শনিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩

মির্জা আলমগীরের মুক্তি ও মাহমুদুর রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি


ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী





বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কারাবাস দীর্ঘ হতে চলেছে। গত ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে অবরোধ ও হরতালে গাড়ি পোড়ানো মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে এ দুই মামলায় জামিন পেলেও আরও দুটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন বলে জানা যায়।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত আছে। মির্জা আলমগীরের গ্রেফতারের পরদিন আধাবেলা স্বতঃস্ফূর্ত হরতালও পালন করা হয়েছে। এমনকি উচ্চ আদালতের জামিনের পরও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়ের ও রিমান্ড চাওয়ার বিষয় আমাদের বিস্মিত করেছে। আজ সারা দেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব প্রাপ্তির পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এটা দ্বিতীয় কারাভোগ। এর আগে সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানো মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে কিছুদিন কারাগারে থেকে তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করেন। মির্জা আলমগীর প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রধান মুখপাত্র। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধীদলের প্রধান কাজ সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা। সরকারের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরে সরকারকে সঠিক পথে চলার পথ নির্দেশ করা। অতএব আলমগীরের যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সে উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছে। তার নিজের স্বার্থে নয়; কোনো হীনস্বার্থ চরিতার্থের জন্য নয়। দেশ ও জনগণের স্বার্থেই তিনি দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রদান ও পালন করেছেন। তাকে কারারুদ্ধ করা অন্যায়, অবিচার, নিপীড়ন, নিষ্পেশন এবং গণতন্ত্রকে কণ্ঠ রোধ করার শামিল। অতএব তার কারামুক্তি আজ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা তার আশু মুক্তি দাবি করছি।
বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বিচারপতির স্কাইপ সংলাপ বস্তুনিষ্ঠভাবে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। এর ফলে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নামে রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা দায়ের করা হয়। আমরা মনে করি এতে মাহমুদুর রহমান কোনো অন্যায় করেননি। শুধু আমার দেশ নয়, দেশের প্রতিটি গণমাধ্যমেরই উচিত ছিল জনগুরুত্বপূর্ণ ওই সংবাদটি প্রচার করা। এ সংবাদের মাধ্যমে দেশের জনগণ স্বাধীন বিচার বিভাগ ও বিচারকদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পেরেছে। পত্রিকাটি সব সময় দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে ভূমিকা পালন করে আসছে। এজন্য মাহমুদুর রহমান বর্তমান সময়ের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথিকৃত্। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে সরকার নিজেদের দুর্নীতি-অনিয়ম ঢাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত, বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করে এখন দুর্নীতি ঢাকা যাবে না। অতএব মাহমুদুর রহমানের নামে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
এর আগেও এ সরকারের আমলে তিনি দীর্ঘদিন অন্যায়ভবে কারাবরণ করেন। সে সময় তার মুক্তি দাবি করে আমি লিখেছিলাম, ‘সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুগে যুগে দেশে দেশে অবিচল-নির্ভীক-সাহসী মানুষেরা সহ্য করেছেন অসীম নির্যাতন, নিপীড়ন, লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণা। আমাদের দেশেও এ সংগ্রাম অব্যাহত আছে। বর্তমান সময়ে এ সাহসী সৈনিকদের অন্যতম হলেন সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী মাহমুদুর রহমান।’
বলাবাহুল্য ফ্যাসিবাদী, স্বৈরচারী ও একনায়কতন্ত্রে সরকারের সমালোচনা থাকে না; থাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। কোনো গণতান্ত্রিক সরকার যদি মনে করে কেউ তাদের সমালোচনা করতে পারবে না বা করতে দেয়া হবে না, তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক। সরকারের সমালোচনা না থাকলে গণতান্ত্রিক সরকারও ফ্যাসিবাদী রূপ নিয়ে স্বৈরচারী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যদি গণতান্ত্রিক হয়ে থাকে, তাহলে তাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু সরকার যদি এ বিষয়টিকে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে, তাহলে সরকার নিজেদেরই সর্বনাশ ডেকে আনবে। আমরা যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতি, শাসনের রূপ-চরিত্র এবং গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থাকে সামনে রেখে জাতিকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে চাই কল্যাণ, গণতন্ত্র, বাক-ব্যক্তি-মৌলিক স্বাধীনতার দিকে—তাহলে মির্জা আলমগীরের মুক্তি এবং মাহমুদুর রহমানের মামলা প্রত্যাহার অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
যাক, আজকের বাংলাদেশের সময়টা আরবের আইয়ামে জাহেলিয়ার এবং মধ্যযুগের কৃষ্ণসময়ের সঙ্গে তুলনীয়। শাসক শ্রেণীর শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, সীমাহীন দুর্নীতি, শেয়ার বাজার লুট, কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ প্রকল্প, পদ্মা সেতু প্রকল্প ও সর্বোপরি সরকার দলীয় পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক টাকা লুটের মাধ্যমে দেশকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে; যার ফলে এ দেশের জনগণের কপালে নেমে এসেছে অসহনীয় এবং অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। শুরুটা করেছে মইনউদ্দীন-ফখরুদ্দীনের সেনাসমর্থিত সরকার। প্রথমে দু’ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে মাইনাস তথা দেশ থেকে বহিষ্কারের চেষ্টা চালানো হয়। তারপর শুরু হয় দল ভাঙার এবং নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া। পাশাপাশি ঘটতে থাকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। বড়-ছোট অনেক ব্যবসায়ীকে ভয়-ভীতি ও নির্যাতনের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করা হয়। দুর্নীতির নাম করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং কোনো কোনো নেতার উপর অমানুষিক নির্যাতন নেমে আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব জনাব তারেক রহমানকে বিচার না করে তাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, কোনো সভ্য দেশে বা স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তা কল্পনাও কার যায় না। আজও তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।
দেশের ইতিহাসে এ কালো অধ্যায়ের সম্প্রসারণ (ঊীঃবহংরড়হ) হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত এক সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে। ক্ষমতায় আসীন হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। পূর্ববর্তী তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারাবাহিকতায় দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে ধ্বংস করা হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, শ্রমিক, কৃষক, ভূমিহীন, ক্ষেতমজুর হয়ে ওঠে দিশেহারা।
এর পাশাপাশি বৃদ্ধি পেতে থাকে মামলা, হামলা, অপহরণ, গুম খুনের ঘটনা। বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যসহ বিরোধী দলের আরও বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নিত্যনতুন হয়রানিমূলক মামলা রুজু করেই সরকার ক্ষান্ত হয়নি; নির্যাতন ও নিপীড়নের নব-নব কৌশলের মাধ্যমে তাদের স্তব্ধ করার চেষ্টা চালানো হয়। চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলী ও সম্প্রতি রফিকুল ইসলামের অপহরণের মধ্য দিয়ে সরকারের নির্যাতনের নগ্নচিত্র দেশে-বিদেশে সব মহলকে ব্যথিত করলেও, সরকারের তাতে কিছু যায় আসে না। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইলিয়াস আলী এবং চৌধুরী আলমের স্ত্রী তাদের নিজ নিজ স্বামীর লাশ ফেরত চেয়েছিলেন, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। জানা যায়, এ পর্যন্ত শতাধিক বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। তাদের ভাগ্যে কী আছে কে জানে? সম্প্রতি ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গার্মেন্ট প্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যার সঙ্গে সরকার জড়িত। অনুমান করা হয় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার সঙ্গে সরকারের উচ্চমহলের লোকেরা জড়িত ছিল বলেই আজ পর্যন্ত এ হত্যারহস্য উদ্ঘাটন হয়নি এবং আজও তারা গ্রেফতার হয়নি। আরও জানা যায় যে, তাদের ল্যাপটপে সরকারের দুর্নীতির এমন সব তথ্য-প্রমাণ ছিল যে তা উদ্ধার করতে গিয়ে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
সাংবাদিক নির্যাতনের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বর্তমান সরকার। ‘আমার দেশ’ সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমানের নির্যাতনের কাহিনী পাঠ করলে শরীর শিউরে ওঠে। এতে যে কোনো পাঠক হৃদয় বেদনায় ভারাক্রান্ত হবে, অশ্রুশিক্ত হবে। কিন্তু সরকারের লোকদের পাষাণ হৃদয় এতে একটুও টলেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এমন নজির স্বাধীন দেশে কেউ কি কখনও দেখেছিল? বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জনাব জয়নুল আবদিন ফারুককে প্রকাশ্য দিবালোকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা শুধু নজিরবিহীনই নয়, এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরম বহিঃপ্রকাশও বটে।
এ দেশেও সূর্য ওঠে, দিন যায়, রাত হয়; সপ্তাহ, মাস ও বছর অতিক্রান্ত হয়, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পায় দুর্নীতির ঘটনা। বর্তমান শাসনামলে দুর্নীতি এ যাবতকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বর্তমান সরকার দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এ আমলে দুর্নীতির সর্বশেষ ঘটনা হলমার্ক জালিয়াতি। সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকেই চার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে আর দেশের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা ‘তেমন কিছু নয়’। হায়রে দুর্ভাগা দেশ—চার হাজার কোটি টাকার ‘নিরাপদ চুরি’কে তেমন দুর্নীতি বলতে চাননা দেশের অর্থমন্ত্রী। একজন সাধারণ ব্যাংক ঋণগ্রহীতা পাঁচ হাজার টাকার ঋণের কিস্তি সময়মত পরিশোধ করতে না পারলে, ব্যাংক কর্মকর্তারা তার পিছু নেয় এবং তা আদায়ে বিভিন্ন পন্থা গ্রহণ করতে তত্পর হয়ে ওঠেন। এক হাজার টাকা চুরির দায়ে যে দেশে একজন পিয়ন বা কর্মচারীকে চাকরি হারাতে হয়, জেল, জরিমানা হয়; সে দেশে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসােক ‘তেমন কিছু নয়’ বলেন অর্থমন্ত্রী। এর কারণ কী?
পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির ঘটনা শুধু দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেনি, এর নির্মাণে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সেতু নির্মাণ শুরুর আগেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, আমলা ও দলীয় লোকেরা এমন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন যে, বিশ্বব্যাংক তাদের সাহায্য বন্ধ করে দেয়। এখন দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীর পদত্যাগেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। দেশের এত বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যার সঙ্গে দেশের লক্ষ-কোটি মানুষের ভাগ্য জড়িত, তাকে নিয়ে এমন কাণ্ডে সরকারের কি লজ্জাও হয় না?
বিদু্যুত্ উত্পাদনের নামে ‘কুইক রেন্টাল’ প্রকল্প চালুর মাধ্যমে সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারও আগে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। সর্বস্ব হারিয়ে তারা বার বার রাস্তায় নেমেছে, পুলিশের লঠিপেটা খেয়েছে, রাস্তায় শুয়ে থেকেছে, আত্মহত্যা করেছে। টেলিভিশনে দেখেছি তাদের কান্না, তাদের আর্তনাদ, তাদের অসহায় চিত্কার।
লুটপাটের এ চিত্রের সঙ্গে যোগ হয়েছে দলীয়করণের অসংখ্য ও অবর্ণনীয় ঘটনা। সব ক্ষেত্রে দলীয়করণের সঠিক তথ্য না জানলেও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয়করণের এমন নগ্ন চিত্র আর কখনও দেখা যায়নি। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষাকার্যক্রম। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ বুয়েট, যা কিনা গত দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়েছিল। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের কাছে শিক্ষকরা ও শিক্ষার্থীরা জিম্মি। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই একাডেমিক পরিবেশ ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আজ এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের অবাধ চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মারামারি, হানাহানি, অন্তঃকলহে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন আজ সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত। দলীয় উপাচার্য, প্রশাসন ও দলীয় ছাত্র-ক্যাডারদের যৌথ আক্রমণের শিকার বিরোধী দলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার দলীয় ছাত্র-ক্যাডারদের হাতে শিক্ষক প্রহারের ঘটনা নজিরবিহীন। শিক্ষক নির্যাতনের এমন নিষ্ঠুর ও করুণ উদাহরণ কেউ কি কখনও দেখেছেন?
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী শোষণ বঞ্চনাহীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম করা। কিন্তু আমাদের সে উদ্দেশ্য আজও পূরণ হয়নি। দেশ আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। হত্যা, গুম, খুন গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। তাহলে গণতন্ত্রের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের কি পার্থক্য? অথচ আজকের বাংলাদেশে হত্যা, গুম, খুনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নির্যাতন ও নিপীড়নের নব-নব কৌশলের মাধ্যমে তাদের স্তব্ধ করার চেষ্টা চালানো হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি এহেন অবস্থার সমালোচনা করেন, এসব ঘটনার বিচার ও প্রতিকার দাবি করেন তাহলে তিনি ঠিক কাজই করেছেন। তার ওপর অর্পিত ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যদি তার পত্রিকায় সত্য প্রকাশ করেন, দেশের পরিস্থিতির অবনতির জন্য দোষীদের শাস্তি দাবি করেন এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করেন তাহলে তিনিও তার দায়িত্ব সত্ ও সঠিকভাবে পালন করেছেন। অতএব সরকারের প্রতি আমাদের আবেদন—মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অবিলম্বে মুক্তি দিন আর মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করুন।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানী

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads