বুধবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১২

সরকারের টার্গেট কারা?


বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অরাজকতা চলছে। সরকারের মেয়াদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই যেন তা বেড়েই চলছে। খোদ সরকারই অরাজকতা সৃষ্টি করছে। সরকারি দল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের পথ পরিষ্কার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জনগণের গতর খাটা ঘাম ঝরানো টাকার গোলাম পুলিশ বাহিনীকে দলের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করছে। সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে একের পর এক নিত্যনতুন ইস্যু তৈরি করে দেশের মানুষকে বোকা বানানোর অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। অর্থনীতির সব খাতের উন্নয়নের সূচক নিম্নমুখী হলেও সরকারি মন্ত্রী-এমপি এবং দলীয় নেতা-পাতিনেতাদের মিথ্যার ফুলঝুরির সূচক দিন দিন ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।

এ সরকার এক দিকে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে, অন্য দিকে সার্বিক পরিস্থিতিকে সঙ্ঘাতময় করে তুলছে। শেয়ার ব্যবসায়ীদের শবদেহ গোরস্থানে পৌঁছানোর আগেই পদ্মা সেতু পদ্মা নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ-বাণিজ্য, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এবং ভোয়া কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংক ঋণের মহোৎসব, টেন্ডার দখল, চাঁদা বাণিজ্য, দলীয় এবং সহযোগী সংগঠনের নামে সরকারি খাসজমি দখল, ডেসটিনিসহ ভোয়া নানা চমকদার কোম্পানির মাধ্যমে নিজেদের পকেট স্ফীত করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের রাস্তায় পুলিশ দিয়ে পেটানো সবই দেশের অসহায় ও নিরুপায় জনগণের ললাট লিখন বলে চালিয়ে দিচ্ছে ওরা। এখন সব কিছু পেছনে ফেলে রাজনৈতিক অরাজকতাকে পরিকল্পিতভাবে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা সবখানেই নানা ধরনের জুজুর ভয় দেখিয়ে জনগণের চোখে ধুলো দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ভাষা দলীয় ক্যাডারদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিছু দিন ধরে দেশে যে অরাজকতা চলছে ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর যে নির্যাতন চলছে তা খুবই ন্যক্কারজনক। কে অপরাধী আর কে অপরাধী নায়, তার কোনো বাছবিচার না করে দাড়ি-টুপিওয়ালা লোকদের চরমভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। দুর্নীতিবাজ ও অপহরণকারীদের মতো নিরীহ ছাত্রদের বাসস্থান থেকে ধরে রিমান্ড ও নির্যাতন করে চলেছে প্রতিনিয়ত। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি কিংবা মা করে দিতে কোনো অসুবিধা নেই। ফাঁসির আসামিরা দলীয় লোক হওয়ার কারণে রাষ্ট্রপতির মা পাচ্ছেন। কোনো দলের মিছিল-মিটিং হলেই তা নাশকতামূলক হয়Ñ এহেন দাবির পেছনে যুৎসই কোনো যুক্তি নেই।
আজকে যারাই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং অন্যায্য দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে, তাদেরকেই সরকার টার্গেট করে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা শিকদের পেটালে, পুলিশ পেটালে, ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য চালালে, প্রকাশ্যে বন্দুক উঁচিয়ে বিরোধীদের ধাওয়া করলে, ক্যাম্পাস জ্বালিয়ে দিলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না। বরং পুলিশ তাদের শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না। সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে অথবা যাদের সরকারবিরোধী বলে সন্দেহ হচ্ছে তাদের পুলিশ রিমান্ড, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, পুরনো খুনের মামলা, নারী নির্যাতনসহ আরো কঠিন ও জটিল মামলার আসামি করে বিনাবিচারে জেলহাজতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সারা দেশের মানুষ আজ চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে এক অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে। জুলুম-নির্যাতন করে কোনো সরকার তার শেষ রা করতে পারেনি। আর জুলুম বেশি দিন টেকসই হয় না। পৃথিবীর ইতিহাসে জুলুমের নির্মম পরিণতি কত যে করুণ তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ হবে না। সময় থাকতে সবার বোধোদয় হোক এ প্রত্যাশা রাখি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads