শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১২

বিশাল নির্বাচনী বাজেটের প্রস্তুতি : ধোঁকা দিয়ে পাড়ি দেয়া যাবে না



  
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্বহাল দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী নির্বাচন নিয়েই যখন সংশয় ঘনীভূত হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার তখন জনগণের সামনে নতুন করে ‘মুলা’ ঝোলানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক অর্থের এই ‘মুলা’ আসছে বিশাল বাজেটের আকারে। দৈনিক আমার দেশ-এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সম্প্রতি দুই লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বাজেটের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে। এতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ব্যয় বাড়বে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ঠিক কোন কোন খাত থেকে যোগান দেয়া হবে সে ব্যাপারে বাজেটে স্পষ্ট কোনো উল্লেখ থাকছে না। পর্যবেক্ষক মহলে সংশয়ের সৃষ্টিও হয়েছে একই কারণে। পরিকল্পিত বাজেটটিকে নির্বাচনী বাজেট হিসেবে চিহ্নিত করে পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, এর মাধ্যমে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাজির করা হলেও টাকার জন্য ভোটার জনগণেরই পকেট কাটা হবে। নানা খাতে করের পরিমাণ যেমন বাড়ানো হবে, তেমনি বাড়তে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি তেলের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দামও। ফলে একদিকে ক্রমাগত চিড়েচ্যাপ্টা হতে হতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠবে অন্যদিকে উত্পাদন, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগসহ সমৃদ্ধি অর্জনের সব দরজাও বন্ধ হয়ে যাবে। একযোগে পাল্লা দিয়ে বাড়বে লুটপাট। রীতিমত হরিলুট চলবে দেশজুড়ে। 
বলা দরকার, এমন আশঙ্কার পেছনে প্রমাণিত বিভিন্ন কারণ রয়েছে। চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটসহ বর্তমান সরকারের প্রতিটি বাজেটের অভিজ্ঞতায়ই দেখা গেছে, বাগাড়ম্বর যথেষ্ট করলেও কোনো বাজেটের মাধ্যমেই সরকার কল্পিত উন্নয়নকে আকাশছোঁয়া করতে পারেনি। এই না পারার প্রধান কারণ, প্রতিটি বাজেটেই ছিল বিরাট অংকের ঘাটতি। যেমন চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকার বিশাল ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি পূরণের পন্থারও উল্লেখ বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই করা দরকার। টাকা যোগাড়ের জন্য অর্থবছরের পাঁচ মাস না যেতেই ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৩২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেলেছিল সরকার। ঋণের পরিমাণ নাকি ২৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, সুদ গিয়ে পৌঁছেছে ২১ হাজার কোটি টাকায়। ফলে ধার করে ঘি খাওয়ার পরিণাম জনগণকেই ভুগতে হচ্ছে। বিদ্যুত্ খাতেও সরকার সম্ভাবনার সৃষ্টি করতে পারেনি। কারণ, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের নামে উত্পাদনের প্রতিটি কেন্দ্রই তারা দলীয় লোকজনের হাতে তুলে দিয়ে রেখেছেন। এই রেন্টালওয়ালারা বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি আদায় করেছেন। ভর্তুকির টাকাটাও সরাসরি জনগণের পকেট কেটে নেয়া হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, আওয়ামী রেন্টালওয়ালাদের স্বার্থে আবারও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
জনগণের পকেট কাটার নানা ব্যবস্থা থাকলেও কোনো বাজেটই কিন্তু বেকারত্ব নির্মূল করা দূরে থাকুক, কমিয়েও আনতে পারেনি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির নামে যে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছিল সে বরাদ্দেরও বেশিরভাগ টাকা ক্ষমতাসীন দলের লাকজন মেরে দিয়েছে ও দিচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি অর্থবছরেই প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে খয়রাতি চাল, গম ও নগদ অর্থ নিয়ে হরিলুটের পাল্লা দেখা গেছে। লোপাটও করেছে আবার ক্ষমতাসীনদেরই। নির্বাচন যেহেতু সামনে সেহেতু ধরে নেয়া যায়, এবারের বাজেটে থোক বরাদ্দের নামে অনেক বেশি পরিমাণে লুটপাটের ব্যবস্থা রাখা হবে। সব মিলিয়েই বলে রাখা যায়, পরিকল্পিত বাজেট দেশকে সমৃদ্ধির পথে নেয়ার ব্যাপারে সামান্য অবদানও রাখবে না। বাস্তবে বরং যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেও থাকতে পারবে না দেশ। অর্থনৈতিক অবস্থাও ঘুরে যাবে ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত। অর্থাত্ অবস্থা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ হবে।
আমরা মনে করি, মানুষের সঙ্গে তামাশা করারও একটা সীমা থাকা দরকার। কেবলই স্বপ্ন দেখিয়ে এবং ধোঁকা দিয়ে যে জাতীয় নির্বাচন অন্তত পাড়ি দেয়া যাবে না সে কথাটা ক্ষমতাসীনরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই তাদের যেমন মঙ্গল তেমনি মঙ্গল জনগণেরও। সে জন্যই ভোটারের মন ভোলানোর জন্য সাধ্যের বাইরে গিয়ে কোনো বাজেট তৈরি করার চিন্তা তাদের এখনই পরিত্যাগ করা উচিত।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads