মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৩

পেশাজীবীদের নির্বাচনে আওয়ামীপন্থীদের পরাজয় : ভবিষ্যতের আলামত



বিগত বছরের শেষ দিকে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যা-সঙ্কটে জর্জরিত মানুষকে এসব আশাবাদী করে তোলার জন্য যথেষ্ট বলা যায়। আওয়ামী মহাজোট সরকারের দুর্বৃত্তায়ন-দুঃশাসনে অতিষ্ঠ মানুষ সময় বুঝে যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে সেটা দিন দিনই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
দেশের শিক্ষক রাজনীতির কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢা.বি) শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে সরকার সমর্থক আওয়ামীপন্থীরা সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমান প্রশাসন দলীয় বিবেচনায় ৩২৮ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েও বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি। নির্বাচনে সরকারবিরোধী জাতীয়তাবাদী প্যানেল সাধারণ সম্পাদকসহ ৭টি পদে জয়লাভ করেছে। সরকারপন্থীরা পেয়েছে সভাপতিসহ ৮ পদ। এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জা.বি) শিক্ষক সমিতি নির্বাচনেও সরকারপন্থী ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ গো-হারা হেরেছে। বর্তমান সরকারের শুরুতে বিশেষ বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিতর্কিত ভিসি মাত্র দু’বছরে দু’শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েও সুবিধা করতে পারেননি। মনে রাখা দরকার, জাবির ৩৮ বছরের ইতিহাসে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের সংখ্যা ছিল তিনশ’। দলবাজ ভিসি নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে গত বছর শিক্ষক সমিতি নির্বাচনের আগে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তড়িঘড়ি ৩২ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। কিন্তু এভাবে দলভারী করেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। জাতীয়তাবাদী-বাম ও আওয়ামীপন্থীদের একাংশের বিরোধিতাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। এবারে তার অনুসারীদের গঠিত ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ জাবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে যে প্যানেল দেয় তার ভরাডুবি হয়েছে। ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১২টি পদে জয়লাভ করেছে জাতীয়তাবাদী বাম ও আওয়ামীপন্থী একাংশের ‘সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ’। একইভাবে সাংবাদিকদের সংগঠনেও জাতীয়তাবাদীদের জয়জয়কার। জাতীয় প্রেস ক্লাব নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসীরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১১টি পদে জয়ী হয়েছে। আওয়ামীপন্থীরা একটি সম্পাদকীয় পদসহ পাঁচটি সদস্য পদ পেয়েছে। প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা দেখা যায়নি। প্রকৌশলীদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইইবি) দ্বিবার্ষিক নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে জয়ী হয়েছে জাতীয়তাবাদী দল সমর্থিত সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (অ্যাব)। ভরাডুবি হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের। এই নির্বাচনে কার্যকরী পরিষদ সদস্য পদে বঙ্গবন্ধু পরিষদের ব্যানারে প্রার্থী হয়েও জয়ী হননি সরব তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি। কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ও বার কাউন্সিল নির্বাচনেও জাতীয়তাবাদীদের জয়লাভ সবার দৃষ্টি কেড়েছে। সরকারপন্থীরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও বেসুমার অপপ্রচার চালিয়েও সুবিধা করতে পারেনি।
এসব ঘটনার কোনোটাই সরকারের জন্য সুখবর বলা যাবে না। দেশের পেশাজীবীরা যেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন, সেটা জনগণের ঘুরে দাঁড়াবার আলামত ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না। এটা ক্ষমতাসীনরা বুঝতে পারছে না তেমনটি ভাবার কারণ নেই। ঢাবিসহ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া হচ্ছে না তার পেছনেও এ উপলব্ধিই কাজ করছে। এ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে সরকারপন্থীরা ভালো ফল করতে না পারলেও বলা হচ্ছিল জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে না। তখন হবে মার্কার নির্বাচন। কিন্তু টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়েই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে। এ থেকেই আগামী নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের একগুঁয়ে ভূমিকার পেছনের কারণটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ক্ষমতায় থেকেই কেন তারা নির্বাচনের জন্য গোঁ ধরে আছে সেটাও এখন পরিষ্কার। দলীয় নির্বাচনের মতোই তারা লোকদেখানো একটা জাতীয় নির্বাচন করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছে। এছাড়া পিঠ বাঁচানোর আর কোনো পথ খুঁজে না পেয়েই যে তারা সর্বশক্তি দিয়ে ইচ্ছা পূরণে নানান কূটকৌশল গ্রহণ করেছে, এটা বুঝতে বেশি বুদ্ধির প্রয়োজন পড়ে না। তবে পেশাজীবীদের মতো জনগণও যে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই আমাদের ভরসা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads