মঙ্গলবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৩

সোনার বাংলা শ্মশান হবে না



সাদেক খান
সরকারঘেঁষা পত্রিকাগুলো যদিও লিখেছে, সরকারের পঞ্চম বছরে বিরোধী দলের প্রথম হরতালটি ছিল নিরুত্তাপ, বোমাবাজি ভাঙচুরের হরতাল, টেলিভিশনের পর্দায় আর লোকমুখে স্যা ছিল : ৬ জানুয়ারি বিপ্তি কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাবের মারমুখী অবস্থানের মধ্যে গতকালও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা রাস্তায় প্রকাশ্যে মিছিল-পিকেটিং করতে পারেননি। তবুও হরতাল হয়েছে, ভয়ে নয়। মন থেকেই মানুষ হরতালের ডাকে সাড়া দিয়েছে। কারণ গত চার বছরে অনেক রাজনৈতিক বা মিশ্র এজেন্ডার হরতাল আহূত বা পালিত হয়েছে বটে, তবে হাল আমলে ৬ জানুয়ারির হরতালটিই ছিল শুদ্ধ জনস্বার্থের দাবিতে আহূত হরতাল। সরকারঘেঁষা পত্রিকাগুলোও না লিখে পারেনি : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা যে হরতালের ডাক দেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট; রাজধানীতে কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই হরতাল পালিত হয়েছে। রাজধানীতে মোটর যানবাহন চলাচল প্রায় ছিল না বলা যায়। বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। তবে রেল চলাচল ছিল। হরতালের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ভোর থেকেই কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী। অতীতের মতোই কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশ। তবুও রাজধানীর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তা সত্ত্বেও নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণ ও পুলিশের বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হরতাল চলাকালে রাজধানীর মিরপুরে একটি বাস, বাবুবাজারে একটি মাইক্রোবাস ও শাঁখারীবাজারে একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় আরো কয়েকটি গাড়ি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মোট ১১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য দিকে হরতাল শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম জানান, হরতালের আগেই রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপির তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশের হামলায় দলের সাড়ে তিন শ’ নেতাকর্মী আহত হন। হরতালের আগের দিন রাজধানীতে বোমা, ককটেল বিস্ফোরণ ও ১১টি বাসে আগুন দেয়ার অভিযোগে হয়রানিমূলকভাবে যে ১০ থানায় ১১টি মামলা হয়েছে তাতে যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার পর্যন্ত রমনা, নিউমার্কেট, লালবাগ, কোতোয়ালি, সবুজবাগ, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মিরপুর, কাফরুল, গুলশান ও বনানী থানায় মামলাগুলো করা হয়েছে।
মফস্বলের চিত্র : হরতালের আগের দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় র‌্যাবের পোশাক পরা সশস্ত্র ব্যক্তিরা ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে ধরে নিয়ে যান বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদারকে। এর ২ ঘণ্টা পরই ২০ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানা এলাকার একটি পেঁয়াজের েেত হাতকড়া পরা অবস্থায় তার লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী। রফিকুলের স্বজন ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর লোকেরা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। হাতকড়ার ওপর খোদাই করে ‘পুলিশ’ লেখা আছে। অবশ্য পুলিশ-র‌্যাব কেউ হত্যা বা গ্রেফতারের দায় স্বীকার করেনি। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাফাই গেয়েছেন, ‘বাজারে পুলিশ লেখা হাতকড়া কিনতে পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সন্ত্রাসীরা এ সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।’
রফিকুল ইসলাম ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব ও গুলিস্তান এলাকার ঢাকা মহানগর কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি। রাজধানীর শনির আখড়া (পূর্ব দনিয়া) এলাকায় তার নিজের ছয়তলা বাড়ি। তিনি পাঁচ ছেলেমেয়ের পিতা। শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার আনন্দনগর গ্রাম থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের হয়রানি ও গ্রেফতার এড়াতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।
এক কথায়, শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার হাল মেয়াদের শেষ বছরটা শুরু করল রক্তপিপাসু ফ্যাসিবাদী দমননীতির খুনি হাতের স্বার রেখে। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাত্রলীগ-যুবলীগ গুণ্ডাদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন হরতারের পিকেট ঠেকাতে হাতিয়ার নিয়ে রাজপথে নামার কুকাজে। প্রতিবাদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলীয় সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের ডেকে বলেছেন : ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনকালে র‌্যাব-পুলিশ ও ছাত্র-যুবলীগ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস করেছে। ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিক মজুমদারকে তার শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে র‌্যাব গ্রেফতার করার পর স্থানীয় একটি পুলিশ ফাঁড়ির কাছে তার হ্যান্ডকাপ পরিহিত গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে।
‘মতাসীন মহাজোট সরকার বিগত চার বছরে পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজার, হলমার্ক, রেলওয়ে, কুইক রেন্টাল খাতসহ বিভিন্ন েেত্র আকাশচুম্বী দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। সরকারের দলীয় লোকেরা নদী-ভূমি-সমুদ্র দখল, বিনা টেন্ডারে তাদের লোকদের ৮৫টি কুইক রেন্টাল প্রকল্পের কাজ দেয়া, খালে-বিলে নামে-বেনামে লাশ পড়ে থাকা, সর্বোপরি দেশকে তারা মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত করেছে।’
একইভাবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সোনার বাংলাকে গত চার বছর ধরেই হত্যাযজ্ঞের শ্মশান বানিয়ে রেখেছিল ইন্ডিয়ান বিএসএফ, আর দিল্লির নেতারা মুখে বারবার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এসেছেÑ সীমান্তে নির্বিচার গুলি বন্ধের আদেশ দেয়া হয়েছে। সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে তার বৃত্তান্ত প্রকাশিত হয়েছে ভারতের সীমান্ত বেড়ার কাঁটাতারে ঝুলন্ত পঞ্চদশী ফালানীর লাশের চিত্রসহ। এবারো ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনী বিএসএফ নতুন বছর শুরু করেছে নিরপরাধ বাংলাদেশী হত্যার মধ্য দিয়ে। গত এক বছরে ৪২ জনকে খুন করে তাদের রক্তপিপাসা মেটেনি। বছরের শুরুর দিন মঙ্গলবার তারা ঠাকুরগাঁও সীমান্তে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তাদের গুলিতে আহত হয়েছে আরো তিনজন। কাউকে গুলি করে, কাউকে পিটিয়ে আবার কোনো কোনো এলাকায় পাথর ছুড়ে বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। গত এক বছরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে আহত হয়েছে ১২৪ জন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এমআরটি) বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক বছরে বিএসএফ ৯৬ জন বাংলাদেশী নাগরিককে অপহরণ করে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এর মধ্যে হাবিবুর রহমান নামে এক যুবককে বিএসএফ ধরে নিয়ে উলঙ্গ করে নির্মম নির্যাতন চালায়। ওই দৃশ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীদের প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু বিশ্ববিবেকের সেই প্রতিবাদও বিএসএফকে নিরস্ত্র বাংলাদেশী হত্যা থেকে বিরত করতে পারেনি। ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বুজরুক ও মোলানী সীমান্তে নিহত হলো দুই বাংলাদেশী। পরদিন আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিভীষণ সীমান্তে ২ জানুয়ারি ভোরে গরু ব্যবসায়ী দুই বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনী বিএসএফ। তারপর ৩ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টায় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় বাংলাদেশে ঢুকে েেত কর্মরত দুই কৃষককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফের সদস্যরা। ৩১ ডিসেম্বর রাতেও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্ত থেকে এক বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল বিএসএফ, এ কথা না লিখে পারেনি ভারতবান্ধব বাংলাদেশী দৈনিকগুলোও।
৩ জানুয়ারি ফের চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বেনিপুর সীমান্ত থেকে এবং লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্ত থেকে দুই বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বুজরুক সীমান্তে নিহত দুই বাংলাদেশীর লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে নিহত দুই বাংলাদেশীর লাশ ফেরত দেয়নি।
বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সীমান্ত হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের সামনে বছরের প্রথম দিনেই কুম্ভীরাশ্র“ বর্ষণ করেছিলেন। অপহরণ আর গুলিচালনা অব্যাহত রেখে ভারতীয় বিএসএফ তার বিপরীত বার্তার ঢাক পিটিয়ে চলেছে বাংলাদেশের সীমান্তবাসীদের কর্ণকুহরে। একটা সংবাদ সমীায় ভাষ্যকার আবু সালেহ আকন লিখেছেন, যেন সবিশেষ বার্তা সঙ্কেত প্রেরণের জন্যই বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনী বিএসএফ বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ডে প্রাণনাশ করছে নিরপরাধ বাংলাদেশীদের। পয়লা বৈশাখ, ইংরেজি নববর্ষ, বিজয় দিবস, মে দিবস, এমনকি ঈদের দিনেও বাংলাদেশীদের হত্যার ঘটনা ঘটেছে। মহাজোট সরকারের গত চার বছরে বিএসএফ হত্যা করেছে আড়াই শ’ বাংলাদেশী নাগরিক। বিশ্লেষকদের ধারণা, বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে বিএসএফ পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করেছে বাংলাদেশের নাগরিকদের। বুধবারও ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন দুই বাংলাদেশী। আগের দিন ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন খুন করেছে দু’জনকে। এ দিকে সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণের পে সাফাই গেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, আত্মরার্থে সীমান্তে গুলি করা যাবে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন যশোর জেলার বেনাপোলের সাদীপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় মুন্না (১৮) নামের এক বাংলাদেশী যুবক। এ সময় বিএসএফের গুলিতে আহত হয় মামুন (২৩) নামের অপর এক যুবক। একই দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর নীতপুর সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে সানাউল্লাহ (৩২) নামের এক বাংলাদেশীকে। ২০১২ সালের পয়লা বৈশাখ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে ফারুক হোসেন (২৫) নামে এক যুবককে। গত মে দিবসে রহমত নামের এক বাংলাদেশীকে হত্যা করে বিএসএফ। ২০১১ সালের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের বিজয়ের যখন ৪০ বছর উদযাপিত হচ্ছিল, ঠিক সেই দিন বিএসএফ বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করে। মেহেরপুরের গাংনি সাহেববাড়ি সীমান্তে ওই দিন নিহত হন নাহারুল (৪০) নামে এক বাংলাদেশী। একই দিন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বোমার আঘাতে নিহত হন আনোয়ার হোসেন (২৭)। আহত হয় মোহর আলী নামে অপর এক যুবক। ওই দিন দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে মতিয়ার (২০) ও তাইজুদ্দিন (৩০) নামে দুই বাংলাদেশীকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। ২০১২ সালের ২০ আগস্ট ঈদুল ফিতরের দিন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার হাটখাতা সীমান্তে বিএসএফ সদস্যরা জাহাঙ্গীর আলম বাবলু নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে। এ বছর ইংরেজি নববর্ষের দিন ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফ হত্যা করেছে মুক্তার আলম ও তরিকুল ইসলাম ওরফে নুর ইসলাম নামে দুই যুবককে। এর ২২ ঘণ্টার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সীমান্তে মাসুদ আহম্মেদ ও শহীদুল ইসলাম নামে দুই বাংলাদেশী যুবককে হত্যা করেছে বিএসএফ।
গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এমআরটি) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, মহাজোট সরকারের গত চার বছরে ২৫০ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। চলতি বছরের প্রথম দুই দিনেই খুন হয়েছেন চারজন। আহত হয়েছেন তিনজন, অপহৃত হয়েছেন আরো দু’জন। ২০১২ সালে বিএসএফের হাতে খুন হয়েছেন ৪২ জন, ২০১১ সালে ৩৪ জন, ২০১০ সালে ৭৪ জন এবং ২০০৯ সালে নিহত হয়েছেন ৯৬ জন।
বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব:) আ ল ম ফজলুর রহমান বলেছেন, ভারতমুখী পররাষ্ট্রনীতির কারণেই এভাবে বিএসএফ বাংলাদেশীদের হত্যার সাহস পাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ভারত সরকারের আগ্রাসী নীতির শিকার বাংলাদেশ। প্রতি চার দিনে ভারত খুন করছে একজন বাংলাদেশীকে। আদিলুর রহমান বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে রক্তাক্ত সীমান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্ত। বাংলাদেশের নাগরিকেরা অরতি। বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির জন্যই এ ঘটনা ঘটছে। এখন গণপ্রতিরাব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। নাগরিকদেরকেই তাদের নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।
এ দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়োজনে সীমান্তে গুলি করা যাবে। এ ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভারতের সাথে ছয়টি দেশের সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান সীমান্তেও কোনো নিরস্ত্র মানুষ হত্যার ঘটনা নেই। অথচ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গড়ে প্রতি চার দিনে একজন নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, একটা বিবিসি সংলাপে সমুচিত জবাব এসেছে। সোনার বাংলাকে যারা মৃত্যুপুরীতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র পাকিয়েছে তাদের জন্য। এক দর্শক-শ্রোতার প্রশ্নের জবাবে ওই সংলাপ অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেছেন, সীমান্তে বিএসএফ গুলি চালানো বন্ধ না করলে তার দল মতায় এলে পাল্টা গুলি চালানোর নির্দেশ দেবে। এই সরকারের মতো নিশ্চুপ বসে থাকবে না। বিজ্ঞানী নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসরণ করবে। অর্থাৎ পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সংলাপের আরেক অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার কাছে জানতে চান, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি মতায় ছিল। তখন সীমান্তে গুলি ও হত্যা বন্ধে বিএনপি সরকার কী কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে? কয়টা গুলি করেছে? তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাফাইয়ের সাথে কিছুটা দ্বিমত প্রকাশ করে একই প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, সীমান্তে যে ঘটনা ঘটছে, তা নিন্দনীয়। এর প নিয়ে যদি কোনো ব্যক্তি বা মন্ত্রী কোনো বক্তব্য দেন তাহলে সেটা তাদের ব্যক্তিগত, সরকারের নয়।
হান্নান শাহকে ধন্যবাদ, তিনি দেশবাসীর মনের কথা প্রতিধ্বনিত করেছেন। তার দল সে কথায় সায় দেবে কি না সেটা এখনো বলা যায় না। তবে ঘরে-বাইরে এ দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করার যে সাঁড়াশি অভিযান চলছে, তাকে প্রতিহত করতে এ দেশের মানুষ যে কায়মনোবাক্যে প্রতিরোধের ঐক্য গড়ে তুলছে, এ কথা নিঃসন্দেহ।
লেখক : বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads