বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১২

গণতান্ত্রিক আচরণ চায় জনগণ

টিআইবি বন্ধ করে দেয়ার দাবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দুর্নীতি নিয়ে কাজ করে। বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করে তারা একটি মূল্যায়ন দাঁড় করায়। মূল প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান কার্যালয় জার্মানিতে। এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অনেক সময় বিতর্কিত হয়েছে। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের মূল্যায়ন ভিত্তিহীন বলে একেবারে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম প্রসঙ্গে একটি মূল্যায়ন রিপোর্ট দিয়েছে। এ প্রতিবেদনে সংসদ সদস্যদের ৯৭ শতাংশের দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এর কঠোর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়েছে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সত্য; কিন্তু সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন। জাতীয় সংসদে বসে সংসদ সদস্যরা প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করার দাবি জানিয়েছেন। এ ধরনের দাবি গণতান্ত্রিক সমাজে কখনো কাম্য হতে পারে না।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরকার ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও মতবিনিময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে সে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধরে রাখতে হবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা হতে পারে। তারা কোনো পক্ষপাতমূলক অবস্থান নিলে সেটা মোকাবেলার যৌক্তিক গণতন্ত্রসম্মত পথ রয়েছে। কিন্তু সংসদ এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন ব্যক্তি যে আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখাচ্ছেন, তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কাম্য হতে পারে না। এটা অসহিষ্ণুতা নিঃসন্দেহে। সম্প্রতি এ ধরনের আরো অনেক অসহিষ্ণু আচরণের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সংবাদমাধ্যমে যখন সরকারের নেতিবাচক খবর ছাপা হয় তখন তারা তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখান। বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও তাদের বিষোদগার উদ্বেগজনক মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। দুর্নীতি বিষয়ে টিআইবি যে তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরেছে, এর সাথে জনমতের মিল রয়েছে। বিশেষ করে দুর্নীতির মহোৎসবের এই সময় জনগণ সংসদের বিরুদ্ধে আনা টিআইবির এ অভিযোগ প্রায় পুরোটাই সমর্থন করে।
এখন যারাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। এভাবে বলপূর্বক দমিয়ে দেয়ার চেষ্টা ভালো ফল বয়ে আনবে না। নিজেদের শোধরানোর জন্য সমালোচনাকে স্বাগত জানাতে হবে। শিক্ষা নিতে হবে যাতে অন্যায় এড়িয়ে চলা সম্ভব হয়। সরকার যদি মনে করে, নানা পক্ষ থেকে যে অভিযোগ আসছে তা অসত্য, তাহলে সেটা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। তা না করে দেখাচ্ছে অশোভন অসহিষ্ণুতা। টিআইবির কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে বিরাজমান অনিয়ম ও দুর্নীতির সমাধান হয়ে যাবে না। সরকারের উচিত টিআইবির তথ্য-উপাত্ত নিজেদের পাল্টা তথ্যপ্রমাণ দিয়ে চ্যালেঞ্জ করা। গায়ের জোরে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মনোভাব দেখালে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আনা অভিযোগগুলোর প্রতি জনগণের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে। আমরা মনে করি, সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন করবে এবং গণতান্ত্রিক আচরণ প্রদর্শনে আরো যতœবান হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads