সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১২

পদ্মা সেতু ঋণ নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য প্রয়োজন

মসিউরের ছুটি নিয়ে ফের বিভ্রান্তি
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের ছুটি নিয়ে আবারো বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এক মাসের ছুটির মেয়াদ শেষে তিনি ১ নভেম্বর অফিসে যোগ দিয়েছেন। অন্য দিকে রোববার অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে মসিউর রহমানের ছুটিতে যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান আগের মতোই আছে বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, এই উপদেষ্টার ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সাথে সরকারের যে সমঝোতা, তার কোনো ব্যত্যয় হয়নি, হবেও না। সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাবেল এম গুয়েরেরো এ মাসেই ঢাকায় আসবেন বলে জানান তিনি। ছুটির ব্যাপারে ইআরডি বক্তব্য দেবে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করলেও ইআরডি সচিব এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার বিষয়ে কথা বলতে তিনি উপযুক্ত ব্যক্তি নন। ড. মসিউর নিজে বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের সাথে কোনো সমঝোতা হলে তিনি দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতে যেতে রাজি আছেন। অন্য দিকে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর ব্যাপারে এখনো এমন কিছু পাওয়া যায়নি যাতে মামলা করা যেতে পারে।
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল এবং শর্তসাপেক্ষে আবার ঋণপ্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি বাংলাদেশে এত আলোচনা হয়েছে যে তা নিয়ে নতুন করে বক্তব্যের অবকাশ নেই। ড. মসিউর ছিলেন এই মেগা প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি ডাইরেক্টর। প্রকল্পের স্বচ্ছতা তদারকি করা ছিল তার দায়িত্ব। কিন্তু বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে দুর্নীতির ব্যাপারে কিছু অভিযোগ নিয়ে তাকে চিঠি দিলে উপদেষ্টা বিষয়টি আমলে নেয়ার পরিবর্তে উল্টো বিশ্বব্যাংককে অভিযুক্ত করে চার পৃষ্ঠার চিঠি লিখে পাঠান। ফলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে তদন্তকালে অর্থ উপদেষ্টার ছুটিতে যাওয়াকেও শর্ত করে দিয়েছে। ড. মসিউর এ বিষয়টি নিয়ে এত কথা বলেছেন, যাতে একটির সাথে আরেকটির মিল অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে তিনি হার্ট অ্যাটাক অথবা ব্রেইন স্ট্রোক থেকে তাকে বাঁচানোর জন্য আকুতিও জানান। এত কিছুর পর তিনি এখন বলছেন সরকারের সাথে সমঝোতা হলে তিনি দীর্ঘমেয়াদে ছুটিতে যাবেন।
পদ্মা সেতু নিয়ে যা হচ্ছে তাতে মনে হয় এ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের পেছনে এক গভীর রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। এর কিছু কিছু বিষয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে । তাতে বলা হয়েছে, এ দুর্নীতির সাথে সরকারের অত্যন্ত ক্ষমতাধরদের কেউ জড়িত রয়েছেন আর এ ক্ষেত্রে এমন কিছু লেনদেন হয়েছে, যা কানাডা অথবা অন্য কোনো দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলের তথ্য-উপাত্তে প্রমাণিত হয়েছে। এখন বিশ্বব্যাংকের তদারকিতে দুর্নীতির তদন্ত হলে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাবে অথচ বিশ্বব্যাংক এটি নিয়ে যে প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে তাতে সরকারের বাকি মেয়াদে এ সেতুর ভৌত কাজের উদ্বোধন হওয়ার সম্ভাবনা কম। এসব বিবেচনা করে এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নকে ঝুলিয়ে রাখার একটি লক্ষ্য অন্তরালে সরকারের থাকতে পারে। অর্থ উপদেষ্টার ছুটির জটিলতার সাথেও এ ধরনের একটি বিষয়ের সম্পর্ক থাকতে পারে।
আমরা মনে করি, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এ সেতুর বাস্তবায়ন কোনো রাজনৈতিক দল বা বিশেষ সরকারের বিষয় নয়। আর কোনো দল বা সরকারবিশেষের সঙ্কীর্ণ স্বার্থের কারণে এ প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের রেয়াতি সহায়তার পরিবর্তে আর কোনো পক্ষের ব্যয়বহুল ঋণে বাস্তবায়ন করা হলে এর দায় বহু বছর ধরে দেশের মানুষকে বহন করতে হবে। আর এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাংকের সাথে কোনো টানাপড়েন তৈরির কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য প্রকল্পে এর প্রভাব পড়লে তা হবে আরো বিপর্যয়কর। তাই পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার কী করতে চায়, বিষয়টি জনগণের সামনে স্পষ্ট করা দরকার। বিশ্বব্যাংক যদি অযৌক্তিক কোনো কারণে বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নেয় সে ক্ষেত্রে দেশের সব মানুষ এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ জানাবে। আমরা আরো মনে করি, দুদকের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠান শুরু থেকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সৎ সার্টিফিকেট দিয়ে আর এখন তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই মামলা করার মতো কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করে এক দিকে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই সঙ্কটে ফেলছে; অন্য দিকে এত বড় একটি মেগা প্রকল্পের অর্থায়নকে এর মাধ্যমে অনিশ্চিত করে তুলছে। এ ক্ষেত্রে দুদককে অবশ্যই পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads