রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১২

জজ মিয়ার আগমন! শুভেচ্ছা স্বাগতম!



মিনা ফারাহ
মাথার ওপর সুতোয় বাঁধা বিশাল এক খড়গ ঝুলছে, বিছানায় শুয়ে এক যুবক তার অলৌকিক শক্তির পরীা দিচ্ছে। গল্পটি এখানেই শেষ। মার প্রয়োজন নেই। জগাখিচুড়ি লেখাটি প্রশাসনেরই জগাখিচুরির প্রতিচ্ছবি। এর কেনো মাথামুণ্ডু না বুঝলে ডিকশনারিতে ‘জগাখিচুড়ি’ ঘেঁটে দেখতে পারেন।
টকশোগুলোর ৮৫ ভাগ আলোচনায়ই নিয়ন্ত্রিত। ’৭৫-এও বাকস্বাধীনতা অপহরণের চেষ্টা কি কম হয়েছিল? আইপ্যাডের পৃথিবীতে একই সাথে এখন আমরা সিএনএন এবং বাংলা মিডিয়া দেখার মাধ্যমে গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারি যে, সরকারই বরাদ্দ দেন, কয় তোলা, কয় ছটাক। প্রশ্ন, প্রশাসন ১০০ ভাগ বাকস্বাধীনতা ভোগ করবে আর টকশোগুলো ১৫ ভাগেই থেমে যাবে? সংবিধানে গণতন্ত্র আর পুঁজিবাদের ফিউশন যেমন অবাস্তব, তেমনি ১৫ আর ৮৫ ভাগের অঙ্কও বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে হুমকি। টকশোর বিরুদ্ধে সরকারের এই মাত্রার গাত্রদাহে প্রমাণ হয়েছে মিডিয়াকে উৎরে যাওয়ার মতা কোনো সরকারেরই আর নেই। ২২ তারিখে একটি লাইভ টকশোতে যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটানো হলো তা টকশো বন্ধ করার ত্রে তৈরি করা। সব মানি কিন্তু তালগাছ আমার। প্রশাসনের সব অপকর্মের একমাত্র জজ মিয়া বিএনপি-জামায়াতের কপালটাই খারাপ। বৌদ্ধবিহারের অপকর্মের পর প্রবাসী নাফিসের গলায়ও জামায়াত ঝুলিয়ে দিলেন মহাজ্ঞানী হানিফ। ২০০১ সালে তালেবানরা ধ্বংস করেছে বুদ্ধমূর্তি, ২০১২ সালে রামু-উখিয়ার ঘটনা রাষ্ট্র সমর্থিত সন্ত্রাস। বিষয়টাকে কিভাবে দেখছে সংখ্যালঘু সমাজ? যানজট, হলমার্ক, আইনশৃঙ্খলার পর্বতসমান সমস্যা রেখে দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর দুঃস্বপ্ন থেকে কিছুতেই সরবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। সুশীলসমাজও চায় রাজনীতি যেন শৈশব অতিক্রম না করে। এ দেশে ওবামা থাকলেও যেন আত্মপ্রকাশ না করতে পারে। অর্থাৎ লং-লিভ ডাইন্যাস্টি।
জার্মানিকে মেধাশূন্য করতে দেশজুড়ে লাইব্রেরি পোড়ানোর মহোৎসবে লিপ্ত হয়েছিলেন হিটলার। আইনস্টাইনরা সেই বলির পাঁঠা। ’৬৬ সাল থেকেই ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে যুবসমাজকে ধ্বংসের পরিকল্পনায় সফল হয়েছেন আমাদের অ্যামেচার রাজনীতিবিদেরা। ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান পার্টির ছাত্রদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ‘কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ১৪৪ ধারা জারি হলে বিষয়টির তুলনামূলক আলোচনা করা যেত। কিন্তু ৬ দফার হাত ধরে ছাত্ররাজনীতির যে বারোটা বেজে গেছে তাতে শিাঙ্গনগুলো থেকে শিা প্রায় বিতাড়িত। শিকেরাই যখন জওহরলাল নেহরু, তখন কাসের বদলে লগি-বৈঠা-বন্দুক-চাপাতির কাসিক্যাল রাজনীতি খবর তো মিডিয়া দমন করবেই। নেত্রীদ্বয়কে বলছি, প্লিজ! ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করুন। কারণ শিাঙ্গনগুলো ইতোমধ্যে সন্ত্রাস তৈরির কর্মশালায় রূপান্তরিত হয়েছে।
আমার মেয়েটি বলল, সাবেক ছাত্র রবার্ট লেফকুইজ যুক্তভাবে রসায়নবিদ্যায় নোবেল পেলেন, তাদের স্কুলের এটি অষ্টম নোবেল। শুনে ভালো লাগল। আরো ভালো লাগল যখন বিখ্যাত ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রোশিওরে দেখলাম অনেকের সাথে ড. ইউনূসের ছবিটি সবচেয়ে বড়। পৃথিবীটা ক্রমেই ছোট হচ্ছে। উত্তর মেরুতে তেলদস্যুদের আক্রমণে বিপন্ন পরিবেশ। মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের বরফ সমুদ্র ধ্বংস করে উত্তর মেরুর তলপৃষ্ঠ থেকে তেল উঠানো বন্ধ করতে শেল, বিপি, এক্সন মোবিল নামে তেলদস্যুদের বিরুদ্ধে অ্যাক্টিভিস্টরা রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। যা বলতে চাইছি, দেশের টেলিভিশনের পাশাপাশি সিএনএন, বিবিসির কারণে জ্ঞানীগুণীরা জানেন প্রতিটি কথার চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং ডিবেট করে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা কী ভাষায় ভোটারদের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করেন। কিন্তু ২২ বছর ধরে দুই নেত্রীকে আমরা ঝগড়া ছাড়া কথা বলতে দেখিনি। বুঝলাম দেশের ৫০ ভাগ মানুষ নিরর কিন্তু বিদ্যাবুদ্ধিতে যারা শ্রেষ্ঠ তারা কেন ডাইন্যাস্টি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন না, মানিক বন্দ্যোপধ্যায়ের ভাষায়, ‘এই কথা ভাবিয়া মাথা গরম হইয়া ওঠে।’
শেয়ারবাজার থেকে বৌদ্ধবিহার মাত্র সাড়ে তিন বছরে কতগুলো দুর্ঘটনা? এত আইন সত্ত্বেও সমস্যা কোথায়? ওয়াশিংটনের চেয়ে বেশি আইন বাংলাদেশে। ব্রিটিশ আমল থেকে জড়ো হওয়া আইনের ওপরে আইনের চাপে মানুষের মতোই আইন পর্যন্ত শঙ্কর। যে দল যখন মতায় যায়, আইন তাদের মতো প্রয়োগ না করলে প্রধানমন্ত্রীর সব মামলা খারিজ হলো কেন? আমজনতা কি গাধা? নেপোলিয়নের কথা, ‘সর্বনাশ তখন হয় যখন বুদ্ধিমানরা চুপ থাকেন।’ ওয়াটারগেট, রেলগেট, রাটুগেট, বেনগাজিগেট, সর্বশেষ নাফিসগেট। আটলান্টিকের পূর্ব দিকে সব ষড়যন্ত্রই এখন বিএনপি-জামায়াতের আপদ। অর্থাৎ ভূমিষ্ঠ হলেন নতুন আরেক জজ মিয়া।
সাম্প্রতিক কালে কয়েকটি টেরোর আক্রমণের মধ্যে আন্ডারওয়্যার বোম্বিং, টাইম স্কয়ার, নাজিবুল্লা জাজি, ডালাস ফোর্টহুডের সবাই জেলে। ১ মে ২০১০ সালে টাইমস্ স্কয়ারে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী যুবক ফয়সলের টেরর অ্যাটাক ব্যর্থ হলে তাৎণিকভাবে রাস্তার ভিডিও ফুটেজ থেকে অপরাধী শনাক্ত করে কেনেডি রানওয়েতে প্রস্তুত এমিরেটসের ফাইট থামিয়ে দিয়ে অ্যান্টি-টেরর বাহিনী ফয়সলকে তুলে আনে।  আত্মস্বীকৃতির কারণে পরে যাবজ্জীবন হয় তার।
সর্বশেষ, কাজী নাফিসের ঘটনা আধঘণ্টার মধ্যে ওবামাকে জানানোর পর পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ প্রশাসনের প্রেস কনফারেন্স। কিন্তু গোপালগঞ্জের নাফিস সম্পর্কে এ কী বললেন দীপু মনি! স্টুডেন্ট ভিসার জন্য মার্কিন নাগরিক হতে হয়? অর্থাৎ চোখ থাকতেও কানা ছেলে কেন পদ্মলোচন; উত্তর আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। ভাগ্যিস মার্কিন প্রশাসন বাংলা বোঝেন না। হানিফের কথায় প্রমাণ হয়েছে, নাফিসের মধ্যেও রামু ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে অর্থাৎ জামায়াত তাকে ট্রেনিং দিয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা পাঠিয়েছে। বুঝলাম। কিন্তু এত মতা যাদের, নির্বাচনে তাদের তো বিপুল আসন পাওয়া উচিত। তলে তলে ডাইন্যাস্টিবাজরা জানেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত মতায় থাকতে হলে নিরবচ্ছিন্ন সন্ত্রাস জরুরি। ১০ হাজার মাইল দূরের ওরা যে কত বড় গাধা প্রশাসন সেটা বুঝে ফেলেছে। আর এই সুযোগে জিরো টলারেন্সের নামে চলছে মানুষ খুনের মহোৎসব, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিগড়ে গেলেও লাভ হচ্ছে না।
বাস্তবতা এই যে, নাফিসের ঘটনায় ওয়াশিংটন ইঁদুরকে হাতি বানায় কি না অপো করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন ঠিক করতে পারেনি, বৌদ্ধবিহার ইঁদুর না হাতি, কোনটা বানালে খুশি হবে ওয়াশিংটন। গানপাউডার এসেছে বাইরের সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে। প্রায় ১০ হাজার সন্ত্রাসীর উপস্থিতিতে বৌদ্ধবিহারে আগুন লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছে এই গানপাউডার। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী হালকা করেননি, করেছেন সংখ্যালঘু যারা মেরুদণ্ডহীন, গানপাউডারের নমুনা হাতে গণভবনে জজ মিয়া নাটকের খুতবা শোনেন এবং বিশ্বাস করেন। এ দিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ১৩টি ইমেইল ফাঁস হওয়ার পর বেনগাজির ঘটনায় ধর্মীয় ছবির গল্প প্রত্যাখ্যান করা মার্কিন ভোটারেরা ওবামার মধ্যে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির গন্ধ পেয়েছেন। আমাদের সরকারগুলোর সুবিধা ভোটের জন্য কাউকে জবাব দিতে হয় না। কিন্তু এই দুর্ঘটনার পর অনেক হিন্দু ভয়ে ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উড়াবেন না বৌদ্ধরা। একটি সংখ্যালঘু পরিবারে জন্ম নিয়ে ধর্মের নামে দলগুলোর এসব নাটক আর মানতে পারছি না।
ইউটিউব বন্ধ করে সরকার বোঝাতে চাইছে, তারাই ধার্মিক। বাস্তব যে, এদের হাতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। রমনা-কালীবাড়ি নিয়ে শেখ মুজিবের বিভীষিকার কথা বেমালুম ভুলে গেছে হিন্দুসমাজ। এই সরকারের আমলে সংবিধানে সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নিয়ে, সংখ্যাগুরুদের খুশি করার পরিকল্পনা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ধর্মীয় ছবির জন্য হলে ঢাকেশ্বরী মন্দির রেখে বৌদ্ধবিহার কেন? এখন দেখা যাক কেন ঘটল বৌদ্ধবিহারের ঘটনা? সাম্প্রতি কালে রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দেয়ায় জলেস্থলে অসংখ্য রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। কথায় আছে, শিব দেখেছ কিন্তু শিবের নৃত্য দেখনি। আমরা অহিংস ভিু দেখেছি কিন্তু রোহিঙ্গা খেদাও মিছিলে সহিংস ভিুদের উন্মাদনা বেমালুম চেপে গেছি। বুদ্ধরাষ্ট্র মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়িত্ব সিএনএনকে দিয়েছি। এই মুহূর্তে প্রায় চার হাজার রোহিঙ্গা নৌকায় সাগরের পানিতে ভাসছে। রোহিঙ্গা এবং বুদ্ধ অ্যাক্টিভিস্ট দুইপই জাতিসঙ্ঘে যার যার অবস্থান তুলে ধরছে। সব কিছু আমলে না নিলে চলবে? দীর্ঘকাল ধরে চরমপন্থী মুসলিম আর ওয়াশিংটনের বৈরী সম্পর্কের কারণে ৯/১১-এর আগে কয়েকটি ছোটখাটো অ্যাটাক হয়েছে। ৯/১১-এর মাধ্যমে চরমপন্থীরা তাদের চূড়ান্ত জবাব দিয়েছে। পরে আক্রান্ত হয়েছে ইরাক-আফগানিস্তান। বৌদ্ধবিহারের মতো ঘটনা আমেরিকায় ঘটলে আরেকটি ছোটখাটো আফগানিস্তান ঘটত না বলা যাবে না। কারণ বিষয়টা বহুমাত্রিকভাবে স্পর্শকাতর। সাম্প্রতিক কালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রশাসনের ভূমিকায় একটি জাতিগোষ্ঠীর ুব্ধ হওয়ার সুযোগ নিয়েছে প্রশাসন সমর্থিত সন্ত্রাসীরা। তাদের মধ্যে আছে সব দলেরই লোক। বৌদ্ধবিহারে শান্তি আর মৈত্রী-বয়ান স্রেফ অ্যামেচার রাজনীতি যা এ রকম একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে আরো ভয়ঙ্কর করেছে। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক, বিচারের আগে জজ মিয়াকে ভূমিষ্ঠ করিয়ে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। মেরুদণ্ডহীন সংখ্যালঘুরা কোনোকালেও বুঝতে চায়নি যে তারা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক ছাড়া কিছুই নয়।
ইমেইল : farahmina@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads