শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১২

মুক্তিপণের টাকায় গাজীপুরে চলছিল পার্টির আয়োজন



নূরুজ্জামান: ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুরে গেট টুগেদার করতে চেয়েছিল পরাগের অপহরণকারীরা। মুক্তিপণের টাকা ভাগাভাগি ও ‘সফল অপারেশন’ উপলক্ষে পার্টি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী আমির। বৃহস্পতিবার সকালেই অপহরণকারীদের নিয়ে ফুর্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগের রাতেই র‌্যাব সদস্যদের হাতে অপহরণকারীরা গ্রেপ্তার হলে ওই পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যায়। এরপরই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় আমির ও তার সহযোগীরা। এতে মুক্তিপণের একটি টাকাও তাদের ভাগ্যে জোটেনি। গতকাল মামলার তদন্ত ও মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে দেয়া জবানবন্দি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনের মধ্যে তিন আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপহরণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বাকি তিন আশ্রয়দাতাকে ১০ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া আগেই গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আসামি মামুনকে ৭ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে অপহরণকারী  জাহিদুল ইসলাম, কালাচান ও  মোহাম্মদ আলী ওরফে রিফাত জানিয়েছে, টাকার লোভে আমিরের নির্দেশে তারা পরাগ অপহরণের ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। অপহরণে সহায়তা করেছিল। এরপর তারা দল বিচ্ছিন্ন  হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে থাকে। একপর্যায়ে ঢাকার বাইরে গাজীপুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। বুধবার রাতে জুরাইনের ১/২ নম্বর মেডিকেল রোডের একটি বাড়ি থেকে ৬ অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এদের মধ্যে রিফাত, জাহিদ ও কালাচান অপহরণকারী। আবুল কাশেম (৩৬), রিজভী আহমেদ অনিক (১৯), আলফাজ হোসেন ও মাসুদ (২৩) ওই অপহরণকারীদের আশ্রয়দাতা। র‌্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের গডফাদারের তথ্য জানতে পেরেছে। একইসঙ্গে অপহরণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। সূত্র জানায়, বুধবার রাতে আমির ফোন করে রিফাতের নম্বরে। টাকার ভাগ-বাটোয়ারা ও আত্মগোপনের কৌশল নিয়ে আলোচনার জন্য গাজীপুর যেতে বলে। সেখানে গিয়ে ওই নম্বরে ফোন দিয়ে তার আস্তানার লোকেশন জেনে নেয়ার পরামর্শ দেয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, র‌্যাব আগেই গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করে মূল হোতাদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। বিষয়টি মিডিয়াতে প্রচার না করলেও হয়তো মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হতো। সূত্রমতে, পরাগ অপহরণের নেপথ্যে স্থানীয় যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম ওরফে জুয়েল মোল্লা, শীর্ষ সন্ত্রাসী আমিরসহ কেরানীগঞ্জ ও জুরাইনের ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজনের কানেকশন খুঁজে পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ইয়াছিন, নুরুল ইসলাম ও সঞ্জয়ের নাম অপহরণকারীদের তালিকায় উঠে আসে। অপহরণের সময় দুই মোটরসাইকেলের একটিতে আমির ও অন্যটিতে সঞ্জয় প্রধান শুটারের দায়িত্ব পালন করেছে। যুবলীগ নেতার পরিকল্পনায় সরকার দলীয় একাধিক অঙ্গসংগঠনের ক্যাডারদের সহায়তায় আমির বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও চুরির মামলাসহ অন্ততপক্ষে ১২টি মামলা রয়েছে। সে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, ডেমরা ও কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের তালিকা ভুক্ত সন্ত্রাসী। এছাড়া যাত্রাবাড়ী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী হত্যা মামলায় এই আমিরের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। সূত্রমতে, জুরাইন ও কেরানীগঞ্জের উঠতি সন্ত্রাসীদের মধ্যে আমির ছিল ভয়ঙ্কর। তার সঙ্গে সরকারদলীয় বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও পুলিশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। স্থানীয় লোকজনের কাছে সে টুণ্ডা ওরফে ল্যাংড়া আমির হিসাবেই পরিচিত।সুত্রঃ মানব্জমিন
মুক্তিপণের তথ্য দেয় দোকানদার: অপহরণের কয়েকদিন আগে থেকেই সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করেছিল পরাগের পিতা বিমল মণ্ডলের কাছে। প্রাণের ভয়ে বিষয়টি গোপন করেছিলেন তিনি। গোপনে অল্প টাকায় রফা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। এ তথ্য ওই পরিবার কাছ থেকে ফাঁস হয়ে যায়। আশপাশের চা ও পানের দোকানে আলোচনার বিষয় বস্তু হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে পরাগ অপহরণের পরপরই পাশের একটি পানের দোকানদারের কাছ থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। ওই তথ্য পাওয়ার পর পরাগের পিতা বিমলের কাছে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন। এরপরই তার কাছ থেকে চাঁদাদাবিকারী ব্যক্তির ফোন নম্বর সংগ্রহ করে পরাগ অপহরণকারী চক্রের পরিচয় উদঘাটন করে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads