বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৩

সীমান্ত অরক্ষিত রেখে রাজনৈতিক দমন পীড়নে ব্যস্ত বিজিবি


সংবিধান বর্ণিত রাষ্ট্রীয় সীমানা রক্ষা করা সাংবিধানিক দায়িত্ব হওয়া সত্ত্বেও দেশের সীমান্ত অরক্ষিত রেখে রাজনৈতিক দমন-পীড়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিজিবি। ফলে বিএসএফ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা ও ব্যাপক নির্যাতনের অধিকার লাভ করেছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালে বিএসএফ’র গুলীতে ৩৮ জন নিহত হয়েছে। ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩১ জন। সীমান্তে বিজিবি শূন্যতায়  মিয়ানমারের দুর্বল নাসাকা বাহিনীর হুমকির ভয়ে অনেকেই সীমান্ত এলাকায় বসবাস করতে সাহস পাচ্ছে না। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশেজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার ৪২ বছরে কখনই সীমান্ত এত অরক্ষিত হয়নি। অনুসন্ধান ও সীমান্তের শান্তিপ্রিয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, যখন ভারত থেকে ফেনসিডিল ও ছোট ছোট আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান হয়ে  বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তখন বিএসএফ’র দিক থেকে গুলী করা হয় না। গরু চোরাচালানের সাথে ভারতীয়রা জড়িত থাকলেও বিএসএফ’র গুলীতে বাংলাদেশীরাই নিহত হয়। সীমান্তে অন্যান্য অপরাধী তৎপরতা সত্ত্বেও বিএসএফ কোনো গুলী চালায় না। সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা ও নির্যাতন চলমান থাকা সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সচিব ভারতীয়দের পক্ষেই যেন সাফাই সাক্ষী দিয়ে বলেছেন, সীমান্ত এলাকা থেকে বিএসএফ কোনো বাংলাদেশী নাগরিক ধরে নিয়ে গেছে, এ রকম কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
দেশের সীমান্ত অরক্ষিত রেখে রাজনৈতিক দমন পীড়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিজিবি। বিজিবি’র মূল দায়িত্ব সীমান্ত প্রহরা এবং সীমান্তের জানমাল রক্ষা করা হলেও কার্যত বিগত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে এর উল্টোটি হচ্ছে। সীমান্তে নির্বিচারে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশীদের উপর মানবাধিকার লংঘনের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিজিবি এর প্রতিকারে কোনো ভূমিকা রেখেছে, রাখছে বা রাখবে, এ রকম মনে করার যুক্তিসঙ্গত কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে যৌক্তিক প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিডিআরের সাবেক সফল মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আলম ফজলুর রহমান বলেছেন, বিএসএফ ক্রমাগতভাবে সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা ও নির্যাতন করা সত্ত্বেও বিজিবি কেন কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না, তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। তিনি আরো মনে করেন, বিজিবি’র মনোবল বৃদ্ধির জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বর্তমান সরকারের অধীনে তা করা হচ্ছে বলে তার মনে হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর একজন মহাপরিচালক মনে করেন, আত্মরক্ষার জন্য বিএসএফ’র দিক থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয় সেটি যৌক্তিক নয়। তিনি মনে করেন, সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিএসএফ তাকে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। তার মতে, বেসামরিক মানুষকে মোকাবিলার জন্য যদি গুলী করতেও হয়, তাহলে এমন জায়গায় সেটি করতে হবে যাতে প্রাণহানি না হয়। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখন বিএসএফ সীমান্তে রীতিমতো বেপরোয়া। গুলী করে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যার পাশাপাশি নির্যাতন চালাচ্ছে বিএসএফ। কার্যত এখন বিজিবি’র কর্মপরিধির আওতায় তাদের যোগ্যতা-দক্ষতা পুনঃবিশ্লেষণের প্রয়োজনয়িতা দেখা দিয়েছে। জনগণের টাকায় সীমান্ত প্রহরার জন্য যাদের লালন-পালন করা হচ্ছে, তারা সীমান্ত প্রহরার পরিবর্তে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দমন-পীড়নে ব্যস্ত হয়ে সাধারণ জনগণের ভোগান্তির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হবেন, এটা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় সীমান্তের জনগণ বিদেশী বাহিনীর হাতে নির্যাতিত, নিহত এবং নিগৃহীত হবেন, নিজের কৃষি পর্যন্ত করতে পারবেন না, নদীতে মাছ ধরা বা গোসল করতে পারবেন না অথচ বিজিবি নির্বিকার থাকবে এ ধরনের বাস্তবতা সঙ্গত বা গ্রহণযোগ্য মনে করার কোনো কারণ নেই। এই পরিস্থিতি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক সন্দেহ নেই। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পর ঘাতক বাহিনী বলে পরিচিত বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে বিজিবি রাখা হয়েছে। এতে তাদের কাজের বা ভাবমর্যাদার কোনো উন্নতি হয়েছে এমন কথা বলা যাবে না। বিদ্যমান অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে অথবা অবস্থার যদি কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে অযথা সীমান্তে বিজিবি রাখার প্রয়োজনই বা কি, এ প্রশ্নও ওঠবে। সামরিক বিবেচনায় বলা যায়, বিজিবির বর্তমান কর্মতৎপরতার তদন্ত হওয়া উচিত। কেন, কি কারণে তারা দায়িত্ব পালন করছে না অথবা করতে পারছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, বর্তমান অবস্থায় যদি এ ধরনের তদন্ত নাও হয়, তাহলে ভবিষ্যতে অবশ্যই হবে এবং তাদের তখন এই ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহিও করতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads