শনিবার, ৮ জুন, ২০১৩

‘এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম’-- মিনা ফারাহ


বিশ্ব থেকে পুঁজিবাদ উঠে যাওয়ার মতোই অবিশ্বাস্য ২২ বছর ধরে জিম্মি হওয়া মেরুদহীন ১৬ কোটি মানুষ। ইতিহাস কিভাবে মূল্যায়ন করবে ঠিক করে দেয় ব্যক্তির কর্মকা । ১০০ বছর পার না হতেই অত্যন্ত করিৎকর্মারাও কালের কাছে বাসি হয়ে যায়, ফলে জিয়া-মুজিবের কথা কত দিন মনে রাখবে মানুষ, দেখার আগেই ফুরিয়ে যাবো। তবে দার্শনিকেরা বলেন, সুস্থ মনের পরিচয় হলো ব্যক্তি যখন যুক্তিতর্কের মাধ্যমে দ্বিমত পোষণ করে। সুতরাং জেনেশুনেই ১৫তম সংশোধনী নির্বাচনী ইশতেহার থেকে গোপন করা হয়েছিল কি না, বিষয়টির বিতর্ক হওয়া উচিত। এর পর যদি ১০টি পদ্মা সেতুও বানায়, মানুষ এই সরকারকে মূল্যায়ন করবে বিডিআর হত্যাকাণ্ড থেকে হলমার্ক কেলেঙ্কারি দিয়ে। ২২ বছরের দুঃশাসন আর এক-এগারোর পরও এই মাত্রার ব্যক্তিপূজা অনন্তকাল ভোগাবে। মালয়েশিয়ার মডেলে স্বৈরতান্ত্রিক গণতন্ত্র চালুর মোটিভ এখন পরিষ্কার। ক্রমেই রাজনৈতিকভাবে বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে উন্নত বুদ্ধি-বিবেকগুলো ক্রমাগত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে রাজনীতির সওদাগরদের হাতে।
শেয়ারবাজার থেকে ডেমুট্রেন লুটপাটের অঙ্ক শুনলে অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা সত্ত্বেও কবে কোথাকার এক হাওয়া ভবনের পেছনে সর্বশক্তি য় করছে ১৬ কোটি মানুষ। আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বাজেট দেখলে ভাবা যায়, অর্থনৈতিক মন্দা জর্জরিত গ্রিসের জন্য ঋণ বরাদ্দ কোনো ব্যাপারই নয়। বিরোধী দলের হাড্ডি এমন চুরমার করা হচ্ছে যেন আর হাড্ডিই না থাকে। নির্বাচনের আগে শেয়ারবাজার সূচক ১০ হাজার অতিক্রম করলেও অবাক হবো না। মাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সভা করলেন কিন্তু খালেদা জিয়ার জনসভার অনুমতি দিলো না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই মামলায় প্রধানমন্ত্রীর ১৫টি খারিজ করিয়ে নিলেও সাজা হতে হবে শুধু খালেদা জিয়ার। অপরাধ করল ইকোনমিস্ট ও বিচারপতি নিজামুল হক, কিন্তু জেল খাটছেন মাহমুদুর রহমান। দুর্নীতির দায়ে প্রধানমন্ত্রী জেল খাটলেও অপরাধ শুধু তারেকের। বিশ্বজিৎ হত্যার সাথে জড়িতদের ২১ জনই ছাত্রলীগের কর্মী। পদ্মা সেতুর মতো দুর্নীতির পরও চোরের মায়ের কত বড় গলা। কত দ্রুত হজম করলাম রানা প্লাজার সহস্রাধিক জীবন, তার পরও ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোয় শ্রমিক পাঠাতে দুই মুল্লুকের পুঁজিবাদীরা অত্যন্ত নিষ্ঠুর আচরণে লিপ্ত এবং বলতে গেলে পুরো দেশটাই কারাগার। উত্তর কোরিয়ার মডেলে বিরোধী দল বলে কিছু আর থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। একবার ওয়েস্টমিনস্টার আবার মালয়েশিয়ার নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র, প্রয়োজনমতো সব ছাতার তলেই আশ্রয় নিচ্ছে সরকার। সর্বত্রই ঘোর অন্ধকার। জানি না ড. আজাদ এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন কি না।
নেতারা রাজনৈতিকভাবে অম বলেই প্রায় ১৫৬টি দেশে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের হালুয়া-রুটি কামড়াকামড়ি করতে লাখো নেতাকর্মী আর গডফাদারদের অত্যাচারে প্রবাসেও ঘুম হারাম সত্ত্বে¡ও স্বৈরশাসনমুক্ত গণতন্ত্র দিতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। মনে হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি সমাধান অনেক সহজ। সর্বশেষ উইন্ডি শ্যারমানের সফর প্রমাণ হলো সার্বভৌমত্ব আমাদের হাতে নেই।
আমেরিকার ৩২০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে গ্ল্যালাপপোলে ঊর্ধ্বে তিন হাজারের মতামত নেয়া হয়। ৯০ শতাংশ এমিরিকাস কিউরি ও সাধারণ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পে মত দিলেও সাথে সাথে নাকচ করার কারণ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেই সুস্পষ্ট অর্থাৎ একমাত্র তিনিই বোদ্ধা এবং পালাক্রমে হাওয়া ভবনের পর দেশপ্রেম এবং গণতন্ত্র এবার ৩২ নম্বরের দখলে। সার কথা, নির্বাচন হলে ৯০ শতাংশ মানুষই নৌকায় ভোট দেবে না আর তাই নির্বাচন নিয়ে একাই ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ, যার শিকড় চতুর্থ সংশোধনীর ৩৩ ও ৩৪ ধারায়। দুই বছর ধরে ঘর গোছানোর জন্য ড. আকবর আলি খানদের কৌশলে ব্যর্থ করানোর কারণ ৭৩-এর অনুকরণে একক পার্লামেন্ট কায়েম করা, যেখানে বিরোধী দল থেকেও থাকবে না। চতুর্থ সংশোধনীর যেসব বর্জ্য বর্জন করা হলো ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে ফেরত পেলাম তার চেয়ে বেশি। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, সংবিধানের ধারা উল্টে কিয়ামত পর্যন্ত মতায় থাকতে চেয়েছিল এক-এগারো, সুতরাং নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ আর কাউকেই দিচ্ছেন না, কিন্তু ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা আওয়ামী লীগের জন্য হলেও প-েবিপরে বক্তা একাই তিনি। নির্বাচনের প্রায় অর্ধেক আসনই বিরোধী দলশূন্য আর অসংখ্য নেতাকর্মী জেলে থাকায় আমৃত্যু মতার সুযোগ এখন একমাত্র হাসিনার। সুতরাং প্রতিদিনই হোমরাচোমরাদের গালাগাল আর না করাই উচিত।
২৫/১/৭৫এ চতুর্থ সংশোধনীর ৩৩ ধারায় বিনা নির্বাচনে আরো পাঁচ বছরের জন্য এমপিদের সময় বাড়িয়ে দেয়া এবং ৩৪ ধারায় নিজেকে আজীবন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন মুজিব। এ দিকে ১৫তম সংশোধনীর ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের সীমা না থাকায় উত্তরাধিকার না আসা পর্যন্ত মতা থাকবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এখানে এসেই সব বিতর্ক শেষ হচ্ছে না কেন? কিছুই মানি না চাইলে নিয়ে যাও তালগাছটা। সুতরাং ডিসিসির মতো জাতীয় নির্বাচনও ঝুলিয়ে দেয়ার যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি করা হয়েছে। ৭৫ শতাংশ সংশোধনী পরিবর্তন নিষিদ্ধ এবং অবমাননার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মালয়েশিয়ান মডেলে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের অনুকরণে সমাবেশ হরতালের বিরুদ্ধে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা করছে আওয়ামী লীগ। তা হলে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের উপসর্গ সত্ত্বেও জাতীয় নির্বাচন ভুলে যাচ্ছি না কেন? বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য ড. তুহিন মালিককে ধন্যবাদ। মতা যেন কাম সওদাগরের চোখে লাখো কোটি অত সতীচ্ছেদের মতো রোমাঞ্চকর। সরকারের ভাষা বুঝে বাস্তবে ফিরতে হবে, কারণ ২০২১ সাল পর্যন্ত মতা অন্য হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বিপথগামীদের পথে আনার জন্য পশ্চিমে রয়েছে হাজার হাজার সংগঠন কিন্তু আমেরিকার অর্ধেক জনসংখ্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশে পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিজম নেই। সুস্থ মনের নাগরিকেরা কখনোই সরকারের শত ভাগ দাবির সাথে একমত পোষণ করেন না, তা সত্ত্বেও সর্বস্তরেই বন্ধ্যত্ব লণীয়। একই পরিস্থিতিতে জাসদের ইনু বাহিনী, তাহেরের গণবাহিনী, সিরাজের সর্বহারা, ইনুর গণকণ্ঠ ঠেকাতে দেশজুড়ে রীবাহিনী নামানো হলো। কিন্তু ২০১৩ সালে পৌঁছে বিরোধী দল যে সর্বহারা কিংবা গণকণ্ঠ নয়, হাসানুল হক ইনুরা তা বেমালুম ভুলে গেছেন। ২০০৮ সালে ভার্জিনিয়ায় মাত্র এক দিন হাসিনা দর্শনের মাধ্যমে যা অর্জন করলাম পদে পদে আজ সেই কুমির। সুতরাং ১০ হাজার মাইল দূরে বসে ড. আকবর আলি খানদের ব্যর্থ না বানালে হাসিনাকে কখনোই মতায় আনতে পারতেন না মইনুরা। সুতরাং অ্যাক্টিভিজমের নিয়মানুযায়ী ৯/১১-এর মতো ১/১১-র ট্রুথ কমিশন হলে মইনুদের ষড়যন্ত্রের গভীরতা জানা যেত কিন্তু মানবাধিকার প্রয়োগের ভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি বাংলাদেশের মানুষ। ষড়যন্ত্রের দুটি নমুনা, ঢাকা ছাড়ার কালে এয়ারপোর্টে ঘোষণা, মতায় গেলে এক-এগারোর সব আইন বৈধ করে দেবো। আর ওয়াশিংটনে থাকাকালে বিদেশীদের তাগিদ, মন্ত্রিসভার অগ্রিম প্রস্তুতি নিন। এসব উপসর্গ কি কিছুই নয়? সুতরাং সবাই জেলে যায় শুধু মাইনু-ফকরু ছাড়া, ইন্টারপোল এদের চোখেও দেখে না।
ফিরে দেখা
৭৪-এর কোনো এক মাসে কাসের মধ্যে জরুরি তলব এুনি গ্রামে যেতে হবে। সাত ঘণ্টা পর বাসায় পৌঁছে দেখি ঘরভর্তি মানুষ, বিছানায় বাবার চিৎকার। দুই হাত বাড়িয়ে বললেন, দেখো ওরা আমাকে কী করেছে। শুনলাম বাবার দুই হাত সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে ওরা।
ঘটনাটা এ রকম। নৈরাজ্য ঠেকাতে রীবাহিনী নামালে দেশজুড়ে শুরু হলো অন্য ত্রাস। দোকান খোলে না মানুষ। ট্রাক-বাস জব্দ করে ঘুষের তাণ্ডব। ধরে নিয়ে মিথ্যা অপবাদে চালান। ৩ টাকার চিনি ৪০ টাকা সের। রাতারাতি মজুদদারদের আত্মপ্রকাশ। ব্যবসা-বাণিজ্য উধাও হয়ে গেল নৌকা মার্কার হাতে। একদিন গণধরপাকড়ে বাবাও গ্রেফতার। ময়মনসিংহ জেলের পায়খানায় তিন দিন বন্দী রেখে সিগারেটের আগুনে চামড়া পুড়িয়ে দিলো। প্রতিবাদে আধাবেলা হরতাল ডেকেছিলেন শেরপুরবাসী। এক মেজরের হাতে এক লাখ টাকার বিনিময়ে মুক্তি। বাবার চিৎকার, টাকা নিয়ে দ্রুত না গেলে পরদিন অনেকের লাশ আসবে। রীবাহিনীর ত্রাসেই লাখ লাখ সংখ্যালঘু দেশ ছেড়ে পালাল। এসবই আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা। চেনা শাসনে মনে হচ্ছে আবারো ফিরে গেছি ৩৮ বছর আগে।
রুশ-মার্কিন ব্লক
বাংলার আকাশে আবারো লাখো শকুন। দেশ আজ চায়না-ভারত-রুশ বনাম পশ্চিমের ব্লকে বিভক্ত। চার বছর ধরে শেভরন-বিপির মতো কোম্পানিগুলো ঢাকায় খুঁটি গেড়েছে। ভারতের চাহিদামাফিক নারায়ণগঞ্জে টার্মিনাল বানাতে যেমন সংসদের প্রয়োজন নেই, তেমনিই টিকফা চুক্তির জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিরও প্রয়োজন নেই। এসবই সম্ভব যখন রাজনীতি চলে যায় চাপরাশি আর মুচি-মেথরদের হাতে; অন্যথায় শারম্যান যা করল যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্যই লজ্জা। আর জাতির এ সঙ্কটময় মুহূর্তে সুশীল সম্পাদকেরা নীরব। আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা একেবারেই ভেঙেচুরে গেছে। হাসিনা, খালেদা, ইউনূস, রানা প্লাজা কোনোটাই কেয়ার করে না পশ্চিমারা; কারণ তাদের প্রয়োজন পুঁজিবাদ। পরিষ্কার হিসাব, মুখে যা-ই বলি, চাহিদা যে মেটাবে মতা তার আর নির্বাচনের আগে এই প্রতিযোগিতায় দারুণ এগিয়ে সরকার, ব্যর্থ বিরোধী দল। নির্বাচন যে মোটেও নিরপে নয়, প্রমাণসহ ব্যাখ্যা না করে অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে নিরাশ করার অধিকার বিরোধী দলের নেই। বিদেশীদের অবস্থা এমন, মায়ের গলার হারটা খুলে দিতে এত দেরি কেন?
উইন্ডি শারম্যানের পুঁজিবাদ
পুঁজিবাদের দেশে এর অনুশীলন করে যতটা শিখেছি তার চেয়ে বেশি শিখলাম, কিভাবে বাংলাদেশের হাতে গোনা পুঁজিবাদীদের মাথাপিছু আয় বছরে ১০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার! এদের সাথে জাতীয় অর্থনীতি ও পার ক্যাপিটা আয়ের কোনোই সম্পর্ক নেই। বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ীদের জিডিপি থেকে জাতীয় জিডিপি আলাদা না করলে মাল মুহিতের জিডিপি ভুয়া। এটুকু দেশ অথচ কোনো কোনো শিল্পপতির জমির পরিমাণ পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার বিঘা! একেক জনের ডজন ডজন শিল্প কারখানা। ২৮টি গার্মেন্টের মালিক মিলিয়নিয়ার সংসদ সদস্য আজিমের সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ করে হার্ট অ্যাটাকের ব্যবস্থা করল ওয়াশিংটন পোস্ট। ইশতেহার অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
সুতরাং আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার ফোরামের পরিচালক, ব্রায়ান ক্যাম্বল ওবামা প্রশাসনকে যথার্থই বললেন, বিদেশী বাণিজ্য সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সরকারকে ভুল তথ্য দিচ্ছে ফলে এরা ঠিকমতো আচরণ করছে না তাই জিএসপি বাতিল করা হোক। রানা প্লাজার আহতদেরকে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের মুখোমুখি না করার কোনোই কারণ নেই। ভেবেছিলাম এসেই এক বিলিয়ন ডলারের চেক হাতে রানা প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে উইন্ডি শারম্যান করজোড়ে বলবেন, দুঃখিত! ৫ পয়সা মজুরির বিনিময়ে স্বর্গের দোকানে ১০০ ডলারে বিক্রি করি একটি শার্ট। সুতরাং এই নাও তিপূরণ। তিনি তা বললেন না বরং মেসেজটি ছিল, শত শত রানা প্লাজা ঘটলেও ওয়ালমার্টওয়ালারা কখনোই বাংলাদেশ না ছাড়ার কারণ পুঁজিবাদের জন্য এত সস্তা শ্রমের বিকল্প নেই। ফলে বেপরোয়া পুঁজিবাদ রার জন্যই শ্রমিক মরার ধুম। এখান থেকে যে পরিমাণ লাভ করে একটি পশম খুলে দিলেও ভেসে যায় কিন্তু মাত্র ৫ পয়সার জন্য নিরাপত্তা খসড়া প্রত্যাখ্যান করল ওয়ালমার্ট। অথচ এই ওয়ালমার্টই ফরচুন-৫০০ কোম্পানির ১ নম্বর। সুতরাং আগুন আর ভবন ধসে নৃশংস খুনের মুক্তি না থাকলেও সুযোগ দিচ্ছি আমরাই। জিএসপির ভয় দেখিয়ে টিকফা নিয়ে উড়াল দেয়ার আগে বিরোধী নেত্রীকে হেয় করতে এতটুকু কুণ্ঠা করল না শারম্যান। সাংবাদিকেরাও হয়ে গেছে বিটিভি। জানা দরকার, রাশিয়ার তৃতীয় শ্রেণীর বিপজ্জনক পারমাণবিক চুলার বিরুদ্ধে ভারতে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠলেও বাংলাদেশে টুঁ শব্দটি নেই অর্থাৎ প্রিমিয়ার যা বলবে, চাইনিজদের মতো শুনতে বাধ্য আমরা। পুঁজিবাদের হিসাবে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ সত্ত্বেও তেলের জন্যই আসাদকে অস্ত্র জোগান দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। যারাই তেল-গ্যাস দিতে বাদ সাধে তাদের পরিণতি হয় ইরাক-ইরানের মতো। কে না জানে, ২০০১ সালে কার্টারের দূতিয়ালিতে ভারতকে গ্যাস বিক্রির শর্তে খালেদা যেমন সরকারে এসেছিলেন তারই পুনরাবৃত্তি ২০০৮-এ। ওয়াদা পালনে ব্যর্থ খালেদা কারণ অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়ামকে দেশ ছাড়া করল প্রতিবাদী বাংলাদেশের মানুষ। আমেরিকা সেটি ভালোভাবে নেয়নি। বিষয়টি এ রকম, কিনটনের আমলে তালেবানদের তত্ত্বাবধানে ক্যাসপিয়ান সাগর থেকে আফগানিস্তান হয়ে তেল-গ্যাস পাইপলাইন শেষ হলো ভারতে। তখন ওসামা বিন লাদেনরা ছিলেন হোয়াইট হাউজের মনের মতো গেস্ট। কথা ছিল অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়াম বাংলাদেশ থেকে যে গ্যাস তুলবে ভারতে বিক্রি করবে ১০ ভাগ লভ্যাংশে। সরকার আর সে ভুল করছে না বলেই লাখ দুর্নীতির পরও প্রশংসায় পঞ্চমুখ পশ্চিমারা। অন্য দিকে অকারণেও ইরানের ওপর হুমকি-ধমকি। বিশ্বব্যাংক পর্যন্ত ভুলে গেল কী হয়েছিল পদ্মা সেতু নিয়ে। পুঁজিবাদ বোঝার জন্য আইনস্টাইন না হয়ে নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকার আকাশে সাদা-কালো-তাম্র বর্ণের শকুনÑড্রাকুলাদের ভিড় অনুধাবনই যথেষ্ট। সন্ধ্যা ৬টা বাজলেই হোটেল কাবের লবিতে মদের আড্ডায় আলোচনার নায়ক বাংলাদেশের তেল-গ্যাসের খনি ও সস্তা শ্রম। সম্পদের জন্য এরা পাগলই হয়ে গেছে।
মানবাধিকার
মতায় আসার দ্বিতীয় দিনেই ওবামার এক্সিকিউটিভ মতা প্রয়োগ করে কারাগারে সব ধরনের বন্দী নির্যাতন বন্ধ করার কারণ আবুগারিব কারাগারের বন্দী নির্যাতনের খবর ২০০৩ সালে ফাঁস হয়ে গেলে বিশ্বজুড়ে যে নিন্দার ঝড়, পুনঃপ্রচারের প্রয়োজন আছে কি? বরং যার দরকার তিনি গবেষণা করুন। নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, টেলিগ্রামের মতো পত্রিকাগুলো একাধিক সম্পাদকীয় লিখল। কংগ্রেসনাল শুনানি হলে বুশের নামে যে দুর্গন্ধ ছড়াল আজ পর্যন্ত মাশুল দিচ্ছে রিপাবলিকান দল। আবুগারিবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল খোদ মার্কিনিরাই। হিটলারের বন্দি নির্যাতনের খবরেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মিত্র বাহিনী। তবে বাংলাদেশ আজ বন্দি নির্যাতনের হিমালয় সত্ত্বেও সবাই চুপ। বিরোধী দল হলেই ডাণ্ডাবেড়ি আর রিমান্ডের যে ভয়াবহ চিত্র তাতে সন্দেহ, আদালত সুবিচার করছে তো?
মানবাধিকারের মুখে চুনকালি পরানো পঙ্গু লিমন কাহিনী এখন আর লিখছি না। তবে রিমান্ড নামের এক অদ্ভুত কালচার অপারেশন কিন হার্টকেও লজ্জায় ফেলেছে। বাবুনগরীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানবাধিকার আবুগারিবের মর্যাদা অর্জন করল। যে মানুষটির বহুমূত্র রোগ এমন পর্যায়ে যে পায়ে পচন, উচ্চ রক্তচাপসহ হার্টের অসুখ রিমান্ড দেয়ার আগে আদালত তার স্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়েছিলেন কি? নাকি সব তথ্য গোপন রেখে ডিফেন্সবিহীন বাবুনগরীকে অন্য উদ্দেশ্যে রিমান্ডে নেয়া হলো! পিটিয়ে এমন অবস্থা করল, যার ফলাফল কিডনি অচল, পচনের মাত্রা বাড়ল, ফুসফুস বিগড়ে গেল। বহুমূত্র থেকে পচন বড়ই মারাত্মক। ফলে অবশ্যই তাকে লাইফ সাপোর্টে রেখে ডায়ালিসিসসহ অস্ত্রোপচার করতে হলো। রিমান্ডওয়ালারা জানতেন, রোগীর অবস্থা খারাপ, তার পরও অতিরিক্ত ২৩ দিনের রিমান্ড কেন! অবস্থা বেগতিক দেখে মুচলেকায় জামিনের নাটক। মিডিয়ায় মুচলেকা শুনলাম, শুনিনি মানবাধিকার ভঙ্গের কথা। সুশীল পত্রিকায় একটিও সম্পাদকীয় দেখলাম না। ড. মিজানুর রহমান তো মানবাধিকারের মুখে কবেই জুতার কালি মেখেছেন। কিন্তু বিদেশী সম্পাদকেরা বসে নেই। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তো লিখেই যাচ্ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশে একজন বড় নেতার পে প্রতিবাদের মানুষ নেই! দেশজুড়ে সবাই যেন বিটিভি! ডাণ্ডাবেড়ি পরা অভিযুক্তদের মুখ থেকে চার বছর ধরে একতরফা কথা আদায়ের কালচার অবশ্যই মানবতাবিরোধী এবং বাবুনগরীর বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত। এ ধরনের জবানবন্দীর ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন। সুতরাং আবুগারিবের মতো রিমান্ড বন্ধের দাবিতে সুশীলসমাজের ভূমিকা জরুরি।
সন্ত্রাসের সংজ্ঞা
সন্ত্রাসের ব্যাখ্যা একেক জনের কাছে একেক রকম, যা নিয়ে বহু বিতর্ক। কিন্তু শব্দটির মানবিক এবং অমানবিক দুটি দিক থাকলেও ৯/১১ পরবর্তী বিশ্বে ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে পুঁজিবাদীরা। পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্র প্রমাণ সত্ত্বেও আগরতলা মামলায় শেখ মুজিবের শরীর স্পর্শ করেনি আইয়ুব রেজিম। একাধিকবার পাকিস্তান ভাঙার অপরাধে বিচার শেষে ফাঁসি দেয়নি ইয়াহিয়া খান। একই কারণে ফাঁসি হয়েছিল মাস্টারদা আর ুদিরামের। সন্ত্রাসী তিলক কপালে দণি আফ্রিকার একই জেলে জেল খেটেছেন বিশ্ব নেতা ম্যান্ডেলা আর গান্ধী। চে গুয়েভারাকে সন্ত্রাসী অপবাদে হত্যা করলেও ভক্তদের কাছে তিনি যিশুখ্রিষ্ট। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়া দেশ স্বাধীনের মতো পবিত্র কাজ না হওয়ার প্রমাণ স্বাধীন বাংলাদেশ। তা হলে সন্ত্রাসের সংজ্ঞা কী? ব্যাখ্যা এভাবেও হতে পারে, যারাই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, যুগে যুগে তাদের বলা হয়েছে সন্ত্রাসী। নোয়াম চমস্কি, অ্যাডওয়ার্ড সাঈদ বা হাওয়ার্ড জিনের পিপলস হিস্টোরি যারা পড়েছেন সবাই জানেন, এসব গুণীজন আমেরিকার গলায় কত বড় সন্ত্রাসীর পদক ঝুলিয়ে দিয়েছেন। পুঁজিবাদের স্বার্থে কিছুই আপস করে না ওয়াশিংটন, যার প্রমাণ শাপলায় পুলিশি সন্ত্রাস কিংবা গুম, খুন, ক্রসফায়ারের রেকর্ড সত্ত্বেও বারবার বাংলাদেশের প্রশংসা করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট আর পাকিস্তানের বেলায় আরো ড্রোন মারার ঘোষণা দেন জন কেরি। পশ্চিমাদের চাহিদা বাস্তবায়নে অনুগত সরকারকে ন্যূনতম চাপ দিতে ব্যর্থ ওয়াশিংটন আর জাতিসঙ্ঘের মাথা কিনেছি বড় অনুদানের বিনিময়ে, তাই প্রয়োজন ছাড়াও প্রশংসার বাণী দেন বান কি মুন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নিয়ে কোনো সংস্থার রিপোর্টই পাত্তা দিচ্ছে না আমেরিকা। যা সত্য তা হলো, সন্ত্রাসের অপবাদ সত্ত্বেও রিমান্ডে নিয়ে আইয়ুব খান কখনোই বাবুনগরী বা মাহমুদুর রহমান বানাননি।
শাহরিয়ার কবীর ভালো করেই জানেন, ভারতের ধর্মভিত্তিক দলগুলো রাজনৈতিক অঙ্গনে কত সক্রিয়। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং ব্যাপক দাঙ্গার মূলে বিজেপি ও শিবসেনা। শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল থ্যাকরে ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত গডফাদার। এ দিকে মহাদুর্নীতিবাজ মনমোহনের পদত্যাগ চেয়ে চিঠি দিয়েছে শিবসেনা আর বিজেপি। ধর্মীয় দলগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে বরং নির্বাচনে এরাই সাবাড় করতে পারে কংগ্রেসের অর্ধেক সিট। এরা না চাইলে মুম্বাইয়ের কোনো ব্যবসায় বা বলিউডের ছবি চলতে পারবে না। আজম গুরুর ফাঁসির পর দেশজুড়ে সেনা সন্ত্রাস দেখেছে ভারতবাসী। লোকসভায় শিবসেনাদের ১১টি আসন। এর পরও ধর্মীয় দলগুলো নিষিদ্ধের দাবি এলো না কেন? যা বলতে চাইছি, সন্ত্রাসের ব্যাখ্যা যার যার সুবিধামতো। পাকিস্তানে ড্রোন মারার প-েবিপে সন্ত্রাসের অভিযোগ সত্ত্বেও বিশ্ব মানবাধিকার কমিশন ড্রোন মারার বিরুদ্ধে। অপরপ অনড়। ম্যান্ডেলা, ড. কিং, কাস্ট্রো শাসকদের চোখে সন্ত্রাসী হলেও ইতিহাস মূল্যায়ন করেছে অন্যভাবে। সুতরাং সন্ত্রাসী অপবাদে হরতালকারীকে কারাগারে নিেেপর আগে হরতাল কেন, সেই কেনোর চোখে দুরবিন লাগানো উচিত।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads