শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৩

বাড়াবাড়ি থেকে সরে আসা উচিত


সরকার ক্ষমতাচর্চার মেয়াদজুড়ে নেতিবাচক তৎপরতার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এই একটি কারণেই সরকার ইতিবাচক কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুযোগ হাতছাড়া করেছে। বিরোধী দল, ভিন্নমত ও সরকারের সমালোচনা ঠেকানোর কাজে পুরো শক্তি ও সময় ব্যয় করছে সরকারÑ এর ফলে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণের ফুরসতই পেল না। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের ভূমিকা শুধু অনাকাক্সিত নয়, অপ্রয়োজনীয় এবং বাড়াবাড়িমূলকও।
এখন আবার নতুন করে গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে খাতা-কলমে সরকারি শেয়ার রয়েছে ২৫ শতাংশ। কিন্তু এই পরিমাণ শেয়ার রাখতে হলে যে পরিমাণ পরিশোধিত মূলধন থাকার কথা তা সরকারের ছিল না এবং পরিশোধিত মূলধনের অভাবে সরকারের শেয়ারের পরিমাণ ৩ দশমিক ১৩ শতাংশে নেমে এসেছিল। এখন ২৫ শতাংশ শেয়ার ধরে রাখার জন্য পরিশোধিত মূলধন সরবরাহ করেছে সরকার। এর ফলে শুধু খাতা-কলমে নয়, বাস্তবেই গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারি শেয়ার ২৫ শতাংশে উন্নীত হলো। কাগজে-কলমে স্বচ্ছ ও নীতিনিষ্ঠ থাকার ভাবনার দিক থেকে এই উদ্যোগ কোনোভাবেই নিন্দনীয় নয়; বরং ভালো কাজ। তবে প্রশ্নটা উঠেছে উদ্দেশ্যের সততা নিয়ে।
বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যসংখ্যা ৮৪ লাখ। কিন্তু সব সদস্যই ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডার নন। সরকার চাচ্ছে সব সদস্যকে গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার করতে। এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষেরই থাকা সঙ্গত। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া, গ্রামীণ ব্যাংক সংস্কার করে পুরোটা সরকারি মালিকানায় নিয়ে আসা কিংবা শিল্প ব্যাংক বা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মতো একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার ভাবনাগুলো আবেগের বিষয় নয়। ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারের বিষয়। সরকার বড়জোর পরামর্শ দিতে পারে।
উল্লেখ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণের ১৪ মাস পর গত বছর ১৬ মে গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি কমিশন গঠন করে সরকার। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনার েেত্র দুর্বলতা ও বাধাগুলো খুঁজে বের করা, এই প্রতিষ্ঠানে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, গ্রামীণ ব্যাংকের ল্য-উদ্দেশ্য ও আইনি কাঠামো এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করা, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সদস্য নিয়োগপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা এবং কিভাবে এই ব্যাংককে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অধীনে নেয়া যায়Ñ সে বিষয়ে সুপারিশ করার দায়িত্ব দেয়া হয় এই কমিশনকে।
এই কমিশন ৯ মাস অনুসন্ধানের পর চলতি বছর ৯ ফেব্রুয়ারি ১৪টি সুপারিশসংবলিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। কমিশন আগামী ২ জুলাই এক কর্মশালার আয়োজন করে গ্রামীণ ব্যাংক সংস্কারের ওপর বিশেষজ্ঞ মতামত নেবে বলেও জানিয়েছে।
এই ব্যাপারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন স্বপ্নদ্রষ্টা ও অনুঘটক হিসেবে তার অভিমত দিয়েছেন। তার সব বক্তব্য ও মূল্যায়নের সাথে একমত হওয়া জরুরি না হলেও বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা জরুরি। তিনি অভিজ্ঞতা থেকে কথা বলেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের স্বকীয়তা রক্ষার দায় থেকে অভিমত দিয়েছেন।
আমরা মনে করি, সরকার জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও জনস্বার্থ বাদ দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কোনো সাধুতার পরিচয় দেয়নি। ফলে কমিশন গঠন, এর প্রস্তাব বা সুপারিশমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তা ছাড়া নোবেল জয়ী একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সরকারের বাড়াবাড়ি জনগণ মেনে নেবে না। আশা করি, গ্রামীণ ব্যাংকে বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে চালানো ও পরিচালনায় হস্তক্ষেপ থেকে সরকার বিরত থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads