মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৩

দেশ জনগণের : এ উপলব্ধি আমাদের সবার মাঝে আসুক


বর্তমান সরকার সাড়ে চার বছর দেশ শাসন করছেন। সংসদে তারা প্রায় ৯০% সকল ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত ও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকার খুবই দ্রুত, দৃঢ় ও সক্ষম। তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কর্মনীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন বাধা বিরোধিতাই টেকেনি। এ দৃষ্টিতে তারা খুবই সফল।
কিন্তু কোন দলকে যখন মানুষ ভোট দেয় তখন তার সব কর্মসূচিকে জেনে বা সমর্থন করে যে ভোট দেয় তা নয়। দল প্রকাশ্যে যে সব ভাল কথা বলে, সেগুলোকেই মানুষ বিবেচনায় নেয়। আওয়ামী লীগ মনে করে এ দেশকে স্বাধীন করেছে একমাত্র তারা। ক্ষমতায় থাকার অধিকার ও একমাত্র তাদেরই। তারা যা ভাবে, যাতে তাদের লাভ, যাতে তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী হয় এ সবই মুক্তি যুদ্ধের চেতনা। এ ব্যাপারে অন্যদের যে কোন চিন্তা ও চেষ্টাই অবৈধ ও অন্যায়। তাদের সমর্থন করলে মুক্তিযোদ্ধা, আর সমর্থন না করলে রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী। তাদের সব কাজের সমর্থন না করায় সেক্টর কমান্ডার মেজর জলীল ও শহীদ জিয়া এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও রাজাকার হয়ে গেছেন। কিন্তু জনগণের কাছে এর কোন গুরুত্ব নাই। বরং এমন ধরনের কোন চেষ্টা দেখলে তারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়।
 জনগণ শান্তি, নিরাপত্তা, ঐক্য ও উন্নয়ন চায়। সততা, নিষ্ঠা ও ভালবাসার পরিবেশ চায়। অপবাদ, ঔদ্ধত্য, অহংকার, ষড়যন্ত্র ও হানাহানিকে পছন্দ করেনা। মিথ্যা, দুর্নীতি, দমন, দখল, নিপীড়ন ও নির্যাতন ও হত্যাকে ঘৃণা করে।
সংসদে অবারিত ক্ষমতা সরকারি নেতৃবৃন্দের গোপন কিছু বাসনাকে অদম্য করে তোলে, মানবিক কিছু অনুভূতিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। যার ফলে তারা বেশ কিছু নেতিবাচক কাজ করেছেন যার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ১৫ জুন (২০১৩) ৪টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ সরকারি প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আমার বিবেচনায় সরকারের কিছু নেতিবাচক কাজের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
১। বিডিআর বিদ্রোহের নামে বিডিআর ধ্বংস ও প্রতিরক্ষা বাহিনী দুর্বল হয়েছে ।
২। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করা হয়েছে। নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। মতপ্রকাশ ও নাগরিক অধিকারকে সীমিত করা হয়েছে।
৩। মানব অধিকার প্রতিষ্ঠাই যাদের জীবন ব্রত। আজীবন নিষ্ঠা ও সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সেই জামায়াত নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জুডিশিয়াল হত্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবাদী জনগণকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা, পঙ্গু, জেল ও রিমান্ডে নিয়ে প্রতিহত করা হচ্ছে। দেশে যারা ইসলামী আইন চায় আজ তাদের জন্য কোন মানবাধিকার নাই। সরকারি দলের উচ্চ থেকে একেবারে নীচ পর্যন্ত যে কোন নেতা, কর্মী যখন যাকে খুশি তাকে আঘাত, জেল ও রিমান্ডে দিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতনের ব্যবস্থা করতে পারে। সংখ্যালঘু নিপীড়নসহ সরকারি দলের বহু অন্যায় কর্মকা-কে গণমাধ্যমের সাহায্যে তাদেরই ওপর চাপানো হচ্ছে।
৪। স্বভাব ও চরিত্রে যারা ভিন্ন সংগঠনের ছাত্রদের চেয়ে অনেক উন্নত, সেই শিবিরের লাখ লাখ নেতা-কর্মী আজ যেন লেখাপড়া করা ও বেঁচে থাকার অধিকার হারিয়েছে। কোটি পিতা-মাতা তাদের সব চেয়ে সু-সন্তানটির জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন। লীগ, পুলিশ, বিজিবি, গোয়েন্দা, র‌্যাব ও বিচারকের ভূমিকা যেন এখানে একাকার।
৫। দীনের জন্য নিবেদিত প্রাণ বরেণ্য, মুত্তাকী, আলেমগণ আজ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, ঘৃণা, বঞ্চনা ও অত্যাচারের শিকার। ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, জঙ্গীবাদী গালি তাদের কপালে এঁকে দেয়া হয়েছে। বিজাতীয়দের সন্তুষ্ট করতে তাদের ওপর নির্মমতার কোন পরাকাষ্ঠাই বাদ দেয়া হচ্ছে না। ৫ মে মধ্য রাতে ঘুমন্ত ও যিকির রত আলেমদের ওপরে ক্র্যাক ডাউন তার জ্বলন্ত এক নজির।
৫। সমাজ ও প্রশাসনের সর্বস্তরে আইনের নয় ব্যক্তির শাসন চালু হয়েছে। ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দই এ ক্ষেত্রে মূল নিয়ামক। আইন আজ অত্যাচারের হাতিয়ার। সমাজের বিবেকবান মানুষ আজ অপাঙক্তেয়। নারী ও মাদকাসক্ত-সন্ত্রাসী ও লুটেরাদের হাতে আজ জনগণ জিম্মি। জাতি যেন আজ রাজা ও প্রজার বংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। 
৬। প্রশাসনে দলবাজ ছাড়া সৎ-যোগ্যদের কোন স্থান নাই। বিবেক বিরুদ্ধ কাজ অথবা কোণঠাসা, ওএসডি হওয়া অন্যথায় অব্যাহতির শিকার হতে হয়েছে।
৭। দুনিয়ায় বঞ্চিত মানুষের শেষ আশ্রয় বিচারালয়। তাকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করার ফলে নির্যাতিত, বঞ্চিত মানুষের আজ কোন আশ্রয় নাই। মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত। ন্যায়দ- আজ নিপীড়নের নির্মম হাতিয়ার। 
৮। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা, মেধার বিকাশ, নেতৃত্ব নির্বাচন, খেলাধুলা, শান্তি ও শৃঙ্খলা নির্মূল হয়েছে। নকল, দখল, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও হতাহতই সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ যেমন শিক্ষা নেই, তেমনই ছাত্রদের জীবন ও ছাত্রীদের সম্ভ্রমের নিরাপত্তা নেই।
৯। সংসদে আজ বিরোধি দল গালি, বিদ্রƒপ ও বঞ্চনার পাত্র। মাঠে-ময়দানে জেল-জুলুম, গুম-হত্যা ও নির্মমতার শিকার। এ সরকারের বিরোধিতা মানে এখানে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের বিরোধিতা। বিএনপি-এর মত একটি গণ দলকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও নির্যাতন করে নিঃশেষ করার চেষ্টা চলেছে।
১০। ভারতের সাথে কৃত চুক্তি গোপন রেখে, অসম বাণিজ্য এবং তাদেরকে সার্বভৌমত্ব ও জাতি স্বার্থ বিরোধী    সুবিধা দিয়ে ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি নেয়া হয়েছে। তারা প্রায়ই পাখির মত গুলী করে মানুষ মারছে। প্রতিকারহীন অবস্থা। চোরাচালান মহামারিতে রূপ নিয়েছে। মাদকের সয়লাব নব প্রজন্মকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। সব শিল্পই ধ্বংস হচ্ছে। ভারত ইশারা দিয়েছে এ সরকারকে তারা রক্ষা করবে।
১১। রাষ্ট্রের উচ্চ থেকে নীচে সকল চাকরির ক্ষেত্রে মেধা নয়, দলবাজিই যোগ্যতার মাপকাঠি। ফলে শিক্ষা, গবেষণা, উদ্যোগ, উদ্যম পরিশ্রম ও সৎ প্রতিযোগিতার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশ এক অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 
১২। মুসলিম দেশগুলো হতেই আমরা নিঃস্বার্থ সাহায্য ও সমর্থন পেয়ে থাকি। সেখানের অর্থে দেশের কোটি মানুষের সংসার চলে। শহরে ও গ্রামে উন্নয়নের চাকা ঘোরে। সেই দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক আজ তলানিতে ঠেকেছে।
১৩। আমাদের স্বপ্নের রাজকুমার-রাজকুমারি যে তরুণ সমাজ। শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের ময়দানে যারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারত। তাদের অন্তরে লোভ, হিংসা বিদ্বেষ, ঘৃণা অহংকার, সংকীর্ণতা, অশ্লীলতা ও অসহিষ্ণুতার গরল ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।
১৪। শেয়ারবাজার, হলমার্ক, সোনালী ও বেসিক ব্যাংক, ডেস্টিনি এবং রেলওয়ে ও রেন্টাল পাওয়ারসহ সর্বস্তরের নিয়োগ ও লাইসেন্স হতে ৪ বছরে অন্তত ৪ লাখ হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। যার ফলে কোটি কোটি মানুষ আজ করুণ অবস্থার শিকার। সরকারি কোষাগারে টাকা নেই। ঋণ দ্বারা ব্যংকগুলোকে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। দুর্নীতিতে পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা পদ্মায়ই তলিয়ে গেছে। গার্মেন্ট শিল্পসহ সকল বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাণিজ্য রুগ্ন হয়ে পড়েছে। লাখ লাখ শ্রমিকের জীবন আজ অনিরাপদ।
১৫। দেশ ও জনগণের উন্নয়ন ও স্বার্থের অতন্দ্র প্রহরী গণমাধ্যমের শক্তি ও স্বাধীনতা আজ ক্ষীণ হয়ে গেছে। স্বাধীনচেতা সাংবাদিকদের জীবন আজ সংকটাপন্ন।
১৬। রাষ্ট্রশক্তি দুনিয়ায় সব চেয়ে বড় শক্তি। তা কখনো অত্যাচারির হাতে পড়লে নাগরিক জীবন সেখানে দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। আজ আমাদের প্রিয় জন্মভূমির সেই করুণ অবস্থা।
এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী ?
আমাদের চারি পাশের পরিবেশ, উন্নত দেশগুলোর রাজনীতি ও ইতিহাসের দিকে নজর দিলে আমরা মুক্তির পথ পেতে পারি। আমি বা আমার প্রতিপক্ষ কেহই পৃথিবীতে নিজ ইচ্ছায় আসেনি, এখান থেকে চলে যাওয়াও তার নিজ ইচ্ছার ওপর নির্ভর নয়। অসংখ্য মানুষের সহযোগিতা যেমন আমার জীবন সুখময় হয়। তেমনই সেই মানুষের প্রতিও আমার দায়িত্ব আছে। প্রতিটি মানুষ তার প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। যার ভিতর মনুষ্যত্ব কম সে তার সবটুকু শক্তিকে নিজ ও স্বজনের জন্য ব্যয় করে। আর যার মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে সে দল মত, জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সকলের কল্যাণ কামনা করে এবং সাধ্যমত সকলের কল্যাণের চেষ্টা করে। একেই বলে সামাজিক ও মানবিক দায়িত্ব। আমার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা যেমন  প্রয়োজন আছে, চিন্তা, মত প্রকাশ করা ও সম্মান পাওয়ার যেমন অধিকার আছে। অন্যেরও ঠিক অনুরূপ অধিকার আছে। সকলের ন্যায্য অধিকারের নিশ্চয়তা যে সমাজে ও দেশে থাকে সেখানেই সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন থাকে। আমার দ্বারা কারো কোন অধিকারের ব্যত্যয় হলে সমাজে বিঘœ ঘটবে এবং তার অবশ্যম্ভাবি পরিণতি আমাকেও ভোগ করতে হবে। আসুন আমরা ভাবি, দেশটি আমার একার নয়, আমার দলেরও নয়। ১৬ কোটি মানুষের। সকলের চিন্তা, মতামত অধিকার ও সম্মানকে তাই গুরুত্ব দেই। এক সাথে বসবাস করার পথ খুঁজি। নিশ্চয়ই আমরা সফল হব। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হবেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads