মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১২

ক্ষমতাসীনদের নিতে হবে এর দায়

ইবি শিক্ষক সমাবেশে ছাত্রলীগের হামলা

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সোমবার শিক্ষকদের সমাবেশে ছাত্রলীগের হামলায় ৩০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারারের বিরুদ্ধে ‘নিয়োগ-বাণিজ্য’সহ নানা ধরনের দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে তাদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষকেরা প্রশাসনিক ভবনে পূর্বঘোষিত অবস্থান ধর্মঘট করছিলেন। এর একপর্যায়ে ইবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি মিছিল সেখানে যায় এবং মিছিলকারীরা শিক্ষকদের কিল, ঘুসি, লাথি মারতে থাকে। এতে শিক্ষকদের কয়েকজনের জামা ছিঁড়ে যায় এবং তাদের অনেকে আত্মরক্ষার্থে সরে পড়ার চেষ্টা করেও পারেননি। হামলার কবল থেকে বাঁচেননি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও বিশিষ্ট লেখক-গবেষক প্রফেসর আবুল আহসান চৌধুরীও। আহতদের মধ্যে আরো আছেন ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ। এই নজিরবিহীন হামলার দেড় ঘণ্টা পরে একই তরুণেরা শিক্ষকদের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে তিনজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। পুরো ঘটনার সময়ে সেখানে উপস্থিত পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। নয়া দিগন্তসহ পত্রপত্রিকায় এসব ঘটনার সচিত্র খবর প্রকাশিত হয়েছে।

ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ইবি শিক্ষক সমিতি গতকাল একই স্থানে অবস্থান ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এ ঘটনার ব্যাপারে চ্যান্সেলরের কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জিয়া পরিষদ প্রভৃতি সংগঠন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত ৭-৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে সিন্ডিকেটের নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বোক্ত তিন শীর্ষ পদে আসীন ব্যক্তিদের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ শিক্ষায়তন। তদুপরি দেশের পশ্চিমাঞ্চলে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছিল ইসলামের আলোকে নৈতিকতার আদর্শে চরিত্রবান শিক্ষার্থী গড়ে তোলার লক্ষ্যে। কিন্তু গত দুই দশকে কোনো কোনো সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই প্রতিষ্ঠানকে ক্রমশ সেই মহতী লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করা হয়েছে। সেই সাথে ক্ষমতার রাজনীতির অপস্বার্থে দলীয়করণ ও সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিয়ে এর পরিবেশকে কলুষিত করা হয়েছে চরমভাবে। এরই সর্বশেষ পরিণতি, সোমবার সম্মানিত শিক্ষকদের ওপর ছাত্র নামধারীদের ন্যক্কারজনক হামলা। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই। যে বিষয়টি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, শিক্ষকেরা ইবি প্রশাসনের অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। আর বলাই বাহুল্য, এই প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা বর্তমান সরকারের নিজস্ব বলয়ভুক্ত। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় মূলত ক্ষমতাসীন মহলের ওপরই বর্তায়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads