সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ফালানী কে, জানেন না ভারতের পররাষ্ট্রসচিব !!!!

বাংলাদেশের জন্য চরম অবমাননাকর
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন ‘সর্বোচ্চপর্যায়ে সুসম্পর্ক বিরাজ করছে’ বলে উভয় দেশের সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ এই সুসম্পর্ক থেকে কী ফল পাচ্ছে তা এখনো সুস্পষ্ট নয়; বরং তাদের প্রতি ভারতের অনীহা, অবজ্ঞা ও ঘৃণার দিকটি ফুটে উঠেছে। প্রতিনিয়ত সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বন্ধ হয়নি। কখনো কখনো ভারতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এসব হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এসব হত্যাকাণ্ডে বাধ্য হয় বলে দাবি করা হচ্ছে। বিএসএফের হত্যা ও নির্যাতন থেকে বাংলাদেশের নারী ও শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না। এ রকম একটি উদাহরণ ছিল কিশোরী ফালানী হত্যাকাণ্ড। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারে আটকে পড়া ফালানীকে খুব কাছে থেকে গুলি ছুড়ে হত্যা করে বিএসএফ। কাঁটাতারে আটকে থাকা ফালানীর লাশের ছবি ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছাপা হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করে। বিএসএফকে একটি ট্রিগারহ্যাপি বা খুনি বাহিনী হিসেবে তুলে ধরা হয়। এ ধরনের একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব রঞ্জন মাথাই।
ঢাকায় বসে ফালানী সম্পর্কে এই অভাবনীয় মন্তব্য বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ভারতের চরম অবজ্ঞা ও হৃদয়হীনতার একটি নমুনা মাত্র। প্রকৃতপক্ষে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এই মন্তব্য করে সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতিনিয়ত হত্যার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলো ভারতের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ নয়Ñ এমন ধারণাই তিনি দিতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের নিরীহ মানুষকে হত্যার জন্য ভারতের যেখানে ক্ষমা চাওয়া উচিত, সেখানে সে দেশের পররাষ্ট্রসচিব ‘কিছুই জানি না’ বলে বাংলাদেশের জনগণকে অবমাননা করেছেন। এমনকি একই সাথে তিনি ফালানী হত্যাকাণ্ডকেও বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
ফালানী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ‘জানি না’ বললেও বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফালানী ভারতের নির্মমতার প্রতীক। ভারতকে যেভাবেই বন্ধু হিসেবে ক্ষমতাসীনেরা তুলে ধরুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে ফালানী দুই দেশের সম্পর্কের একটি মানদণ্ড হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের বন্ধুত্বের নমুনা খোঁজে ফালানীর ঝুলন্ত লাশের ছবির দিকে তাকিয়ে। রঞ্জন মাথাইয়ের এই মন্তব্য প্রমাণ করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন সমমর্যাদার-পর্যায়ে নেই। বাংলাদেশকে তারা একটি অনুগত রাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচনা করে। আমরা মনে করি, ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের এ ধরনের দায়িত্বহীন বক্তব্য নিন্দনীয়। বাংলাদেশ সরকারের উচিত জাতির পক্ষ থেকে অবিলম্বে তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads