আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জনগণ কখনো নির্বিঘেœ উৎসব-আনন্দ উপভোগ করতে পারবে এমন সম্ভাবনা আসলে কল্পনা করা যায় না। কোনো না কোনোভাবে জনগণকে বাধাগ্রস্ত হতে হবেই। বর্তমান পর্যায়ে কথা উঠেছে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। ব্রাজিলে দুনিয়া কাঁপানো এই প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে আজ। বিশ্ববাসীর মতো বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন খেলাগুলো দেখার এবং উপভোগ করার জন্য। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে বিশেষ কারণে। কারণটি বিদ্যুতের লোডশেডিং। বিগত কিছুদিন ধরে জনগণ আবারও সীমাহীন লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, রাজধানীসহ সব নগরী-মহানগরীতেও এখন লোডশেডিং হচ্ছে যখন-তখন। কোনো কোনো এলাকায় একনাগাড়ে ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিদ্যুৎ কখন ‘বেড়াতে’ আসবে আর থাকবেইবা কতক্ষণ, সে ব্যাপারে কারো পক্ষে ধারণা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নাভিশ্বাস উঠেছে জনগণের। ওদিকে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদন। ভুক্তভোগীদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদপত্রের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সরকার প্রকৃতপক্ষে জনগণের ওপর নিপীড়ন চালাতে শুরু করেছে; না হলে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে এত বেশি লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। কারণ ক্ষমতাসীনরা অনেক উপলক্ষেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করার দাবি করেছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তো এমনকি ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড করার কথাও শুনিয়েছেন। সরকার একই সঙ্গে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের প্রশংসায়ও পঞ্চমুখ থাকছে। অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা বলেছেন এবং এ কথা অনস্বীকার্যও যে, সরকারের দাবি সত্যের কিছুটা কাছাকাছি হলেও এভাবে সীমা ছাড়ানো লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া পর্যায়ক্রমে সরকার বিদ্যুতের দামও যথেষ্টই বাড়িয়েছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের খাতে বছরে ২২ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেয়ার দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানোর ফলে গ্রাহকদের আটশ-এক হাজার টাকার স্থলে আড়াই-তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরও বিদ্যুৎ সঙ্কট থেকে রেহাই তো মেলেইনি, উপরন্তু বিগত কয়েক মাসে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা মানুষকে দিশেহারা করে ফেলেছে। লোডশেডিংয়ের সঙ্গে পানির কষ্টও যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীবাসীকে প্রচ- পানির কষ্টে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আমরা মনে করি, এমন অবস্থা চলতে পারে না। কারণ বিদ্যুতের সঙ্গে শিল্পের উৎপাদন থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় জড়িত। তারওপর একদিকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর, অন্যদিকে এগিয়ে আসছে পবিত্র মাস ‘রমজান’। একই সঙ্গে সারা দেশে চলছে প্রচ- গরম। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও যে সময়ে সময়ে ৫ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর গালগল্প শুনিয়ে থাকেন, সে বিদ্যুৎ তাহলে যাচ্ছে কোথায়? পর্যালোচনায় দেখা যাবে, বাস্তবে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে দলীয় লোকজনকে ব্যবসা পাইয়ে দেয়ার এবং পকেট ভারি করার ব্যবস্থাই শুধু করা হয়েছে। কারণ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেখানে ব্যয় হয় দেড় থেকে দুই টাকার মতো, সেখানে তেলভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের ব্যয় ১৪ থেকে ১৬ টাকা। এজন্যই একদিকে সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চলেছে, অন্যদিকে দলীয় লোকজনকে বছরে ভর্তুকি দিচ্ছে ২৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়ার পরও সঙ্কটের সমাধান হচ্ছে না। কারণ রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র স্থাপনই করা হয়েছে বাতিল ও পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি দিয়ে। এর ফলে কোনো কেন্দ্রেই চাহিদা বা চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকারকে ভর্তুকির টাকা ঠিকই গুণতে হচ্ছে। কারণ দলীয় লোকজনের স্বার্থে চুক্তিই করা হয়েছে সেভাবে। বলা দরকার, এসব কেন্দ্রের জন্য সরকার ফার্নেস অয়েলসহ জ্বালানি তেলের দামও বাড়িয়েছে। এর ফলেও ব্যাহত হয়েছে শিল্পের উৎপাদন। তাছাড়া জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে পরিবহনের ব্যয়। ওদিকে চাষাবাদের খরচও অনেক বেড়ে গেছে। একই কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য। আমরা মনে করি, দলীয় লোকজনের পকেট ভারি করার জন্য বিপুল অর্থের অপব্যয় করার পরিবর্তে সরকারের উচিত জনগণের কষ্ট ও ভোগান্তিকে প্রাধান্য দেয়া এবং রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত অসম চুক্তি বাতিল করা। সরকারকে একই সঙ্গে গ্যাসভিত্তিক প্রচলিত কেন্দ্রগুলোকে সংস্কার করে সেগুলোর মাধ্যমে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে; না হলে মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি তো বাড়বেই, শিল্পায়নের সঙ্গে সামগ্রিক সমৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হবে এবং নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে না। ওদিকে বিশ্বকাপ ফুটবলের পাশাপাশি এগিয়ে আসছে পবিত্র রমজান। এখনই ব্যবস্থা না নেয়া হলে রোজার মাসে সেহরী, ইফতার ও তারাবিহর সময় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কষ্ট সীমা ছাড়িয়ে যাবে। সুতরাং লোডশেডিংসহ বিদ্যুতের সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই; মানুষ যাতে একটু আনন্দ করতে পারে। যাতে রোজার সময় তাদের কোনো কষ্ট করতে না হয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন