বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১২

এই সরকারের আমলে সাংবাদিক নির্যাতন হয়নি! : তথ্যমন্ত্রীর এ তথ্য কতটা সত্য?



জাতীয় সংসদে অসত্য বলার নিয়ম নেই। আওয়ামী মহাজোট সরকারের আমলে অবশ্য কোথাও নিয়ম মানার বালাই দেখা যায় না। নতুন তথ্যমন্ত্রীও কি সেটা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন? গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরকালে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময় কোনো সাংবাদিক নির্যাতিত হননি। বিভিন্ন ঘটনায় আটজন সাংবাদিক খুন হওয়ার কথা অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন। তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্য বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে! তিনি কি জেনেশুনেই জাতীয় সংসদে এমন তথ্য দিয়েছেন?
এ সরকারের আমলে এখন পর্যন্ত ১৬ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন বলে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর হিসাবে বলা হয়েছে। প্রথম বছরই দেশজুড়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ২২৯টি ঘটনার কথা পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যেই জানা গেছে। যার মধ্যে খুন হয়েছেন তিনজন। আর চলতি বছরের প্রথম চার মাসে মোট ৩২টি ঘটনায় সারা দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৪ সাংবাদিক। রাজধানীতেই কিছুদিন আগে টিভি সাংবাদিক অপর্ণা সিংহের ওপর উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মিরপুর অঞ্চলের সরকার দলীয় বহুল আলোচিত এক সংসদ সদস্য। মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী এমন ঘটনাও ক্ষমতার কালো চশমায় ঢাকা পড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। একইভাবে গৌরীপুরের এক সাংবাদিক জনৈক প্রতিমন্ত্রীর হাতে কীভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন সে খবরও পত্রিকায় ফলাও করে প্রচার পেয়েছিল। এছাড়া পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হাতে সাংবাদিক নির্যাতন যে ডাল-ভাত হয়ে উঠেছে সেটা অস্বীকার করা কঠিন। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমার দেশ, প্রথম আলো, যুগান্তর, জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন পত্রিকার ও টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ফটো গ্রাফারদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, নিপীড়নের খবর নতুন কিছু নয়। সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনটির ক্যাডারদের হাতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিক নির্যাতনও প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। তাছাড়া একটি দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের কারণেই আমার দেশ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ৭০ হাজার কোটি টাকার মানহানির অভিযোগ এনে পৃথকভাবে ২১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালতে। তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়েছে। হামলা চালানো হয়েছে পত্রিকাটির বিশেষ প্রতিনিধির ওপর। শেষ পর্যন্ত মিথ্যা অভিযোগ তুলে পত্রিকা প্রকাশ বন্ধই করে দেয়া হয়েছিল। আর বানোয়াট মামলাকে হাতিয়ার বানিয়ে আমার দেশ সম্পাদককে পত্রিকা অফিসে অভিযান চালিয়ে গভীর রাতে গ্রেফতার করা এবং চরম নির্যাতন চালানোর খবরও কি তথ্যমন্ত্রী ভুলে গিয়েছেন? অতি সম্প্রতি পত্রিকাটির চারশ’রও বেশি সাংবাদিকের জামিন বাতিল করে রিমান্ডে নেয়ার অপচেষ্টাও কি ভুলে গেছেন মন্ত্রী মহোদয়? অবশ্য এভাবে নির্যাতিতদের সাংবাদিক মনে না করলে বলার কিছু থাকে না।
বর্তমান সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে না—মন্ত্রী জাতীয় সংসদে এমন কথা বললেও বিভিন্ন সময়ের ঘটনাবলী ভিন্ন তথ্য দেয়। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা ছাড়াও টিভি টকশোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও হুমকি-ধমকির ঘটনা কম নয়। এই তো কিছুদিন আগেই টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট নাগরিকদের ‘মধ্যরাতের সিঁধ কাটা’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তির মুখে এমন উক্তি মোটেই স্বাভাবিক বলা যাবে না। আসলে বর্তমান সরকারের প্রায় চার বছরের আলামত এমনই যে, এখন সত্য বলাই কঠিন হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় বাস্তবতাকে আড়াল করে অসত্য কথনই সম্ভবত ক্ষমতাসীন মহলে যোগ্যতার পরিচয় হয়ে উঠেছে। নইলে কীভাবে জাতীয় সংসদের মতো স্থানে মন্ত্রীর মুখে সাংবাদিক নির্যাতন অস্বীকারের মতো সত্যের বিপরীত উক্তি শোনা গেল?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads