রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ফ্যাসিবাদে আক্রান্ত মিডিয়া



ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আমার দেশ, দৈনিক সংগ্রামসহ মিডিয়া আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মিডিয়া বিরোধী তৎপরতা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, কয়েকদিন ধরে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেয়ার দাবিতে শাহবাগে ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ডাকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এ কর্মসূচিতে যেমন মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ ঘটছে, তেমনি উগ্রবাদী সরকার সমর্থকরা সেই মঞ্চ ব্যবহার করে রাজনৈতিক হীনউদ্দেশ্য চরিতার্থ করার অপপ্রয়াসও চালাচ্ছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সেখানে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আমার দেশ, নয়াদিগন্ত, সংগ্রাম, ইসলামিক টিভি ও দিগন্ত টেলিভিশনসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের নাম উল্লেখ করে তাদের বয়কটের আহবান জানানো হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পত্রিকা পোড়ানো হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলমান আন্দোলন থেকে মিডিয়া বিরোধী এসব তৎপরতা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সুষ্ঠু চর্চা ও বিকাশের অন্তরায়। আমরা মিডিয়ার প্রতি সহিষ্ণু মনোভাব প্রদর্শনের জন্য আন্দোলনকারীদের প্রতি আহবান জানাই।
শাহবাগের মঞ্চ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিকে উপলক্ষ করে উগ্রবাদী সরকার সমর্থকরা রাজনৈতিক হীনউদ্দেশ্য চরিতার্থ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে বলে সাংবাদিক নেতারা মন্তব্য করেছেন। সেখানে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সরকারি ঘরানার বাইরের পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল বয়কটসহ নানা হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে, পত্রিকা পোড়ানো হচ্ছে। এসব তৎপরতা যে গণতন্ত্রসম্মত নয় বরং মিডিয়া বিরোধী অপতৎপরতা তা স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। নতুন প্রজন্মের জাগৃতির নামে শাহবাগে ব্লগারদের মঞ্চ যে রাজনীতির বাইরে কিছু নয় তা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাই বিভিন্ন মিডিয়ার অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হচ্ছে, জাগৃতির নামে শাহবাগের মঞ্চে এখন ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সরকার যেখানে আদালত গঠন করেছে এবং আদালত একের পর এক রায় দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে সরকারের প্রশ্রয়ে আদালতের রায় না মানা এ কেমন কৌশল? পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, সরকার এক সাথে অনেকগুলো খেলা খেলতে গিয়ে নিজেই নিজের ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে। সরকার হয়তো চেয়েছিল যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দামামা বাজিয়ে বিরোধী দলকে কুপোকাত করতে এবং একই সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনের রায়কে মৃত্যুদন্ড রূপান্তরের উন্মাদনা ছড়িয়ে তরুণ প্রজন্মকে নিজের পক্ষে নেয়া। এভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার কৌশল আটলেও ভিড়ে মিশে যাওয়া বামপন্থীরা নিজের অস্তিত্ব জাহির করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না। তাই ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় চেতনার মঞ্চে সরকারি দলের নেতাসহ মন্ত্রী বাহাদুরদের নাজেহাল হওয়ার ঘটনা ঘটছে। আগে বিবাদীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আর এখন বিচার না মানার ঘোষণা দিয়ে বসেছেন বাদি পক্ষের লোকজন। এজন্যেই এখন অনেকেই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দিয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নতুন করে বিচার শুরুর আহবান জানাচ্ছেন। শাহবাগ মঞ্চের কারণে দেশে নতুন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে সরকারের কাঁধে দায়িত্বের বোঝা আরো বেড়ে গেল। জানি না নানা সঙ্কটে বিপর্যস্ত সরকার নতুন এই বোঝা কিভাবে সামাল দেবেন।
আমরা জানি ফ্যাসিবাদ সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে চায় না। সরকারের প্রশ্রয়ে শাহবাগ মঞ্চের উগ্রবাদীরা এখন শুধু সংবাদপত্রকে হুমকি-ধমকি ও পুড়িয়ে দেয়ার কর্মকান্ডেই নিজেদের সীমিত রাখছে না। তারা ভিন্নমতের নাগরিকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও দখলের হুমকিও দিচ্ছেন। তারা এখন ভিন্নমতের লোকদের ধোলাই দেয়ার জন্য আড়াই হাত লাঠিও প্রস্তুত করতে বলছেন। ফ্যাসিবাদের যন্ত্রণায় তারা এতটাই উন্মাতাল হয়ে পড়েছেন যে, ভোটার লিস্ট থেকে ভিন্নমতের লোকদের নাম কেটে দেয়ারও দাবি তুলেছেন। এজন্যই হয়তো সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, উগ্রবাদী সরকার সমর্থকরা শাহবাগ মঞ্চ ব্যবহার করে রাজনৈতিক হীনউদ্দেশ্য চরিতার্থ করার প্রয়াস চালাচ্ছেন। বাম ঘরানার কৌশল ও সরকারের প্রশ্রয়ে শাহবাগ মঞ্চে এখন যারা নর্তন-কুর্দন করছেন তাদের এখন এ বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, শাহবাগ মানেই বাংলাদেশ নয়। নর্তন-কুর্দনের মাধ্যমে কিছু লোককে সাময়িকভাবে মোহগ্রস্ত করা গেলেও এই জনপদের কোটি কোটি মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। আর এই জনপদের ইতিহাস একথা সাক্ষ্য দেয় যে, ফ্যাসিবাদের উল্লম্ফন কখনোই এই জনপদের মানুষের মন জয় করতে পারেনি। উল্লম্ফন যে উন্মুল হয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা তা উপলব্ধি করলেই তাদের এবং দেশের মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads