শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১২

শক্তি প্রয়োগে অরাজকতার আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের তাগিদ প্রত্যাখ্যান
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রতিক সহিংসতায় উদ্বেগ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের যে আহ্বান জানিয়েছে তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘যারা জঙ্গিবাদ সমর্থন করে, যারা মানুষ হত্যা করে, তাদের সাথে সংলাপ হতে পারে না। যারা ডাকাত, যারা অকারণে মানুষকে আক্রমণ করতে দ্বিধাবোধ করে না, তাদের সাথে কিসের সংলাপ? আগে দমন করি, তারপর অন্য কথা।’ আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম অবশ্য কিছুটা ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে সংলাপের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সংলাপ হতে পারে রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে। আমেরিকান দূতাবাসের বক্তব্যে ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় সংঘটিত সাম্প্রতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদে জড়িত হওয়া একটি মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার; সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, সংলাপই যেকোনো মতপার্থক্য দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায়।’
দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক সঙ্ঘাত ও হানাহানি চলছে তা দেশের যেকোনো নাগরিকের জন্য উদ্বেগজনক। এ হানাহানির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দু’টি ইস্যু। একটি হলো যুদ্ধাপরাধের বিচার আর দ্বিতীয়টি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ ঘটে থাকলে এর বিচার করার ব্যাপারে বড় রকমের কোনো দ্বিমত দেশে নেই। এই অভিযোগে বিএনপি ও জামায়াতের যেসব নেতাকে গ্রেফতার ও বিচার করা হচ্ছে, তাদেরও বক্তব্য হলো বিচার করতে হলে প্রকৃত যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচার করা উচিত। কিন্তু এখন এই বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ্যমূলক ফাঁসানো হচ্ছে। আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে অভিযুক্তদের। বিচারপ্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত। এ দাবির সাথে সরকার একমত হবে কি হবে না সেটি তাদের ব্যাপার। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো একটি নিবন্ধিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচিই পালন করতে দেয়া হচ্ছে না এ দলকে। যেখানে-সেখানে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের সাথে জড়িত উল্লেখ করে গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। আর এটিকে বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত করেছে সরকারি দলের নেতাকর্মী ও এক শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জামায়াত-শিবির ধরে  পুলিশের হাতে তুলে দিতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানানোর পর এ অরাজকতা বেড়ে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষার সাথে সহিষ্ণুতা, আইনের শাসন এসবের মিল কমই পাওয়া যায়।
অন্য দিকে তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে গোটা জাতির মধ্যে যখন এক ধরনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত, তখন এই ব্যবস্থা সংবিধান সংশোধন করে বিলুপ্ত করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সঙ্ঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সংলাপ বা নমনীয়তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের মূল কারণ মূলত এটিই। রাজনৈতিক সঙ্কট দূর করতে এর আগেও আমেরিকান রাষ্ট্রদূত সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন রাজনৈতিক সমঝোতা হতে হবে ২০১২ সালের মধ্যেই। আইন প্রতিমন্ত্রী রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে সংলাপের কথা বললেও এটি সরকারের হাইকমান্ডের বক্তব্য কি না, নাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জঙ্গি-ডাকাত-খুনি বলে উল্লেখ করে কঠোর হাতে দমনের কথা বলছেন, সেটি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের অনুমোদিত নীতি কি না স্পষ্ট নয়।
আমরা মনে করি, দেশে শান্তি, স্বস্তি ও গণতান্ত্রিক ধারার পরিবর্তন আনতে হলে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। মার্কিন দূতাবাস বলুক বা না বলুক, যেকোনো উগ্রতা খুনোখুনির উল্লাস দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। এ উপলব্ধি সরকারের দায়িত্বশীল মহলের না হলে শুধু ক্ষমতাসীনদেরই নয়, ভুলনীতির জন্য দেশ ও জাতিকেও মূল্য দিতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads