বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচর্চা একটি পর্যালোচনা


‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দিন বদলের প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’Ñ স্লোগানকে সামনে রেখে গত ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নিয়ম রক্ষার ১৯তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সপ্তমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আর দ্বিতীয়বারের মতো সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর এটা ছিল আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কাউন্সিল। দলের গঠনতন্ত্র মতে, কাউন্সিলরেরা হলেন সব ক্ষমতার অধিকারী নির্বাহী কমিটি নির্বাচনের ব্যাপারে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান দলগুলোর মধ্যে অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে যে, সভাপতির ওপর সব ক্ষমতা প্রদান করা হয় দলের নির্বাহী কমিটি গঠনের। এটা কতটুকু গণতান্ত্রিক তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। গঠনতন্ত্রে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে, ‘কাউন্সিলরদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব হলো কার্যকরী কমিটি নির্বাচন করা। আর সভানেত্রী কার্যকরী কমিটির মাত্র ২৬ জন সদস্য মনোনীত করতে পারবেন বা এর ক্ষমতা রাখেন।’
সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বর্তমানে কাউন্সিলরেরা হলেন ঠুঁটো জগন্নাথ। সব ক্ষমতার অধিকারী সভাপতি; তিনি যা বলবেন তা-ই গঠনতন্ত্র। আর কাউন্সিল হলো নিয়ম রক্ষার আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। যে স্লোগান নিয়ে আওয়ামী লীগ সম্মেলন শেষ করল, তা গত চার বছরের শাসনামলে কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে, তা বিশ্লেষণ করা দরকার। কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র বিকশিত হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে, সে সমাজ বা রাষ্ট্রে শান্তিÍ বিরাজ করা। গত চার বছরের শাসন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে রাষ্ট্রে অশান্তি আর বিভাজন সৃষ্টি করে চলেছে। প্রথমে আঘাত আসে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনীর ওপর। সেনাবাহিনীর সেরা চৌকস কর্মকর্তাদের বিডিআরে প্রেষণে নিযুক্ত ৫৮ জন শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা একসাথে নিহত হলেন। বিডিআর বিদ্রোহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর আগে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে বিডিআর প্রতিনিধিরা দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা করেছে, যা বিরল ঘটনা। একই সাথে এত সেনাকর্মকর্তা হত্যা মুক্তিযুদ্ধেও সংঘটিত হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে, তা বাংলাদেশে বিগত কয়েক শতাব্দীতেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। রামু, উখিয়া ও পটিয়ার কয়েক শতকের পুরনো বৌদ্ধমন্দির আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের নেতৃত্বে ধ্বংস করা হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও নন্দীরহাট হিন্দুপল্লী ও মন্দির পুড়িয়ে ধ্বংস ও লুটপাট, সাতক্ষীরা ও দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে হিন্দুপল্লী লুটপাট ও আগুন দিয়ে ধ্বংস, বাগেরহাটে কচুয়া উপজেলার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কর্তৃক হিন্দু গৃহবধূকে ধর্ষণ এবং তা প্রকাশ হয়ে পড়লে ভীতি প্রদর্শন করে তাদের সপরিবারে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া, নওগাঁয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা কর্তৃক খ্রিষ্টানদের জায়গা দখলÑ যা অতীতে অন্য কোনো সরকারের আমলে ঘটেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অপহরণ এখন দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা একলা চলাফেরা করতে এখন ভয় পান। সরকারের বাহিনী কর্তৃক গার্মেন্ট শ্রমিকনেতা অপহরণের পর হত্যা আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দলের অনেক জননন্দিত নেতাকর্মীকে অপহরণের পর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাংবাদিক দম্পতিকে হত্যার মূল আসামিদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। নিরীহ দোকানদার তরুণ বিশ্বজিৎ দাসকে যেভাবে সরকারি ক্যাডারেরা রাজধানীতে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে সেই দৃশ্য কোনো সুস্থ মানুষ দেখলে অসুস্থ হতে বাধ্য। নারী নির্যাতন, অপহরণ ও ধর্ষণ যেভাবে বেড়ে চলেছে তা বিবেকবান মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত, চলছে আওয়ামী লীগের দলবাজির শাসন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি আসামিদের ক্ষমা প্রদর্শন করে জেল থেকে বের করে এনে সমাজকে করে তুলছে অস্থিতিশীল। সর্বোপরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেশকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারের চার বছরে দেশে ২৪ জন গুম, ৭০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। তাদের তথ্যমতে- একই সময়ে ৮০৫ জন নারী ও মেয়ে শিশু ধর্ষণের, ১০১ জন গণধর্ষণের এবং ১৩ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। একের পর এক হত্যা মামলার আসামিদের মামলা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
জাতি-রাষ্ট্র বিকশিত হওয়ার মূল শর্ত হলো সেই রাষ্ট্র বা সমাজে গণতন্ত্র কার্যকর বা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকশিত হতে হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা সমাজ হলো যুক্তিবাদী। রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে কতটুকু ক্রিয়াশীল তার দ্বারা নির্ণয় করা হয় গণতন্ত্রের কার্যকারিতা। এ জন্য জরুরি হলো, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু স্বাধীনভাবে ক্রিয়াশীল তার মূল্যায়ন; যেমন বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, জনপ্রশাসন কতটুকু স্বাধীন, সর্বোপরি আইন বিভাগ কতটুকু কার্যকর।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২০০৯ সালে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। বিরোধী দল সংসদকে কার্যকর করার মানসে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় এবং মন্ত্রিসভার শপথ নেয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে। এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রথম দেখা যায়। কিন্তু সরকার বিরোধী দলের সহযোগিতাকে দুর্বলতা মনে করেছে। গত চার বছরে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো সংসদকে কার্যকর করতে না পারা। আজ দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নের সম্মুখীন। সুপ্রিম কোর্টকে দলীয়করণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গণমাধ্যমের ওপর অদৃশ্য সেন্সর আরোপ করা হয়েছে। সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের ওপর প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। সরকার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পত্রিকার সম্পাদককে উদ্দেশ্যমূলক হয়রানি করা হচ্ছে। সরকারি প্রচার মাধ্যমের খবর বেসরকারি টিভিতে প্রচারে বাধ্য করা হচ্ছে। বিভিন্ন কায়দায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে।
দেশে আজো প্রতিষ্ঠা পায়নি সংবিধানের নির্দেশিত স্থানীয় সরকার। ২১ বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বিদ্যমান স্থানীয় সরকারের সব সংস্থাকে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের পরিবর্তে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল। আপিল বিভাগের এই নির্দেশনা সরকার কার্যকর করেনি আজো। উল্টো এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং জেলা পরিষদ প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে পরিচালিত করা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
নির্বাচিত কমিশনের স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। দলীয় ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং এর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনসহ রাষ্ট্রের সব স্বাধীন প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক চলতে বাধ্য করা হয়, যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকশিত হওয়ার অন্যতম বাধা।
উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিনির্ভর করে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করা হয়েছে। এতে দেশে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ হচ্ছে খুব কম। উন্নয়নের একটি পূর্বশর্ত হলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন। দেশে বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাবে ুদ্র ও মাঝারি এবং বড় বহু শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েও উৎপাদনে যেতে পারছে না। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অন্যতম বড় বাধা হলো দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। প্রতিনিয়ত দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি আন্তর্জাতিকপর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। হলমার্ক, কুইক রেন্টাল ও শেয়ারবাজারের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। পুঁজির বিকাশ নির্ভর করে শেয়ারবাজার কতটুকু কার্যকর তার ওপর। বলতে গেলে ‘উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও দিন বদলের প্রত্যয়’ পরিণত হয়েছে স্লোগানসর্বস্ব বুলিতে।
লেখক :সাংবাদিক,  উইকলি নিউজ ম্যাগাজিন প্রোব
��ে � � � �9� @�� ��তির পরও আমদানি বাড়ানো যাচ্ছে না। এতে অর্থনীতিতে এক ধরনের শ্লথগতির চক্র সৃষ্টি হয়েছে। এর পরিণামে সবকিছুতে মন্দাভাব চাঙ্গা হচ্ছে। অর্থনৈতিক বিকাশ হারে ধীরে ধীরে নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হয়েছে। আর বাড়ছে স্থির আয়ের লোকদের দুর্দশা।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতির বহুমুখী প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। সরকারের এই মেয়াদের শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রবণতা হচ্ছে ঘৃণা ছড়ানো নীতি। এ নীতি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দুই ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হচ্ছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন মেরুকরণকে কেন্দ্র করে এ নীতি বিন্যাস করা হচ্ছে। এর অভ্যন্তরীণ প্রভাবে সমাজে এক ধরনের দ্বিধাবিভক্তি ও হিংসা ছড়িয়ে পড়ছে। ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের পরিবর্তে মানুষ নেতিবাচক প্রবণতায় আক্রান্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থনীতির সার্বিক চাহিদা হ্রাসে দেখা যাচ্ছে এর বিশেষ ভূমিকা। একই সাথে সরকারের উৎপাদনমুখী অগ্রাধিকার নিরাপত্তামুখী হয়ে পড়ায় অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স ও রফতানি বাজারের ওপর পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। ১৯৭১ সালে আমেরিকার পাকিস্তানকে সমর্থনদানের বিষয়টি সংসদের আলোচনায়ও বারবার আসছে। দেশটি ২২ শতাংশ বাংলাদেশী রফতানি পণ্য কেনার পরও বাংলাদেশের জন্ম শত্রুর তালিকায় ফেলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। এতে মার্কিন প্রভাবে নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের কার্যকর সহযোগিতা থেকে বাংলাদেশ অনেকখানি বঞ্চিত হচ্ছে। পদ্মা সেতুর ঋণ টানাপড়েনে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা বাতিল প্রক্রিয়ায়ও এর বিপজ্জনক পরিণতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইউরোপ হলো বাংলাদেশের বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। ইউরোপও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। সরকার জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ‘স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার’দের ফাঁসির দাবিতে মঞ্চ তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে ফাঁসির দাবি আর রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ দু’টিরই বিরোধিতা করে গেছেন সফরকারী ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের একটি নিত্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ১৯৭১ কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি মেরুকরণের প্রভাব বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও পড়ছে। আন্তর্জাতিকভাবে মানি লন্ডারিং আইনে কড়াকড়ির কারণে হুন্ডি চ্যানেলের রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি আসছে। ফলে এবার ২০ শতাংশের কাছাকাছি রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু নতুন জনশক্তি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে পারছে না। সরকারের রাজনৈতিক বিভাজননীতির ব্যাপারে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়ে আসছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলো। এ ব্যাপারে সেখানকার প্রবাসীদের মধ্যে শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।
বাংলাদেশ গত চার দশকে অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর এগিয়েছে। দুই লাখ কোটি টাকার কোটায় চলে গেছে জাতীয় বাজেট। অভ্যন্তরীণ সম্পদ দিয়ে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের চিন্তাও করা হচ্ছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়টি হলো এই অগ্রগতির ইঞ্জিন যেন ধীরে ধীরে গতি হারাতে শুরু করছে। নতুন শিল্প গড়ার মতো গ্যাস বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। এক শতাংশের কম সুদের দীর্ঘমেয়াদি রেয়াতি ঋণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর তহবিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এর বিপরীতে ৫-৬ শতাংশ সুদে সভরেন বন্ড ছেড়ে বিদেশী মুদ্রা সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল করে ফেলায় এর প্রভাবে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। আর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রফতানি বাজারের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা দুর্বল হচ্ছে বাংলাদেশী পণ্যের। সরকারের রাজস্ব সংগ্রহে সাফল্য গত বছরের এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডের পরিবর্তে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্র কেনার বিলাসিতা ঋণের চক্রে বেঁধে ফেলছে দেশকে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ হানাহানির রণহুঙ্কার ছড়িয়ে পড়ছে। শান্তি, স্বস্তি আর স্থিতি অর্থনীতিতে যে গতি সৃষ্টি করে নতুন পরিস্থিতিতে তা যে আবার উল্টোমুখী হতে শুরু করেছে তাতে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads