শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা আর আমরা করলে দোষ


মোঃ আমান উল্লাহ :
 সমাজে এমন অনেক কপট লোক রয়েছেন যারা নিজেদের কৃতকর্মকেই কেবল সঠিক ভাবেন এবং তা অন্যের নিকট বলেও বেড়ান। অনেকটা নিজের ঢোল নিজে পেটানোর মতই অবস্থা। পক্ষান্তরে তারা অপরের ভালো কাজের সামান্য স্বীকৃতিটুকু পর্যন্ত দিতে কার্পণ্যবোধ করেন। উপরন্তু সেই ভালো কাজটির উপর নানান রং চং লাগিয়ে একেবারে নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন। মিঃ ইবলিশের যাবতীয় কায়দা-কৌশল অনুসরণ করতে তারা পিছপা হন না। কথাগুলো আমাদের দেশের বর্তমান সরকারের বেলায়ও সমধিক প্রযোজ্য। এ প্রেক্ষিতে সরকারের দ্বিমুখী নীতির কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে চাই।
০১. প্রথমেই হরতাল প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে। প্রায় মাস দেড়েক পূর্বে (১৮ ডিসেম্বর) কয়েকটি নেতাসর্বস্ব বাম সংগঠনের ডাকে এদেশে আমরা একটি হরতাল প্রত্যক্ষ করেছিলাম। দেশের অন্যতম শীর্ষ আমার দেশ পত্রিকা  এই হরতালকে ‘‘বিচিত্র হরতাল’’ উল্লেখ করে তাদের লীড নিউজ প্রকাশ করেছিল। প্রখ্যাত কলামিস্ট বদরুদ্দিন উমর যাকে আখ্যা দিয়েছেন ‘‘সরকারের বেনামী হরতাল’’। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সমাজ চিন্তক কবি ফরহাদ মজহারের মন্তব্যটিও উল্লেখযোগ্য। তিনি বামদের সেই হরতাল নিয়ে আমার দেশ পত্রিকায় দুই কিস্তিতে কলাম লিখেছেন। কলামের প্রথম দিকেই তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘‘সিপিবি, বাসদ ও বাম মোর্চার দুর্ভাগ্য-হরতালের সাফল্য তাদের জন্য গৌরব নয়, চিরদিনের জন্য কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়ে গেল। তাদের এই হরতাল সরকারি হরতাল বলেই হাজির হয়েছে (আমার দেশ-২৪/১২/১২)
উক্ত হরতালের কয়েকদিন পর (২১ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম বামদের হরতাল নিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন তাও উল্লেখ করা সমীচীন মনে করছি। সেখানে তিনি হরতাল নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন এবং বলেন, ‘‘এমন বাপের বাপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একজন হয়েছেন, যিনি আবার-যারা হরতাল করেছে তাদের ধন্যবাদ দেন। তাদের কাছ থেকে হরতাল শিখতে বলেন।’’ অর্থাৎ এই হরতালের মাধ্যমে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবে আরেকবার পরিচিতি পেল। আমরা দেখলাম বামদের হরতালে পিকেটিং-এর জন্য সরকার পুলিশকে পর্যন্ত কাজে লাগিয়েছে। বাংলামোটর এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ কিভাবে প্রাইভেট কার-বাস ইত্যাদি আটকে দিয়েছে সংবাদপত্রে (আমার দেশ-১৯/১২/১২) তার সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অপর পক্ষে তার একদিন পরেই ইসলামপন্থীদের হরতালে ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের মহাসচিবসহ সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদেরকে পুলিশ মাদরাসা গেট থেকে পর্যন্ত বের হতে দেয়নি। পুলিশের এইরূপ উৎসাহী ভূমিকার জন্যই হয়তো আমাদের বিতর্কিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কনস্টেবলকে ‘পুলিশ অফিসার' হিসেবে পদোন্নতি দেয়া দরকার এই কথা বলে গত ১৯ ডিসেম্বর রূপসী বাংলা হোটেলের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন। এমতাবস্থায় স্বভাবত:ই প্রশ্ন জাগে-তাহলে কি একদেশে দুই আইন চলছে নাকি ইসলামপন্থীদের শায়েস্তা করার জন্যই যত আয়োজন। ইসলামপন্থীগণ পুলিশের নিকট শান্তিপূর্ণ মিছিল করার অনুমতিও চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের পুলিশ বাহিনী তাও হতে দেয়নি। মূলত এই সরকারের নিকট গণতন্ত্রের রীতিনীতি বয়ান করা, কর্মসূচি পালনের অনুমোদন চাওয়া কিংবা যাবতীয় অত্যাচার-অবিচার এমনকি হত্যার বিচার চাওয়া উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মতোই নিষ্ফল কাজ বৈ কিছু নয়। শুধু হরতালকে কেন্দ্র করে নয়, সরকারের এরূপ দ্বৈত নীতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে।
০২. গত ১০/১২/১২ইং তারিখে বিএনপি'র মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরকার গ্রেফতার করল। কারণ হচ্ছে তিনি আগের দিন অবরোধের সময় সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাংচুরের হুকুমদাতা। পরিচ্ছন্ন ইমেজের অধিকারী মীর্জা ফখরুলের মতো এমন একজন জাতীয় নেতা একটি গাড়ি ভাংচুরের জন্য আদেশ করলেন তাও সেটি একটি ময়লাবাহী গাড়ি। মিথ্যাচার বোধহয় এভাবেই ধরা পড়ে। কিন্তু এ প্রেক্ষিতে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাহলো, বিশ্বজিৎকে যে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা (?) পুলিশের নাকের ডগায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করলো তার হুকুমদাতা হিসেবে কেউ কি গ্রেফতার হয়েছে? গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার স্বার্থে তাকেও তো অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত। কিন্তু তার বাস্তবায়ন আদৌ হবে কি?
০৩. এই সরকারের গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডিফেন্স পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলামকে অসদাচরণের দায়ে আদালত এক মাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। অপরপক্ষে সরকারি আইনজীবী জিয়াদ আল মালুমকে তার অযাচিত আইন বিরুদ্ধ কর্মকান্ডের জন্য বিএনপি নেতা জাতীয় সংসদ সদস্য সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী তার অপসারণ ও শাস্তির দাবি করেছেন। তার আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম গত ১৯ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের কাছে যা ব্যক্ত করেছেন তাহলো, ‘যেহেতু তাকে ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারপতি সাপোর্ট দিতেন এবং সে প্রেক্ষিতে তিনি পদত্যাগও করেছেন। অতএব, ন্যায়বিচারের স্বার্থে জিয়াদ আল মালুমকেও অপসারণ করা উচিত।' ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে জিয়াদ আল মালুমকে অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী কমপক্ষে ১ বছর শাস্তি দেয়া হোক কিংবা বার কাউন্সিলের বিধান অনুসারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।' ‘আইনজীবী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরণ প্রদর্শনের অভিযোগে যেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল তেমনিভাবে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।' মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এই জিয়াদ আল মালুম সাহেবের ব্যাপারে মানুষের নিকট থেকে হুমকি দিয়ে টাকা খাওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ সংবাদপত্রের কলামে সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। কিন্তু কেন জানি কারো টনক নড়ছে না।
০৪. আমরা লক্ষ্য করি, বিএনপি দলীয় কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তাকে দেশের শত্রু জ্ঞান করেন অথচ আওয়ামী-বাকশালী কেউ দুর্নীতিতে জড়িত হলে তাকে দেশপ্রেমিক অভিহিত করেন। এটা কতটুকু কৌশলবাজ তৎপরতা ভেবে সত্যিই অবাক হতে হয়। এটা যেন হিটলারের শাসনামলের গোয়েবলসীয় কায়দার আরেক সংস্করণ।
০৫. ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যে, তাদের সাথে থাকলে জামায়াতের কোন দোষ থাকে না অথচ বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হলেই জামায়াত রাজাকার কিংবা যুদ্ধাপরাধী হয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলও রাজাকার হয়ে যান। আপোষহীন এই সেক্টর কমান্ডারকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দী হওয়ার ভাগ্য বরণ করতে হয়েছিল। আর এই আওয়ামী জামানায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমকেও রাজাকার এমনকি যুদ্ধাপরাধী অভিহিত করার মতো ঘটনা ঘটে। গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় বঙ্গবীরের নিজের কন্ঠে এই আক্ষেপ বের হয়ে এসেছে।
০৬. দেশবাসী জানেন যে, এক সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগ-জামায়াত একাট্টা হয়ে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। আজকের প্রধানমন্ত্রীসহ তুখোড় আওয়ামী নেতৃবৃন্দ তখন নিজামী-মুজাহিদ সাহেবদের সাথে একত্রে বৈঠক করতেন। বর্তমান মন্ত্রী ইনু সাহেবকেও তখন নিজামী সাহেবের সঙ্গে ভক্তি সহকারে হাত মিলাতে দেখা গেছে। যাকে বলে অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। কিছুদিন পূর্বে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রপাগান্ডা হওয়ায় ইনু সাহেব যাচ্ছেতাই বক্তব্য বিবৃতি প্রচার করেছেন। ইনু সাহেবের বোধহয় আন্দাজ নেই তিনি যে দলের সভাপতি সেই দলটি জামায়াতের একটি জেলা শাখার মর্যাদাও রাখে না। যা হোক, সে সময় বহু স্থানেই আওয়ামী লীগ ও জামায়াত নেতাদেরকে এককাপ চা কাপ ও পিরিচে ভাগাভাগি করে খেতে দেখা গিয়েছে। সেই সম্পর্কের প্রেক্ষিতেই বোধহয় আওয়ামী লীগ গত শাসনামলে জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তথা কোনরূপ অপরাধের অভিযোগই উত্থাপন করেনি। কিন্ত এ যাত্রা কি এক অদৃশ্য কার্যকারণে বিএনপিকে কোণঠাসা এবং জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এই আওয়ামী-বাকশালী চক্র আদাজল খেয়ে লেগেছে আল্লাহই ভালো জানেন।
০৭. আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলে বেড়ান যে, বিএনপি'র সবচেয়ে বড় দোষ তারা জামায়াত নেতা নিজামী-মুজাহিদ সাহেবদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় উক্ত নেতৃবৃন্দ যদি পরিষ্কার আয়নায় তাদের চেহারাটা একটু ভালো করে দেখে নিতেন তাহলে এরূপ মন্তব্য করতে নিশ্চই দ্বিধাবোধ করতেন। তাদের নিকট প্রশ্ন-রাজাকার হিসেবে খ্যাত জামালপুরের মাওলানা নূরুল ইসলাম, শেরেবাংলা তনয় একে ফায়জুল হক, বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগ কি তাহলে পুণ্য অর্জন করেছে? তাদের কি কোন কিছুতেই দোষ হয় না?
০৮. বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ট্রাইব্যুনালের একজন চেয়ারম্যান ছিলেন। আমরা জানি বিচারপতিগণ সংবিধান রক্ষার শপথ করে থাকেন। তাদেরকেও অনেক আচরণবিধি মেনে চলতে হয়। বিচারপতি নাসিম সাহেব বিশ্বখ্যাত ইকোনমিক পোস্টে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিচারকগণ বিচারিক বিষয়ে ঘরের স্ত্রীর সাথেও কথা বলতে পারেন না। অবশ্য দুর্মোখেরা বলছেন, এই বিচারপতি তার কথা রেখেছেন ঠিকই। তিনিতো ঘরের স্ত্রীর সাথে কথা বলেননি। বলেছেন দেশেরও বাইরে থাকা এক প্রবাসী ব্যক্তি ড. আহমদ জিয়া উদ্দিনের সাথে। তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টাব্যাপী কথার কেবল একটি উদ্ধৃতিই তুলে ধরলাম। তাহলো, ‘‘গবর্নমেন্ট গেছে পাগল হইয়া, তারা একটা রায় চায়’’ (আমার দেশ -১১/১২/১২)। বিচারপতির সেই সব কথা ফাঁস হয়ে আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়াতে তাতে অপরাধ হলো পত্রিকার। এটা কি করে হয়? প্রখ্যাত সংসদ সদস্য সালাই উদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে বিচারপতির সম্মুখে যথার্থই বলেছেন, যে চোর ধরে দেয় অপরাধটা কি তার না যে চুরি করে তার?
০৯. শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান দুর্নীতি করেছে মর্মে দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত জনসভাসমূহে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলে বেড়ান, তাতে কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু জয়ের দুর্নীতির তথ্যভিত্তিক সংবাদ তুলে ধরায় সময়ের সাহসী সম্পাদক অভিধায় খ্যাত আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে শেষ পর্যন্ত কারাগারে যেতে হয়েছিল। কারাগার যেন তাকে এখনও তাড়া করে ফিরছে অহর্নিশ। এভাবে আওয়ামী লীগ বরং অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের পুরনো সেই বাকশালী চরিত্র অদেখা নতুন প্রজন্মের কাছে উন্মোচিত করে দিয়েছে।
১০. বিগত ১৮ নবেম্বর বিরোধী দলীয় নেতা ভারত সফর সেরে এসেছেন সে দেশের সরকারি আমন্ত্রণে। এ নিয়ে আওয়ামী নেতারা সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন। যেন তাদের বাড়া ভাতে ছাই পড়েছে। কোন কোন ভুঁইফোড় আওয়ামী লীগ নেতা বলেছিলেন, খালেদা ভারত সরকারের সাথে বৈঠক করে কি কি বলে এসেছেন তারা তা জানেন এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন। কিন্তু এ প্রসঙ্গে এখন পর্যন্ত তারা নিশ্চুপ। আসলে যত গর্জে তত বর্ষে না। অপরদিকে মাননীয় শেখ হাসিনা যদি ভারত সফরে যান তখন তার প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ হয়ে যান। তখন মনে হয় শেখ হাসিনা কোন দেব- দেবীর নিকট গমন করছেন। আর যখন ফিরে আসেন তখন মনে হয় পুরো ভারতবর্ষ জয় করে ফিরে এসেছেন। আর এদেশের কিছু মোসাহেব বাম বুদ্ধিজীবী আছেন যারা নেত্রীর প্রশংসা কীর্তন করতে একপায়ে খাড়া হয়ে থাকেন।
১১. আরেকটি বিষয় মনে পড়লো। গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপি'র উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবারও মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী নেতারা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উক্ত সংবর্ধনায় যোগ দিতে নিষেধ করেন। অনেকে হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, দেখে নিবেন যারা সংবর্ধনায় যোগ দিবেন তারা কেমন মুক্তিযোদ্ধা। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, মুক্তিযোদ্ধারা কি তাদের দলীয় সম্পদ? আসলে যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনে নয়-ওপারের বিলাসবহুল হোটেলে দিন যাপন করেছেন তাদের নিকট থেকে এর চেয়ে বেশি আর কি আশা করা যেতে পারে? 
১২. আর সরকারের ইন্ধনে পুলিশের চলমান ভূমিকা গত চার বছরের গোটা শাসনকাল জুড়েই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিগত চার বছর পুলিশী নির্যাতন সহ্য করতে করতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা নিছক আত্মরক্ষার্থে পুলিশী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললে বুদ্ধিজীবী মহলসহ বিভিন্ন মহলে হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। তারা এ ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়। অথচ কিছুদিন যাবত পুলিশ যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলছে সে ব্যাপারে এইসব বর্ণচোরা মহল একেবারেই নিশ্চুপ। তারা এখন কানে তুলো গুঁজে বসে আছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, বয়স্কা মহিলা এবং মেধাবী ছাত্রীসহ ২১ জন পর্দানশীন মহিলাকে বাসা ও অফিস থেকে ধরে নিয়ে আসলো, তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা না থাকার পরও রিমান্ডে নিল তারপরও তথাকথিত মানবাধিকার কর্মীদের মুখে রা শব্দটি পর্যন্ত নেই। এসব দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় দেশটি বুঝি মারাত্মক কোন অভিশাপের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেল-যা থেকে আমরা কেউই রেহাই পাবো না। যা হোক, বর্তমান সরকারের পুলিশ নীতির ব্যাপারে বলছিলাম। এ ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে চাই না। এ প্রসঙ্গে আলাদা কলামে সবিস্তারে লেখার ইচ্ছা রইল। কেবল একটি ঘটনা উল্লেখ করে সমাপ্ত করবো। যদ্দুর মনে পড়ে ঘটনাটি গত বিএনপি শাসনামলের। পুলিশী তাড়নায় বর্তমান আওয়ামী লীগের এক ডাকসাইটে নেত্রী যিনি পুলিশকে কামড়ে পর্যন্ত দিয়েছিলেন। এ নিয়ে তখন এক রম্য কবি বলে উঠেছিলেন :
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়,
তাই বলে কি পুলিশে কামড়ানো নেত্রীর শোভা পায়?
উল্লিখিতরূপে কত যে দ্বিমুখী কর্মকান্ড ক্ষমতাসীনদের দ্বারা ঘটছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। এ প্রেক্ষিতে শুধু একটি মন্তব্যই করবো যে, শ্রীকৃষ্ণের জন্য যেটা লীলাখেলা, অন্যের বেলায় সেটাই হয়ে দাঁড়ায় মারাত্মক অপরাধ। এ নিয়ে একটি গানের কলি মনে পড়লো। গানটি প্রথম শুনেছিলাম আজ থেকে অন্তত ২০ বছর আগে গ্রামের এক সাধারণ মানুষের কাছে। সেই মানুষটি অপরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করলেও গানটি এখনও আমার কাছে জীবন্ত অর্থাৎ বাস্তব। তাহলো :
‘‘কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা আর আমরা করলে দোষরে---আমরা করলে দোষ’’।
-লেখক : সেক্রেটারি, নেত্রকোণা ফোরাম ঢাকা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads