রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১২

সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আস্থাহীনতাই বাড়াবে

নির্বাচন সামনে রেখে গণবদলি
আমাদের দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে আস্থার অভাব। এই আস্থাহীনতা থেকে মাঝে মধ্যেই নানা ধরনের রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই রাজনৈতিক জটিলতা গোটা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পথে তা বড় ধরনের বাধা হিসেবে কাজ করে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে এই আস্থাহীনতার পথ ধরে সৃষ্টি হয় বড় ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কট, যা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে অনিশ্চিত করে তোলে। গণতন্ত্র পড়ে হুমকির মুখে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন কার অধীনে হবেÑ দলীয় সরকারের অধীনে হবে না নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবেÑ এ নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দল এখন পরস্পর বিপ্রতীপ অবস্থানে। ফলে আগামী সাধারণ নির্বাচন যথাসময়ে যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে কি না, আর হলেই তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবেÑ এ ধরনের নানা প্রশ্ন জনমনে জাগছে এবং তা তাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এর মূলে কিন্তু সেই একই বিষয়Ñ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিদ্যমান আস্থাহীনতা। এই আস্থাহীনতা একেবারে অমূলকও নয়। সরকারের নানা ধরনের অপকৌশলী তৎপরতাই এই আস্থাহীনতার জন্ম দেয়। এবার সে বিষয়টি বেশ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ একসময় বিরোধী দলে থাকার সময় বিরামহীন জ্বালাও-পোড়াও ধরনের ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারকে বাধ্য করেছিল দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কায়েম করতে। সেই আওয়ামী লীগই এখন আদালতের রায়ের ঠুনকো অজুহাতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তড়িঘড়ি করে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে; যদিও রায়ে আরো দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সুযোগ রাখা হয়েছিল। এসবের তোয়াক্কা না করে সরকার এখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের মরণপণ প্রত্যয় ঘোষণা করছে। অথচ দেশের প্রায় সব মহলই বলে আসছে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো আস্থার পরিবেশ এ দেশে এখনো সৃষ্টি হয়নি। অতএব সে পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। কিন্তু সরকার তা বিবেচনায় না নিয়ে এমন সব কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে আস্থাহীনতার মাত্রাকেই আরো বাড়িয়ে তুলছে। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দমন-পীড়নের এটি একটি বড় প্রমাণ। যে সরকার বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না, সশস্ত্র হামলা চালিয়ে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ পণ্ড করছে, কোনো কোনো বিরোধী দলের অফিসে যেতে বাধা দিচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের, কথায় কথায় মামলা-হামলা অব্যাহত রেখেছেÑ সে সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার প্রত্যাশা করার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া প্রশাসনে দলীয়করণ সে সন্দেহ আরো বাড়িয়েই তুলেছে।
অতি সম্প্রতি নির্বাচন সামনে রেখে সরকার যে গণবদলির কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাতেও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে সন্দেহ ও আস্থাহীনতা আরো বাড়িয়েই তুলবে। গতকাল নয়া দিগন্ত এই গণবদলি সম্পর্কিত এক খবরে জানিয়েছে, প্রশাসনজুড়ে চলছে অস্থিরতা। ওএসডি করার পাশাপাশি চলছে গণবদলি। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ প্রশাসনে বড় ধরনের একটি বদলি হয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বদলিপ্রক্রিয়া চলছে, পছন্দের ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোই এখন মহাজোট সরকারের লক্ষ্য। অবসরে গেছেন এমন ব্যক্তিদের তালিকা করা হয়েছে, যাদের নির্বাচনের আগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হতে পারে।
আমরা মনে করি, সরকারের এ ধরনের তৎপরতা সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে আস্থাহীনতাকেই বাড়িয়ে তুলবে। আর এর ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিষয়ক জটিলতা আরো তীব্র আকার নেবে। তাই সরকারের উচিত, এ ধরনের যাবতীয় কূটকৌশল থেকে সরে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যভিত্তিক একটি উপায় অবলম্বন করা। নইলে গণতন্ত্র বারবার বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads