মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৩

পুলিশের দায়িত্ব-কর্তব্য



আজ থেকে প্রায় দেড়শত বছর আগে ১৮৬১ ঈসায়ী সালে বৃটিশ শাসিত ভারতে পুলিশ বাহিনীর যাত্রা শুরু। প্রশাসনের সহায়তাকারী এ প্রতিষ্ঠানটি এ দীর্ঘ সময়ে অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে আজকের গৌরবদীপ্ত অবয়বে উন্নীত হয়েছে। ভূমিকা না করেই বলা যায়, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ডে ব্যাপক অবদান রেখেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্য জীবন দিয়েও দেশমাতৃকার সেবায় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ছাড়া দেশের আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। আধুনিক পুলিশ বাহিনীর জন্য যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন তার সব চাহিদা পূরণ না হলেও আমাদের পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। এমনকি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতেও আমাদের সেনা সদস্যদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা গৌরবময় অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। বলা যায়, এতেও জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আমাদের ভাব-মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে। এ ছাড়া চোর-ডাকাত থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী প্রভৃতির অপতৎপরতা ঠেকাতেও পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রকৃত অর্থে পুলিশ না থাকলে হয়তো সাধারণ মানুষ ঘর থেকে রাস্তায় বেরুতেই পারতো না। কাজেই পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও সমাজের শান্তি-শৃক্মখলা ও প্রশাসনকে সহায়তার জন্য পুলিশ আমাদের অনিবার্য বৈকি।
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ঘুষ খায়। দুর্নীতি করে। কিন্তু পুলিশকে যারা পরিচালনা করেন, তারা যদি দুর্নীতি করেন, ঘুষ খান, অনিয়ম করেন তাহলে পুলিশ কী করবে? নিশ্চয়ই পুলিশের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাসা দেখবার কথা নয়। কিন্তু কর্তা নিজে পাহারাদারকে যা শেখাচ্ছেন তাইতো তারা শিখছে। এখানে পুলিশ কিভাবে সৎ থাকবে? কর্তা যদি সৎ থাকেন, তাহলেই তো পাহারাদার তথা পুলিশ সৎ থাকবে। সৎ থাকতে বাধ্য হবে। কিন্তু পুলিশকে যারা পরিচালনা করেন তারাই যদি সৎ না হন, তাহলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াতে পারে তা নিশ্চয়ই সকলের বোধগম্য। আসলে ওপরের কর্তা যদি সৎ হন, তাহলে নিচের চৌকিদার বাধ্য হয়ে সৎ থাকতে চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয়, সরকার যদি পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে, সত্যকে মিথ্যা কিংবা মিথ্যাকে সত্য বলতে বাধ্য করে তাহলে পুলিশের দোষ দিয়ে লাভ কি হবে? পুলিশ যদি নির্দেশমত বিরোধী দলের সমাবেশ-মিছিল-মিটিং পন্ড করতে না পারে, তাহলে তার চাকরি চলে যেতে পারে। বদলি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঠাতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে কোনও কোনও পুলিশ সদস্য মন্ত্রী বা সরকারি হুকুম তামিল করতে গিয়েও দুর্নীতি আর অনিয়মের গ্যারাকলে আটকা পড়ে। অসৎ রাজনীতির অনিবার্য কারণ অনেক পুলিশ সদস্যকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে। এ ছাড়া আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করা দরকার। সেটি হচ্ছে পুলিশের নিয়োগ পদ্ধতি। আজকাল এক্ষেত্রে পারিবারিক ঐতিহ্য কিংবা বংশ মর্যাদা বিবেচনা না করে দলীয় বিবেচনায় এবং রহস্যজনক লেনদেনের মাধ্যমে পুলিশে নিয়োগ দেয়া হয়। পুলিশের ভাব-মর্যাদা বিনষ্টের এটিও একটি অন্যতম কারণ। বলা যায় বর্তমানে পুলিশের দলীয়করণ এখন ষোলকলায় পরিপূর্ণ হয়েছে। কাজেই ঐতিহ্যবাহী পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হলে এবং পুলিশকে জনগণের ‘বন্ধু' হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে এর পরিচালক তথা কর্তৃপক্ষকে সৎ হতে হবে। পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দলনিরপেক্ষ হতে হবে। পুলিশকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলেই এ বাহিনীর কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা আশা করা যেতে পারে।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পুলিশ সপ্তাহ শুরু হয়েছে। এটা যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমিত না থাকে। পুলিশ বাহিনীর ভাব-মর্যাদা রক্ষা, দায়িত্ব পালনে সুশৃক্মখল ও চৌকস বাহিনী হিসেবে যেন পুলিশকে গড়ে তোলা যায় সে ব্যাপারে সরকার ও এর ঊর্ধ্বতনদের যত্নবান হতে হবে। আমরা পুলিশ সপ্তাহের সাফল্য কামনা করছি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads