বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অশনি সংকেত



ভারতীয় চ্যানেলে হিন্দিতে ‘ডোরেমন' কার্টুনের ব্যাপারে গত রোববার সংসদে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আর পাশাপাশি এ কার্টুনটির প্রচারকারী চ্যানেল বন্ধের পক্ষে মত দিয়ে বলা হয়েছে, এই চ্যানেলটি হিন্দি ভাষা আর মিথ্যা বলা ছাড়া আর কিছুই শিখাচ্ছে না। সরকারি দলের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম গত রোববার সন্ধ্যায় ৭১ বিধিতে দেয়া জাতীয় জন-গুরুত্বপূর্ণ নোটিশের উপর বক্তব্য দিতে গিয়ে এই মত ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, এমন কার্টুন দেখাতে হবে যেগুলো শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দেয়, সময়মত পড়াশোনায় আগ্রহী করে। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেয়, এমন বিদেশী ভাষার কার্টুনও বাংলায় অনুবাদ করে দেখানো যেতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ভাষা আন্দোলনের এ মাসে জাতীয় সংসদে হিন্দি ভাষার আগ্রাসন সম্পর্কে কথা বললেন একজন সংসদ সদস্য। ভারতীয় চ্যানেলে হিন্দিতে প্রচারিত ‘ডোরেমন' কার্টুন সম্পর্কে তিনি বললেন, এ চ্যানেলটি দেখে শিশুরা হিন্দি ভাষা শেখা ও মিথ্যা বলা ছাড়া আর কিছুই শিখছে না। তিনি আরো আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে বাংলা বলার চেয়ে হিন্দি বলার লোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এত সংগ্রাম হলো, রক্ত দেয়া হলো, তার পরেও স্বাধীনতার এত বছরেও রাষ্ট্রভাষা সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হলো না। অফিস-আদালতে, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন বিলে এমনকি ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রেও চলছে ইংরেজি ভাষার দৌরাত্ম্য। ছায়াছবি, টেলিভিশন ও বিনোদন ক্ষেত্রে চলছে হিন্দি ভাষার দৌরাত্ম্য। এজন্য সংস্কৃতি সচেতন অনেকেই এখন বলছেন, আমাদের দেশে ইংরেজি ভাষার দৌরাত্ম্য বহুদিন ধরেই প্রকাশ্যে চলছে; এতদিন নীরবে হিন্দি ভাষার আগ্রাসন চললেও এখন তা প্রকাশ্য রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য কোন ভাল সংবাদ নয়।
আমরা জানি ‘ডোরেমন' বিষয়টি সূত্রপাত হয়েছে জাপান থেকে। জাপান নিজেদের দূত হিসেবে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে ডোরেমন কার্টুনকে। ডোরেমন সম্প্রচারে জাপানের স্বার্থ রয়েছে, সাংস্কৃতিক বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। চমকপ্রদভাবে তৈরি এ কার্টুনটির প্রসার লক্ষ্য করে ভারতীয় টিভি চ্যানেল বিষয়টিকে ‘ইমিটেট' করতে চেয়েছে। কার্টুনটি হিন্দিতে রূপান্তরের এই প্রয়াসে ভারতীয়দের সাংস্কৃতিক সম্প্রচারের কৌশলও লক্ষ্য করা যায়। ডোরেমনকে কেন্দ্র করে এইসব প্রয়াসে জাপান ও ভারতের সাংস্কৃতিক প্রচারণা লক্ষ্য করা গেলেও তাতে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের কোন স্বার্থ নেই। এই বিষয়টিই জাতীয় সংসদে একজন সংসদ সদস্যের বক্তব্যে উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, ভারতীয় চ্যানেলে হিন্দিতে ডোরেমন দেখে শিশুরা হিন্দি ভাষা শেখা ও মিথ্যা বলা ছাড়া আর কিছুই শিখছে না। প্রসঙ্গত উক্ত সংসদ সদস্য আরো বলেন, শিশুদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেয় এমন কার্টুন দেখানোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে বিদেশী ভাষার এমন কার্টুন অনুবাদ করে দেখানো যেতে পারে। কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তেমন উপলব্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রসঙ্গ উঠলে অনেকের সাংস্কৃতিক চেতনায় এলার্জী লক্ষ্য করা যায়। এরা বরং ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে উৎসাহ বোধ করেন এবং মেলোড্রামাও এদের রুচিতে বাধে না। এমন ভ্রান্তি বিলাস থেকে ঐসব সংস্কৃতিসেবীর এই জনপদের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার অনুকূলে তৎপর হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সরকার এবং প্রাজ্ঞজনরা ভূমিকা পালন করতে পারতেন। কিন্তু সঙ্গত ভূমিকা পালনের পরিবর্তে তাদের গাছাড়া ভাবটা বেশ পীড়াদায়ক মনে হচ্ছে। তাই হিন্দি সংস্কৃতির আগ্রাসন তথা অপসংস্কৃতির প্রসারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বর্তমান সময়ে প্রয়োজন স্বকীয় সংস্কৃতির বিকাশে বিভিন্ন মিডিয়াকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো। আমাদের সরকার এবং প্রাজ্ঞজনরা এক্ষেত্রে সঙ্গত ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসেন কিনা- সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads