শুক্রবার, ২০ জুন, ২০১৪

পিতার কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী


শিরোনাম দেখে পাঠকরা অবাক হতে পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীনদের বদৌলতে সব মিলিয়ে দেশের অবস্থা এতটাই ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, এর চাইতে ভালো কোনো শিরোনামের কথা কল্পনা করা যাচ্ছে না। এখানে উদ্দেশ্য আসলে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ধারণা দেয়া। ইতিহাস যাদের জানা নেই কিংবা আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সঠিক ইতিহাস’ যারা মুখস্থ ও বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই ‘বঙ্গবন্ধু’র ব্যাপারেও বিস্তর জেনেছেন। না জেনে অবশ্য উপায়ও নেই। কারণ, সবকিছু তিনি ‘একাই’ করে গেছেন! ক্ষমতাসীনদের বিচিত্র এই ‘সঠিক ইতিহাস’কে চ্যালেঞ্জ বা অস্বীকার করার জন্য নয়, এবারের নিবন্ধটি পরিকল্পিত হয়েছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ গণতন্ত্রের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মকা- সম্পর্কে ধারণা দেয়ার উদ্দেশ্যে।
দেখার ও পড়ার পর ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি তাদের চাটুকার ও সমর্থকদেরও ভ্রƒ কুঁচকে উঠতে পারে, কিন্তু প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে প্রথমেই মাত্র ক’দিন আগে পেরিয়ে যাওয়া ১৬ জুনের কথা স্মরণ করতে হবে। কারণ, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এর কারণ তৈরি করে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ এবং স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই সরকারের সমালোচনা এবং বিরোধী রাজনীতিকে সহিংস পন্থায় দমনের ভয়ংকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন শেখ মুজিব। সরকারের বিরোধিতাকে পাকিস্তানী কায়দায় রাষ্ট্র ও স্বাধীনতার বিরোধিতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। এর ফলে গণতান্ত্রিক বিরোধী দলের তো বটেই, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির সুস্থ বিকাশও প্রচ-ভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। সরকারের উদ্যোগে দলীয় সন্ত্রাসকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, লালবাহিনী এবং জাতীয় রক্ষীবাহিনীসহ নানা বাহারী নামে বাহিনীকে বিরোধী দল দমনের জন্য লেলিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব। তিনি নিজে পল্টন ময়দানের জনসভায় বিরোধী দলের ওপর ‘লাল ঘোড়া দাবড়ায়া’ দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। কর্মীদের বলেছেন ‘সুন্দরী কাঠের লাঠি’ হাতে নিতে। সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদারকে হত্যার পর জাতীয় সংসদের ভাষণে তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে জানতে চেয়েছিলেন, ‘কোথায় গেলো সিরাজ সিকদার?’ শেখ মুজিবকে অনুসরণ করেছিলেন তার সহযোগীরাও। আওয়ামী লীগের বি-টিম নামে পরিচিত দল সিপিবি তথা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মণি সিংহ বায়তুল মোকাররমের সমাবেশে মওলানা ভাসানীকে ‘টুকরা টুকরা’ করে ফেলার হুংকার দিয়েছিলেন। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, শেখ মুজিবের মাত্র সাড়ে তিন বছরে জীবন দিয়েছিলেন প্রায় ৩৭ হাজার নেতা-কর্মী।
রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সংবাদপত্রের ওপরও মুজিব সরকার প্রচ- দমনের অভিযান চালিয়েছিল। সরকার শুধু ১৯৬০ সালে স্বৈরশাসক আইয়ুব সরকারের প্রবর্তিত প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্সকে বহালই রাখেনি, ১৯৭৩ সালে সে কালাকানুনটিকে ‘মুদ্রণযন্ত্র ও প্রকাশনা অর্ডিন্যান্স’ নামে প্রবর্তনও করেছিল। এই অধ্যাদেশের আড়াল নিয়ে সরকার একদিকে সরকার বিরোধী সংবাদ প্রকাশনার ওপর নিয়ন্ত্রণ চাপিয়েছে, অন্যদিকে একের পর এক সংবাদপত্রের প্রকাশনা নিষিদ্ধ করেছে। ১৯৭২ সালে মওলানা ভাসানীর ‘হক-কথা’ ছাড়াও নিষিদ্ধ হয়েছিল পাঁচটি সাপ্তাহিকÑ ‘গণশক্তি’, ‘লাল পতাকা’, ‘নয়াযুগ’, মুখপত্র’ ও ‘স্পোকসম্যান’ এবং চট্টগ্রামের দৈনিক ‘দেশবাংলা’। বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুদের মূল দল জাসদের মুখপত্র দৈনিক ‘গণকণ্ঠ’ও নিষিদ্ধ হয়েছিল। এর সম্পাদক কবি আল মাহমুদসহ কয়েকজন সম্পাদককেও গ্রেফতার করেছিল সরকার। কিন্তু এতকিছু করেও বিরোধী রাজনীতিকে নির্মূল করা দূরে থাকুক, দমন করাও সম্ভব হয়নি। সরকারের বিরুদ্ধে নতুন এক হাতিয়ারের যোগান দিয়েছিল ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ। হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল সে দুর্ভিক্ষে। দরকার যখন ছিল সকল দলকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালানো প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব তখন তথাকথিত ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ ডাক দিয়েছিলেন। এর পরিষ্কার উদ্দেশ্য ছিল নিজের একচ্ছত্র নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সরকারের বিরোধিতাকে সমূলে উৎখাত করা।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছা ও নির্দেশে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করা হয়েছিল। পাস হওয়ার আগে পর্যন্ত শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, চতুর্থ সংশোধনী পাস করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাষ্ট্রপতি হয়ে বসেছিলেন। সে ছিল এক বিচিত্র অবস্থা। চতুর্থ সংশোধনীর ফলে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতির স্থলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয় এবং সকল রাজনৈতিক দল বাতিল ও বিলুপ্ত করে দেশে একটি মাত্র দল রাখার বিধান করা হয়। এই সংশোধনীর ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব ২৪ ফেব্রুয়ারি একমাত্র দল বাকশাল গঠন করেন। তার নির্দেশে তাকেই চেয়ারম্যান করে বাকশালের ১১৫ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয় ৬ জুন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং বাকশালের চেয়ারম্যান শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি দৈনিক ‘ইত্তেফাক’, দৈনিক ‘বাংলা’, ‘বাংলাদেশ অবজারভার’ ও ‘বাংলাদেশ টাইমস’ ছাড়া দেশের সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ হয়েছিল ১৬ জুন। এর ফলে শত শত সাংবাদিক ও সংবাদপত্রসেবী বেকার হয়ে পড়েছিলেন। জাতি বঞ্চিত হয়েছিল সঠিক সংবাদ জানার মৌলিক অধিকার থেকে। এ অবস্থায় পরিবর্তন ঘটেছিল ১৯৭৫ নালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর।
গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ হলেও বাকশাল গঠনের পক্ষে বিভিন্ন সময়ে যুক্তি কম দেখানো হয়নি। বলা হয়েছে, ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ শেখ মুজিব নাকি ‘মহৎ উদ্দেশ্য’ নিয়ে ‘জাতীয় প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে বাকশাল গঠন করেছিলেন! অন্যদিকে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস কিন্তু এসব যুক্তিকে সমর্থন করে না। যে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’র যুক্তি দেখানো হয়ে থাকে তার জন্য দায়ী ছিল স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বব্যাপী দুর্নীতি, কালোবাজারি ও চোরাচালানসহ প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও অযোগ্যতা, আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীদের অবাধ লুটপাট, রাজনৈতিক নির্যাতন ও হত্যাকা- এবং সবশেষে ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দরকার যখন ছিল ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নতুন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান কিংবা জরুরি ভিত্তিতে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করা, ক্ষমতাদর্পী শেখ মুজিব তখন উল্টো রাজনৈতিক আন্দোলন ও সরকার বিরোধিতার পথ বন্ধ করে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এ উদ্দেশ্যে শেখ মুজিব প্রথমে ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। তারপর পর্যায়ক্রমে এগিয়েছিলেন বাকশালের একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পথে, যার শিকার হয়েছিল দেশের সংবাদপত্রও।
বলা দরকার, সমগ্র এই প্রক্রিয়া ও কর্মকা-ের একমাত্র উদ্যোক্তা, নির্দেশদাতা, নিয়ন্ত্রক ও লাভবান ব্যক্তি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বময় ক্ষমতাও তার হাতেই কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। ‘জাতীয় প্ল্যাটফর্ম’ বলা হলেও বাকশাল বাস্তবে আওয়ামী লীগেরই নামান্তর মাত্র ছিল (বাকশাল বলতে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ বোঝানো হয়েছিল। লক্ষ্য করা দরকার, ‘আওয়ামী লীগ’ নামটিকে কিন্তু বাদ দেয়া হয়নি!)। অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে এর প্রমাণ পাওয়া যাবে যদি আওয়ামী লীগের ‘বি-টিম’ হিসেবে পরিচিত দুটি দল ন্যাপ (মোজাফফর) এবং সিপিবির শোচনীয় পরিণতির উল্লেখ করা হয়। স্বাধীনতার পর প্রাথমিক দিনগুলো থেকেই দল দুটি সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছে, ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে দল দুটিকে নিয়ে শেখ মুজিব ‘ত্রিদলীয় ঐক্যজোট’ও গঠন করেছিলেন। কিন্তু ১১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্বের অবস্থান পাননি এমনকি ‘কমরেড’ মনি সিংহ এবং অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মতো দলীয় প্রধানরাও। এই দু’জনকেসহ দুই দলের মাত্র ছয়জনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু তাদের ক্রমিক সংখ্যা ছিল ৭০-এর ঘরে। ওদিকে স্বাধীনতা সংগ্রামী জাতীয় নেতা মওলানা ভাসানীসহ অন্য কোনো নেতাকেও বাকশালে যোগ দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। সুতরাং ‘জাতীয় প্ল্যাটফর্ম’ গঠনের যুক্তিকে রাজনৈতিক অসততা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
‘সাময়িক কালের’ জন্য গঠন করা হয়েছিল ধরনের যুক্তিও গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি। কারণ, সে ধরনের কোনো কথা চতুর্থ সংশোধনীর কোথাও কিংবা বাকশালের গঠনতন্ত্রে ছিল না। গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা-উপধারা বরং এ কথাই প্রমাণ করেছে যে, রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে শেখ মুজিবের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য নিয়েই বাকশাল গঠন করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ও কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন এবং সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দেয়া থেকে বাকশাল, রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতিটি বিষয়ে সর্বময় ক্ষমতা ছিল শুধু শেখ মুজিবের। শেখ মুজিব এমন একজন চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন, যাকে নির্বাচিত করার কোনো পন্থা বা বিধানেরই উল্লেখ ছিল না বাকশালের গঠনতন্ত্রে। ছিল না সংবিধানেও। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে একথাই ঘোষণা করা হয়েছিল যে, শেখ মুজিব আজীবন রাষ্ট্রপতি এবং বাকশালের চেয়ারম্যান থাকবেন। শেখ মুজিবের কখনো মৃত্যু ঘটতে পারে কিংবা তার অনুপস্থিতিতে অন্য কাউকে দলের চেয়ারম্যান বা দেশের রাষ্ট্রপতি বানানোর প্রয়োজন দেখা দিতে পারেÑ এমন চিন্তা বা অনুমানও বাকশাল গঠনকালে করা হয়নি। শেখ মুজিব নিজেও এসব নিয়ে ভাবার প্রয়োজন বোধ করেননি। উল্লেখ্য, চতুর্থ সংশোধনী পাস করার পর গণভোটেরও আয়োজন করা হয়নি। অথচ এ ধরনের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নগুলোতে জনমত যাচাই এবং গণভোট অনুষ্ঠান করা গণতন্ত্রে একটি অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। অন্যদিকে বাকশাল গঠন এবং চতুর্থ সংশোধনী পাস করার সময় শেখ মুজিব এ ধরনের গণতন্ত্রসম্মত চিন্তাই করেননি।
এখন শেখ মুজিবুর রহমান নেই, কিন্তু তার সুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই একশ’র কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। দৈনিক আমার দেশ থেকে শুরু করে দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি পর্যন্ত অসংখ্য গণমাধ্যম হাসিনা সরকারের ফ্যাসিস্ট আক্রমণের শিকার হয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম-এর মতো সত্যনিষ্ঠ সংবাদপত্রও সরকারের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এর সম্পাদক জনাব আবুল আসাদকে গ্রেফতার করার নামে দৈনিক সংগ্রাম অফিসে র‌্যাব এমনভাবে অভিযান চালিয়েছিল যার বর্ণনা পড়ে মনে হয়েছে যেন কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর গেরিলা কমান্ডারের বিরুদ্ধে অ্যাডভেঞ্চারে গিয়েছিল র‌্যাব! যেন সেখানে ছিল কোনো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো ব্যাপার! অথচ নিতান্তই ভদ্রলোক জনাব আবুল আসাদ। সংগ্রাম অফিস আর নিজের বাসার বাইরে খুব একটা যাতায়াত করেন না তিনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে সিনিয়র সম্পাদক হিসেবে তাঁকে এমনকি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনও যথেষ্ট সমীহ করেন। অমন একজন প্রবীণ সাংবাদিককেও যখন গভীর রাতে র‌্যাবকে পাঠিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে তখন আর সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল সেটাও ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি নাকি গাড়ি পোড়ানোর ও ভাংচুর করার কর্মকা-ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন! এ এক অবিশ্বাস্য ব্যাপারই বটে! অবাক করেছিলেন বিচারকরাও। সরকারের বানোয়াট মামলায় ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন তারা। ওদিকে আবুল আসাদেরও আগে গ্রেফতার হওয়া আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার ভয়ংকর অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন। রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর দফায় দফায় নিষ্ঠুর অত্যাচার চালানো হয়েছে। সর্বশেষ প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, কারাগারে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন মাহমুদুর রহমান। এভাবে সব মিলিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার শাসনকালের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনায় বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী এমনকি নিজের পিতাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পরিস্থিতি এরই মধ্যে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা যখন বেশি গুরুত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মরহুম পিতার কথা স্মরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করাসহ বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রথম কবর তিনিই দিয়েছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সবদিক থেকে পিতাকেই অনুসরণ করে চলেছেন মাত্র। তিনি সেই সাথে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, বাকশাল আসলে কতটা ভয়ংকর ছিল।
আহমদ আশিকুল হামিদ 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads