শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১২

যেন লেখা হয় আমার এ রক্ত-লেখায়…


ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী


প্রতিদিন সকালে সংবাদপত্রগুলোর ওপর চোখ বুলাতে গিয়ে আঁৎকে উঠতে হয়। এ কেমন স্বদেশ আমার! এখনো রাষ্ট্র আছে। সরকার আছে। তার পরও কেমন করে ঘটছে এসব ঘটনা। সরকারের মন্ত্রীদের কথা শুনলে বা পড়লে কেমন যেন গা ছমছম করে ওঠে। খুন জখম মুক্তিপণ এখন প্রতিদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর সরকার এর কোনো দায়দায়িত্বই নিতে চাইছে না। প্রতিদিন মানুষ আরো বিপন্ন ও অসহায় হয়ে পড়ছে। খুনি সন্ত্রাসী অপরাধীদের কাছ থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য, আশ্রয়ের জন্য মানুষ কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে, কার ওপর ভরসা করবে। এখন বোধকরি তার জবাব কেউ দিতে পারবে না। একই ঘটনা নিয়ে এক এক মন্ত্রী এক-এক কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন আবার ভিন্ন কথা। আর দেখা যাচ্ছে, এসব অপরাধের সাথে জড়িত আছে কোনো-না-কোনো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সদস্য কিংবা সরকার নিজে। সে রকম ক্ষেত্রে সরকার একেবারে চুপ মেরে যায়। ঘটনা দ্রুত ধামাচাপা দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদতে থাকে।
সম্প্রতি দু’টি ঘটনায় একেবারে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন নাগরিকেরা। তার একটি হলোÑ লক্ষ্মীপুরের খুনি তাহেরপুত্র বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ থেকে শুরু করে প্রায় সব মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহার ও দণ্ড মওকুফ ও কমিয়ে দেয়া। প্রথম আলো পত্রিকা গত ১৪ নভেম্বর ‘তাহেরপুত্রের পেছনে রাষ্ট্র, সন্তানহারার ভরসা আল্লাহ’ শিরোনামে এক সংবাদ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্র কিভাবে খুনিদের পক্ষ নিচ্ছে। এই পক্ষ নেয়া লোমহর্ষক ও নিষ্ঠুর। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সর্বাত্মক তৎপরতায় লক্ষ্মীপুরের তাহেরপুত্র এইচ এম বিপ্লব এখন প্রায় মামলামুক্ত। তার বিরুদ্ধে থাকা খুনের সর্বশেষ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে এসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। এ তথ্য জেনে নিহতের বাবা আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের বহুল আলোচিত আইনজীবী নূরুল ইসলাম হত্যা মামলায় বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি তার সাজা পুরোপুরি মাফ করে দিয়েছেন। খুনের দায়ে বিপ্লবকে আর ফাঁসিতে ঝুলতে হচ্ছে না। কামাল ও মহসিন হত্যার দায়ে বিপ্লবের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে হয় রাষ্ট্রপতিকে। ফলে এবারো বিপ্লবের সাজা মাফ করলেন রাষ্ট্রপতি। তবে এবার পুরোপুরি নয়, সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেছেন তিনি। বাকি আছে ফিরোজ হত্যা মামলা। এ মামলায় সাজা হয় কি না হয়, মাফ পায় কি না, সেটা ভবিষ্যতের হাতে। কিন্তু ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি তো আছে। সেখানে সুপারিশ গেল এবং কমিটি বিপ্লবের নাম প্রত্যাহারের সুপারিশ অনুমোদন করল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৭ অক্টোবর তা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েও দেয়া হলো। এর আগে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই জাহেদ হত্যা মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করে নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।
১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় লক্ষ্মীপুরের ত্রাস ছিল এই বিপ্লব। তার সব মামলাও হয়েছে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। আর এ দফায় আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তারাই প্রত্যাহার করে নিচ্ছে সেসব মামলা। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা শুরু হয় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহের ও তার ছেলেদের। তাহের, তার দুই ছেলে ও স্ত্রী একে একে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। কিন্তু পালিয়ে যায় বিপ্লব। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ৬ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে আতœসমর্পণ করে সে। আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠায়। গত ঈদুল আজহার আগের দিন কারাগার ছেড়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের কক্ষে ওঠে বিপ্লব। এ নিয়ে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হলে তাকে আবারো কারাগারে পাঠেনা হয়। বিপ্লবকে নিয়ে এই রাষ্ট্রীয় তৎপরতার ফলে লক্ষ্মীপুর এলাকার সাধারণ মানুষের মনে আবারো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হয়তো ফের সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হতে যাচ্ছে লক্ষ্মীপুর।
এতগুলো খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিপ্লবকে ছাড়িয়ে আনার জন্য সরকার কেন এমন মরিয়া হয়ে উঠেছে সে প্রশ্ন এখন দেশবাসীর। ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে হত্যা ও অগ্নিসংযোগের দু’টি মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ২০১১ সালের জুলাই মাসে রাষ্ট্রপতি তার ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দু’টি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে রাষ্ট্রপতি ১০ বছর করেন। আর গত ১৭ অক্টোবর হত্যা মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর বিগত ৪১ বছরে ২৫ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা মওকুফ করা হয়। এর মধ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২১ জনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
এই ক্ষমার ধাক্কায় এমনো ঘটেছে যে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে জেল থেকে বের করে নিয়ে ফুলের মালা দিয়ে সার্কিট হাউজে সংবর্ধনা দিয়েছে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি-নেতারা। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এমন ঘটনার নজির নেই। এর ফলে সারা দেশে আজ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা খুন-গুম-অপহরণ চালিয়ে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। এখন দেশের ভেতরে যার যা খুশি তাই করতে পারে। ঘটছেও তাই। নদী, খাল, বিল, পুকুর, ধানক্ষেত ও ব্রিজের নিচে লাশ পড়ে থাকে। কেউ ধরা পড়ে না। বিচার তো অনেক পরের কথা। এই যেখানে সরকারের অবস্থা, সেখানে অন্য কোনো হত্যাকাণ্ডের বিচার করার নৈতিক অধিকার কি সরকারের আছে?
দ্বিতীয়ত, গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা ঘটেছে কেরানীগঞ্জের শিশু পরাগ মণ্ডলকে অপহরণ করার মধ্য দিয়ে। কেরানীগঞ্জ থেকে সদরঘাটে স্কুলে আসার সময় দুই বোন ও মাকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা তাকে অপহরণ করে। পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে, এই অপহরণের হোতা যুবলীগের এক নেতা। তার নামের আদ্যক্ষর ‘এ’। অপহরণের দুই দিন পর পরাগের বাবা বিমল মণ্ডলকে টেলিফোন করে সন্ত্রাসীরা দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। শেষ পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশের উপস্থিতিতেই ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বিমল মণ্ডল পরাগকে ফিরে পান। যুবলীগের ওই নেতা গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে নাজিম ও আমির নামে দুই সন্ত্রাসীকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনে। অপহরণকাজে এই সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হয়েছে।
কিন্তু এক রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে সরকার। সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর অবিরাম ফটর ফটর কথা বলেন। ঘটনার আগা-পাশ-তলা বিবেচনা না করেই তিনি বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন। প্রথমে তিনি বললেন, পরাগের অপহরণ বিচ্ছন্ন ঘটনা। ভাগ্য ভালো, তবু তিনি বলেননি যে, জামায়াত-শিবির এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যেমনÑ রামু-উখিয়ার বৌদ্ধ পল্লীতে সহিংস ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বলে বসলেন যে, এই ঘটনার সাথে জামায়াত-শিবির জড়িত আছে। কিন্তু পরে দেখা গেল অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে লুটপাট পর্যন্ত সবই করেছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা। আর পরাগ উদ্ধার হওয়ার পর তিনি বললেন, মুক্তিপণ দেয়ার তথ্য সঠিক নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই পরাগের বাবা বিমল মণ্ডল তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যাপারে নিশ্চুপ আছেন। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. ক. জিয়াউল হাসান বলেছেন, তাদের হাতে পরাগকে উদ্ধার করার ব্যাপারে পরাগের পরিবার ও অপহরণকারীদের সব তথ্য আছে। কিন্তু পরাগের নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এই প্রক্রিয়ায় কোনো রূপ হস্তক্ষেপ করেননি। আর অপহরণকারীরা মুক্তিপণের টাকা নিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তারা সুনির্দিষ্টভাবে জানেন, পরাগের মুক্তির জন্য বিমল মণ্ডল অপহরণকারীদের ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই মুক্তিপণ ছিল এক কোটি টাকারও বেশি।
এ দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার মুক্তিপণের কথা অস্বীকার করে বলেছেন, পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা ও তাদের ‘বিশেষ কৌশলে’র মাধ্যমে পরাগকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই ‘বিশেষ কৌশল’টি কী আইজিপি সে কথা প্রকাশ করেননি। অপরাধীদের ধরার স্বার্থে তা প্রকাশ করা হবে না। পুলিশের উপস্থিতিতেও কেন অপহরণকারীদের আটক করা গেল না, সে প্রশ্নে আইজিপি বলেছেন, সব কেসেই পুলিশ সাথে সাথেই সফল নাও হতে পারে। তবে অপরাধীদের আটক করার সুযোগ এখনো আছে। তার পরেও মন্ত্রী কেন পরাগ এমনি এমনি চলে এসেছে বলতে দ্বিধা করলেন না। এর কারণ কি এই যে, অপহরণকারীদের হোতা একজন যুবলীগ নেতা? একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বিমল মণ্ডল ও অপহরণকারীদের কথোপকথনের রেকর্ড আছে বলে ঢাকার এক সহযোগী খবর দিয়েছেন। সে কথোপকথনের বিবরণ দৈনিক সমকাল পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কথোপকথন এ রকম : ‘হ্যালো! বিমল? তুই কী ঠিক করেছিস? শালা এখনো টাকা ম্যানেজ করতে পারিসনি? টাকা বড় না তোর পোলার জীবন বড়? বস খুব খারাপ লোক, বেশি অপেক্ষা করা যাবে না। আমার কথা শুনতে কষ্ট হচ্ছে?’ এ পাশে উদ্বিগ্ন বিমলের উত্তর, ‘ভাই! ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি। এত নগদ টাকা হাতে নেই। তোমাদের জমি লিখে দেই।’ এরপর পাল্টা উত্তর এলো, ‘জমি দিয়া বস কী করব? বসের নগদ টাকা দরকার। টাকা নিয়ে একা চলে আসবি। কোনো চালাকি করবি না। আধ ঘণ্টা পর আবার ফোন দেবো।’ … অপহরণকারীরা একটি বাংলালিংক নম্বর থেকে পরাগের বাবাকে ফোন করে বলে, ‘৫০ লাখ টাকা নিয়ে চলে আসবি। এক হাজার টাকার নোটের বান্ডিল আনবি, একটি স্কুলব্যাগে ভরে টাকা আনবি।’ পরাগের বাবা বলেন, ‘৩০ লাখ টাকা ম্যানেজ করেছি। স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির চেষ্টা করছি।’ ওপাশ থেকে অপহরণকারীরা বলতে থাকে,‘তুই ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে ব্যপারটি জানাচ্ছিস? এতে তোর কী লাভ হবে? তুই সন্তানকে জীবিত চাস?’ এপাশ থেকে পরাগের বাবার উত্তর, ‘ভাই ছেলেটার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। ও কেমন আছে?’ পাল্টা উত্তর, ‘তোর পোলা ভালো আছে। এখন ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। তুই টাকা নিয়ে তাড়াতাড়ি রওনা দে।’ এর কিছুক্ষণ পর অপহরণকারীরা ফের ফোন করে বলে, ‘সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে একা আসবি। মোটরসাইকেল নিয়ে এলে ভালো।’ পরাগের বাবার উত্তর, ‘ভাই, আমি ড্রাইভিং জানি না।’ অপহরকারীরা ফের পরাগের বাবাকে কল করে জানায়, ‘এরপর তোর সাথে বেশি কথা বলা যাবে না। পুলিশ-র‌্যাব তোর ফোন রেকর্ড করছে। আমাদের জানের মায়া আছে। টাকা না দিয়ে চালাকি করলে পোলার শেষ রক্ষা হবে না।’ পরাগের বাবা বলেন, ‘ভাই, টাকা ম্যানেজ করেছি। কোথায় আসতে হবে?’ ওপাশ থেকে বলা হয়, ‘তুরাগ ব্রিজের কাছে চলে আয়।’ পরাগের বাবা বলেন, ‘দ্রুত রওনা হচ্ছি।’ এরপর অন্য মোবাইল অপারেটরের একটি নম্বর থেকে অপহরণকারী বলে, ‘তোর ছেলের মুুখটা দেখলে মায়া হয়। টাকা দিয়ে দ্রুত ছেলে ফেরত নে। আমাগো বসের মেজাজ ভালো না। টাকা দেয়া নিয়ে কোনো চালাকি করবি না।’ গোয়েন্দাদের কাছে এ তথ্য থাকা সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোন বিবেচনায় বললেন যে, টাকা লেনদেনের খবর সঠিক নয়।
এ হলো আমাদের শাসনব্যবস্থা! সংবাদপত্রগুলো মেলালে যে চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো, এ ঘটনার সাথে সরকারদলীয় লোকেরা জড়িত বলেই নানা লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের মিডিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে দেখা যায়। টেলিভিশন টকশোর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী তো মহা খাপ্পা হয়ে আছেন। কিন্তু এই ‘দুর্মুখ’দের মুখ বা কলম বন্ধ করার চেষ্টা আছে,যাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা নির্বিঘেœ্ তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারে। এক অঞ্চলের ঘটনা যাতে অন্য অঞ্চলের মানুষ জানতে না পারে। আর সরকার বলতে পারে যে, দেশের মানুষ মহাশান্তিতে আছে।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে সারা জীবন প্রতিবাদ করে গেছেন। তিনি তার ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় লিখেছেন,‘বন্ধু গো’, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে,/ দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে,/ রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা,/ তাই লিখে যাই এ রক্তলেখা,/ বড় কথা বড় ভাব আসেনাক’ মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে!/ অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে!’ আমাদের অবস্থাও তেমনি হয়েছে। মন্ত্রীরা যে যা-ই বলুন এসবের প্রতিক্রিয়াই আমাদের লিখে যেতে হয়। বলে যেতে হয়।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads