শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

দায়হীনতার রাজনীতি আর কত কাল?


বাংলাদেশের সব জনসাধারণ সব অবস্থায় দেশের সার্বিক কল্যাণ প্রত্যাশা করে। দেশ এগিয়ে যাক সমৃদ্ধির পথে, দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটুক, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দূর হোক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক এবং আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য একটি সুন্দর-স্বস্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোকÑ এমন আকাক্সাই সাধারণ মানুষের। এই চাওয়া শুধু চাওয়ার জন্য চাওয়া নয়, অন্তরের কামনা এবং আকুতিও বটে। তাদের অন্তরের এই কামনার বাস্তবায়নের জন্যই এরা মতাসীনদের দিকে তাকিয়ে থাকে। মতার মেয়াদ শেষ হয় কিন্তু গণমানুষের আকাক্সার ন্যূনতম বাস্তবায়নের সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। নতুন নির্বাচন হয়, নির্বাচনে সেই একই গল্পের সূচনা হয়। নানা প্রতিশ্র“তির মুলা ঝুলিয়ে বিরোধী প নির্বাচিত হয় এবং যথারীতি মতাসীনদের ‘অবশেষে মতা ফুরাইল এবং আবারো সুযোগ চাই’ বলে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধসহ নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির ফাঁদে দেশবাসীর জানমালের প্রভূত তি সাধিত হয়। মতাসীন-বিরোধীদের অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের প্রতিযোগিতায় জনগণের অভিযোগ শোনার কেউ থাকে না। এই হচ্ছে ৯০ দশক-পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক (?) বিবর্তন ধারার চলমান প্রক্রিয়া।

আওয়ামী লীগের সাথে আপসকামী বামপন্থী মেনন-ইনু এবং স্বৈরাচার এরশাদের মহাজোট গঠন এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মতায় অধিষ্ঠিত সরকার জনকল্যাণ বাস্তবায়নে আন্তরিক থাকবে এমন প্রত্যাশাই জনগণের ছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, ১০ টাকা সেরে চাল, ঘরে ঘরে চাকরি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা এবং পদ্মা সেতু নির্মাণসহ অন্যান্য নির্বাচনী অঙ্গীকার এমন জনপ্রত্যাশা সৃষ্টিতে ভিত হিসেবে ভূমিকা রেখেছিল কি না, তা প্রশ্নসাপে বিষয়। তবে জনগণ একটা পরিবর্তন চেয়েছিল। পরিবর্তন নিশ্চয় হয়েছে, তবে সে পরিবর্তন জনকল্যাণে, না মতাসীনদের ব্যক্তিগত-গোষ্ঠীগত কল্যাণে তার বিচার ভবিষ্যতে জনগণই করবে।
মতার নৌকায় যখন সরকারের সাথে সুবিধাবাধীরাও ওঠে, তখন এর ভার সইতে না পেরে মতার নৌকা হাবুডুবু খাবে এটাই স্বাভাবিক। সরকারের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে তাদেরই দোসর এসব সুবিধাবাদীরা টেন্ডারবাজি, ব্যাংক জালিয়াতি, নিয়োগ, বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা কুকীর্তিতে ব্যতিব্যস্ত থাকায় সরকার যেমন চোখে সরষে ফুল দেখছে, তেমনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, বিরোধী পকে অবদমনসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতিতে সরকারের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ব্যক্তিস্বার্থ রা করতে গিয়ে সরকার দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে। অতীতে শেয়ার কেলেঙ্কারি কিংবা হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় মতা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কিন্তু বিষয়টি জাতীয় ইস্যু হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর খুব বেশি প্রভাব পরিলতি হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড জাতি হিসেবে আমাদের মাথা যেমন নিচু করেছে, তেমনি সরকারের কপালে দুর্নীতির তিলক এঁকে দিয়েছে। গত দেড় বছরে সরকারের সাথে বিশ্বব্যাংকের এমন ইঁদুর-বিড়াল খেলায় গোবেচারী নখ-দন্তহীন দুদকের ভূমিকায় সংস্থাটির কথিত স্বাধীন ভাবমর্যাদাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জন আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে দুদক আবুলদের বাদ দিয়ে দুই-একজন আমলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলা করলেও তা দাতা সংস্থাটির তদন্ত প্যানেলের অভিজ্ঞ বর্ষীয়ান আইনজীবীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এমন টানাপড়নের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর জানুয়ারির মধ্যে সিদ্ধান্ত নতুবা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণার বিপরীতে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের জবাব এবং অতঃপর সরকারের ঋণের আবেদন প্রত্যাহারের চিঠি পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কালো অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে বলে মানুষ আশঙ্কা করছে। দেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার তিন কোটি মানুষের স্বপ্ন কি এখনো বেঁচে আছে, তা নিয়েও শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ২৯০ কোটি ডলারের বৃহৎ এ সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক এবং সহ-অর্থায়নকারী অন্যান্য সংস্থা নাম প্রত্যাহার করায় সরকার নিজস্ব অর্থায়নে খরচ কমিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। চীন-মালয়েশিয়া, ভারতসহ দাতা দেশের খোঁজে সরকার দরবার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রায় বিনা সুদে বিশ্বব্যাংকের ঋণের পরিবর্তে উচ্চ সুদে ওই সব দেশের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারের গোঁয়ার্তুমির ভার কিন্তু ভবিষ্যতে জনগণকেই বহন করতে হবে। শুধু ব্যক্তি আবুলদের রায় সরকারের এমন একটি রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা সরকারের ভাবমর্যাদাকে মারাত্মক প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মানুষ চায় স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নীতিও স্বাধীন হোক। বিশ্বব্যাংক থেকে বেরিয়ে আসবেন, অন্য দিকে আইএমএফের ঋণের ওপর নির্ভর করে মুদ্রানীতি, বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা করবেন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়াবেন, সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ দিকে সৈয়দ আবুল হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে হাজার হাজার টাকা খরচ করে গণমাধ্যমে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা মোটেও কাম্য নয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি তার অর্থনৈতিক সমতার পরিচয় দিতে পারেন কিন্তু এতে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যে হয়ে যায় না।
সংসদের চলমান অধিবেশনের গত ০৪-০২-২০১৩ তারিখের ৩০০ বিধিতে দেয়া বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে এবং তিন বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর জন্য তিনি প্রাক্কলিত বাজেট পরিবর্তনসহ রাজস্ব আদায়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। জনগণের প্রতি নিবেদন জানিয়েছেন এ প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের আস্তরিক সহযোগিতার জন্য। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদেরও সতর্ক করে দিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্টদের উন্নত মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের সক্রিয় তত্ত্বাবধানেই যখন দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়, তখন বলাই বাহুল্য দেশীয় অর্থায়নে সেই সম্ভাবনাকে কি কেবল উন্নত মূল্যবোধের দোহাই দিয়ে নাকচ করা যায়? আর দেশীয় অর্থায়নের ফলে মুদ্রার বিদেশী রিজার্ভে যে চাপ পড়বে এবং এতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গিয়ে জনজীবনে যে সীমাহীন দুর্ভোগের সৃষ্টি হবে তার দায়ভার কে নেবে? সরকারের মেয়াদ যখন আর মাত্র এক বছর অবশিষ্ট, তখন সরকারের এ  ধরনের অতি উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের কাজ শুরুর মরিয়া চেষ্টা কি পরবর্তী সরকারের কাঁধে অপ্রত্যাশিত ঋণের বোঝা চাপানোর হীন অপকৌশল, নাকি জনপ্রত্যাশা পূরণের সুযোগ চেয়ে নতুন করে মতায় যাওয়ার ফিকিরÑ এমন প্রশ্ন মানুষের মনে উঠতেই পারে।
দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণায় অতীতের মতো এবারো অতি উৎসাহী কিছু প্রতিষ্ঠানের সাহায্যের ঘোষণায় মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে। অতীতে এ রকম দুই-একটি অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান (ডেসটিনি) তাদের লোপাট করা জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের বৈধতা নিশ্চিত করতেই এমন হীন অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছিল বলে পরে প্রমাণিত হয়েছে। চাঁদা আদায়ের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষে রাবি ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল নিহত হয়েছে। এমনকি এর জন্য যে বেসরকারি শিাপ্রতিষ্ঠানের শিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক দিনের বেতন কর্তন হয়েছিল তা-ও মানুষ ভুলে যায়নি। তাই সরকারের এবারের ঘোষণায় যখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি রকিবুর রহমান ‘সরকারের কাছ থেকে প্রস্তাব পেলে পুঁজিবাজার থেকে পদ্মা সেতুর অর্ধেক টাকা দিতে প্রস্তুত আছি’ বলে সরকারকে আশ্বাসের অভয়বাণী শোনান, তখন মানুষের মনে আশা জাগতেই পারে, তাদেরকে ধরলেও বুঝি শেয়ার কেলেঙ্কারির লোপাট হওয়া টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। যেমনটি জনগণের টাকায় দেশপ্রেমের অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে গিয়ে ডেসটিনির প্রধান নির্বাহী রফিকুল আমিনদের থলের বিড়াল বেরিয়ে গেছে। শেয়ারবাজারের ক্রমাবনতি এবং জনগণের আস্থার সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা না করে সরকারকে রকিবুর সাহেবদের এমন তৈলমর্দনকে মানুষ কি ভালো চোখে দেখে? বরং শেয়ারবাজারে লোপাট হওয়া টাকা ফিরিয়ে এনে পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করুন, মানুষ বাহবা দেবে। মাননীয় উজিরে খামোখা (তার ভাষায়) সুরঞ্জিত বাবুরা যখন পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিতে বলেন, তখন তাদের প্রকৃত দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন জাগে। রেলওয়ের নিয়োগ বাণিজ্যের বস্তা বস্তা টাকার হদিস দিন এবং আগামী নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিন মানুষ সাড়া দেবে। দুর্নীতির দায়ভার কাঁধে নিতে জনগণের প্রতি ঐক্যের এই ডাক কি মতাসীনদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বেরই প্রমাণ নয়Ñ জনগণ জানতে চায়।
পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে সরকার যখন আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবতে বসেছে, তখন ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার নিবন্ধ নিয়েও সচেতন মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। সংসদে মহাজোটের এমপিরা তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার দাবি উত্থাপন করেছেন। কেউ কেউ তার এমন আচরণে ভীষণ কষ্টও পেয়েছেন। দু-একজন আবার খালেদা জিয়ার চোখের ছানি অপারেশন করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখারও পরামর্শ দিয়েছেন। তবে অতীতে আওয়ামী লীগের এমন আচরণকে মানুষ যেভাবেই দেখুক না কেন মতাসীনেরা এটাকে বিদেশীদের কাছে নিজেদের অবস্থান অবহিতকরণ হিসেবেই দেখতে চান, নালিশ হিসেবে নয়। এ েেত্র বিএনপির প থেকে বলা হচ্ছে, সংলাপের আহ্বানে বারবার ব্যর্থ হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ভবিষ্যৎ সঙ্ঘাত এড়ানোর জন্যই বিরোধী নেত্রীর এ ধরনের পদপে। জনগণ বিএনপির এ যুক্তি কিভাবে গ্রহণ করেছে সেটি ভবিষ্যতেই প্রমাণ হবে।
এফবিসিসিআইসহ ৯ ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশের বাণিজ্যসুবিধা প্রত্যাহার ও অবরোধ আরোপের আহ্বানসংক্রান্ত বিরোধীদলীয় নেতার নিবন্ধের ওই অংশটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বিরোধী নেতার এ ধরনের আত্মঘাতী আহ্বান কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ অতি সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ যখন আমেরিকাকে তুলোধুনো করে বললেন, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো দেশের হস্তপে শেখ হাসিনা মানবেন না, তখন কী ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর উদ্বেগ প্রকাশের যথেষ্ট কারণ ছিল না। একটি সার্বভৌম দেশের জন্য নিঃসন্দেহে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্ত তার জন্য একটি কূটনৈতিক রীতি থাকা দরকার। কিন্তু তিনি সেই কূটনৈতিক রীতি লঙ্ঘন করলেন তখনই, যখন জিএসপি সুবিধা নিয়ে তাদের সাথে বাংলাদেশের টানাপড়েন চলছে। সুবিধাটি বাতিল করে মিয়ানমারকে দেয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। সৈয়দ আশরাফের এমন বক্তব্যের সময় এফবিসিসিআই অথবা তাদের সহযোগী সংগঠনের প্রতিক্রিয়া কোথায় ছিল, সেটিও মানুষ জানতে চায়।
এ দিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লার ফাঁসির পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ায় বর্তমান প্রজন্মের ব্লগার অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের ডাকে গত ৫ তারিখ থেকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর উত্তাল। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সমাগমে মুহুর্মুহু স্লোগান উঠছে কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই। চলমান কোনো বিচারপ্রক্রিয়ায় এ ধরনের দাবি বিচারিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে কি না, সে ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত কি না, তা-ও ভাবা দরকার। কেননা প্রতিটি জনপ্রিয় আন্দোলনের মধ্যে ফ্যাসিবাদ উত্থানের ভীতি থাকে। তরুণদের এই আবেগকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হতে পারে বলে ইতোমধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় জেলায় মতাসীনদের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে বিভিন্নপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ যেভাবে সংহতি প্রকাশ করার নামে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিপে তরুণদের উসকে দিচ্ছেন, তাতে এ ধরনের আশঙ্কার যথার্থতার প্রমাণ হতেই পারে। প্রকৃতপে আইনের শাসনের প্রতি সবার আস্থা থাকা দরকার। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আইনের শাসনের লঙ্ঘন দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়। আর নৈরাজ্য হলো গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্র“। বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন যেমনটি বলেছেন, যে দেশ স্বাধীনতার জন্য গণতন্ত্রকে বিসর্জন দেয়, সে দেশ স্বাধীনতাও পায় না, গণতন্ত্রও পায় না। এই বাস্তবতা অনুধাবনের মতো যথেষ্ট প্রজ্ঞা নিশ্চয় আমাদের তরুণদের আছে বলেই মানুষ বিশ্বাস করতে চায়।
দেশের সব শ্রেণী-পেশার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সব ধরনের দ্বৈতনীতি পরিহার করা দরকার। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে দেশে যখন নিশ্চিতভাবে সঙ্ঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন সঙ্ঘাতের এই সম্ভাবনার বিপরীতে সংলাপ আয়োজনে এসব ব্যক্তি মানুষের সক্রিয় ভূমিকাও জনগণ দেখতে চায়। একই সাথে রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে। দায়হীনতার রাজনীতির যে সংস্কৃতি বাংলাদেশে শুরু হয়েছে তা-ও অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। দায়হীনতার পরিবর্তে দায়বোধের রাজনীতিই কেবল বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্ব পরিমণ্ডলে ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টি করতে পারবে বলে মানুষ বিশ্বাস করে। জনপ্রত্যাশা পূরণে দায়বোধের এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনীতিবিদদেরই করতে হবে। অগণতান্ত্রিক, অনির্বাচিত কোনো অরাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা তা সম্ভব নয়।
e-mail : habib_umam@yahoo.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads