মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১২

এক দফা নিয়ে এগিয়ে যান



মনিরুজ্জামান মনির
আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদকাল ক্রমেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই নির্ধারিত গণতান্ত্রিক পদযাত্রায় ফেলে আসা পথে রেখে এসেছে জনদুর্ভোগের বিষময় স্মৃতি। বিরোধী দল বিএনপি এর প্রতিবাদ করেছে সমাবেশ-মহাসমাবেশ গণমিছিল-গণবিক্ষোভ, মানববন্ধনের মাধ্যমে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় হরতালও করেছে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। এজন্য সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। তবে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বরাবরের মতো সরকারকে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই পদত্যাগে বাধ্য করার হুমকি দিয়েছেন কখনও কখনও। এটাকে অবশ্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভাষা বলে বিবেচনা করা যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার দেশ পরিচালনায় এসে সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে এবং বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে প্রথমবারের মতো রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। এটা তার অনভিজ্ঞ নতুন দলীয় রাজনীতিবিদদের দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠনের ফসল না অবসরপ্রাপ্ত বিতর্কিত আমলাদের উপদেষ্টাকরণের প্রতিফল, সে অনুসন্ধান আমি করব না, আমি বলব জনগণ সবকিছুর নীরব সাক্ষী। তারা সঠিক সময়ে সঠিক সাক্ষ্য প্রদান করবে এবং সেটাই যথার্থ হবে। তবে সরকারের নানা স্তরের ব্যর্থতার কলঙ্ক আড়াল করা হচ্ছে দলীয় নেতাদের গলাবাজিতে এবং বিরোধী দলগুলোকে দমন করা হচ্ছে স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে—এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আমি জানি না আওয়ামী লীগ কখনও ভেবেছে কিনা, তারা আগামীতে বিরোধী দলে অবস্থান নিতে পারে। তাদের প্রতিও এ ধরনের অগণতান্ত্রিক নির্যাতন হতে পারে। তারা কি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ভুলে গেছে? সত্যি এটাকে ফ্যাসিবাদ বলতে হয় যখন দেখি বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার প্রতিবাদে আহূত হরতালে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সামনে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে যাত্রীশূন্য স্থির থাকা এক বাসে আগুন দেয়ার মিথ্যা মামলা দেয়া হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ অন্য শীর্ষ নেতাদের নামে। আজকাল রাজনৈতিক মামলা খুব নির্লজ্জ ও বেপরোয়া হয়ে গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে পুরনো একগাদা মামলা জাগ্রত করা হয়েছে এবং নতুন করে অবিশ্বাস্য কিছু মামলা দেয়া হয়েছে। এগুলো যেমন হাস্যকর তেমনি দুঃখজনক। এই হামলা-মামলা প্রসঙ্গ উত্থাপন করার অর্থ পাঠকদের বোধগম্য করা যে, এই সরকার তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য বিরোধী দলকে অনুপ্রাণিত করছে। দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে মাননীয় শেখ হাসিনা এই এক নতুন অপসংস্কৃতি চালু করলেন। বিগত নির্বাচনী ইশতিহারে আওয়ামী লীগ ভিশন-২১ এর মাধ্যমে কয়েকটি মেয়াদে তার দল সরকারে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যদিও তিনি জানতেন আমাদের দেশে কোনো দলীয় সরকার ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকে না। তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের আগাম প্রতিচ্ছবি ছিল এমন অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়। কেননা আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও সরকার পরিচালনার শুরুটা হয় জনগণকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের উচ্চমূল্য দিয়ে ভোগান্তি পেয়ে। ধীরে ধীরে দুর্নীতি দানা বাঁধে, শেয়ারবাজারে নামে ধস, হাজার হাজার কোটি টাকা হয় লুটপাট। কম পুঁজির মানুষগুলো হলো নিঃস্ব-সর্বহারা। কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিল। গেল চার বছরে দুর্নীতির নতুন নতুন উন্নয়ন হয়েছে, দেশের উন্নয়ন হয়নি। কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ দুর্নীতি, পদ্মা সেতুর আন্তর্জাতিক দুর্নীতি, রেলওয়ে দুর্নীতি, সর্বশেষ সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক দুর্নীতি। ওই বিখ্যাত দুর্নীতিতে সরকারের লোকের সঙ্গে দলের লোকেরা জড়িত বলে কোনোটির সঠিক তদন্ত হচ্ছে না, সঠিক অপরাধীরা সাজা পাচ্ছে না। পররাষ্ট্র বিষয়েও সরকার যে ব্যর্থ, এ বিষয়ে সর্বজন সম্মত। এই ব্যর্থতাকে প্রতিবেশী দেশকে উদ্দেশ করে এভাবে বললে ভুল হবে না—‘নিজের সবকিছু করিয়া দান শূন্য পেল প্রতিদান’। দেশের বারোটা বাজার লক্ষ্যে ঘড়ির কাঁটা যখন আটের ঘরে এসে দাঁড়াল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখলেন ভিশন-২১ কেন, ভিশন-১২-ই পার হওয়া যাচ্ছে না, তখন নিজের সব ব্যর্থতা ও সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির কলঙ্কিত চাঁদকে মানুষের নজর থেকে আড়াল করতে চাইলেন এক টুকরো কালো মেঘ দিয়ে। মহাজোটের চলমান সরকার নতুন করে পাতল আরেক ফাঁদ। বেগম খালেদা জিয়া এবার ভুল করে সেই ফাঁদে পা দিলে ভিশন-২১ এর স্বপ্নের পথে তারা আবার চলতে পারবে। চার-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের সমর্থনের সুবাদে সংবিধান থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান কর্তন করা হলো। স্বাভাবিকভাবে আগামী নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হবে। আর এ পদ্ধতির সেই নির্বাচন নিরপেক্ষ-সন্দেহমুক্ত হবে না বলে সবার ধারণা। সবচেয়ে বড়ো কথা, এই নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে বিএনপি অংশ নেবে না কোনো মতে, হয়তোবা তা ভেবেই মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির প্রধান জেনারেল এরশাদ চলমান সরকারের বিরূপ সমালোচনা করছেন। আগামীতে মহাজোট সরকার থেকে বেরিয়ে এসে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে হুঙ্কার দিচ্ছেন। বিরোধী দল ও জনগণ সবাই জানে, জনাব এরশাদ সাজানো নাটকের আগাম মহড়া দিচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে বেগম জিয়া আন্দোলন-সংগ্রাম তীব্র করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এক দফা দাবি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করে নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত। কেননা জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। বেগম জিয়া এরই মধ্যে বিশ্বজনমত সপক্ষে নেয়ার জন্য চীন ও ভারত সফরে গেছেন। এটাও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আগাম প্রস্তুতির অংশ বলা যায়।
monirlyric@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads