশনারীদের দ্বারা সুকৌশলে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার কাজ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও আজকাল বিভিন্ন এনজিও-এর সাহায্যে এ কাজটি অতি জোরেশোরে তারা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে তাদের সেবামূলক কাজের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরাসরি ইসলামী দলসমূহের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা এবং ইসলামী মূল্যবোধকে হেয়প্রতিপন্ন করার ভূমিকা ও স্থানীয় ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ মহলের সাথে প্রকাশ্য সহযোগিতা তাদের সেবাকর্মের আসল চেহারাটি নগ্নভাবে সকলের কাছে ধরা পড়েছে। অন্যথায় যেখানে তারা নিজেদের সেবাকর্মী বলে পরিচয় দিচ্ছে, সে ক্ষেত্রে এ দেশের রাজনীতিতে কেন এত নগ্নভাবে নাক গলাতে আসবে?
আজকের মুসলিম উম্মাহকে বিশেষ করে মুসলিম দেশের ধর্মীয় মহলকে নিছক ধর্মীয় পরিভাষা বেশি বেশি উচ্চারণ না করে প্রত্যেকটি দেশের জনগণের শোষক দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী মহলের শোষণ মুক্তির জন্যই অধিক কথা বলা কর্তব্য। মূলত এসব দুর্নীতিবাজ, অসাধু নেতৃত্বের কারণেই মুসলিম দেশের জনগদুর্গতি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছে। এহেন অসাধু অশুভ নেতৃত্বের অপছায়া থেকে মুসলিম জনগণ তথা প্রত্যেক মুসলিত রাষ্ট্রকে রক্ষা করা গেলে এমনিতেই ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত। দেশকে জনকল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার মস্তবড় বাধাই হচ্ছে দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং দুর্নীতিবাজ প্রশাসন ও তার এক শ্রেণীর আমলা। আর একমাত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থাই পারে এ বাধা অপসারণ করতে। এ কারণেই এহেন নেতৃত্ব কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে ধর্মীয় মহলকে রাজনীতিতে আসতে দিতে চায় না। তেমনি ইসলামের আন্তর্জাতিক বৈরী শক্তিগুলোও তাদের গ্লোবাল রাজনীতির অঙ্গনে যত অমানবিক কর্মকা- ও বড় বড় সূক্ষ্ম সন্ত্রাসী তৎপরতাদুষ্ট রাজনীতির দাপট চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই একচ্ছত্র আধিপত্যের পথে ধর্মীয় রাজনীতিকে বড় বাধা মনে করেই তারা এর বিরুদ্ধে আদাপানি খেয়ে লেগেছে। বর্তমান মুসলিম প্রজন্মকে এ ষড়যন্ত্র নিজেদের স্বার্থেই বুঝতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads