শুক্রবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৩

ওয়ান-ইলেভেনে কী ঘটেছিল


বেগম খালেদা জিয়া ৮ ডিসেম্বর ২০০৯ দলের জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেছিলেন, “আপনারা জানেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে কী ঘটেছিল! আপনারা জানেন, সেই দিনটির নাম চক্রান্তকারীরা দিয়েছে ইংরেজি ভাষায় ওয়ান-ইলেভেন। এই নামটি তারা নকল করেছিল ২০০১ সালের আমেরিকার টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে হামলার অনুকরণেÑ যার নাম হয়েছিল ‘নাইন-ইলেভেন’। সেই নাইন-ইলেভেনের গেরিলা হামলা আমেরিকার হৃৎপিণ্ডে আঘাত করেছিল। আর ঠিক একই ভাবে সেই ওয়ান-ইলেভেনের চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ডে আঘাত করেছিল।”

১১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। রাত সোয়া ১১টায় বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শান্তিশৃঙ্খলা ও সহিষ্ণুতার অভাব দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অসহিষ্ণু ও হিংসাত্মক আচরণের ফলে অনেক মূল্যবান নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে গেছে এবং দেশর অর্থনীতি গভীরভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা, যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আমারা আজ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় নিপতিত। শান্তিশৃঙ্খলা দারুণভাবে বিঘিœত। কম-বেশি সবাই জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত এবং গণমানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন সীমাহীন কষ্ট ও দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।’  তিনি আরো বলেন, “রাষ্ট্রপতি পদের অতিরিক্ত হিসেবে আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেয়ায় যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তা দেশ ও জাতিকে দুু’টি বিপরীত ধারায় বিভক্ত করেছে। আমার সরকারের সব ক’টি পদপে সব রাজনৈতিক দলের কাছে সমাদৃত হয়নি। প্রায় প্রতিটি সিদ্ধান্তে একজোটের পে মতামত দিলে অন্য জোট বিপে অবস্থান নিয়েছে।’ মজার ঘটনা, ১২ জানুয়ারি ২০০৭-এর জাতীয় দৈনিক থেকে জানা যায়, জরুরি অবস্থা জারির আগে রাষ্ট্রপতি সেদিন দুপুরে বঙ্গভবনে সেনাপ্রধান লে. জে. মইন ইউ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল হাসান আলি খান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজমের সাথে প্রায় ২ ঘণ্টা আলোচনা করেন। এর আগে বিকেলে উপদেষ্টা পরিষদের নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করা হয়। বঙ্গভবনে পৌঁছার পরই উপদেষ্টারা জানতে পারেন নির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল করা হয়েছে।

ষড়যন্ত্রের জাল
ওয়ান-ইলেভেন ছিল দেশের সামরিক নেতৃত্ব, সুশীলসমাজের একাংশ এবং পশ্চিমা কূটনীতিকদের পরিকল্পনার ফসল। একে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আন্দোলনের ফসল দাবি করলেও অস্বীকার করার উপায় নেই ২৮ অক্টোবর ২০০৬ থেকে ১১ জানুয়ারি ২০০৭ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পরিচালিত সহিংস লাগাতার আন্দোলন ওই তিন শ্রেণীর সম্মিলিত এজেন্ডা বাস্তবায়নে হয়েছিল সহায়ক। আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার আন্দোলনের ল্য ছিল ২২ জানুয়ারি ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে ভণ্ডুল করা, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা, এম এ আজিজের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশনকে পদচ্যুত করা এবং নতুন আরেকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার সৃষ্টি করা। মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনরা লীগের সব আকাক্সাই একে একে পূরণ করেছিলেন তাদের অবৈধ ও অসাংবিধানিক মতাচর্চার মধ্য দিয়ে।
উইকিলিকসের তথ্য
“Senior Military official discusses state of emergency with Ambassador” শিরোনামে ১২ জানুয়ারি ২০০৭-এ ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটিনেসের আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো বার্তাটি ছিল নিম্নরূপÑ “A senior military official told the Ambassador the military approached president/chief advisor Iajuddin Ahmed to press him to declare a sate of emergency and resign as chief advisor. The military moves were motivated both by UN Statements that military participation in a one sided election could jeopardize participation in UN peace keeping operation (UNPKO)” অর্থাৎ একজন সিনিয়র সামরিক অফিসার মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন, ‘সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রপতি/প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ এবং জরুরি অবস্থা জারির জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন। একতরফা নির্বাচনে সেনাবাহিনী অংশ নিলে জাতিসঙ্ঘ শান্তি মিশনে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এ মর্মে জাতিসঙ্ঘের বিবৃতির কারণেই সামরিক বাহিনী এ পদপে নিয়েছে।’ (Cable # 07DHAKA66/ dated: 12-01-2007, US Embassy,Dhaka)
‘Military Met with president to press for solution’ শিরোনামে একই দিন প্রেরিত আরেক বার্তায় লেখা হয়েছে ‘According to Amin, the three services chiefs plus Army Principal staff officer maj. gen. Md. Jahangir Alam Chowdhury and chief of Army staff Lt. Gen. Moin U. Ahmed met with president Iajuddin Ahmed at their request at approximately 1700 January 11. In that meeting; they urged the president to resign as chief advisor, appoint a new chief advisor, cancel the scheduled January 22 election and reschedule a new elections after creating the condition for free; fair and credible elections in which all parties participate. Responding to a question from the Ambassador, Amin said they didn’t give the president time to consider his decision because they ‘knew if he asked (the BNP), he would be told not to agree.” Amin claimed the president accepted the military’s arguments on the need for a state of emergency. He did not say, nor did the Ambassador ask whether the president’s decision resulted from undue pressure.
(অর্থাৎ আমিনের ভাষ্য অনুযায়ী সেনাপ্রধান লে. জে. মইন ইউ আহমেদ, সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার মে. জে. মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ তিন বাহিনীর প্রধান তাদের অনুরোধে ১১ জানুয়ারি আনুমানিক বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সাথে সাাৎ করেছেন। ওই সাাতে তারা রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ, একজন নতুন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ, ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন বাতিল, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি করে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানায়। (মার্কিন) রাষ্ট্রদূতের এক প্রশ্নের জবাবে আমিন জানায়, রাষ্ট্রপতিকে তার সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য কোনো সময় দেয়া হয়নি, কারণ ‘তারা জানে যদি বিএনপিকে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে (বিএনপি) বলবে তাদের প্রস্তাবে সম্মত না হতে’। আমিনের দাবি, জরুরি অবস্থা জারির প্রয়োজনীয়তা রাষ্ট্রপতি উপলব্ধি করেছেন। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত কোনো অযৌক্তিক চাপের মুখে পড়ে রয়েছে কি না আমিন কিংবা (মার্কিন) রাষ্ট্রদূত কেউই এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।’)
একই দিন প্রকাশিত ‘Next Steps’ শিরোনামে আরেক বার্তায় বলা হয়েছে, “Amin confirmed the current advisors all submitted their resignation following the presidents declaration of state emergency. Law & justice advisor Justice Fazlul Haque, as the senior most ranking advisor, agreed to remain as acting chief advisor pending selection of a new chief advisor. Amin reported Nobel laureate professorMd.Younus declined when asked to accept the position of chief advisor. Instead former Bangladesh Bank (the Central Bank) Governor Fakhruddin Ahmed would be chosen. Amin expects the president to appoint 10-15 additional to assist Fakhruddin. (note: The president’s office has confirmed the selection of Fakhruddin as the next chief advisor. He is scheduled to be sworn in at 1900 local January 12. The Ambassador and other chiefs of mission will attend. End note.) অর্থাৎ ‘পরবর্তী পদপে আমিন নিশ্চিত করেছে, রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা ঘোষণার সাথে সাথেই বর্তমান উপদেষ্টাদের সবাই তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। সিনিয়র উপদেষ্টা বিচারপতি ফজলুল হক একজন নতুন প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থাকতে সম্মত হয়েছেন। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইফনূসকে প্রধান উপদেষ্টা পদে অমন্ত্রণ জানালে তিনি তাতে সম্মত হননি। তার পরিবর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদকে পছন্দ করা হয়েছে। আমিন আশা করছেন, ফখরুদ্দীনকে সহায়তার জন্য আরো দশ-পনের জন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হবে (দ্রষ্টব্য : পরবর্তী প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ফখরুদ্দীনের নিয়োগকে রাষ্ট্রপতির অফিস চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় তার শপথ গ্রহণের সময়সূচি নেয়া হয়েছে। (মার্কিন) রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য মিশনপ্রধান (সে অনুষ্ঠানে) যোগ দেবেন। দ্রষ্টব্য শেষ।)
সে অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জোটের সিনিয়র সদস্যদের নিয়ে সাড়ম্বরে যোগ দিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার তৎকালীন চারদলীয় জোটের কোনো নেতাকর্মী সে অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। উইকিলিকস কর্তৃক ফাঁসকৃত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বার্তাগুলো থেকে পরিষ্কার, সেনাবাহিনীর উচ্চাভিলাষী মতা লোভীরা তাদের ওয়ান-ইলেভেনের দুঃসাহসিক অভিযানে তৎকালীন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে সার্বণিক যোগাযোগ রা করে চলেছিল। তারা তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী এবং ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রা করে চলত। ওয়ান-ইলেভেনের তিনটি স্পন্সর দেশের কূটনীতিকদের সবাই ওয়ান-ইলেভেনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি রেনেটা ডেজেলিয়েন জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক ইস্যুকৃত ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হলে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরী বাহিনীতে বাংলাদেশী সেনা নিয়োগ বন্ধ সম্পর্কিত প্রেস রিলিজটি ভুয়া ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। বিদায়ী জার্মান রাষ্ট্রদূত ফ্রাঙ্ক মেকি বলছেন, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ব্যারাকের বাহিরে আনার সাথে বিদেশী কূটনীতিকদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এসব বক্তব্য যে অসত্য এবং বানোয়াট তা উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যই প্রমাণ করে।
ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবেরা মতার দম্ভে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীদের শায়েস্তা করার খায়েশে মগ্ন হয়ে সারা দেশে এক তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল। দুই নেত্রী এবং তাদের ডাকসাঁইটে নেতাদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা বাস্তবায়নে দুদক, বিচারালয় এবং প্রশাসনকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করেছিল। সে ফর্মুলা ব্যর্থ হয়ে গেলে, তারা মাইনাস ওয়ানের ফর্মুলা নিয়ে এগিয়ে আসে। তিন সেনা অফিসার টাস্কফোর্সের মাসুদ উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনের হোসেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের হাসান মশহূদ চৌধুরীর বিএনপি খেদাও আন্দোলনের নীলনকশাই ছিল তথাকথিত ‘নির্বাচনী রোডম্যাপ’। ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ বলে আওয়ামী লীগের হাতে মতা হস্তান্তরের পর তারা সটকে পড়ে মতার মঞ্চ থেকে। অপকর্মের পালের গোদারা এখন দেশত্যাগী। আওয়ামী লীগ নেতারা গদিপ্রাপ্তির আনন্দে ওয়ান-ইলেভেনের হোতাদের কৃতকর্মের কোনো বিচার করেনি। তারা এখন জেল জুলুম-নির্যাতন ভুলে গিয়ে গদিসুখে নিমগ্ন। ওয়ান-ইলেভেনের তস্করদের প্রতি আওয়ামী লীগের আচরণ অনেকটাÑ ‘মেরেছ কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না’ ধরনের ।
কথায় বলে, “History repeats itself.” অর্থাৎ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রসঙ্গে মহাজোট আন্দোলনের নামে যে লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়েছিল তা থেকে শিা নিয়ে বর্তমান বিরোধী ১৮ দলীয় জোটও একই দাবি নিয়ে তদ্রƒপ আন্দোলন ঘটালে দেশের রাজনীতিতে ওয়ান-ইলেভেনের চেয়েও আরো ভয়াবহ কিছু ঘটা অসম্ভব নয়। দলীয়করণকৃত প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনো নির্বাচনই নিরপে হতে পারে না, এ তো দিবালোকের মতো সত্য। সুতরাং, ‘দেখতে রহো, আগে আগে হোতা হে ক্যায়া’। অর্থাৎ দেখতে থাকুন সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads