রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১২

চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবিরের ব্যাপক সংঘর্ষ





 দেশব্যাপী গতকাল জামায়াতের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনের সময় বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের বাধায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে পথচারীসহ জামায়াত-শিবিরের ৪০ নেতাকর্মী আহত হন। এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতেও পুলিশ ও জামায়াত-শিবির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশসহ আহত হয়েছে ৭ জন। এ সময় শিবির কর্মীরা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ও বিআরটিসি বাসসহ ১০টি গাড়ি ভাংচুর করে।অপরদিকে, রাজশাহী ও পাবনায় জামায়াতের বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সিলেটে মিছিল করেছে জামায়াত-শিবির। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় জামায়াত-শিবিরের বিক্ষাভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে ৮৬ জন নেতাকর্মী পুলিশ আটক করেছে বলেও জানা গেছে। 
এদিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকালে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অতর্কিত হামলা ও নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। পৃথক বিবৃতিতে ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং শিবির সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন ও সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল জব্বার পুলিশি হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন। আমাদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :
চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর শিবিরের হামলা, ৩৭ জন আটক : চট্টগ্রাম নগরীতে পুলিশ ও জামায়াত-শিবির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশসহ ৭ জন আহত হয়েছে। এ সময় শিবির কর্মীরা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ও বিআরটিসি বাসসহ ১০টি গাড়ি ভাংচুর করে। তারা বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ভবনেও ভাংচুর চালায়। পরে পুলিশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে শিবির কর্মী সন্দেহে ৩৭ জনকে আটক করে। এ নিয়ে গতকাল প্রায় সারাদিনই নগরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করে। ভাংচুরের প্রতিবাদে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে ষোলোশহর দুই নম্বর গেট এলাকা, প্রবর্তক মোড় এবং চকবাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে এ সংঘর্ষ হয়। প্রহসনের বিচার ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে নগর জামায়াতের মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে উত্তেজিত শিবির কর্মীরা হামলা চালায়। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তারা মিছিলে বাধা দেয়নি। শিবির কর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় আহত পাঁচ পুলিশ হলেন বায়েজিদ থানার এসআই বশির উদ্দিন, কনস্টেবল ইলিয়াস, ফিরোজ ও নুরুল ইসলাম এবং অপর এক কনস্টেবল।
মিছিল চলাকালে পুলিশ কোনো শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে বেলা ১২টার দিকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেইন হোস্টেলে অভিযান শুরু করে। প্রায় আধ ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে পুলিশ ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষ থেকে শিবির কর্মী সন্দেহে আটক করে ৩৭ জনকে।
এদিকে অন্যায়ভাবে ৩৭ নেতাকর্মী গ্রেফতার এবং কলেজ হোস্টেলে ছাত্রলীগের তাণ্ডবলীলা ও ভাংচুরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রশিবির।
রাজধানীতে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ৪০ : রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, রাবার বুলেট ও গুলিতে বেশ কয়েকজন পথচারীসহ জামায়াত-শিবিরের ৪০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৬ জনসহ ১৫ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে বের হওয়া একটি বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি বাধাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত্ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরাও জামায়াত-শিবিরের ওপর হামলায় অংশ নেয় বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় আধঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। ঘটনাস্থল থেকে জামায়াত-শিবিরের ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। যাত্রাবাড়ী ছাড়া রাজধানীর মিরপুর ও বংশাল এলাকায় পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করে দলটি। তবে এসব এলাকায় তেমন কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
রাজশাহীতে পুলিশ-শিবির ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আহত ১০ : রাজশাহীতে আবারও পুলিশের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিবির কর্মীদের ছাত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। পরে পুলিশ নিউমার্কেট ও কাদিরগঞ্জ এলাকায় পথচারীসহ সন্দেহভাজন ১২ শিবিরকর্মীকে আটক করে।
এর আগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা কোর্ট চত্বরে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। একই সঙ্গে মহানগরীর মালোপাড়া, কাদিরগঞ্জ এলাকা থেকে অপর একটি মিছিল বের করে নিউমার্কেট এলাকায় মিছিল শেষ করে সমাবেশের প্রস্তুতি নিলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়।
পাবনায় জামায়াতের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত ১০ : জামায়াত নেতাদের মুক্তি, ট্রাইব্যুনাল বাতিল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে পাবনা জেলা জামায়াত গতকাল শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বেলা পৌনে ২টার দিকে শহরের বড় বাজার এলাকার আতাইকুলা রোড থেকে মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বড় বাজার চাউলপট্টি এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে কর্মীরা বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এতে প্রায় ১০ জন আহত হয়। এ সময় ৬ জন জামায়াত-শিবির কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সিলেটে জামায়াতের বিক্ষোভ : বিভিন্ন দাবিতে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার ভিন্নপথে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে ষড়যন্ত্র করছে। বিরোধী দলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, মিছিল সমাবেশে বাধা দেয়া চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী আচরণ। জনগণ এ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের পতন কামনা করছে। তারা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের নামে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে বিচারের নামে প্রহসন ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নাগরিক ও ভোটের অধিকার হরণ করার পরিণতি শুভ হবে না।
নগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মো. ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহানগর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা সোহেল আহমদের পরিচালনায় মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াত নেতা মো. শাহজাহান আলী, অ্যাডভোকেট জামিল আহমদ রাজু ও মহানগর ছাত্রশিবির সভাপতি আনোয়ারুল ওয়াদুদ টিপু প্রমুখ।
পটুয়াখালী জামায়াতের আমির গ্রেফতার : পটুয়াখালী জেলা জামায়াতের আমির এ কে এম ফখরুদ্দিন খান রাযীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় পটুয়াখালী শহরের কালিকাপুর এলাকা থেকে সদর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
বাগেরহাটে ৫ নেতাকর্মী আটক : বাগেরহাটে গতকাল বিকালে জামায়াতের মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে দশানী এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। আটকরা হলো জেলা শ্রমিক কল্যাণের সভাপতি শেখ জাকির হোসেন, ইমান হাওলাদার, তাহিদুল ইসলাম, আল মামুন ও সুমন।
খুলনায় জামায়াতের বিক্ষোভ : ‘অবৈধ’ ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী খুলনা মহানগরী শাখার উদ্যোগে গতকাল এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য খুলনা মহানগরী আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা মহানগরী নায়েবে আমির অধ্যাপক আবদুল মতিন ও মাস্টার শফিকুল আলম প্রমুখ।
গাজীপুরে জামায়াতের সমাবেশ : আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও গ্রেফতার নেতাদের মুক্তির দাবিতে গতকাল বিকালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে গাজীপুর পৌর জামায়াত। সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. খায়রুল হাসানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি মো. আজহারুল ইসলাম, গাজীপুর পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা শাখাওয়াত হোসাইন, ছাত্রশিবিরের গাজীপুর জেলা সভাপতি আবু নাইম মোলল্গা প্রমুখ।
সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ : বিভিন্ন দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাতক্ষীরা জামায়াত। গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজ মোড়ে এসে শেষ হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads