সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

বিচার আরেক দফা প্রশ্নবিদ্ধ হবে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী আনা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত দুইজনের সাজা ঘোষণার পর আপিলের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় এই সংশোধনী আনা হলো। এমন এক পরিস্থিতিতে এই আইন সংশোধন করা হলো, যখন শাহবাগে কিছু তরুণ ট্রাইব্যুনালের রায় মানতে অস্বীকার করে আন্দোলন করছেন। ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আবদুুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই রায় ঘোষণার পর সরকার-সমর্থক ও বামপন্থী কয়েকটি সংগঠনের তরুণেরা তার মৃত্যুদণ্ড দাবি করে আন্দোলন শুরু করেন।

এই আন্দোলনের পরিপ্রক্ষিতে নতুন সংশোধিত আইনে ট্রাইব্যুনালে ঘোষিত রায়ের ব্যাপারে আসামিপক্ষের পাশাপাশি সরকারপক্ষ, বাদি ও আসামিপক্ষ আপিল করতে পারবে। আপিল নিষ্পত্তির জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। একই সাথে সংশোধিত আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচার করারও বিধান রাখা হয়েছে। জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা এর মাধ্যমে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যাবে বলে উল্লেখ করছেন। শাহবাগে আন্দোলনরত তরুণেরাও জামায়াতে ইসলামীর বিচার ও রাজনৈতিক দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। এই আইন সংশোধনের মাধ্যমে তাদের সেই দাবির প্রতিফলন ঘটল।
বিচারকার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ভূতাপেক্ষ আইন সংশোধন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিচারকার্যক্রম চলাকালে বা রায় ঘোষণার পর এভাবে আইন সংশোধনের সমালোচনা করেছে। সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জন্য এভাবে আইন সংশোধন করা হয়েছে। অপর দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান সভাপতিসহ দেশের অনেক সিনিয়র আইনজীবী বলছেন, রাজপথের আন্দোলনের দাবিতে যদি আইন সংশোধন করা হয়, তাহলে দেশে আইনের শাসন হুমকির মুখে পড়বে। বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা আরো কমে যাবে।
দেশে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। রাজপথে আন্দোলন করে চাপ দিয়ে রায় আদায়ের চেষ্টা করা হলে বা চাপের মুখে আইন সংশোধন করা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। বিচারকেরা তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তি-তর্কের ভিত্তিতে রায় দেবেন, কারো আন্দোলনের চাপের মুখে নয়। সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে দেশে প্রকৃত অর্থে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে।
আমরা মনে করি, শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এভাবে আইন সংশোধন করার কারণে পুরো বিচারপ্রক্রিয়া আরো এক দফা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর প্রশ্নবিদ্ধ বিচার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক-পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads