শনিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৩

দলীয় বিবেচনায় নিরীহ নারী কর্মচারীর কর্মচ্যুতি



পরিবার সদস্যরা বিরোধী দলের সমর্থক হওয়ায় একজন সরকারি কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরানুযায়ী পরিবারের লোকজন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত- এমন অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একজন মহিলা কমপিউটার অপারেটরের নিয়োগপত্র বাতিল করেছে। এনবিআর সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মুনিরা বেগম নামক একজন কমপিউটার অপারেটরের পিতা বিএনপি'র রাজনীতির সাথে জড়িত এই কারণে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার নিয়োগ বাতিলের অফিস আদেশ প্রার্থীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে যে, মুনিরা আক্তার গত ২৮ মে সাঁটলিপিকার কাম কমপিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পেয়ে তখন থেকেই এনবিআরের প্রথম সচিব (মুসক) এর সহকারী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। তখন থেকে এ পর্যন্ত তার দক্ষতা, সময়ানুবর্তিতা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ নির্দেশ পালনের ব্যাপারে কোনও আপত্তি বা অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তবে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টে তার পরিবারকে বিএনপিপন্থী আখ্যায়িত করার প্রেক্ষাপটে এনবিআর তার নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এনবিআর এর প্রথম সচিব (বোর্ড প্রশাসন) জনাব সোলায়মান মন্ডল স্বাক্ষরিত নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত পত্রে বলা হয়েছে প্রার্থীর পরিবারের লোকজন বিএনপি'র রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং বিএনপির সক্রিয় সদস্য। প্রার্থী নিজেও বিএনপি মনোভাবাপন্ন। প্রার্থীর পরিবারের লোকজন বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকেন। প্রার্থীর স্থানীয় রেকর্ড ভাল নয়। প্রার্থীর পরিবারের লোকজন সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকায় প্রার্থীকে উল্লেখিত পদে মনোনীত করা সমীচীন হবে না। সরকারি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় বৈষম্যের এই ঘটনাকে আমরা অত্যন্ত গর্হিত, দেশের সংবিধান, বিদ্যমান আইন ও নিয়ম-নীতি এবং ইনসাফের পরিপন্থী বলে মনে করি। সরকারি কর্মচারীদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের নিয়ম বৃটিশ আমল থেকেই এদেশে প্রচলিত রয়েছে। এই ভেরিফিকেশনে সাধারণত যা দেখা হয় তা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চাকরি প্রার্থীর চারিত্রিক সংহতি এবং আবেদনে প্রদত্ত তথ্যাবলীর সত্যতা। প্রার্থী কখনো কোনও ফৌজদারী অপরাধ বা রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কারণে দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন কিনা অথবা তার বিরুদ্ধে কোনও আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে কিনা প্রভৃতির তদন্ত করাই হচ্ছে ভেরিফিকেশন কর্মকর্তার প্রধান কাজ। এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত না থাকলে প্রার্থীর বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় কখনো সরকারি চাকরি প্রাপ্তির বেলায় বাধা হয়নি বা হতে পারে না। এটা যদি হতো তাহলে পাকিস্তান আমল কিংবা বাংলাদেশ আমলের আওয়ামী লীগ বহির্ভূত সরকারের অধীনে কখনো ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন অথবা অন্য কোন দলের সমর্থক পরিবারের সন্তানরা চাকরি পেতেন না। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয় নয় মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আবহমানকাল ধরে চলে আসা আমাদের সকল নীতি ও মূল্যবোধ এবং এমনকি আইন ও সংবিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনাসমূহকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশকে বিভক্ত করে ফেলেছে এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাকে উত্তরাধিকারের সম্পত্তির ন্যায় ব্যবহার করছে। ইতোপূর্বে অধ্যাপক গোলাম আযমের সন্তান হবার কারণে সেনাবাহিনীর একজন মেধাবী ও চৌকষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে চাকরিচ্যুত করেছে। এটা শুধু অন্যায় নয়, অনৈতিক এবং দায়িত্বশীল পদের দায়িত্বহীন অপব্যবহারও। এই দেশ কারুর পৈত্রিক বা পারিবারিক সম্পত্তি নয়, জনগণের। জনগণের খাজনার পয়সায় রাষ্ট্র চলে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা বেতন পায়। যারা সরকারি দল করেন না তারাও এদেশের মালিক ও খাজনা দেন। দেশের সংবিধান রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা এবং চাকরি-বাকরিতে সকলের সমঅধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগে যে নির্বাচনী মেনিফেস্টো ঘোষণা করেছিলেন তাতে দলীয়করণমুক্ত অরাজনৈতিক ও গণমূখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে বলা হয়েছিল, যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে সব নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু গত চার বছরে আওয়ামী লীগ তার অন্যান্য অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতির ন্যায় এই অঙ্গীকারও ভঙ্গ করেছে। নিয়োগ পদায়ন, পদোন্নতি সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ এক দানবের রূপধারণ করেছে। ফলে প্রশাসন অচল হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে ধ্বংসাত্মক প্রবণতা বন্ধ করা উচিত বলে মনে করি। দেশবাসীকেও এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে দেশ অন্যায়, অবিচার ও বঞ্চনার আস্তাকুঁড়ে পরিণত হতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads