রবিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৩

আর কত দূর বাড়বে ছাত্রলীগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আবার হামলা

বর্তমান সরকারের আমলে ছাত্রলীগ অব্যাহতভাবে আলোচনার শীর্ষে থেকেছে। হেন অপরাধ নেই যা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা করেনি। বিভিন্ন মহল, সাধারণ মানুষ, গণমাধ্যমে প্রবল সমালোচনা সত্ত্বেও ছাত্রলীগ চলেছে তার নিজের মতোই। সর্বশেষ বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি সুপ্রমাণিত হিসেবে জনধারণা প্রতিষ্ঠিত হলেও ছাত্রলীগ যেন থামতে নারাজ। তারই প্রতিফলন দেখা গেল গত পরশু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের আবার হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে। এ হামলায় আহত হয়েছেন ৫০ জনের মতো শিক্ষক। আহত হয়েছেন আরো ৪০ জনের মতো। এর এক-দুই দিন আগে এই ছাত্রলীগের ছেলেরাই অ্যাসিড নিক্ষেপ করে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর। এসব ঘটনা প্রমাণ করে ছাত্রলীগ সময়ের সাথে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবর মতে, এসব শিক্ষকের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা। শিক্ষকদের ওপর দফায় দফায় পরিচালিত এই হামলায় আহত হন ৫০ জনের মতো শিক্ষক। এর আগে কাস-পরীক্ষার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক চার ঘণ্টা অবরোধ করে রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। গত শনিবার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের সাথে সাক্ষাৎ শেষে মানবিক ও সামাজিক অনুষদে আসেন। এ খবর জানতে পেরে বেলা ২টায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান লেলিন, মিজানুর রহমান টিটু, কাশেম মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল হোসাইন, শফিকুল ইসলাম ও ইলিয়াস জোয়ার্দারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা অনুষদ ভবনে হামলা চালায়। এ সময় তারা শিক্ষকদের গালাগাল করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে এরা কলাপসিবল গেট ভেঙে শিক্ষক সমিতির অফিসে ঢুকে হামলা চালায়। আধঘণ্টা ধরে এরা এই হামলা অব্যাহত রাখে। এরপর প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন, কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত করতে কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে বেলা ৩টায় ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আবার শিক্ষক লাউঞ্জের দরজা ভেঙে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে। সংবাদপত্রে ছাপা ছবিতে দেশবাসী দেখেছেন, কী করে ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা লাঠি হাতে ওই হামলা চালাচ্ছে।
এই হামলার ঘটনার খবর প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। পাশাপাশি একই দিনে দৈনিক যুগান্তর  ‘ছাত্রলীগের বোঝা ১২ শতাধিক ক্যাডার’ শিরোনামে একটি খবর ছাপে। এই খবরে বলা হয়Ñ ‘ছাত্রলীগের বোঝা ১২ শতাধিক নেতাকর্মী। এরাই দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তথা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাস্তানি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়, খুন, ছাত্রী উত্ত্যক্ত, নারী নির্যাতন, শিক্ষক নির্যাতন, ডাক্তার নির্যাতন, হল-হোস্টেল পুড়িয়ে দেয়াসহ হেন অপকর্ম নেই যা করছে না। এরা আজ নিজ নিজ শাখায় ক্যাডার হিসেবে পরিচিত।…’
ছাত্রলীগের মুরব্বি সংগঠন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এখন দেশের শাসনক্ষমতায়। সরকার চাইলে এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু আমরা কি তা দেখতে পাচ্ছি? আইনের শাসনের দাবিদার এই সরকার এদের এসব কর্মকাণ্ড অবাধ রেখে কী করে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি করে? প্রশ্ন হচ্ছে, ছাত্রলীগকে আর কত বাড়তে দিতে হবে? আর ছাত্রলীগের অভিভাবকই কে বা কারা? এসব প্রশ্ন জনমনে বারবার ঘুরেফিরে আসছে। এবার বোধ হয় ছাত্রলীগকে থামানোর চূড়ান্ত সময় এসেছে। ছাত্রলীগের নেতারা কিংবা তাদের মুরব্বি সংগঠনের নেতারা কি এ ব্যাপারে কিছু ভাবছেন?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads