শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১২

ছাত্রলীগ কি ‘দায়মুক্ত' নাকি ‘আইনের ঊর্ধ্বে'?


আইনের শাসন শেষ করে দেয়া হচ্ছে

সরকারি সংগঠন ছাত্রলীগ সারাদেশে অসংখ্য অপরাধ সংঘটিত করলেও পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা ছিল কেবলই দর্শকের। ছবির কয়েকটি খন্ডদৃশ্য তারই নমুনা। বরিশালে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র বহন, রাবিতে পুলিশের সামনে অস্ত্র বহন ও গুলী লোড করা, পুলিশের হেফাজতে প্রতিপক্ষকে মারপিট করা, সিলেটে ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দেয়া এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের বিরুদ্ধে পুলিশের সামনে বহুল আলোচিত অস্ত্রবাজির ঘটনায় কোন ব্যবস্থাই নেয়নি সরকারি প্রশাসন - ফাইল ফটো
                  পুলিশ ও প্রশাসনের সামনেই অপরাধ করলেও তারা নির্বিকার
 সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে অসংখ্য অপরাধ কর্মকান্ড করে চলেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের লোকদের সামনে অহরহ তারা বেআইনী কাজ করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোও প্রমাণিত। এ সত্ত্বেও তাদের ক্ষেত্রে সরকারের প্রশাসন, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা নিয়েছে। একইভাবে প্রমাণিত অপরাধ সত্ত্বেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও এদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রলীগকে কি ‘দায়মুক্তি' দেয়া হয়েছে, নাকি তাদের ‘আইনের ঊর্ধ্বে' বলে ঘোষণা করা হয়েছে? আর পুলিশ সেটাই অনুসরণ করছে?
সূত্রগুলোর মতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কোনো না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যেই নানা অপরাধ কর্মকান্ড করে চলেছে। তাদের নিত্যদিনের কর্মকান্ডের ফলে দেশের প্রায় প্রতিটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অরাজকতা বিরাজ করছে। মেডিকেল ও প্রযুক্তিগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও রেহাই পাচ্ছে না। সর্বশেষ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়েছে। দিনাজপুর ও পটুয়াখালি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মেস পুড়িয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ। চলতি মাসেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন অস্ত্র প্রদর্শনী করেছে তারা। ক্ষমতার পৌনে চার বছরে ছাত্রলীগের হাতে খুন হয়েছে ৩৩ জন। এদের মধ্যে বড় অংশই নিহত হয়েছে ছাত্রলীগের নিজেদের হানাহানিতে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ছাত্রলীগের এসব কর্মকান্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন কিংবা শিক্ষার্থীদের সমস্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো না। নিছক টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, টাকার ভাগাভাগি, ফাও খাওয়া, ছিনতাই-লুটপাট, একাধিপত্য বজায় রাখা প্রভৃতি নেতিবাচক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলো।
আইন প্রয়োগকারীদের সামনেই
ছাত্রলীগের এসব সশস্ত্র ক্যাডার গোপনে নয়, একেবারে প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করে, পুলিশের সামনে পিস্তল লোড করে। পুলিশের সামনে প্রতিপক্ষকে রামদা দিয়ে কোপায়, পুলিশের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকদের পেটায়- এমন ছবি অহরহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু তাদের গায়ে হাত দেবার ক্ষমতা যেন লোপ করে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ২ অক্টোবরের ঘটনা তার উদাহরণ। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে এমন কোনো সপ্তাহ নেই যে তারা কোনো ঘটনা ঘটায়নি। হয় অন্য সংগঠনের উপর চড়াও হয়েছে কিংবা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়েছে অথবা কোনো শিক্ষক বা ছাত্রের উপর আঘাত করেছে। আর এসব ঘটনায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অহরহ ব্যবহার করছে বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র। সামান্য কোনো ঘটনাতেই হচ্ছে গুলীবর্ষণ। এখন রিভলবার, পিস্তল, কাটা রাইফেল, স্টেনগান, রামদা ছাত্রলীগের হাতে খেলনার মতো ব্যবহৃত হয়। পুলিশের সামনে দিয়ে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কিছুই বলে না। ফলে দিন দিন উৎসাহিত হচ্ছে ক্যাডাররা। অস্ত্রের ব্যবহার এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। গত ২ অক্টোবর শিবিরের উপর ছাত্রলীগের হামলার সময় পুলিশের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলী ছোঁড়ার দৃশ্য সকলকে নতুনভাবে ভাবিয়ে তোলে। পুলিশের সামনে শত শত রাউন্ড গুলী ছোঁড়া হলেও নীরব থাকতে হয়েছে এই আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেদিন ক্যাম্পাসে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলো ক্যাম্পাসের সোহেল খুনের জামিন পাওয়া দু'জন আসামী এবং ডাকাতি মামলার অপর একজন আসামী। অপর একজনকে কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু যে ছাত্র সর্বাধিক সক্রিয় ও উন্মুক্তভাবে সেদিন ক্যাম্পাসে গুলী ছোড়ায় তৎপর ছিলো, সে আবার রাতে গিয়ে মতিহার থানায় দিব্যি পুলিশের হাতে শিবিরের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারের কপি দিয়ে আসে। সেদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যে অস্ত্রের প্রদর্শন করেছে এর আগে এ রকম অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ক্যাম্পাসে আর কখনও ঘটেনি। ছাত্রলীগের অন্তত ১৩ নেতাকর্মীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। এসব পিস্তল দিয়ে পুলিশের সামনেই শিবিরকর্মীদের লক্ষ্য করে অন্ততপক্ষে ৫০ রাউন্ড গুলী ছোড়া হয় এবং বারবার সেগুলোয় গুলী লোড করা হয়। পুলিশের সামনেই এত অস্ত্রের প্রদর্শনের পর তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এসব অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করেনি। বরং পুলিশ বলছে, ‘অস্ত্র প্রদর্শন হয়েছে তারাও জানে। কিন্তু অস্ত্র প্রদর্শন করলে কিছু করার নেই। শুধু অস্ত্রসহ ধরা পড়লেই মামলা করা যাবে। কিন্তু অস্ত্র পাওয়া না গেলে কিংবা কারো বিরুদ্ধে মামলা না হলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।' রাবিতে ছাত্রলীগের অস্ত্র প্রদর্শনের দৃশ্য গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হলেও পুলিশের ‘কিছুই করার নেই'। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ছাত্রলীগ নেতাকে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার (পূর্ব) গোলাম মাহমুদ দেখতে যান। এসময় রাবি ক্যাম্পাসে ২ অক্টোবর পিস্তল উঁচিয়ে গুলী ছোড়ার জন্য তারকা বনে যাওয়া তাকিমকে পুলিশ কর্মকর্তার পাশে দেখা যায়। অথচ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ইতঃপূর্বে সাংবাদিকদের জানানো হয় যে, ‘তাকিমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।'
সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ব্যবহার অতীতে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত ১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে ফাঁকা গুলী করে ছাত্রলীগের ছাত্রসংগঠনের নেতারা। গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে সোহেল নামের এক ছাত্র নিহতও হয়। এছাড়া ২০১০ সালের ৭ আগস্ট দিনের বেলা প্রকাশ্যে গোলাগুলী করার কারণে ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিকে বিলুপ্ত করা হয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ক্যাম্পাসে দল ও গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারে বর্তমানে অসংখ্য আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ করা হয়েছে। কিন্তু এসব অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের সামান্য তৎপরতাও দৃশ্যমান নয়। শুধু রাবিতে নয়, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত ১৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের তান্ডব চালায় শিবির নেতাকর্মীদের উপর। ছাত্রলীগ ক্যাডাররা শেরেবাংলা হল এবং এমকে আলী হলে শিবির কর্মীদের বইপুস্তক তছনছ ও তাদের বিছানাপত্র নামিয়ে ভিসি কার্যালয়ের সামনে অগ্নিসংযোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দুটি গেট বন্ধ করে ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক সশস্ত্র ক্যাডার দফায় দফায় হামলা, শিবির কর্মীদের রুমে তল্লাশি ও কক্ষ ভাংচুর চালায় তারা। এসময় পুলিশ ছিলো নির্বিকার। এর আগে গত ১ অক্টোবর দিনাজপুরে পুলিশের ছত্রছায়ায় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ৩০ জন শিবিরকর্মী আহত হয়। ছাত্রলীগ ছাত্রাবাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা পবিত্র কুরআন-হাদীস ও ইসলামী সাহিত্যে অগ্নিসংযোগ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে ছাত্রলীগ কর্মীদের সহায়তা করেছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।
তদন্ত করেও
গত ৮ জুলাই কলেজ হোস্টেলে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ হোস্টেল থেকে শিবিরকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে সংঘর্ষ বাধায় ছাত্রলীগ। শিবির হোস্টেল ছেড়ে দিলে ছাত্রলীগ ক্যাডার রঞ্জিত সরকারের বাহিনী হোস্টেলের তিনটি ব্লকে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয় অপরূপ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ‘সেমি পাক্কা আসাম' টাইপ এর এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের তিনটি সুবিশাল ভবন। শুধু ইট-কাঠ নয়, এতে পুড়ে গেছে কয়েকশ' শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের মূল্যবান ডকুমেন্ট। পুড়েছে বহু বই-খাতা-নোটের বিপুল সম্ভার। দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই বর্বরোচিত ঘটনার পর তিন তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তদন্তকাজ শেষ পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়ে। অপরাধী সনাক্ত করার পর ক্ষমতাসীন দলের ‘ছাড়পত্র' না পাওয়ায় তা আলোর মুখ দেখেনি জেলা প্রশাসন, এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠন করা তিনটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন। তবে তদন্ত কমিটি-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসন ও এমসি কলেজ প্রশাসনের গঠন করা দুই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্তরা ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হওয়ায় প্রশাসন বিব্রত হয়। বিষয়টি সরকারের উপর মহলকে অবগত করা হলেও কোনো ‘গ্রিন সিগন্যাল' না পাওয়ায় প্রতিবেদনের আর কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে আলোচিত ও আলোড়িত এই ঘটনা শেষ পর্যন্ত ধামাচাপাই পড়ে যায়। আর ছাত্রলীগ পেয়ে যায় দায়মুক্তি।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এভাবে ছাত্রলীগের অপরাধ চাপা দিতে সরকারিভাবে আস্কারা দেয়া হলে দেশে আইনের শাসন বলে কিছুই থাকবেনা। সরকারের নেতা-মন্ত্রী-কর্মকর্তাদের ‘অপরাধী যেই হোক ছাড় দেয়া হবে না'- এই বাণী যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলেই মানুষ ধরে নিচ্ছে। উল্লেখ্য, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠনের কর্মীরা একটি মিছিল বের করলেই পুলিশ তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমনকি গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেবার ক্ষেত্রে খুবই দ্রুত তৎপর হতে দেখা যায়। এসব গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ ছাড়াই ‘নাশকতামূলক কাজের সন্দেহ' পোষণ করা হয়। কোন না কোন অজুহাতে তাদের কারাগারে আটকে রাখা হয়।
আইনের শাসন এটা নয়। আইনের শাসনশেষ করে দেয়া হচ্ছে। মানুষের বড় উদ্বেগ এখন এটাই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads