শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

দেশের সম্পদ, জনগণের বন্ধু পুলিশ তাদের শত্রু বানাচ্ছে কারা?



-খান মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী
আমি যখন মাধ্যমিক স্তরে পড়ালেখা করি তখন আমাদের প্রিয় স্যার জনাব আব্দুর রাজ্জাক পুলিশের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে একটি ঘটনা বলেন, যা স্মৃতি থেকে আজো মুছে যায়নি। আমাদের দেশের পুলিশ যতদিন দেখবো ততদিন এ স্মৃতি মুছবেও না। ঘটনাটি এমন বলে তিনি বর্ণনা করেন, ইংল্যান্ডের একজন নারীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার সন্তান ক'জন? তিনি উত্তর করেন আমার ৩টি ছেলে। একজন ডাক্তার একজন ব্যরিস্টার এবং তৃতীয়জন পুলিশ। পুলিশ বলে বৃদ্ধা মহিলা একটি লম্বা টান দিলে প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করলেন পুলিশ বলে এতবড় লম্বা টান দিলেন কেন? বৃদ্ধা বলেন, কেন জানেন না আমাদের দেশে পুলিশের চাকরি হচ্ছে অত্যন্ত মানসম্মত চাকরি এবং গৌরবের বিষয়। কারণ তারা দেশের সেবা করে জনগণের সেবা করে। আমাদের কেউ পুলিশে চাকরি করলে নিজেদের গর্বিত মনে করি। প্রিয় পাঠক এবার আমাদের দেশের অর্থাৎ বাংলাদেশের পুলিশের সম্পর্কে বৃদ্ধা মা কি বলেন একটু দেখি। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ একটি প্রতিবেদন তুলে ধরলাম ‘‘পুলিশ পরিবারের উৎকণ্ঠা’’ বাবারে তুই ঠিক আছিস তো। টিভিতে দেখলাম তোদের পেটাচ্ছে। সকাল থেকে অনেকবার ফোন করেছি ফোন ধরছিস না, টেনশনে তো আমরা শেষ। গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়ায় পুলিশ সদস্যদের ওপর ছাত্রশিবিরের হামলার পরে এভাবেই এক পুলিশ সদস্যকে রংপুর থেকে ফোন করে খোঁজখবর নেন তার বাবা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে ঘুম নেই পুলিশ পরিবারের সদস্যদের। আরেকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পরিবার থেকে বারবার ফোন আসছে। শুধু আমার নয়, প্রত্যেকটি পুলিশ সদস্যদের কাছে। অভিমানের সুরে তিনি বলেন, প্রতিদিন স্ত্রী বলে, ‘‘আমাকে একবেলা খাবার দিলেও হবে তবু তুমি আর পুলিশের চাকরি করো না।’’ প্রিয় পাঠকবৃন্দ দু'টি দেশের চিত্র তুলে ধরা হলো- ইংল্যান্ডের এক বৃদ্ধা মাতা তার ছেলে পুলিশ এই বলে গর্বিত মনে করেন আর বাংলাদেশের এক বৃদ্ধ বাবা দুশ্চিন্তায় ঘুমোয় না তার ছেলে পুলিশ বলে। আর এক নারী একবেলা খেতেও রাজি তবু স্বামীকে হারাতে চান না। তুলনা করলেই বুঝা যায়, বিশ্ব সভ্যতার যুগে আমাদের অবস্থানটা আজ কোন পর্যায়ে। কেন এমন হলো আমাদের? এদেশের পুলিশ কি প্রকৃতপক্ষেই খারাপ- না কি তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে? এমনও হতে পারে সেনাবাহিনীর ওপর নির্মমতা বিডিআর ধ্বংস করে এখন একমাত্র দেশে শান্তি-শৃক্মখলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশকে দুর্বল করা বা তাদের গুরুত্ব বা মর্যাদা মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারলেই সকল প্রকার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে পারে। পৃথিবীর কোন শাসক কি পেরেছে জনগণের বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠীর বিশেষ বাহিনীকে ব্যবহার করে টিকে থাকতে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে আমরা এর পরিষ্কার ফলাফল দেখতে পাই। ইরানের শাহগনি যখন দেশের জনগণের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীকে ব্যবহার করেছে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী বলেছে না আমরা নিরস্ত্র সাধারণ জনগণের ওপর গুলী চালাতে পারবো না তখন চিত্র পাল্টে গেছে। যখন মিসরের সরকারি বাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে গুলী চালাতে রাজি হয়নি তখন চিত্র পাল্টে গেছে। যখন তুরস্কের সেনারা বুঝতে পেরেছে জনগণের রায় উপেক্ষা করে কেবল শাসকগোষ্ঠীর মনবাসনা পূরণ করলে পিঠের চামড়া রক্ষা হবে না। তখনই চিত্র পাল্টে গেছে। আমাদের দেশের বর্তমান সরকার জামায়াত-শিবিরের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়েই মনে করেছে সব দমিয়ে ফেললাম। তারা ভেবেছিলো শিবিরের ওপর নির্মমতা চালালে ঘরে ঘরে মেসে মেসে গিয়ে গ্রেফতার করে হাত-পা ভেঙ্গে দিলেই বাকিরা ভয়ে আর রাস্তায় নামবে না। অথচ এরা এতটাই নির্বোধ যে, তারা বুঝতে চায়নি যে, অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা টাকা আর বিরিয়ানীর প্যাকেট পেয়ে মিছিল করে, যখন টাকা আর খাওয়া শেষ তখন কর্মীদের তৎপরতাও শেষ। অন্যদিকে শিবিরের ছেলেরা নিজের খাবার খেয়ে নিজের টাকা দিয়ে যে সংগঠন করে যারা নিজে জেলে গিয়ে তাদের নেতা বা সাথী ভাইকে বাঁচিয়ে দিতে অভ্যস্ত তারা কি কখনও জেল আর পুলিশের পিটুনির ভয়ে পিছপা হবে? কক্ষণই নয়। এরা মহাকবি আল্লামা ইকবালের অমর বাণী হৃদয়ে লালন করে। ধন অথবা তখত লাগি নয়কো মোদের যুদ্ধ জয়, কেউ কি ধনের বিনিময়ে ছাড়তে পারে জীবন ভয়? এরা আল্লামা সাঈদীর সাহসিকতার বাণী অনুসরণ করে মাননীয় আদালত কুরআনের দাওয়াত মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া যদি আমার অপরাধ হয় তাহলে আমার একবার নয় হাজার বার ফাঁসি হোক। এরা লালন করে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর কথা যিনি পরিবারের সদস্যদের বলেন, ইসলামী আন্দোলন করার কারণে আমি জেলে আছি আমি তোমাদের চোখে পানি দেখতে চাই না। ব্যক্তি নিজামীর পরিবারের চোখে পানি থাকলেও জামায়াতের আমীর নিজামীর পরিবারের চোখে পানি থাকতে পারে না। এরা অনুসরণ করে সেই মরহুম মাওলানা মওদূদী (রহঃ)-এর বলিষ্ঠ কথা ‘‘পুলিশের গুলীর ভয়ে যদি আমি বসে যাই তাহলে দাঁড়িয়ে থাকবে কে? ফাঁসির মঞ্চেও যিনি বলেছেন, জীবন-মৃত্যুর ফয়সালা আসমান থেকে হয় জমিন থেকে নয়, অতএব বর্তমান সেক্যুলার শাসকগোষ্ঠীর কাছে মাথানত করা বা প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। মিসরের মহিলা নেত্রী জয়নব আল গাজালী যিনি বলেছেন, মন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে লাভ নেই যত নির্যাতন হোক মাথা পেতে নেব তবুও আল্লাহদ্রোহী শাসকের কাছে মাথানত করার প্রশ্নই আসে না।’’ অতএব বর্তমান সরকার এবং তার মন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর এবং অতিমাত্রার আওয়ামী লীগ কামরুল সাহেব মুখে কথা বললেও তাদের ভেতরটা বড়ই জর্জরিত। ইদানীং মহীউদ্দিন খান আলমগীরের কণ্ঠস্বর একটু নরম মনে হচ্ছে জানি না এটা ঠান্ডা জ্বরের কোন কারণে হলো কিনা, তবে তার উদ্দেশ্যে একটা গল্প বলি। ‘‘এক যুবক তার বাবার পকেট খালি করে চোরাই পথে ভারতে যাচ্ছিল। পথে এক বৃদ্ধা মহিলা জিজ্ঞেস করলো বাবা কোথায় যাও? যুবকের টগবগ করা রক্ত আরো যাবে ইন্ডিয়া। সে বললো, ‘‘এই বুড়ি হাম ইন্ডিয়া যায়েংগা’’ যখন ইন্ডিয়া থেকে সব হারিয়ে আবার দেশে ফিরছিল ঠিক সে সময় আবার ওই বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করলো কি মিয়া কোথা গিয়েছিলে? তখন যুবক বলে ‘‘মাগো কলকাতা গিয়েছিলাম। তখন বৃদ্ধা মহিলা বললো, ‘‘যাওয়ার সময় বুড়ি আর আসার সময় মা, কেন মিয়া এখন আর তুমি হিন্দি বলো না’’। সত্যি কথা বলতে হয় মানুষ সব সময় হিন্দি বলতে পারে না কারণ মনের জোর সব সময় একই রকম থাকে না। বৃদ্ধা মহিলা যখন স্বর পাল্টে দিল তখন যুবকের কণ্ঠস্বরও পাল্টে গেল। আমাদের বুঝেই আসে না একটি দেশের নিবন্ধিত একটি দল বা ছাত্র সংগঠন কেন বিভিন্ন ইস্যুতে মিটিং মিছিল করতে পারবে না। যখন তারা সংবিধানের দেয়া অধিকার ভোগ করতে পারবে না অর্থাৎ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সভা-সমিতি করার অধিকার থাকবে। এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বরং সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে এখন জামায়াত-শিবির তাদের অধিকার ভোগের জন্য যদি অন্যের ওপর আঘাত হানে তখন এতো সমস্যা কেন। আইন বিজ্ঞানের মধ্যে একটি বিষয়ে বা কোর্সের নাম Law of Tort বা টর্ট আইন। এ আইনকে অনুবাদ করে বলা হয় দেওয়ানী ক্ষতি, আর কেউ বলে ব্যক্তিগত ক্ষতি। এখানে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে গান শোনা একজনের অধিকার। তাই বলে গভীর রাতে গান গেয়ে অন্যের ঘুমের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। অর্থাৎ যার যার অধিকার সম্পর্কে সজাগ সচেতন থাকতে হবে। কেউ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সরকারের অধিকার হচ্ছে শান্তিশৃক্মখলা বজায় রাখা। তাই পুলিশ রাস্তায় থাকবে। জামায়াত-শিবিরের এর অধিকার হচ্ছে মিটিং-মিছিল করা কেউ যদি কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে তাহলে বিশৃক্মখলা সৃষ্টি হয় না। কিন্তু কেউ যদি এর বিপরীত করে তবে বিশৃক্মখলার জন্য সেই দায়ী হবে। যে অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার জন্য প্রথমে ভূমিকা রেখেছে। আজ দেশে অনেক মানুষের ক্ষতি হচ্ছে জামায়াত ও শিবিরের অনেক লোক মৃত ও আহত, আবার পুলিশও মৃত্যুসহ পঙ্গুত্ব বরণ করছে। এর জন্য সেই দায়ী হবে যিনি অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ণের জন্য প্রথমে পদক্ষেপ নিয়েছে। আর দেশের জনগণ জানে সরকারের দলীয় কর্মী বাহিনী হিসেবে পুলিশ অন্যায়ভাবে জামায়াত-শিবিরের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। অতএব, সকল ক্ষতির জন্য দায়ী পুলিশ অথবা সরকার। ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জামায়াত-শিবিরের মিছিলে বাধা দেয়নি পুলিশ। ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সমাবেশে বাধা দেয়া হয়নি। ফলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ থেকে পরিষ্কারভাবেই জাতি বুঝতে পেরেছে সকল প্রকার বিশৃক্মখলার জন্য সরকার দায়ী। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের উচিত হবে এখন থেকে চাপাটা একটু নরম করা, তা নাহলে অবস্থা এমন হতেও পারে যে, এক লোক তার স্ত্রীকে পেটাচ্ছিল আর বলছিল তোকে তো পিটাই না পিটাই তোর মুখটাকে। অর্থাৎ মুখের কারণেই অনেকে পিটা খায়। এখন তো পিঠা খাচ্ছেন এ পিঠার ‘ঠ' যখন ট হয়ে পিটা হয়ে যাবে তখন রক্ষা করবে কে?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads