রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১২

বিরোধী আন্দোলন সফল করার সহজ উপায়…


শফিক রেহমান

স্থান : প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়, ঢাকা এবং সুন্দরবন।
কাল : নভেম্বর ২০১২-র তৃতীয় সপ্তাহ।
পাত্র : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিভিন্ন পশুপাখি, জলজ প্রাণী ও কীটপতঙ্গ।
সতর্কীকরণ : সকল ঘটনা, চরিত্র ও সংলাপ সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
প্রথম দৃশ্য : প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর খাসরুম। আলোচনারত প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী (স্মিত মুখে) : মনে হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ে আপনি ভালোই সেটল করেছেন। গতকাল আমেরিকান এমবাসি যে বিবৃতি দিয়েছে, আপনি কালবিলম্ব না করে তার কড়া উত্তর দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (প্রীত মুখে) : আপনার দোয়া নেত্রী। বুধবার ফার্মগেটে জামায়াত ও শিবির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আমাদের দলের অঙ্গসংগঠনের মধ্যে সংঘাতের পরে আমেরিকান এমবাসি বিবৃতি দিয়েছিল, ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় সংঘটিত সাম্প্রতিক সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস উদ্বিগ্ন। এই সহিংসতার ফলে যারা আহত ও ব্যক্তিগতভাবে সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের প্রতি রয়েছে আমাদের সহমর্মিতা। … শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে জড়িত হওয়া একটি মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, সংলাপই যেকোনো মতপার্থক্য দূরীকরণের উত্তম পন্থা।
এই বিবৃতিতে পরোক্ষভাবে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। এটা কোনো মতেই আমাদের গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আমি তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের বলেছি, যারা খুনি, ডাকাত, মানুষ হত্যা করে তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? তাদের আগে দমন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী : সেটা ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু পুলিশকে মার খেতে দিলেন কেন? জামায়াত-শিবির কর্মীরা তো ওদের বেদম পেটাল। আর ওরা কিছুই করতে পারল না?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : নির্বাচন হলে আমরা হেরে যাব, এটা ভেবে হয়তো পুলিশ হতোদ্যম হয়ে পড়েছে। তারা আর আগের মতো বিরোধীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছুক হচ্ছে না। (চারপাশে তাকিয়ে, গলার স্বর নিচু করে) সত্যি বলতে কি নেত্রী, এই আমেরিকান স্টেটমেন্টে জামায়াত-শিবির উৎসাহিত হয়েছে। আগের এমবাসাডর প্যাটৃসিয়া বিউটেনিসের মতো সহানুভূতিশীল নন এই এমবাসাডর ড্যান মজিনা।
প্রধানমন্ত্রী (ম্লান মুখে) : আমেরিকার ইলেকশন রেজাল্ট আমার সব আশা নষ্ট করে দিল। ভেবেছিলাম রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি জিতবেন। ওখানে জনমত জরিপও বলছিল ওবামা-রমনি সমানে সমান আছেন এবং হয়তো বা রমনি জিতেও যেতে পারেন। রমনি জিতলে তার পক্ষে সারা বাংলাদেশে আমরা বিজয় মিছিল বের করতাম। তারপর তাকে রিকোয়েস্ট করতে পারতাম মজিনাকে মিয়ানমার বা মালয়শিয়াতে ট্রান্সফার করে দিতে। কিন্তু তা তো আর হলো না। (একটু চুপ থেকে) আমি সেদিন ঢাকা ইউনিভার্সিটির সিনেট ভবনে একটি অনুষ্ঠানে বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছি, … আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করা যাবে না। যদি ভেবে থাকেন আন্দোলন-সংগ্রাম করে আমাদের নার্ভাস করে দেবেন, তাহলে ভুল করবেন।
সেদিন আমার মুখ ফশকে নার্ভাস শব্দটি বেরিয়ে গিয়েছে। আসলে আমাদের নার্ভাস হবার যথেষ্ট কারণ আছে। হলমার্ক কেলেংকারিতে সোনালি ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা গায়েব। সেখানে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এসেছে আমার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর বিরুদ্ধে। ইউনিপেটুইউ-ডেসটিনি কেলেংকারিতে আরো কয়েক হাজার কোটি টাকার ঘাপলা। ডেসটিনিতে চেয়ারম্যান ছিলেন আমাদের অনুগত ও বিশ্বস্ত অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল হারুন। তিনি তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিশ কোটি টাকা পেয়েও বলেছেন, ডেসটিনিতে তার কার্যকর কোনো ভূমিকা ছিল না। এ কথা বলে হারুন নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ এই জেনারেল কেন ডেসটিনির অর্থে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন? এসবের সঙ্গে পদ্মা সেতু দুর্নীতি তদন্তও তো চলছে। এটা আবার আন্তর্জাতিক রূপ নিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক টিম বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করছে। আর আগামী এপৃলে কানাডাতে এসএনসি-নাভালিনের বিরুদ্ধে মামলা উঠবে আদালতে। তখন দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট বহু নাম ফাস হয়ে যেতে পারে। বিরোধী নেত্রী খালেদা তো এখনই বলছেন, এই দুর্নীতির সঙ্গে নাকি আমার পরিবার জড়িত। তিনি আমাকে বিশ্ব চোর টাইটেলও দিয়েছেন। (একটু নড়েচড়ে আবার স্থির হয়ে বসে গম্ভীর মুখে) এসব কোনো কিছুই আমাকে নার্ভাস করছিল না। কিন্তু …
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : কিন্তু কি?
প্রধানমন্ত্রী (বিমর্ষ স্বরে) : কিন্তু খালেদার সফরে ইনডিয়া তাকে যে বিশাল সংবর্ধনা দিয়েছে ওই দেশের সরকার ও বিরোধী দল, সেটাই আমাকে ভাবনার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাই ঈদ-উল আজহা শেষ হয়ে গেলেও তার তিন দিন পর আমি ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে কথা বলেছি ঢাকায় ইনডিয়ান হাই কমিশনার পংকজ শরণের সঙ্গে। তাতে লাভ হয়নি কিছুই। প্রণববাবুর সঙ্গে খালেদার মিটিংটা ঠেকানো যায়নি। তবে, সনিয়ার সঙ্গে মিটিংটা ঠেকানো গেছে। কিন্তু এটা তো এখন পরিষ্কার যে, সামগ্রিকভাবে আমাদের দেশের মানুষ মনে করছে, ইনডিয়ার ধারণা হয়েছে ইলেকশন দিলে আমরা হেরে যাব এবং খালেদাই জিতবেন। অর্থাৎ খালেদা জিয়া এখন তাদের চোখে প্রাইম মিনিস্টার ইন ওয়েটিং Ñ অপেক্ষমাণ প্রধানমন্ত্রী। ইনডিয়ার এই অভাবিত আচরণ উসকে দিয়েছে বিরোধীদের আন্দোলন। তারা হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন রাজপথে জামায়াত নেমেছে, এরপর বিএনপিও নামবে। এই আন্দোলন বিকশিত হবার আগে তাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে হবে। সুতরাং আপনি যে দমননীতির কথা বলেছেন, সেটাই সঠিক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ধন্যবাদ নেত্রী। তবে আরেকটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। সুদানের রাজধানী খার্তুমে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামি সম্মেলন হচ্ছে। এতে দেড়শটি দেশের প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। এই সম্মেলনে বিশ্বের ইসলামি পণ্ডিত ও ইসলামপন্থী নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এক বিভীষিকাময় সময় পার করছেন। এ সময় মুসলিম উম্মাহ নীরব থাকতে পারে না। তারা বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি এভাবে ইসলামপন্থীদের ওপর দমন-পীড়ন নীতি চলতে থাকে তাহলে মুসলিম বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
এসব বক্তার মধ্যে আছেন, মরক্কো, এলজেরিয়া, টিউনিসিয়া, ইজিপ্ট, জর্ডান, সিরিয়া, টার্কি, ইরান, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, শ্রী লঙ্কা, ইনডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ওমান, লিবিয়া, কাতার, কুয়েত, মালয়শিয়া ও সৌদি আরবের প্রতিনিধিরা। (চিন্তিত স্বরে) এদের বক্তব্যের পরিণতি হতে পারে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব মুসলিম দেশে এবং মালয়শিয়াতে আমাদের দেশের জনশক্তি রফতানি হঠাৎ কমে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী : হতে পারে। কিন্তু আমার কথার কোনো নড়চড় হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করতেই হবে। দণ্ড কার্যকর করতেই হবে। গত নির্বাচনে দেয়া কোনো প্রতিশ্রুতি আমরা রাখতে পারিনি। দশ টাকা কেজি দরে চাল দিতে পারিনি। বিনা মূল্যে সার দিতে পারিনি। ঘরে ঘরে চাকরি সৃষ্টি করতে পারিনি। বরং পহেলা নভেম্বরে জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠানে বলতে বাধ্য হয়েছি, প্রত্যেককে চাকরি দেয়া সম্ভব নয়। সুতরাং এ পরিস্থিতিতে আমাদের একমাত্র এবং শেষ সম্বল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই চেতনা আমরা ২০০৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রচার করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভালো ফল পেয়েছিলাম। এবারো তাই করতে হবে। আর সে জন্যই যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। সে জন্যই পাকিস্তানে ডি-এইট সম্মেলনে আমার না যাওয়ার সিদ্ধান্ত যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রশংসিত হবে। সুতরাং আপনি সুদান সম্মেলনে কি হলো তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। (ডেস্কের ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল বের করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে ঠেলে দিয়ে) বরং এটা পড়–ন।
ওই ফাইলে মাত্র একটি পৃষ্ঠা ছিল। সেটা দ্রুত পড়লেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী : ডিজিএফআই, এনএসআইয়ের এই রিপোর্ট। তারা জানিয়েছে, শিগগিরই সুন্দরবনে বাংলাদেশের সব পশুপাখি ও জলজ প্রাণীর মহা সম্মেলন হবে এবং তারা সবাই আমদের সরকারের বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে মহা আন্দোলনে নামবে। জামায়াত-শিবির-বিএনপি আর এখন আপনার প্রায়রিটি নয়। সবার আগে এই আন্দোলন দমন করতেই হবে। এই সম্মেলন ভণ্ডুল করতেই হবে। আপনি সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিন। আপনি, র‌্যাব, পুলিশ সবাইকে অ্যালার্ট করুন। এই সম্মেলন ও আন্দোলন ব্যর্থ করতে কিছু অসাধারণ ব্যবস্থা আপনাদের নিতে হবে। শুধু লাঠি চার্জ, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেটে হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই।
দ্বিতীয় দৃশ্য : সুন্দরবনের গভীরে। সেখানে কিছু সুন্দরী গাছ উপড়ে ফেলে, একটার ওপর একটা গাছ বসিয়ে, মঞ্চ তৈরি করেছে হাতির দল। ওই মঞ্চে কোনো আসন নেই। মঞ্চের চারদিকে গাছ থেকে ঝুলছে বিভিন্ন পোস্টার ও ব্যানার। যেখানে লেখা, দুনিয়ার সব প্রাণী এক হও, আওয়ামীতন্ত্র নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। পশু হত্যা বন্ধ করো, পশু নির্যাতন বন্ধ করো। অশালীন ভাষা বন্ধ করো। আমাদের আন্দোলন চলবেই চলবে, ইত্যাদি।
মঞ্চের চারদিকে এবং সম্মেলনের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বড় কাঠের বাক্স রাখা।
ডিসিপ্লিনড প্রাণী রূপে পরিচিত পিপড়ার দল গাছে এবং মাটিতে শৃঙ্খলা রক্ষা করছে। গাছে সমবেত সব পাখি অথবা মাটিতে সমবেত সব প্রাণী ডিসিপ্লিন ভাঙলে লাল পিপড়া তাদের কামড়ে দিচ্ছে। ফলে পুরো সম্মেলনস্থলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর উপস্থিতি সত্ত্বেও মোটামুটি শৃঙ্খলা বজায় আছে। আকাশে কিছু চিল ঘুরপাক খাচ্ছে ড্রোনের মতো। তার নিচে ফড়িংয়ের দল ঘুরছে হেলিকপ্টারের মতো। তারা সবাই নজর রাখছে সম্ভাব্য সরকারি ফাইটার প্লেন হামলার প্রতি। ওদের সাহায্য করছে গাছে ঝুলন্ত বানরের দল এবং মাটিতে অনেক কুকুর। সম্মেলনে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশের পরিচিত সব পশুপাখি ও জলজ প্রাণী। যেমন, বাঘ, হরিণ, হাতি, গরু, ছাগল, ভেড়া, হাস, মুরগি, কাক, চড়–ই, কবুতর, কচ্ছপ, কুমির, ডলফিন, ইত্যাদি।
এদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে সম্মেলনে যোগ দিয়েছে বিদেশ থেকে আগত অনেক প্রতিনিধি। এসব পশু প্রাণী সাধারণত বাংলাদেশে দেখা যায় না। যেমন, সিংহ এসেছে ইনডিয়া থেকে, চিতাবাঘ এসেছে শ্রী লঙ্কা থেকে। দুই শিংওয়ালা গন্ডার এসেছে সুমাত্রা এবং এক শিংওয়ালা গন্ডার এসেছে জাভা ও ইনডিয়া থেকে। শাদা পোলার ভালুক এসেছে কানাডা থেকে, ব্রাউন ভালুক এসেছে রাশিয়া থেকে ও কালো ভালুক এসেছে পোল্যান্ড থেকে। ক্যাঙ্গারু এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। জেব্রা এসেছে টানজানিয়া থেকে। হায়েনা এসেছে ইজিপ্ট থেকে। নেকড়ে এসেছে ইটালি ও রোমানিয়া থেকে। উট এসেছে সৌদি আরব থেকে। তিমি এসেছে আমেরিকা ও আর্জেনটিনার উপকূল থেকে। হাঙ্গর এসেছে আমেরিকা ও সাউথ আফৃকার উপকূল থেকে।
বলা যায়, মানুষের অবিরাম নিধনযজ্ঞ সত্ত্বেও বিশ্বে যেসব বন্য প্রাণী এখনো তাদের অস্তিত্ব বজার রাখতে পেরেছে তাদের সবারই প্রতিনিধি এই সম্মেলনে এসেছে। মঞ্চের পেছনে টাঙানো হয়েছে সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (World Wide Fund for Nature) সংস্থার বিশাল ব্যানার। সংক্ষেপে এই সংস্থাটি WWF নামে পরিচিত। ১৯৫১-তে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার হেড কোয়ার্টার্স সুইজারল্যান্ডে এবং এর প্রেসিডেন্ট এমেরিটাস হচ্ছেন ডিউক অফ এডিনবরা, যিনি বৃটেনের রানী এলিজাবেথের স্বামী পৃন্স ফিলিপ। ডাবলিউডাবলিউএফের অর্থায়ন ও বিশ্বব্যাপী সহযোগিতায় এই সম্মেলনটি হলেও সেখানে কোনো মানুষ উপস্থিত ছিল না। শুধু সমবেত পশুপাখিরা পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময় করছিল। বাংলাদেশের পশুপাখিরা খুব আগ্রহের সঙ্গে জেনে নিচ্ছিল বিদেশি পশুপাখিদের কুশল। কেউ কেউ আনন্দে তাদের লেজ নাড়ছিল। কুমিরগুলো নদীর তীরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। মোরগগুলো মাঝেমধ্যে ডেকে উঠছিল। কোনো সহিংসতার চিহ্ন সেখানে ছিল না। সবার শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানের ফলে সেদিন সুন্দরবন শুধু সুন্দরই নয়, হয়ে উঠেছিল এক অভূতপূর্ব মহান মিলনমেলা।
নির্দিষ্ট সময়ে একটি রয়াল বেঙ্গল টাইগার হেলেদুলে মঞ্চে উঠে সম্মেলন পরিচালনার কাজ শুরু করল। সবাই চুপ হয়ে গেল।
বাঘ : উপস্থিত প্রাণীবৃন্দ। প্রথমেই আমার শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ গ্রহণ করুন। বিশেষত যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের জানাচ্ছি আমার এবং বাংলাদেশের প্রাণীকুলের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আমরা কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি ডাবলিউডাবলিউএফ-কেও। তাদের আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই সম্মেলন সম্ভব হতো না। তারা প্রমাণ করেছেন মানবকুলের মধ্যে এখনো কেউ কেউ আছেন, যারা পশুপাখি ও জলজ প্রাণীদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য সর্বতোভাবে কাজ করতে সদা প্রস্তুত।
অতি দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা এখন খুবই কমে গিয়েছে। সাম্প্রতিককালে আওয়ামী নামে এক ধরনের জীব বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসার পর আমরা শুধু যে শারীরিকভাবেই নির্যাতিত হচ্ছি তা নয়, উপরন্তু আমরা মানসিকভাবেও নির্যাতিত হচ্ছি।
উপস্থিত প্রাণীকুল (উচ্চস্বরে) : শেম! শেম!!
বাঘ : আমাদের নিয়ে বাণিজ্য করা হচ্ছে। আবার আমরা বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনেও ব্যবহৃত হচ্ছি।
প্রাণীকুল : শেম! শেম!!
কালো চিতা (বাঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করে) : এ প্রসঙ্গে আমি কিছু বলতে চাই।
বাঘ : বলুন।
কালো চিতা : ইংরেজিতে আমার নাম প্যানথার। বাংলাদেশের কয়েকটি এনার্জি ডৃংকের বিজ্ঞাপনে পশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন, টাইগার ডৃংকের বিজ্ঞাপনে আইয়ুব বাচ্চুর গানের সঙ্গে বাঘের ছবি। ব্ল্যাক হর্সের বিজ্ঞাপনে জেমসের গানের সঙ্গে ঘোড়ার ছবি। শার্ক ডৃংকের বিজ্ঞাপনে সাগরে হাঙ্গরের গর্জন। এ ছাড়া আমি দেখছি টিনের বিজ্ঞাপনে গরু। মশার কয়েলের বিজ্ঞাপনে মোরগ। নারকেল তেলের বিজ্ঞাপনে হাস। এসব মেনে নিলেও আমি কনডমের বিজ্ঞাপনে প্যানথারের ব্যবহারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
উপস্থিত প্রাণীকুলের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন উঠল। কেউ কেউ প্রেম রসে সিক্ত হয়ে পাশের প্রাণীর দেহ চাটতে থাকল।
বাঘ : কেন মেনে নিতে পারছেন না? আপনি কি মানুষের জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিরোধী?
কালো চিতা : না। আমি চাই আরো কম মানুষ জন্মাক। কারণ তাতে কম প্রাণী হত্যাকারী জন্মাবে। কিন্তু ওই কনডমের বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত প্যানথারকে দেখলে চিতা মনে হয় না, মনে হয় একটা কালো বিড়াল! এতে প্যানথারকুলের খুব মানহানি হয়েছে।
সিংহ : মানহানির কথা যখন উঠলই তখন আমিও কিছু বলতে চাই। ওয়াইফাই কম্পানি বাংলা লায়নের বিজ্ঞাপনে যে সিংহটিকে দেখানো হয় সেটি আমাদের কলঙ্কস্বরূপ। এমন ছোটখাটো বেঢপ আকারের সিংহ বিশ্বের কোথাও নেই।
গন্ডার : কিন্তু বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের জন্য নয়, আমাদের মানহানি হচ্ছে সাবেক রেলমন্ত্রী ও বর্তমানে দফতর বিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত-র কথায়। রেলওয়ের বহুল আলোচিত অর্থ কেলেংকারির অভিযোগ ওঠায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার এপিএস বা সহকারী একান্ত সচিব ওমর ফারুককে চাকরিচ্যুত করেন। এরপর আরটিভি চ্যানেলে একটি ইন্টারভিউতে ওমর ফারুকের গাড়ির ড্রাইভার আজম খান বলেন, টাকা তো সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাড়িতে যাচ্ছিল। ওদিকে যাওয়ার পথেই আমি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলি। এর আগেও কয়েকবার টাকা গেছে।
এই ইন্টারভিউয়ের পরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমি সাতবার গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। আমরা গন্ডারের চামড়া নিয়ে রাজনীতি করি। সব কিছু সইতে হয় আমাদের।
বাঘ : তার এই উক্তিতে আপনার মানহানি হলো কেন?
গন্ডার : দুটি কারণে। প্রথমত আমাদের চামড়া দেড় থেকে পাচ সেন্টিমিটার পুরু হতে পারে। কিন্তু সুরঞ্জিতের চামড়া আরো অনেক বেশি পুরু। তা নাহলে তিনি প্রথমে যে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাতেই অটল থাকতেন। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আমরা, গন্ডাররা তুলনীয় হতে চাই না। কখনোই চাই না।
কালো বিড়াল : সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রসঙ্গে আমাকেও কিছু বলতে হবে। তিনি আমাদেরও মানহানি করেছেন। রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েই সুরঞ্জিত বলেছিলেন, সারা বিশ্বে রেলপথ লাভজনক। কিন্তু বাংলাদেশে রেলপথ হচ্ছে লোকসানের খাতা। রেলের লোকসানের পেছনের কালো বিড়ালকে খুজে বের করব।
আমার প্রশ্ন, কেন সুরঞ্জিত কালো বিড়ালের কথা বললেন? দুর্নীতি তো পশুপাখি সমাজে একেবারেই অজানা। দুর্নীতি করে মানুষ। সুরঞ্জিত সেটা জেনেও খামোখা কালো বিড়ালকে দায়ী করেছেন। এটা ঘোর অন্যায়। আরো একটি কথা। আমি জানি, জন্মের সময় কার গায়ের রং কি হবে সেটা বলা মুশকিল এবং কারো গায়ের রং নিয়ে কটাক্ষ করা অনুচিত ও অভদ্রতা। কিন্তু সুরঞ্জিত সেই অভদ্রতাটাও করেছেন। আমি আজ এই বিশাল প্রাণী সভায় সজোরে বলতে চাই, (নিজের কালো রংয়ের দিকে দেখিয়ে) আমার চাইতেও অনেক অনেক বেশি কালো রং সুরঞ্জিতের গায়ের রং। ওনাকে এখন থেকে সবাই যদি কালো সুরঞ্জিত বলে তাহলে তার কেমন লাগবে?
প্রাণীকুল (সেøাগান) : সুরঞ্জিতের চামড়া, তুলে নেব আমরা।
বাঘ (ধমকের স্বরে) : আপনারা উত্তেজিত হবেন না। সহিংস হবেন না। মনে রাখবেন, আওয়ামীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জয়ী হতে হলে আমাদের অহিংস থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ থাকতে হবে। এ ধরনের সেøাগান শুধু আওয়ামীদের মুখেই মানায়। সহিংসতার কথা বললে, সহিংস আচরণ করলে, তার আরো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে দলে ও সমাজে। ২২ অক্টোবর ২০১২-র রাতে আরটিভিতে রুবাইয়াত ফেরদৌস উপস্থাপিত আওয়ার ডেমক্রেসি অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ‘হারামজাদা, তোর চোখ তুলে নেব’ বলে তেড়ে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার প্রতি। এতেই থেমে থাকেননি মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি সাবেক মন্ত্রী রফিকুল ইসলাম মিয়াকে জুতাপেটার হুমকিও দেন। অনুষ্ঠানটি তখন দশ মিনিটের জন্য বন্ধ করে দিলেও তার মন্দ প্রতিক্রিয়া বন্ধ হয়নি। এ ঘটনার মাত্র তিন সপ্তাহ পরে ১২ নভেম্বর বাগেরহাটের মংলা, কানাইনগর এলাকায় স্থানীয় ছাত্রদল নেতা পলাশকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে একদল দুর্বৃত্ত। এক পর্যায়ে পলাশের বাম চোখ তুলে নেয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পলাশ তখন প্রাণে বেচে গেলেও গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে মংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে পলাশকে খুলনা পাঠানো হয়। তার এক চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং আপনারা কখনোই কারো চামড়া বা কারো চোখ তুলে নেয়ার কথা বলবেন না।
প্রাণীকুলের সবাই নীরব হলো। সংযত হলো।
বাঘ : সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ আমরা বাঘরাই করতে পারি। তিনি তার কথনে প্রায়ই আমাদের উল্লেখ করেন। যেমন, এ মাসেই তিনি প্রেস কাবে জনতার প্রত্যাশা নামে একটি সামাজিক সংগঠনের আলোচনা সভায় বলেছেন, বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে নাÑ এটা সত্য কথা। কাজেই যুদ্ধাপরাধীদেরও রক্ষা হবে না। তাদের তিনি ছাড়বেন না।
এর আগে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে অপসারণ করার সময়ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না।
শেখ হাসিনার মতো একজন প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তির সঙ্গে আমরা তুলনীয় হতে চাই না। বস্তুত সুরঞ্জিত তার এই দুটি বক্তব্যেই স্বীকার করে নিয়েছেন, আমরা হিংস্র না-ও হতে পারি। আমরা আমাদের শিকার ছেড়েও দিতে পারি। কিন্তু শেখ হাসিনা তার প্রতিশোধ চরিতার্থে অটলভাবে হিংস্রই থাকেন। এই বক্তব্য দুইবার দেয়ার পরও সুরঞ্জিতকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও দফতরবিহীন মন্ত্রী পদে রেখে শেখ হাসিনা নিজেও তার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট স্বীকার করে নিয়েছেন। তা তিনি করতেই পারেন। কিন্তু আমরা কিছুতেই শেখ হাসিনার নামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে চাই না।
প্রাণীকুল (সমস্বরে) : হাসিনা হাসিনা, চাই না চাই না।
বাঘ : শুধু কথাতেই নয়, আওয়ামী আমলে আমরা শারীরিকভাবে আরো নির্যাতিত হচ্ছি। আপনারা প্রায়ই খবরে পড়ছেন পিটিয়ে বাঘ হত্যা করা হচ্ছে। আমি মনে করি, পিটিয়ে হত্যার কালচারটা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এ তদানীন্তন চার দলীয় জোটের ক্ষমতা হস্তান্তরের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে সকাল থেকে লগি-বৈঠা, বাশের লাঠি ও আধুনিক অস্ত্রসহ আক্রমণ করেছিল জামায়াত কর্মী-সমর্থকদের। সারা দেশে বিশজন নিহত হয়েছিল রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের হাতে। আহত হয়েছিল শতাধিক। বিরোধী মতাবলম্বী হবার অপরাধে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যার পর হত্যাকারীদের উন্মত্ত উল্লাস প্রকাশ ছিল বর্বর। সেদিন আঘাতে এক ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তার লাশের ওপর দাঁড়িয়ে হত্যাকারীরা নেচেছিল এবং সেই দৃশ্য টিভিতে দেখানো হয়েছিল। যারা এই হত্যাকাণ্ডকে কিছুতেই সমর্থন করতে পারেননি, তারা শুধু বলেছিলেন এটা ছিল একটি পাশবিক কাণ্ড।
তাদের এই উক্তি সঠিক ছিল না। পশুরা এভাবে কোনো প্রাণীকে হত্যা করে না এবং নিহত প্রাণীর লাশের ওপর দাঁড়িয়ে নাচে না। সাধারণ পশুরা স্বজাতির কোনো পশুকে হত্যা করে না Ñ যেমনটা মানুষ সর্বদা করে। সুতরাং আমরা কিছুতেই এ ধরনের কাণ্ডকে পাশবিক বলতে পারি না।
প্রাণীকুল : ঠিক, ঠিক।
বাঘ : এই কাণ্ডকে আমরা মানবিকও বলতে পারি না। কোনো সুস্থ ও সভ্য মানুষই এমন কাণ্ড করতে পারে
না। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড পাশবিক নয়, মানবিকও নয়। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আওয়ামী হত্যাকাণ্ড। বস্তুত, বর্তমান বাংলাদশে তিন ধরনের প্রাণী বসবাস করছে। এক. পশুপাখি ও জলজ প্রাণী। দুই. মানুষ। এবং তিন. আওয়ামী। আওয়ামীরা সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের জীব। তাদের আচার-আচরণ সবার চাইতে ভিন্ন। পোশাকও ভিন্ন। ধর্মও ভিন্ন। এরা হিন্দু, মুসলিম, কৃশ্চিয়ান, বৌদ্ধও নয় Ñ এরা আওয়ামী ধর্ম অনুসারী।
প্রিয় বন্ধুরা। আমরা, বাঘরা আরো বহুভাবে নির্যাতিত হচ্ছি। আপনারা জানেন, চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানায় গত ৩০ অক্টোবরে বাঘিনী পূর্ণিমার মৃত্যু হয়েছে। তার সঙ্গী বাঘ চন্দ্র মারা গিয়েছিল ২০০৬ সালে। এরপর কয়েক বছর একা থাকার পর পূর্ণিমা অসুস্থ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় কিউরেটর মনজুর মোরশেদ জানিয়েছেন, ওর ক্যান্সার হয়েছিল। তবে তাকে সুস্থ করতে কোনো গাফিলতি ছিল না। কিন্তু তারপরও তাকে বাচানো যায়নি।
কিউরেটর অবশ্য বলেননি কেন পূর্ণিমার একজন পুরুষ সঙ্গী পাওয়া যায়নি? কেন পূর্ণিমাকে ছয় বছর একাকী থাকতে হলো? বাংলাদেশে কি বাঘের অভাব ঘটেছে? হ্যা, আমি জানি আওয়ামী সরকার কারেন্সি নোটের জলছাপ থেকে বাঘের ছবি সরিয়ে ফেলেছে। নতুন সব নোটে বঙ্গবন্ধুর জলছাপ দেয়া হয়েছে। তারপরও একটাও পুরুষ বাঘ কেন পাওয়া গেল না পূর্ণিমার জন্য? একটা সঙ্গী পেলে পূর্ণিমা হয়তো আরো বহুদিন বাচত।
এসব নির্যাতনের পাশাপাশি আওয়ামী আমলে বাংলাদেশের বাঘসমাজ আরেক ধরনের বিপদে পড়েছে। গত ৭ জুন ২০১২-তে সাতক্ষীরার একটি স্থানীয় পত্রিকা জানায়, শ্যামনগরের একটি চক্র পশ্চিম সুন্দরবন থেকে তিনটি বাঘের শাবক পাচারের চেষ্টা করে। এ খবর পাওয়ার পর ১১ জুন ঢাকার শ্যামলীতে একটি বাসা থেকে র‌্যাব তিনটি বাঘের শাবক উদ্ধার করে। কিন্তু এরপর ভেটখালি বাজারে বাঘ শাবক পাচারকারী আইয়ুব বাহিনী মামলার সাক্ষী সালামের ওপর লাঠি ও রড দিয়ে হামলা চালায়। গত ২৮ আগস্ট রাতে তারা সালামের বাড়ির পুকুরে বিষ ফেলে লক্ষাধিক টাকার মাছ মেরে ফেলে। বাঘ শাবক পাচার মামলার অন্য দুই সাক্ষী মোসলেম ও মিজান জানিয়েছেন, পাচারকারী দলের হোতা নুরুজ্জামানের হুমকিতে তারা বাড়িতে থাকতে পারছেন না।
প্রিয় বন্ধুরা। বুঝতেই পারছেন আওয়ামী আমলে শুধু মানুষই নয়, বনের বাঘ থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ পর্যন্ত কেউ আর নিরাপদ নয়। আসুন, আজ তাই আমরা সব পশুপাখি দাবি তুলি, আমরা সবাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।

গরু-ছাগল বাদে প্রাণীকুল (সমস্বরে) : আমরা সবাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।
গরু : আমাদের জন্য এটা হয়তো অসম্ভব চাওয়া। কোরবানির ঈদে আমাদের অনেকের মৃত্যু হয়। তবে গত কোরবানির ঈদের আমাদের মৃত্যুর সংখ্যা হয়েছে কম। বাজারে যত গরু ছিল তার তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা ছিল অর্ধেক। বিক্রেতার কাকুতি মিনতি ডাকাডাকিতে লাখ টাকা দামের গরু বিক্রি হয়েছে ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকায়। তারপরও বিক্রি হয়নি বাজারের অর্ধেক গরু। বিক্রেতার চোখে ছিল পানি। তারা কেদেছিলেন। কিন্তু তাতে কি? আমাদের অনেকের প্রাণ তো বেচেছে। আমরা খুশি হয়েছি ঢাকা মেডিকাল
কলেজ হসপিটালের পরিচালক বৃগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের একটি বিবৃতিতে। তিনি দৈনিক সমকালের রিপোর্টারকে জানান, ঈদের দিন কোরবানির পশু কাটাকাটি করতে গিয়ে হাত, হাতের আঙুল, পাসহ বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম নিয়ে ২২৬ জন ঢাকা মেডিকাল কলেজ হসপিটালে ভর্তি হন। সকাল থেকেই এ ধরনের রোগী একের পর এক আসতে থাকায় হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে তাদের সেবাদানের জন্য পৃথক ডাক্তার নির্ধারণ করে দেন। দিনভর আটজন ডাক্তার পালাক্রমে এসব রোগীকে সেবা দেন। বৃগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভ্যস্ত না হওয়ায় এবং অমনোযোগী থাকার কারণে কোরবানির পশু কাটতে গিয়ে অনেকে নিজ হাত-পায়েই ছুরি, চাকু বটি কিংবা চাপাতির কোপ বসিয়ে দেন। তবে মানুষের নিষ্ঠুরতা প্রসঙ্গে এটাও আমাকে বলতে হবে যে, কিছু মানুষ এখনো পশুদের প্রতি মানবিক অর্থাৎ সদয় আচরণ করেন। কয়েকটি ঘটনার কথা আমি আপনাদের জানাতে চাই।
রাজধানীর উত্তরা ৭ নাম্বার সেক্টরের আবদুর রহমান ঈদের আগের সন্ধ্যায় কোরবানির জন্য হাট থেকে একটি গরু কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। গরুটি হঠাৎ একটি নর্দমায় পড়ে যায়। খবর পেয়ে টঙ্গি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে গরুটি উদ্ধার করে।
মোহাম্মদপুরের ফরিদাবাদ আবাসিক এলাকার আবদুর রহিমের গরুটি আটকা পড়েছিল নির্মাণাধীন একটি ভবনের পানির ট্যাংকে। ঈদের দিন ভোর সাড়ে পাচটায় এই ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস মোহাম্মদপুর ও সদর দফতরের কর্মীরা গিয়ে সেটি উদ্ধার করেন। নিউ ইস্কাটনের একটি পানির রিজার্ভ ট্যাংকে পড়ে যাওয়া আরেকটি গরু উদ্ধার করে সদর দফতরের কর্মীরা।
২৮ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট। ঈদের পরদিনের ঘটনা। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের দক্ষিণা অ্যাপার্টমেন্টের রুপমের জার্মান শেফার্ড কুকুর ছাদ থেকে পড়ে আট তলায় লিফটের ফাকা জায়গায় আটকে যায়। ডাকা হলো ফায়ার সার্ভিসকে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে দেখেন যেখানে কুকুরটি আটকে গেছে সেখানে কেউ যেতে পারবে না। পরে আট তলার বাথরুম দিয়ে লিফটের ভয়েড স্পেসে একটি ছোট জানালার আয়তনের একটি স্থান তৈরি করা হয়। ওই স্থান দিয়ে একটি হুক কুকুরের গলার চামড়ার বেল্টে লাগিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত বৃগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আবু নাঈম শহিদউল্লাহ জানান, বিপন্ন প্রাণীকে উদ্ধার করতে ফায়ার সার্ভিস সচেষ্ট রয়েছে।
উদ্ধারের লিস্টে আছে তিনটি বিড়ালও। ধানমন্ডি, নিকেতন ও মিরপুর এলাকায় কার্নিশে আটকা পড়া তিনটি পোষা বিড়াল উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এসব উদ্ধারকাজ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টাফ অফিসার আকরাম হোসেন বলেন, মানুষের পাশাপাশি গরু-ছাগল, পোষা বিড়াল, কুকুর বা অন্য যেকোনো প্রাণী বিপদে পড়লেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেগুলো উদ্ধার করে।
আমি আজ এই মহা সম্মেলনে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক ও কর্মীদের ধন্যবাদ জানানোর প্রস্তাব রাখছি।
বাঘ : আপনারা গরুর এই প্রস্তাব সমর্থন করেন?
প্রাণীকুল (সমস্বরে) : হ্যা, করি।
গরু : ধন্যবাদ সবাইকে। তবে আজ হয়তো আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, বাংলাদেশে ফর্শা রং প্রীতি শুধু হবু পাত্র অথবা পাত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বাংলাদেশিরা, অন্ততপক্ষে মুন্সিগঞ্জে মিরকাদিমের অধিবাসীরা শাদা গরু পছন্দ করেন। দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হোসাইন মোহম্মদ রফির লেখা একটি রিপোর্টের প্রথমাংশ আমি শোনাচ্ছি Ñ ঈদুল আজহা উদযাপনের ক্ষেত্রে পুরনো ঢাকাবাসীর রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। যদিও একশ দেড়শ বছর আগে হিন্দু অধ্যুষিত ঢাকাই সমাজ ব্যবস্থায় গরু কোরবানি দেয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। কথা সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদের বর্ণনা অনুযায়ী হিন্দু জমিদাররা তখন গরু কোরবানিকে অনুৎসাহিত করতেন। কোরবানি দিতে হতো ছাগল বা বকরি। যে কারণে কোরবানির ঈদ পুরনো ঢাকায় বকরি ঈদ নামে পরিচিতি পায়। আহসান মঞ্জিলের নওয়াবদের আমলে কোরবানির ঈদ পালনের ব্যাপারে তারবার্তা দিল্লি থেকে আসত। তারপর তা ঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দেয়া হতো পুরো শহরে। ১৯৪৭ সাল পরবর্তী সময়ে ঢাকার মহল্লায় মহল্লায় ধুমধামের সঙ্গে বকরি ঈদ পালিত হতে শুরু করে। এখনকার মতো তখন ঘরে ঘরে কোরবানি দেয়ার মতো তত বেশি বিত্তশালী ব্যক্তি সমাজে ছিলেন না। তবে মহল্লা প্রধান বা সরদারের বাড়িতে প্রতি ঈদুল আজহায় একাধিক গরু-ছাগল কোরবানি দেয়া হতো। কোরবানির গরু হিসেবে বিশেষ পছন্দ ছিল মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিমের ধবধবে শাদা গাই গরু, যা শুধু রহমতগঞ্জের গতি মিয়ার হাটেই মিলত। যার দেখা এখনো মেলে। এই রেওয়াজ থেকে আপনারা বুঝতে পারছেন, ফর্শা বা শাদা হওয়ায় সুবিধার পাশাপাশি বিপদও আছে।
আমাদের প্রসঙ্গে আজ আমি আরেকটি তথ্য আপনাদের সবাইকে জানাতে চাই। এত দিন আপনারা শুনেছেন ইনডিয়া-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ সদস্যরা বহুভাবে নির্যাতন করে বাংলাদেশিদের। আপনারা জানেন, বাংলাদেশের কিশোরী ফেলানিকে হত্যা করে বিএসএফ তার মৃতদেহ ঝুলিয়ে রেখেছিল কাটাতারের বেড়াতে। এখন শ্রীমঙ্গল থেকে এম. ইদ্রিস আলীর পাঠানো দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার রিপোর্ট জানিয়েছে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে বিএসএফ সদস্যরা চা শ্রমিকদের পিটিয়ে পাচটি গরু ছিনিয়ে নিয়েছে। বিএসএফের নির্যাতনে শ্রমিক সর্দার ও মহিলা চা শ্রমিকসহ ছয়জন চা শ্রমিক আহত হয়। ঘটনাটি ঘটে বিকাল চারটায় চাতলাপুর চা বাগানের ১৯ নাম্বার সেকশনের কড়ইতল এলাকায়। চাতলাপুর চা বাগান সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের কাটাতারের বেড়া কেটে ইনডিয়ান গরু চুরি করে আনার অভিযোগে চোরদের ধাওয়া করার নামে বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশে ঢোকে। পরে তারা কর্মরত চা শ্রমিক সর্দার সদানন্দ বাউরী ওরফে সদাইর কাছে গরুচোর সম্পর্কে তথ্য জানতে চায়। শ্রমিক সর্দার কোনো চোর দেখেননি বলায় আকস্মিকভাবে বিএসএফ সদস্যরা তাকে মারধর শুরু করে। পরে তারা চা বাগান এলাকায় ঘাস খাওয়ারত চা শ্রমিকদের পাচটি গরু নিয়ে চলে যায়। বিএসএফের নির্যাতনে সর্দার সদানন্দ বাউরী ওরফে সদাই, মহিলা চা শ্রমিক চেঙ্গুলি মাদ্রাজিসহ ছয়জন চা শ্রমিক আহত হয়েছে। নির্যাতিত চা শ্রমিক সর্দার সদানন্দ বাউরি জানান, কখন কিভাবে চোররা কাটাতারের বেড়া কেটে গরু চুরি করেছে তা তারা জানেন না অথচ চোর দমনের নামে বিএসএফ বাংলাদেশের চা বাগান এলাকায় ঢুকে এভাবে নির্যাতন চালিয়ে গরু ছিনিয়ে নিয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের ১৪ নাম্বার বিজিবি ব্যাটালিয়নের মেজর তৌহিদ-বিন ইসহাক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পতাকা বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশীদের ছিনিয়ে নেয়া গরু ফিরিয়ে দেবে বিএসএফ।
কচ্ছপ : বাঘ ও গরুর চোরাচালান সম্পর্কে আপনারা শুনলেন। আমরা জানাতে চাই আমরাও চোরাচালানের শিকার হচ্ছি। ৪ নভেম্বর ২০১২-তে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ৭৩টি কচ্ছপসহ তিনজনকে আটক করে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বা এপিবিএনের সদস্যরা। দুপুরে এক যাত্রীর লাগেজ তল্লাশি করে তাদের ধরা হয়। তারা হচ্ছে প্রাইভেট কার চালক সবুজ, গাড়ির মালিক ইয়াসিন ও মোহসীন। পরে তাদের এয়ারপোর্ট থানায় সোপর্দ করা হয়।
এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মোহাম্মদ সোয়েব জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বহির্গমন লাউঞ্জের তিন নম্বর গেট দিয়ে পাচটি লাগেজসহ এক পাচারকারী সদস্য এয়াপোর্টে ঢোকে। পরে তার লাগেজগুলো নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য স্ক্যানারে দেয়া হয়। তখন স্ক্যানারে লাগেজে বিপুল পরিমাণ কচ্ছপ দেখা যায়। লাগেজ স্ক্যানার অপারেটর এবং এপিবিএন সদস্যরা লাগেজ পাচটি খোলার জন্য যাত্রীকে বললে, চাবি আনার কথা বলে সুকৌশলে ডিপারচার লাউঞ্জ দিয়ে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তাকে সহ তিনজনকে আটক করেন এপিবিএন সদস্যরা। পাচারকারীদের সঙ্গে থাকা প্রাইভেটকারটিও এ সময় আটক করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এএসপি কাজী সোয়েব জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ৭৩টি কচ্ছপ বন বিভাগের কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
হরিণ : আপনারা এতক্ষণ গরু ও কচ্ছপের দুর্গতির কথা শুনলেন। এবার শুনুন আমাদের কথা। দৈনিক ইত্তেফাকের লেখক নুরুল মোহাইমান মিল্টন জানিয়েছেন, কমলগঞ্জ উপজেলা ও এর আশপাশ এলাকায় পাখি ও হরিণ শিকারি চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। বন, হাওর ও বিলে বন্দুক দিয়ে ও জাল পেতে ফাদে ফেলে পাখি শিকারের পর বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বনাঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকা থেকে গত কয়েক বছরে অর্ধ শতাধিক হরিণ শিকার করা হয়েছে।
আইনগত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শিকারি চক্র বন্দুক নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করছে। আবার কেউ কেউ জাল দিয়ে ফাদ পেতে পাখি শিকার করছে। গত অক্টোবর মাসে রাজনগর উপজেলার করাইয়ার হাওর থেকে জাল দিয়ে ফাদ পেতে দেশীয় প্রজাতির শতাধিক পাখি শিকার করে একটি চক্র। পরে এসব পাখি কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের রথের টিলা বাজারে এনে বিক্রির সময়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনাসাপেক্ষে সেখান থেকে ২৫টি পাখি অবমুক্ত করেন।
কমলগঞ্জের বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকার লোকজন জানায়, গত কয়েক বছরে অর্ধশতাধিক মায়া হরিণ জবাই করা হয়েছে। এদের অনেকগুলো কোনো খবরই বন বিভাগ জানে না, এমনকি রাখতেও চায় না। লোকজন আরো জানান, মৌলভীবাজার সদর শৌখিন অনেক লোক কমলগঞ্জের শিকারিদের সাথে যোগাযোগ করে অর্থের বিনিময়ে শিকার করা হরিণ নিয়ে যায়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকাশকান্তি চৌধুরী বলেন, পাখি হরিণসহ বন্য প্রাণী শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ এসব শিকারের সাথে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডলফিন : আমাদের অস্তিতও এখন বিপন্ন হয়েছে। মংলা থেকে এইচ. এম. দুলাল ইত্তেফাকে রিপোর্ট করেছেন যে এক বছর আগে সুন্দরবনের তিনটি এলাকার ৩১ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদী ও খালকে ডলফিনের জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। ডলফিন রক্ষার এই ঘোষণা এক বছর ধরে রয়েছে কাগজে-কলমে। এখনো এই অভয়াশ্রমে অবাধে চলছে বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে মাছ শিকার। মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এই অভয়াশ্রমের বুক চিরে নতুন চালু হওয়া অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নৌ-রুট। এ নতুন নৌ-রুট চালুর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ডলফিনের অস্তিত্ব।
ওয়ার্ল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি, এলওয়াই ও বাংলাদেশ সিটিজেন ডাইভারসিটি প্রজেক্টের প্রাণী বিশেষজ্ঞ রুবায়েত মনসুর জানান, বিলুপ্ত প্রজাতির ইরাবতি ডলফিনের চারণক্ষেত্র আবিষ্কারের সময়ে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় ওই এলাকায় আরো এক প্রজাতির ডলফিন ও এক প্রজাতির তিমির সন্ধান মেলে। ইরাবতি ছাড়া অন্য ডলফিনের মধ্যে রয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্পব্যাক-ডলফিন, ফিনলেস ডলফিন, ইন্দো-প্যাসিফিক বটল নোজ ডলফিন, স্পিনার ডলফিন, স্পটেড ডলফিন ও গ্যানজেস রিভার ডলফিন ছাড়াও রয়েছে ব্রাইডস হোয়েলস নামে এক প্রজাতির তিমি। এই ব্রাইডস হোয়েলস প্রজাতির ৫০টি তিমির দেখা মিলেছে।
প্যানসিডি প্রকল্পে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরসহ সুন্দরবনের নদ-নদীর পানি, পানির উষ্ণতা ইরাবতি ডলফিনের বংশ বৃদ্ধির জন্য খুবই সহায়ক। তবে ফারাক্কা বাধের কারণে গঙ্গার পানি প্রবাহ এখন সুন্দরবনে কম আসা ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এই এলাকায় চিংড়ির রেণু পোনা আহরণে কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহারের ফলে ইরাবতি ডলফিনের বংশ বৃদ্ধি এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও আমির হোসেন চৌধুরী চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, সুন্দরবনের ৩১ কিলোমিটার ডলফিনের অভয়াশ্রমের বুক চিরে এখন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নৌ-রুটের বার্জ কার্গো ও অয়েল ট্যাংকার চলাচল করছে। বন মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নতুন অভ্যন্তরীণ নৌ-রুট চালু করায় চরম হুমকির মুখে পড়েছে ডলফিনের সংরক্ষণ ও প্রজনন। আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠক বন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপন করা হলেও এখনো এর কোনো সমাধান মেলেনি। এই নৌ-রুট এখন ডলফিনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, সুন্দবরনসহ উপকূলে ডলফিনের নতুন অভয়াশ্রমের সন্ধান মেলায় গত সাড়ে পাচ বছর ধরে পূর্ব সুন্দরবনে ইকো-টুরিজমে রেকর্ড সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক আসছে। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণই হচ্ছে ডলফিন। প্রতিপক্ষের চোখ উপড়ে ফেলার হুমকি ও তাকে জুতাপেটার হুমকি না দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহানের আশু কর্তব্য হচ্ছে ডলফিনের অস্তিত্বের হুমকি দূর করা।
কাকড়া : আমিও এখন সুন্দরবনে আমাদের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা আপনাদের জানাতে চাই। দৈনিক সমকালে এ বিষয়ে তাদের মংলা প্রতিনিধি লিখেছেন যে, সুন্দরবনের গহিনে এক শ্রেণীর জেলে কাকড়া ধরার খাচা আটোল দিয়ে অবাধে কাকড়া শিকার করছে। বিভিন্ন ফরেস্ট অফিস থেকে বৈধ পাস নিয়ে ঢুকে এক শ্রেণীর জেলে বেশি মুনাফার আশায় বনের ভেতর ভাটির সময় আটোলগুলো পেতে রাখে এবং জোয়ার পরবর্তীকালে তা তুলে আনে। এর ফলে অপ্রাপ্ত বয়সের কাকড়া প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ে।
দীর্ঘদিন সুন্দরবনের মাছ ও কাকড়া ধরায় অভিজ্ঞ মংলার চিলা এলাকার কয়েক শিকারি বলেন, পূর্ব সুন্দরবনে এ প্রক্রিয়ায় কাকড়া শিকারের প্রবণতা কম হলেও পশ্চিম সুন্দরবনে বিশেষ করে সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় এ প্রক্রিয়ায় কাকড়া শিকারের প্রবণতা বেশি। এসব কাকড়া শিকারি আরো জানান, এ অঞ্চলের অনেক জেলে বেশি লাভের আশায় সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগে গিয়ে এ প্রক্রিয়ায় কাকড়া শিকার করছে। সুন্দরবনের মধ্যে বর্তমানে যেকোনো ছোট খালে নৌকা নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, বনের মধ্যে যত্রতত্র আটোল পাতা হয়েছে। বন বিভাগ সূত্র জানায়, সুন্দবরনে আটোল দিয়ে কাকড়া ধরা সম্পূর্ণ অবৈধ।
বানর : সুন্দরবনে সরকারি কর্মকর্তাদের সহানুভূতি কিছু প্রাণী পেয়েছে। কিন্তু আমরা রাজধানী ঢাকায় থেকেও অবহেলার শিকার হচ্ছি। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গেণ্ডারিয়ার বানর। দৈনিক কালের কণ্ঠ-র রিপোর্টার শরাফত হোসেন জানিয়েছেন, পুরনো ঢাকার বানর আর আগের মতো চোখে পড়ে না। খাবার নেই এই প্রাণীর। এ কারণেই হয়তো গেণ্ডারিয়ার বানরগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ বানরগুলোকে রুটি-কলা খেতে দেন। ছুটির দিনে গেণ্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয় এলাকায় যারা বানর দেখতে আসেন, তারা এ কাজ বেশি করেন। কিন্তু সংকট নিরসনে এ যৎসামান্যই।
পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার ৭১ দীননাথ সেন রোড-এ ঠিকানায় ডা. যোগেশ চন্দ্র ঘোষ প্রতিষ্ঠা করেন সাধনা ঔষধালয়। এখানে রয়েছে হরীতকী, আমলকীসহ বিভিন্ন ঔষধি ফলের গাছ। মূল ভবনের গেটে দাড়ালেই চোখে পড়ে পাশের ভবনে বানরের অবাধ বিচরণ, আর তা দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়। ডা. যোগেশ চন্দ্র ঘোষ একাত্তরে পাকবাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
সাধনা ভবনের মধ্যে বানরের অবাধ বিচরণ প্রসঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ডা. যোগেশ চন্দ্র বানর, বেজি, বিড়াল, ইদুরসহ বিভিন্ন প্রাণী বাড়িতে আশ্রয় দেন। ডা. যোগেশ চন্দ্র এদের খাবার দিতেন ও বেশ আদর-যতœ করতেন। পরে কেউ আর তাদের তাড়ায়নি। এখনো কিছু সংখ্যক বানর আছে, যারা বাইরে ঘুরলেও ফ্যাক্টরি বা অফিস রুমে যায় না। দর্শনার্থীরা দূর থেকে এদের দেখে, খাবার দেয়। কোনোটা ছোট, কোনোটা বড়। ছোট বানরগুলো বড়গুলোর পিঠে চড়ে বেড়ায়। মা বানরগুলো বাচ্চাগুলোকে বুকে চেপে ধরে লাফিয়ে একটার পর একটা ছাদ পাড়ি দেয়।
বছর চারেক আগে থেকে বানরের খাবার সংগ্রহে সরকার সহায়তা দিয়ে আসছে। গত বছর থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসন এ দায়িত্ব হস্তান্তর করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ওপর। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অজুহাতে ২০১১-২০১২ অর্থবছরের অর্থছাড়ের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে ডিসিসি। ফলে এখন আবার খাবার সংকটে পড়েছে পুরনো ঢাকার বানরগুলো। লতিফুল বারী হামিম জানান, বাসায় জানালার গৃল দিয়ে প্রায়ই ঢুকে পড়ে বানর কিন্তু এতে কেউ আতঙ্কগ্রস্ত হন না, ওরা খাবার দিলে খেয়ে চলে যায়। তার পাচ বছরের মেয়ে রুহামাও বানর দেখে ভয় পায় না, বরং খুশি হয়। এ রকম অভিজ্ঞতা আশপাশের সবারই আছে বলে জানান তিনি।
কুকুর : রাজধানী ঢাকাতে আমরাও বিপদে আছি। কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজার ও ফার্মগেট বাজারে আমাদের নিয়মিতভাবে নিধন করা হতো। ছয় মাস ধরে সেটা বন্ধ আছে। ডিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বৃগেডিয়ার জেনারেল ড. নাসির উদ্দিন দৈনিক সমকালের রিপোর্টারকে বলেছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নিধন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। শিগগিরই নতুন পদ্ধতিতে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম শুরু করা হবে। তার মানে, ঢাকার রাজপথে আবার আমাদের অকাল মৃত্যু শুরু হবে। কিন্তু কেন? ইচ্ছা করলেই তো আওয়ামী সরকার র‌্যাব ডগ স্কোয়াডের সদস্য আমাদেরও করতে পারে। আমরা জানি, আমাদের জন্য কোনো মুক্তিযুদ্ধ কোটা রাখেনি আওয়ামী সরকার। কিন্তু আমাদের পূর্বসুরিরা মুক্তিযুদ্ধে যে অংশ নিয়েছিলেন সেটা বিভিন্ন ডকুমেন্টারি মুভিতে দেখা যায়। আমাদের এই ন্যায্য দাবি যাতে আওয়ামী সরকার মেনে নেয় সেই লক্ষ্যে আমরা র‌্যাব ডগ স্কোয়াডের গোলাপি নামে একটি কুকুরকে রিকোয়েস্ট করেছিলাম। সে আমাদের অনুরোধে গত ১৩ অক্টোবর ২০১২-তে মিরপুর ১৪ নাম্বার ডগ স্কোয়াডের ট্রেইনিং সেন্টারের র‌্যাব সদর দফতরের কনস্টেবল আশিকুর রহমানের বাম হাত কামড়ে দেয়। আশিকুরকে প্রথমে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে এবং পরে ঢাকা মেডিকাল কলেজ পুলিশ হসপিটালে টৃটমেন্ট দেয়া হয়। তিনি সুস্থ আছেন। আমরা দুঃখিত তার সাময়িক অসুস্থতার জন্য। কিন্তু আমরা আশা করি, এই ঘটনা থেকে র‌্যাব কর্মকর্তারা বুঝবেন আমাদের দাবি আদায়ে আমরা কতটা সিরিয়াস। আমাদের দাবি, বিদেশ থেকে র‌্যাব ডগ স্কোয়াডে নিযুক্তি বাদ দিয়ে স্বদেশি কুকুর নিয়োগ করা হোক।
হাতি : আমাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন ধরনের। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আমরা খাবারের অভাবে ভুগছি। তাই মাঝেমধ্যে লোকালয়ে গিয়ে আমরা খাবার খুজতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের খাদ্য সংগ্রহ অভিযানকে উপদ্রব বলে মিডিয়া প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। বলা হচ্ছে বুনো হাতির উপদ্রবে জনপদ বিপন্ন। আওয়ামী সরকারকে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, মানুষের যেমন খাবার দরকার, হাতিদেরও তেমনি। দশ টাকা কেজি দরে মানুষকে চাল খাওয়াতে পারেননি। সেটা আপনাদের সমস্যা। কিন্তু আমাদের খাবার দিতেই হবে। নইলে বাংলাদেশের মানচিত্র চিবিয়ে খাব। তখন গোপালগঞ্জ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে জানাচ্ছি যে, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে আমরা তুলনামূলকভাবে ভালো ছিলাম। তাই আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে সম্মান করি। প্রকাশিত একটি খবর শুনুন। কক্সবাজার উখিয়া থেকে ১১ নভেম্বর ২০১২ রোববার বিকেলে সড়কপথে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন বিরোধীদলীয় চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। পথে নজরে পড়ে যায় চকরিয়া উপজেলার ডুলহাজারার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। প্রায় ৯০০ হেক্টর এলাকা নিয়ে তৈরি দেশের প্রথম সাফারি পার্কে তিনি এক ঘণ্টা ছিলেন। খালেদা ঘুরে ঘুরে পার্কের বাঘ, সিংহ, হরিণ, কুমির, জলহস্তীসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী দেখেন। এ সময় পথের বিভিন্ন মোড়ে দাড়িয়ে তিনটি হাতি খালেদা জিয়াকে সালাম দেয়।
সাফারি পার্কের কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সাফারি পার্কে আসার আগাম কোনো কর্মসূচি ছিল না। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি (খালেদা জিয়া) হঠাৎ করে পার্কে ঢুকে পড়েন। এরপর তিনি ঘুরে ঘুরে পার্কে পাখিশালা, কুমিরের বেষ্টনী, বানর, হাতি, ভালুক, বাঘ, সিংহসহ বিভিন্ন প্রাণী দেখেন। তিনি বেশি সময় কাটান কুমিরের বেষ্টনীর কাছে। আড়াই বছর আগে এই বেষ্টনীতে একটি কুমির ১৭টি বাচ্চা দিয়েছে। কুমিরের ছানাগুলো এখন দৌড়ঝাপ করে। খালেদা জিয়া মন ভরে কুমিরের ছানার দৌড়ঝাপ দেখেন। এ সময়েও কয়েকটি হাতি পথে পথে খালেদা জিয়াকে সালাম দেয়।’
আজ এখানে আমি ম্যাডাম খালেদার প্রতি একটা অনুরোধ রাখতে চাই। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর তিনি যেন এই পার্কের নাম বঙ্গবন্ধুর নামেই রাখেন। আওয়ামীদের মতো সব নাম পাল্টে দেবেন না।
বাঘ : ধন্যবাদ সবাইকে। আমি নিশ্চিত এখানে উপস্থিত আরো অনেকেই আছেন, যারা বহু ধরনের আওয়ামী নির্যাতনের অসহায় শিকার হয়েছেন। এখন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। আওয়ামীতন্ত্রকে বিদায় করার জন্য সবাইকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, আওয়ামী নেত্রী বরাবরই আমাদের হেয় করেছেন। তিনি প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে ড. কামাল ও কাদের সিদ্দিকীকে বিদ্রƒপ করার জন্য কাকের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, দুই কাক কা-কা করছে।
আমরা পশুপাখিরা রাজনীতি করি না। তবু আমাদের নাম হাসিনা জড়িয়েছিলেন নোংরা রাজনীতিতে। এরপর এই মেয়াদে ১৪ জুন ২০১১-তে প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে কোনো ফর্মুলা থাকলে সেটা সংসদে উপস্থাপনের জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করব। কিন্তু (আপনারা) খাল কেটে কুমির আনার সুযোগ করে দেবেন না।
কুমির কি খুব খারাপ প্রাণী? কুমিরের চামড়া বহু মূল্যবান সামগ্রী রূপে বিদেশে স্বীকৃত। কুমিরের মাংস কিছু দেশে দুষ্প্রাপ্য খাবার রূপে খাওয়া হয়। কুমির রফতানি করে বাংলাদেশ বহু ডলার উপার্জন করতে পারে। অথচ কুমিরকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ক্যু-পরায়ণ সেনাবাহিনীর উপমা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এতে সেনাবাহিনীর প্রতিও তিনি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তার নিজের বিপদের সময়ে হাসিনা স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের এই সেনাবাহিনীকেই। তাদের সব কাজের বৈধতা তিনি দিতে চেয়েছেন।
অতি সম্প্রতি ১১ নভেম্বর ২০১২-তে যুবলীগের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা কক্সবাজারের বৌদ্ধপল্লীতে সফররত খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, বাংলায় একটা কথা আছে না, সর্প হয়ে দংশন করে, ওঝা হয়ে ঝাড়ে …। আমি বিএনপি নেত্রীকে বলব, আপনি সর্প হয়ে দংশন করেন আর ওঝা হয়ে ঝাড়েন। এই খেলাটা বন্ধ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যের সমুচিত উত্তর দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সময় শেষ হয়ে গেছে। তার কি বলা উচিত, আর কি বলা উচিত নয় Ñ তাও বুঝতে পারেন না। … কিছু দিন আগে আমরা আলোচনা করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী আগের চেয়ে এখন কথা কম বলছেন। তিনি হয়তো বেশি কথা বলার বিপদ বুঝতে পেরে সুপথে ফিরে এসেছেন। কিন্তু কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না। তিনি আবার আবোল-তাবোল বলা শুরু করেছেন। এভাবে শেষ রক্ষা হবে না। … আসলে প্রধানমন্ত্রীর দংশনেই সারা দেশের মানুষ যন্ত্রণায় নীল হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনাকে সঠিকভাবে সাপ রূপে মির্জা ফখরুল চিহ্নিত করলেও প্রধানমন্ত্রী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ১৩ নভেম্বর ২০১২-তে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত সমাবেশে বলেন, জামায়াত-শিবির বিষধর সাপ … এদের সব সময় দেখা যায় না, বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে এদের দেখা যায়। সুযোগ পেলেই এরা ছোবল মারে।
বস্তুত সাপের আচরণ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ বহুকাল ধরে সুপরিচিত। ২৩ মে ১৯৮০-তে সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদের পল্টনের জনসভায় পরপর কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ও একাধিক সাপ ছেড়ে দেয়া হয়ে ছিল।  ওই ঘটনায় আটজন নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। সেই সময়ে খন্দকার মোশতাক আহমদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রূপে আওয়ামী লীগকেই ধরে নেয়া হতো এবং অনেকেরই ধারণা ছিল এটা আওয়ামী লীগেরই কাজ। কিন্তু এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি এবং আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়নি। তবে এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ সাপকে টেনে আনছে তাদের বক্তব্যে। তাই যদি মির্জা ফখরুলের কথা সত্যি হয়, তাহলে আমাদের সবাইকে সদা সাবধান থাকতে হবে। আমি এই সম্মেলনের আগেই আমাদের নিজস্ব ইনটেলিজেন্স নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খবর পেয়েছিলাম এই সম্মেলন ও আন্দোলন ভণ্ডুল করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তাই আমরাও প্রস্তুত হয়ে এসেছি। আমরা …
বাঘের কথা শেষ হবার আগেই প্রাণীসভা থেকে রব উঠল, সাপ, সাপ! সাপ, সাপ!!
মঞ্চে বাঘ তার পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখল একটি গোখরা সাপ ফনা উচু করে তাকে ছোবল মারার জন্য এগিয়ে আসছে।
বাঘ ক্ষিপ্র গতিতে গোখরাটির পাশ কাটিয়ে মঞ্চে রাখা চারটি কাঠের বাক্সের ঢাকনা খুলে দিল।
মুহূর্তের মধ্যে এক ডজন বেজি বেরিয়ে এসে ওই সাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে পড়ল।
একই সময়ে গাছ থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ল বানরগুলো। সভার বিভিন্ন স্থানে আগে থেকে রাখা কাঠের বাক্সগুলোর ঢাকনা খুলে দিল। ওই সব বাক্স থেকে বেরিয়ে এলো শতাধিক বেজি এবং তারাও সভায় উপস্থিত সব সাপের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ল।
সভায় তুমুল বিশৃঙ্খলা ও প্রচন্ড ভয়ভীতি দেখা গেল।
সবাই এদিক ওদিকে ছোটাছুটি শুরু করল।
এক পর্যায়ে সাপগুলো হেরে গেল। অর্ধমৃত অবস্থায় সাপগুলো নির্জীবভাবে লম্বা হয়ে পড়ে থাকল। কিছু সাপ চিৎ হয়ে পড়ে একটু নড়ছিল। তাদের শাদা পেট অদ্ভুত লাগছিল।
প্রাণীকুল আবার স্বস্তি ফিরে পেল। প্রাণীসভায় শৃঙ্খলা ফিরে এলো।
মঞ্চে বাঘ তার ভাষণ শেষ করতে সবাইকে শান্ত হতে বলল।
বাঘ : আপনারা সবাই শান্ত হন। শান্ত হন। প্রিয় সংগ্রামী বেজিরা আমার। সাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই দ্রুত বিজয়ের জন্য গোটা প্রাণীকুলের অভিনন্দন আপনারা গ্রহণ করুন।
এখানে উপস্থিত সব প্রাণীকে আমি বলছিÑ প্লিজ, সাপগুলোকে আপনারা মেরে ফেলবেন না। মাটির যেসব গর্ত থেকে ওরা বেরিয়ে এসেছে সেই সব গর্তেই ওদের ফেলে দিন। আপনারা কখনোই সহিংস হবেন না। তবে আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগে কখনোই দ্বিধা বোধ করবেন না। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনারা সবাই আত্মবিশ্বাস রাখুন, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। এ পথেই আমাদের আন্দোলনের চূড়ান্ত জয় সুনিশ্চিত। ধন্যবাদ সবাইকে। জয় গণতন্ত্র। জয় প্রাণীতন্ত্র।
১৮ নভেম্বর ২০১২

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads