মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩

এক-এগারোর ভীতি


আলফাজ আনাম


প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার আগে ফখরুদ্দীন আহমদ ও ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সাথে শেখ হাসিনা
মহাজোট সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণের দিনটি ছিল ১১ জানুয়ারি। ২০০৭ সালের এই দিনে সেনাপ্রধান মইনউদ্দিন আহমেদ ও উচ্চাভিলাষী কয়েকজন সেনাকর্মকর্তা রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে দিয়ে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করান। এরপর ফখরুদ্দীন আহমদ প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আবির্ভূত হন। দেশে সংবিধান বহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সুশীলসমাজ ও সেনাবাহিনীর যৌথ সরকার। এই সরকারের ক্ষমতারোহণের নেপথ্যে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সক্রিয় তৎপরতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের চার বছর পূর্তিতে দেয়া তার ভাষণে বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেনের উদ্যোক্তারা এখনো সক্রিয়। তারা আবারো মাথাচাড়া দিতে চাইছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার জন্য ১১ জানুয়ারির দিনটিকে ঠিক করেছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এই দিনটিকে বেছে নিয়ে কার্যত সরকারের ছয় বছর উদযাপন করেছেন। কারণ দুই বছরমেয়াদি মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার ছিল তার সরকার। তিনি নিজেই বলেছিলেন এই সরকার ছিল তাদের আন্দোলনের ফসল এবং তাদের সব কাজের বৈধতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, সরকারই দেশে এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। অপর দিকে প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বিরোধী দল আন্দোলনের মাধ্যমে আরেকটি এক-এগারোর সরকার আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, এতে বিরোধীদলীয় নেত্রীও রক্ষা পাবেন না। অর্থাৎ বিরোধী দলের আন্দোলনের পরিণতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক ধরনের ভয় দেখাচ্ছেন। ফলে বাংলাদেশের সঙ্ঘাতময় রাজনীতিতে এক-এগারোর সংশ্লিষ্টতা, সম্ভাবনা ও প্রভাবের দিকটি বিভিন্নভাবে এখন আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এখন এক-এগারোর সরকারের যত সমালোচনা করা হোক না কেন, সেই সরকারের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এক-এগারোর নায়কদের সাথে আওয়ামী লীগের যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল তার অনেক কিছু এখন স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তারবার্তাগুলোতে এর অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সে সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস ওয়াশিংটনে যেসব তারবার্তা পাঠিয়েছিলেন তাতে এক-এগারোর আগে ও পরের অনেক ঘটনার বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে। উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া দু’টি তথ্য আমরা পর্যালোচনা করলে বিরোধী দলের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই ভীতি প্রদর্শনের কারণ ও সংবিধান বহির্ভূত সরকারের প্রতি আওয়ামী লীগের সমর্থনের দিকটি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
১. ঢাকা থেকে বিউটেনিসের তারবার্তায় বলা হচ্ছে, ২০০৭ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই বৈঠকে রাষ্ট্রদূতদ্বয় সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে এমন কথা বললে শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক বাহিনী যদি হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং সবকিছু ঠিকঠাক করে দিতে পারে তবে ভালোই হবে।
এই মন্তব্য থেকে ধারণা করা যায় জরুরি অবস্থার অধীনে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি শেখ হাসিনা আগেই জানতে পারেন এবং তার কাছে তা ছিল কাক্সিত। শেখ হাসিনা সম্ভবত এটাও জানতেন যে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত তার হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। এ কারণে কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর বিদেশ যাওয়ার আগে তিনি ঘোষণা দেন, সরকারের সব ধরনের কাজের বৈধতা দেয়া হবে।
২. একই বৈঠকে শেখ হাসিনার কাছে আনোয়ার চৌধুরী ও বিউটেনিস জানতে চান সঙ্কট নিরসনে একটি সমাধান খুঁজে পেতে খালেদা জিয়া যদি তার সাথে যোগাযোগ করেন তাহলে তিনি কী করবেন? হাসিনা বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যান করবেন। দুই দূত বিএনপির মধ্যকার কিছু নেতার প্রস্তাবিত এমন একটি সম্ভাব্য চিত্র বর্ণনা করেন, যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এই বোঝাপড়ার ভিত্তিতে যে, পরবর্তী ১২ মাসের মধ্যে আবার নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনা প্রস্তাবটি তাৎক্ষণিক খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় যাবে এ রকম একটি সমাধানের চেয়ে বরং সামরিক বাহিনীর সংশ্লিষ্টতায় যেকোনো সমাধানের প্রতিই তিনি সমর্থন জানাবেন (মার্কিন নথিতে এক-এগারো, প্রথম আলো, ১১ জানুয়ারি ২০১৩)।
এই কথোপকথন থেকে স্পষ্ট অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি ছিল না। সে ধরনের সরকারকে তারা সমর্থন দিতে সব সময় প্রস্তুত ছিল। একই সাথে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর মনোভাব ছিল সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসুক তা কোনোভাবেই তিনি গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন না। এর চেয়ে সামরিক বাহিনী সংশ্লিষ্টতায় যেকোনো সমাধানের প্রতি তার সমর্থন থাকবে তা তিনি স্পষ্ট করেন।
এখন প্রশ্নÑ আওয়ামী লীগ বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মনোভাবের কতটা পরিবর্তন হয়েছে? যদি মনোভাবের কোনো পরিবর্তন না হয়ে থাকে তাহলে আওয়ামী লীগ কোনো অবস্থাতেই চাইবে না বিএনপি ক্ষমতায় আসুক। বরং এর বিকল্প হিসেবে অন্য কেউ যদি ক্ষমতায় আসতে চায় তাকেই দলটি স্বাগত জানাবে। মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগের এই মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান ২০০৬-০৭ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে হয়েছিল তা নয়। এর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন তখনো তাকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানিয়েছিল। শেখ হাসিনার সেই বিখ্যাত মন্তব্যটি ছিলÑ আই অ্যাম নট আনহ্যাপি। ৮৬ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদবিরোধী তুমুল আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন এই নির্বাচনে যদি কেউ যোগ দেয় তারা হবেন জাতীয় বেঈমান। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজে এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং জামায়াতও তখন আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এরশাদ-আওয়ামী লীগের সম্পর্কের এই ধারাবাহিকতা এখনো অটুট রয়েছে।
কিছু দিন থেকে এরশাদ সরকারবিরোধী অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বিরোধী দলের ডাকা হরতালকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে নিহত বিশ্বজিতের বাড়িতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করেছেন। এর আগে ভারত সফর করে এসে হঠাৎ করে টিপাইমুখ ড্যাম নিয়ে ভারতের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন। যদি শেখ হাসিনার মনোভাবের পরিবর্তন না হয় এবং ইতিহাসের পুনারাবৃত্তি হলে ৮৬ সালের নির্বাচনের আরেকটি নাটক ২০১৩ সালে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। তবে আগেরবার শেখ হাসিনা ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা। আর এবার হবে এরশাদ বিরোধী দলের নেতা। এরশাদ এখন বিরোধী দলের সেই মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন। তবে তার সুবিধা হচ্ছে যদি দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে তাহলে তিনি বিরোধী দলের নেতার আসনে বসবেন। আর যদি বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট তা প্রতিহত করতে পারে বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন তীব্ররূপ নেয় তাহলে এরশাদ সাজানো নির্বাচনের আয়োজন থেকে সরেও দাঁড়াতে পারেন। তার জন্য উভয় পথই খোলা থাকছে।
তাহলে বিএনপির সামনে এখন কী পথ? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে কোনো কথা ছিল না। বরং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে তাকে আরেকবার বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির ভেতরে অনেকে মনে করেন বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের সহায়তায় চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত কোনো না কোনো আঙ্গিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তারা ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অতীত রাজনৈতিক অবস্থান এ ধরনের চিন্তার সাথে চরম বৈপরীত্যমূলক। আওয়ামী লীগ যে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে কোনো ধরনের ফলপ্রসূ সংলাপে যাবে না বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিরুদ্ধে ৩৭ মামলা দেয়া এবং উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর নতুন মামলায় জেলবন্দী করে রাখা তার প্রমাণ। জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার সাফল্য থেকে ক্ষমতাসীন দল ধীরে ধীরে বিএনপির ক্ষেত্রেও একই কৌশল গ্রহণ করবে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলার চার্জশিট আদালতে গৃহীত হয়েছে। তাকে কারাগারে পাঠানো হতে পারে। মির্জা ফখরুলকে আটকে রাখাও এ প্রক্রিয়ারই অংশ।
তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বিরোধী দল যাতে আন্দোলনের মাধ্যমে কোনো বাধা সৃষ্টি না করতে পারে সে জন্য সংলাপের একটি নাটক মঞ্চস্থ হতে পারে। এ সময়ের  মধ্যে মাঠপর্যায়ে সাংগঠনিক প্রভাব আছে এমন নেতাদের জায়গা হবে কারাগারে। আরো কিছু গুমের ঘটনা ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এরশাদ ও বাম দলগুলোকে সাথে নিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচনে আদর্শ বিচ্যুত বাম সুশীলসমাজেরও সমর্থন থাকতে পারে। ইতোমধ্যে এর আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। এরশাদকে হঠাৎ করে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলে ধরা হচ্ছে। এরশাদের জনপ্রিয়তা তিন শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে উন্নীত করার এক অদ্ভুত জরিপ প্রচারণাও চালানো হয়েছে। এদের লক্ষ্য হচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতকে ক্ষমতার রাজনীতির বাইরে রাখা। বিএনপি ও জামায়াতের চেয়ে এরশাদ এখন সুশীলসমাজের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে।
এ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে বিএনপির সাফল্য নির্ভর করবে মাঠে রাজনৈতিক শক্তি ও আন্দোলনের ধারাবাহিকতার ওপর। কিন্তু বিএনপি সেই ধারাবাহিকতা কতটা বজায় রাখতে পারছে তা এখন পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে। সরকার নয় বরং বিএনপি যেন বার বার সময়ক্ষেপণের নীতি গ্রহণ করছে। সরকার এর পুরো সুযোগ নিচ্ছে। বিএনপি যখনই কঠোর কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে তখনই প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এক-এগারোর ভয় দেখাচ্ছেন। আবার হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি দিলে সুশীলসমাজও বিএনপির সমালোচনা করছে। তারাই আবার বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে খুবই দুর্বল এমন প্রচারণাও চালাচ্ছে। সর্বশেষ গত শনিবারও আইনজীবীদের সাথে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিরোধী দলের নেত্রী তত্ত্বাবধায়ক তত্ত্বাবধায়ক করে পাগল হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে তার কী হবে, সেটা কী তিনি জানেন? লক্ষ করার ব্যাপার হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও মইনউদ্দিনÑ ফখরুদ্দীনের পরোক্ষ সেনা শাসনকে এক করে ফেলছেন।
উইকিলকসের ফাঁস হওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সেনাসমর্থিত সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ যে অসাংবিধানিক তা বিদেশী রাষ্ট্রদূতেরা যেমন বুঝেছিলেন তেমনি শেখ হাসিনাও বুঝেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা যেমন সে সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে তেমনি বিদেশীরা তাকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু কেন এই অবৈধ সরকারকে তারা সমর্থন দিয়েছিল? কারণ সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৎকালীন বিরোধী দল এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে তাদের বাদ দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান তো হবেই না তারা ক্ষমতায় না যেতে পারলেও ক্ষমতা থেকে সদ্য বিদায়ী দলটিকেও কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না। এই রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের কারণে শেখ হাসিনা ও তার নেপথ্যে সমর্থনদাতারা যেভাবে চেয়েছেন নির্বাচনে সেভাবেই বিজয়ী হয়েছেন। আর বেগম খালেদা জিয়া ১৪ দিনে ১০ হাজার কিলোমিটার সফর করে মাত্র ৩১টি আসন পেয়েছেন। তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে কোনো বিদেশী রাষ্ট্র-সংস্থা কোনো প্রশ্নই উত্থাপন করেনি।
বিএনপি যদি রাজনৈতিক সাফল্য পেতে চায় তাহলে সাধারণ মানুষের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনদের শাসন দীর্ঘায়িত করার মাইনাস টু পরিকল্পনা জনগণই নস্যাৎ করে দিয়েছেন। জনগণের সমর্থন বিএনপির প্রতি থাকলে প্রধানমন্ত্রী যত ভয়ই দেখান না কেন, এ ধরনের সরকার এলেও জনগণই তাদের প্রতিরোধ করবে। বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান আলোচনার মাধ্যমে হয়নি। রাজপথেই এর সমাধান হয়েছে। কোনো বিদেশী মধ্যস্থতা কিংবা সংলাপে সমাধান হবে এই আশায় সময়ক্ষেপণে তাদের রাজনৈতিক বিপর্যয় আরো বাড়িয়ে দেবে।
alfazanambd@yahoo.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads