রবিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৩

জিয়াকে নিয়ে আলোচনা সহজ, সমালোচনা কঠিন(পর্ব- ২)



 ২০ জানুয়ারী ২০১০ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে মুক্তিযুদ্ধকালীন তিন ফোর্সের (জেড ফোর্স, কে ফোর্স, ও এস ফোর্স) প্রধানের কবর জিয়াউর রহমানের মাজারের পাশে স্থাপন করে তা সংরক্ষণের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেছিলেন, ওইখানে একটি বাক্স এনে কবর দেয়া হয়েছিল এটা ঠিক, কিন্তু সেখানে জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কিনা এটা স্পষ্ট নয়। কেউ তার লাশ শনাক্ত করতে পারেনি। যদি এখানে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকত তাহলে বিবেচনা করা যেত। যেখানে কোন লাশ নেই, সেখানে অন্যদের লাশ তুলে আনার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। জিয়াউর রহমানকে সেক্টর কমান্ডারসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধার হত্যাকারী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার কবরের পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের কবর আনতে দেবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে।
বিপথগামী সেনাসদস্যরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে ভোররাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তার মৃতদেহ সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৭ মাইল দূরে রাঙ্গুনিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাশে পাহাড়ের ঢালুতে কবর দেয়। হত্যাকারীরা ওই কবরে জিয়ার সঙ্গে আরও রাখে ঘটনায় নিহত কর্নেল আহসান ও ক্যাপ্টেন হাফিজের লাশ। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃতদেহ রাখা হয় ওই দুই সেনা অফিসারের মাঝে। ১ জুন সকাল ১১টায় জিয়ার লাশ তোলা হয়। ওইদিন বিকাল পৌনে ৪টায় বিমানবাহিনীর একটি বিমানে চট্টগ্রাম থেকে জিয়ার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। এ সময় গোটা শহর জুড়ে এক বেদনাবিধুর শোকার্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিমান বন্দর থেকে জিয়ার লাশবাহী কফিনটি একটি সামরিক যানে সেনানিবাসের প্রেসিডেন্ট ভবনে আনা হয়। এ সময় সেনানিবাসের ১নং গেট থেকে প্রেসিডেন্ট ভবন পর্যন্ত রাস্তার দু'পাশে বিমানবাহিনীর সদস্যরা শ্রদ্ধাবনতভাবে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখান। আর গেটের বাইরে সমবেত হাজার হাজার মানুষ। কফিনটি প্রেসিডেন্ট ভবনে আনার পর এখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। খালেদা জিয়া, তারেক এবং আরাফাত রহমান, আত্মীয়-স্বজন এবং অপেক্ষমান লোকজন সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিকাল ৫টায় জিয়ার কফিন সংসদ ভবনে নেয়া হলে সেখানেও তার মৃতদেহ এক নজর দেখার জন্য শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। এ প্রেক্ষিতে জনসাধারণের দেখার সুবিধার্থে এদিন (১ জুন) রাতে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করা হয়। ফলে রাত ৯টা পর্যন্ত জিয়ার লাশ দেখার জন্য পুরনো জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে সমবেত হয় হাজার হাজার মানুষ। মানুষের ঢলে এয়ারপোর্ট রোড, ফার্মগেট, মহাখালী রেলগেট, বাংলামটর এলাকা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। রাতে মহিলা, গৃহিণী এমনকি শিশুরা পর্যন্ত জিয়ার লাশ এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। পরদিন ২ জুন বেলা ১১টা পর্যন্ত কফিনটি তেজগাঁও সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাখা হলে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অগণিত মানুষ জিয়াকে শেষবারের মতো এক নজর দেখেন। এদিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। এসব খবর ওই সময়ের দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, দৈনিক আজাদসহ বিভিন্ন পত্রিকা গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে।
২ জুন ১৯৮১ দৈনিক আজাদ ‘একটি কফিনের পাশে গোটা বাংলাদেশ' শিরোনামে খবর ৮ কলাম জুড়ে প্রকাশ করে। আর দৈনিক ইত্তেফাক এদিন ‘ঢাকায় প্রেসিডেন্ট জিয়ার মরদেহ ঃ অগণিত মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি' এবং ‘রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জিয়ার লাশ চাপা দেয়া হয়' শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। এর পরদিন অর্থাৎ ৩ জুন দৈনিক আজাদ প্রধান খবর হিসেবে ‘এনেছিলেন সাথে করে মৃত্যুহীন'র প্রাণ মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রেসিডেন্ট জিয়ার লাশ দাফন' শিরোনামে ৮ কলামে প্রকাশ করে।
দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত দুটি রিপোর্ট হুবহু তুলে ধরা হলো :
রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জিয়ার লাশ চাপা দেয়া হয়
বিশেষ প্রতিনিধি-চট্টগ্রাম, ১ জুন- চট্টগ্রাম শহর হইতে ১৭ মাইল দূরে রাঙ্গুনিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পাশে পাহাড়ের ঢালু পাদদেশে একটি কবর হইতে আজ সকাল ১১টায় শনিবার ভোরে নিহত জিয়াউর রহমানের লাশ তোলা হইয়াছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কর্নেল আহসান ও ক্যাপ্টেন হাফিজের লাশের সহিত একই কবরে প্রেসিডেন্টের লাশ চাপা দেয়া হয়। প্রেসিডেন্টের লাশ ছিল অপর দুইজনের মাঝে। কাফনের অভাবে ত্রিপলে জড়াইয়া লাশ তিনটি প্রোথিত হয়। সেই রক্তাক্ত ত্রিপলও আজ খুঁড়িয়া বাহির করা হইয়াছে। হত্যাকারীরা পাহাড়তলী বাজার হইতে তালেব আলীসহ আরো দুইজন লোককে লইয়া গিয়া শনিবার সকালে উক্ত কবর খোঁড়ায়। তাহাদের প্রতিজনকে ২৫ টাকা হারে পারিশ্রমিক দেয়া হয়। স্থানীয় মাজার হইতে একজন মৌলভীকে ১০০ টাকার বিনিময়ে আনিয়া জানাযা পড়ানো হইয়াছিল। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তিনজন ছাত্র কোতওয়ালী থানায় রিপোর্ট করলে প্রেসিডেন্টের লাশ উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়। পাহাড়ের পাদদেশবর্তী কবরের স্থানটিকে স্থানীয় জনসাধারণ আজ সাদা কাপড়ে ঘিরিয়ে দিয়েছে। সেখানে কোরআন তেলাওয়াত চলিতেছে।
ঢাকায় প্রেসিডেন্ট জিয়ার মরদেহ : অগণিত মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি
(ইত্তেফাক রিপোর্ট) এক বেদনাময় শোকার্ত পরিবেশে গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম হইতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মরদেহ ঢাকায় আনয়ন হয়। নিহত প্রেসিডেন্টকে এক নজর দেখার জন্য সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে মানুষের ঢল নামে।
গতকাল (সোমবার) অপরাহ্ন পৌণে ৪টায় চট্টগ্রাম হইতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মরদেহের কফিন লইয়া বিমান বাহিনীর একটি বিমান কড়া নিরাপত্তা প্রহরায় তেজগাঁও বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করিয়ে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কফিনটি শ্রদ্ধাসহকারে গ্রহণ করেন। বিমান হইতে কফিনটি বিমান বাহিনীর সদস্যগণ একটি খোলা সামরিক যানে উঠাইয়া নেন এবং কফিনটি পুস্পস্তবকে সজ্জিত করা হয়। কফিনের সহিত বিমানে বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মহিবুল হাসান, উপমন্ত্রী মিসেস কামরুন্নাহার জাফর এবং প্রাক্তন মন্ত্রী ড. মিসেস আমিনা রহমান আগমন করেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে শোকে মুহ্যমান দেখা যাইতেছিল।
প্রেসিডেন্টের কফিনটি লইয়া সামরিক যানটি সেনানিবাসের প্রেসিডেন্ট ভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করিলে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ ‘গার্ড অব অনার' প্রদর্শন করেন। সেনানিবাসের ১নং গেইট হইতে প্রেসিডেন্ট ভবন পর্যন্ত রাস্তার দুই পার্শ্বে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ শ্রদ্ধাবনতভাবে দাঁড়াইয়া থাকিয়া সম্মান দেখান। এই সময় ১ নং গেটের বাহিরে হাজার হাজার মানুষ প্রতীক্ষাকূলভাবে দাঁড়াইয়াছিলেন।
কফিনটি প্রেসিডেন্ট ভবনে লইয়া যাওয়ার পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। বেগম জিয়াউর রহমান, তাহাদের দুই পুত্র, আত্মীয়-স্বজন এবং অপেক্ষমান লোকজন সকলেই কান্নায় ভাঙ্গিয়া পড়েন।
সংসদ ভবনে : জনসাধারণের দেখার জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লাশের কফিনটি গতকাল অপরাহ্ন সাড়ে ৫টায় সংসদ ভবনের সম্মুখে লইয়া আসা হয়। সেখানে প্রথমে সংসদ সদস্যগণ শোকাহত চিত্তে কফিনের সম্মুখে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রেসিডেন্টের মরদেহ আনার খবর রাজধানীতে ছড়াইয়া পড়িলে একঘণ্টা সময়ের মধ্যে এয়ারপোর্ট রোডে অগণিত লোক রাস্তায় নামিয়া আসেন। পুলিশ শোকাহত লোকজনকে সারিবদ্ধ করার চেষ্টা করে। বাংলা মটর হইতে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হইয়া যায়। আগামীকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত কফিনটি সংসদ প্রাঙ্গণে রাখা হইবে। জনসাধারণের দেখার সুবিধার্থে গতরাতে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করা হয়।
সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয় রাত নয়টা পর্যন্ত নিহত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লাশ দেখার জন্য জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে প্রচন্ড ভিড় পরিলক্ষিত হয়। কফিন রাখা জায়গার দিকে মানুষের লাইন এয়ারপোর্ট রোড-এর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়িয়া আগাইতেছিল। একদিকে ফার্মগেট এবং অন্যদিকে মহাখালী রেলগেট পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এই সকল ও আশেপাশের এলাকায় মানুষের ভিড় অঘোষিত মিছিলের মত পরিলক্ষিত হয়। রাত্রে পর্যন্ত মহিলা, গৃহিণী এমনকি শিশুদের পর্যন্ত ভিড় করিতে দেখা যায়। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দীন হোসেন, আওয়ামী লীগের (মিজান) জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী, মুসলিম লীগের খান এ সবুর, জাসদের মেজর জেনারেল (অবঃ) এম.এ. জলিল, জনাব আ.স.ম. আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, একতা পার্টির সৈয়দ আলতাফ হোসেন, শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের জনাব সিদ্দিকুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির জনাব নাসিম আলী গতকাল সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের সম্মুখে শায়িত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কফিনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
২২ জানুয়ারি ২০১০ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ.স.ম হান্নান শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ জানুয়ারি সংসদে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ, অশালীন মন্তব্য করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য দেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাকে রং হেডেড লেডি বলেছিলেন কিন্তু হাসিনার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন আপিল করা হয়নি। তাই আমরা ধরে নিতে পারি আদালতের রায়ই সঠিক। এ ধরনের রং হেডেড লেডির পক্ষে এ ধরনের বাস্তবতা বিবর্জিত বক্তব্য প্রদান সম্ভব।
হান্নান শাহ বলেন, ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়া নিহত হওয়ার পর তাকে চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে দুই মাইল দূরে পাথরঘাটা নামক একটি গ্রামে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে আমি এবং লে. কর্নেল এম এ খালেক ১ জুন লাশ উদ্ধার করি। জিয়ার লাশ তখন সম্পূর্ণ অবিকৃত ছিল। তার বুকের ওপরের অংশে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। মাথার চুল ছিল অাঁচড়ানো। তার লাশ এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তার লাশ একটি সাধারণ কফিনে করে ঢাকা নিয়ে আসা হয়।
তিনি বলেন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের কাছে অনুমতি নিয়ে জিয়ার লাশ ঢাকায় নিয়ে আসার পর তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচএম এরশাদের কাছে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সদস্য ও সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং তার রূহের মাগফিরাত কামনা করে মুনাজাত করা হয়।
হান্নান শাহ বলেন, ‘বিমান বন্দর থেকে তার লাশ নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে। সেখানে পরিবারের সদস্যরা দেখার পর সরকারের সিদ্ধান্তে সংসদ ভবনে নেয়া হয় জানাযার জন্য এবং বিশ্বের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তাঁকে জিয়া উদ্যানে দাফন করা হয়। এমতাবস্থায় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কুরুচিপূর্ণ, অসত্য, অশালীন, নৈতিকতা বিবর্জিত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
জিয়া বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের সন্ধান করেছেন। গণতন্ত্র ধ্বংস করা এবং জাতীয় স্বাধীনতা ভারতের কাছে বন্ধক রাখার পরও জিয়া আওয়ামী লীগকে প্রধান বিরোধীদলের মর্যাদায় আসীন রেখেছেন। সাড়ে তিন বছরের লুণ্ঠন-গণহত্যা-দুর্ভিক্ষ-অপশাসনের জন্য আওয়ামী পান্ডবদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে জিয়া সাধারণ ক্ষমা দিয়ে আওয়ামী লীগকে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে পরিশুদ্ধ হবার সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিকও হয়নি, জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞও থাকেনি।
বাক সর্বস্ব রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে তিনি উৎপাদনের রাজনীতির সৃজনশীল ধারা প্রবর্তন করেন। তিনি বলেন, যারা জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে তাদের প্রাণে সাড়া জাগাতে সক্ষম হবে না, তারা রাজনীতিতে থাকতে পারবে না। রাজনীতির পরবর্তী গতি প্রবাহ এ সত্য অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করেছে।
১৯৭৫-এর ৭ নবেম্বর থেকে ১৯৮১ এর ৩০ মে পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা জিয়া জাতিকে হতাশা থেকে আশার উদ্দীপনায় আলোকিত করেছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক জিয়া প্রায় আড়াই দশক ধরে অনুপস্থিত থেকেও জাতীয় রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার জাতীয়তাবাদী রাজনীতি মাটি ও মানুষের আকুতি প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সার্বভৌম ক্ষমতায় উন্নীত করার কৃতিত্ব জিয়ার। বিলুপ্ত প্রায় সেনাবাহিনীকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যদিয়ে জিয়া প্রমাণ করেছেন যে, বাংলাদেশ কারো আশ্রিত রাষ্ট্র হয়ে নয়, একটি পরিপূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জিয়া হত্যার সাথে সীমান্তের বাইরে চিহ্নিত অপশক্তির কুটিল ষড়যন্ত্র ছিল। এটা নানাভাবে প্রমাণিত। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক উত্থান, সাহসী বিচরণ যাদের পছন্দ হয়নি, তারাই জিয়াকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দিয়েছে। তবে যারা মনে করেছিল, জিয়ার অবর্তমানে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে, বিএনপি নেতৃত্বহীন হয়ে ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাবে, তারা হতাশ হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্ব খালেদা জিয়ার গ্রহণ করার পর জাতীয়তাবাদী ইসলামী শক্তির সমন্বয়ে যে বৃহৎ জোট তৈরি হয়েছে, তাতেই অপশক্তির রাজনৈতিক মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads