শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

শক্তির প্রদর্শনই যেন সরকারের মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে



একশ্রেণীর নাস্তিক ও ধর্মবিদ্বেষী যুবক যুবতী বিভিন্ন ব্লগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ), ইসলামের বিভিন্ন অনুশাসন, সাহাবায়ে কিরাম এবং আল কুরআন সম্পর্কে কুৎসিত, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পোস্ট করে মানুষের মনে দাবদাহ সৃষ্টির ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিপথগামী তরুণদের সংঘবদ্ধ করে অসত্য অভিযোগে জামায়াতে ইসলামী তথা বিরোধীদলীয় শীর্ষনেতাদের প্রহসনের ফাঁসি দাবি প্রসঙ্গটা দেশবাসীসহ সচেতন বিশ্ববাসীর কাছে এখন দিবালোকের মতোই সুস্পষ্ট। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মতপার্থক্য থাকলেও জামায়াত নেতারা কোনও অন্যায় করেছেন সে বিষয়ে গত ৪০ বছরে, আওয়ামী লীগের দুই শাসনকালেও কিছু করা বা বলা হয়নি। যুদ্ধচলাকালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভিযুক্ত সৈনিকদের দিল্লীতে বসে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর তাদের অপকর্মের দায়ভার জামায়াত-বিএনপির নেতাদের ওপর চাপিয়ে বিচারের সম্মুখীন করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ক্ষমতাসীন দলটি। দলটি ক্ষমতার দাপটে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েও বিচারাধীন নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করে ক্যাপিটেল পানিশমেন্ট দিতে ব্যর্থ হয়ে তরুণ প্রজন্মের ব্যানারে শাহবাগে বিপথগামী কিছু ব্লগারকে ও আওয়ামী ঘরানার লোকদের সমবেত করে তাদের মুখে ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই' শ্লোগান তুলে স্বাধীন দেশের নাগরিকদের সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। শুধু তাই নয়, বিরোধী আঠার দলীয় জোটে ভাঙন ধরিয়ে জোট থেকে জামায়াতকে বিচ্ছিন্ন করবার সবরকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আওয়ামী এবং বামপন্থী ব্লগারদের ইসলামবিরোধী অপকর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে আপত্তিকর উক্তির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাবার পর তওহিদী জনতার মাঝে যারপর নাই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গতকাল জুমাবার সারাদেশের ৪ লাখ মসজিদ থেকে আলেম সমাজ ব্লগারদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আয়োজন করে। কিন্তু সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকদের দিয়ে কোথাও কোথাও বিক্ষোভ ঠেকানোর লক্ষ্যে মুসল্লিদের মসজিদে জুমার নামায পর্যন্ত আদায় করতে দেয়নি বলে জানা গেছে। পুলিশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমসহ সারাদেশের বহু মসজিদে বিক্ষুব্ধ মুসল্লিদের ওপর গুলীবর্ষণসহ রাবারবুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে অনেককে আহত করেছে। মুসল্লিদের ওপর পুলিশের গুলীবর্ষণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করে মনে হয়েছে, দেশটা যেন কোনও অবরুদ্ধ জনপদে পরিণত হয়েছে। শত্রুদেশের পুলিশ যেন স্বাধীনতাকামী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলী চালাচ্ছে। পুলিশের গুলীতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রসুল (সঃ) এর অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মুসল্লি ও আলেমরা না হয় মিছিল নিয়ে কিছুদূর অগ্রসর হতেন। ব্লগারদের ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে কিছুক্ষণ শ্লোগান আর বক্তৃতা দিতেন। এর চেয়ে বেশি এমন কী আর হতো? কিন্তু আমাদের পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর লাঠিচার্জ, গুলী ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বহুলোককে আহত করেছে। রক্তরঞ্জিত করেছে মসজিদ ও রাজপথ। এর পরিণাম যে শুভ হতে পারে না, তা উপলব্ধি করবার ক্ষমতা নিশ্চয়ই ক্ষমতাসীনদের রয়েছে। পুলিশ অনেক আহত মুসল্লিকেও গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও রুজু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, জামায়াতে ইসলামীর নিরপরাধ নেতৃবৃন্দের অন্যায়ভাবে ফাঁসির দাবিকারী ও রসুল (সঃ)কে অবমাননাকারী ব্লগারদের পুলিশী নিরাপত্তা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ আলেম উলামার শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলী, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট চালিয়ে বহু মুসল্লিকে আহত করবার মতো ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। নিরপরাধ প্রতিবাদী মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের এ আচরণ শুধু দুঃখজনকই নয়, অবিশ্বাস্য ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
গণতান্ত্রিক দেশে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যে কোনও নাগরিক প্রতিবাদ জানাতেই পারে। বিক্ষোভ দেখাতে পারে। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বিরুদ্ধে কটূক্তিকারী ব্লগারদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন তো কেবল গণতান্ত্রিক অধিকার নয়, ধর্মীয় কর্তব্যও। এ দেশের ধর্মপ্রাণ তওহিদী জনতা গতকাল তাই করেছিল। কিন্তু পুলিশসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যে আচরণ করলো মুসল্লিদের সাথে তা অগ্রহণযোগ্য। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে কোনও নাগরিকের যেন ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়, সে ব্যাপারে মনোযোগী হবার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাই। অন্যথায় পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায়ভার ক্ষমতাসীনদেরই নিতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads