এই কলাম লিখছি শুক্রবার দুপুর পৌনে ১ টায়। কিছুক্ষণ আগেই স্বদেশে উড়ে চলে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ৩৮ ঘন্টার এক ঝটিকা সফরে এসেছিলেন সুষমা স্বরাজ। এই সফর নিয়ে আওয়ামী ঘরানার মধ্যে চলেছে তুমুল জল্পনা কল্পনা। তাদের লেখালেখিতে এবং আওয়ামী বান্ধব টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে এমন ভাব দেখানো হচ্ছিলো যেন, সুষমার এই সফরের পরেই বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে দুধ এবং মধুর নহর বয়ে যাবে। কিন্তু আমি প্রথম থেকেই এ ব্যাপারে সন্দিহান ছিলাম। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর সফল হোক, এটা অবশ্যই আমি কামনা করেছি। তাই বলে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১ মাসের মাথায় বাংলাদেশে এসে ভারতীয় মন্ত্রী সব গুলো সমস্যা রাতারাতি সমাধান করে দিয়ে যাবেন সেটি কোন সময়েই সম্ভব হবে বলে মনে করিনি। ১০ বছর কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। এই ১০ বছরে কংগ্রেস সরকার কি রেখে গেছে সেটি তো আগে নতুন বিজেপি সরকারকে বুঝে নিতে হবে। আর তাছাড়া কংগ্রেস সরকার দুইটি মেয়াদে যা যা করে গেছে, তার সব কটির জের টানতে হবে, এমন কথা তো রাজনীতি বা পররাষ্ট্রনীতির খাতায় লেখা নাই। এছাড়াও বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক খুব জটিল। এই জটিলতাকে ভাঙ্গতে গেলে বিজেপিকে বেশ কিছু কাঠখড় পোড়াতে হবে। সেই কাজটি করার সময় এখনও বিজেপি সরকার পায়নি। সেজন্যই আমি সব সময় ধারণা করেছি এবং লিখেছি যে এই সফরটি হবে ‘ঋধসরষরধৎরংধঃরড়হ ঞড়ঁৎ’ অর্থাৎ উভয় দেশের সরকার এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝেও জানাশোনা এবং বোঝাপড়ার সফর।
সুষমা স্বরাজ চলে গেছেন। যাওয়ার আগে এমন কিছুই বলে যাননি। তবে তার সফরের একটি দিক বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশেষ ভাবে এ কারণে যে, আওয়ামী লীগ তথা সরকার চায়নি যে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে বিএনপি প্রধান এবং ১৯ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার সাক্ষাৎ বা বৈঠক হোক। এটি আমাদের কোন মনগড়া কথা নয়। ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের পত্র-পত্রিকায় এই খবরটি এসেছে। ভারতের পত্রিকায় এ কথাও লেখা হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকার সুষমা খালেদা প্রস্তাবিত বৈঠক অনুষ্ঠানের পথে বাগড়া দিচ্ছে। এ সম্পর্কে ভারতের প্রভাবশালী ও বহুল প্রচলিত ইংরেজী দৈনিক ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে’ গত ২৫ জুন বুধবার যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সেই রিপোর্টের অংশবিশেষে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেন সে বিষয়ে তদবির চালাচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। তারা সুষমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার সাক্ষাতের কোন প্রয়োজন নেই। গতকাল ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে’ প্রকাশিত ‘নো ওয়ার্ড ফ্রম খালেদা ইয়েট অন সুষমা মিট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এর লেখক শুভজিৎ রায়। তিনি লিখেছেন, এক বছর আগে প্রথম সফরে বাংলাদেশে আসেন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। সে সময় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। এখন এক বছর পরে বাংলাদেশের পাওয়ার করিডোর বা ক্ষমতার বৃত্তে বড় প্রশ্ন হলো- এবার কি তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন? সুষমা স্বরাজ ও খালেদা জিয়ার মধ্যে বৈঠকের আনুষ্ঠানিক শিডিউল ঘোষণা করেনি নয়া দিল্লি। এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানতে পেরেছে যে, এ দু’নেত্রীর মধ্যে যাতে বৈঠক হয় সে জন্য দু’পক্ষ থেকেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন এবার একেবারে নীরবে কাজ করছে। এবার যাতে বৈঠক হয় সে জন্য খালেদা জিয়ার অফিস খুব আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু ২০১৩ সালের মার্চে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না করার সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যুক্তি তুলে ধরছেন যে, খালেদা জিয়া এখন আর বিরোধীদলীয় নেত্রী নন। ফলে তার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাক্ষাৎ করার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু ভারতে এখন নতুন নেতৃত্ব। নতুন সরকার ক্ষমতায়। তারা চাইছেন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে। এ জন্য ভারতীয় পক্ষ জাতীয় পার্টির নেতা, এইচএম এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য চেষ্টা করছে।”
॥দুই॥
সরকারী বাধা উপেক্ষা করে সুষমা স্বরাজ বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। বেগম জিয়ার টিমের সাথে ভারতীয় টিম ৩০ মিনিট ব্যাপী বৈঠক করে। তারপর বেগম জিয়া এবং সুষমা স্বরাজ ১০ মিনিটব্যাপী একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকের ওপর প্রেস ব্রিফিং করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান এবং বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. শমসের মবিন চৌধুরী। বৈঠক শেষে শমসের মবিন ও মঈন খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত তার পাশের দেশ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখতে চায় কি না, সেটিও তিনি সুষমা স্বরাজকে বলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুরুদ্ধারে মোদি সরকার যেন ভূমিকা রাখে। ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের বিশেষ কোনো দল নয়, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জানিয়েছেন।
এছাড়া ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া সুষমা স্বরাজকে উদ্ধৃত করে যে কথা বলেছেন সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার বক্তব্য অনুযায়ী ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি বলেছেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে এ সরকারের ক্ষমতারোহন সমর্থন করে না ভারত। এজন্যই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘বিরোধী দলকে সহ্য করতে না পারলে গণতন্ত্র টেকে না।’ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সুষমা স্বরাজের এই ৩৮ ঘন্টার ঝটিকা সফরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই যে, এই সফর শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন যৌথ বিবৃতি দেননি। অথবা কোন যৌথ সংবাদ সম্মেলনও করেননি। অন্তত শুক্রবার বেলা ৩ টা পর্যন্ত টেলিভিশনে তাদেরকে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে দেখা গেল না। আরেকটি ব্যাপার উল্লেখ করার মতো। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন সরকার পক্ষের সাথে কথা বলেন তখন সেই বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন খোদ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। কিন্তু ভারতীয় পক্ষে সুষমা স্বরাজকে বক্তব্য দিতে দেখা গেল না। বরং তার তরফ থেকে বক্তব্য দিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র আকবর উদ্দিন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সাথে। তাদের এই বৈঠককে অত্যন্ত ফর্মাল বা আনুষ্ঠানিক মনে হয়েছে। সমগ্র বিষয়ে প্রাণের উষ্ণ ছোঁয়া টের পাওয়া যায়নি। আওয়ামী পন্থী সাংবাদিক কলামিস্ট এবং বুদ্ধিজীবিরা যাই বলুন না কেন, সমগ্র সফরটিকে কেমন যেন নিষ্প্রাণ এবং নিষ্প্রভ মনে হয়েছে।
॥তিন॥
এই সফরের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নি¤œরূপ ঃ-
১. সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ভারত চেষ্টা করে যাবে।
২. ১৩ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের ওপরের বাংলাদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রে ৫ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা প্রবর্তনের বিষয়টি সক্রিয় ভাবে বিবেচনা করা হবে।
৩. পরীক্ষামূলক ভাবে ঢাকা- শিলং- গৌহাটি বাস সার্ভিস প্রবর্তন করা হবে।
৪. ত্রিপুরার পালাটোনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে।
৫. তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির লক্ষ্যে যাতে একটি ঐকমত্যে পৌঁছা যায় সে জন্য ভারত তার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
৬. ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর জন্য বাংলাদেশ তার মাটিকে ব্যবহার করতে দেবে না।
৭. ভারতও বাংলাদেশ থেকে আগত কোন সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দেবে না।
৮. যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক উপযুক্ত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
৯. মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচলের ফ্রিকুয়েন্সী বাড়ানো হবে।
১০. মেঘালয় সীমান্তে আরও ৪০টি সীমান্ত হাট বসানো হবে।
উপরোক্ত ১০ টি কি পয়েন্ট ছিল ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৩৮ ঘন্টা সফরের ফলাফলের সংক্ষিপ্ত সার। একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল খবর দিয়েছে যে, স্থল সীমান্ত চুক্তি এবং তিস্তার পানি বন্টন চুক্তিতে পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী যাতে রাজি হন সে জন্য মোদি সরকার যেন জোর প্রচেষ্টা চালান।
আমি ভেবেছিলাম, সুষমা স্বরাজ সফর শেষে ঢাকা বিমান বন্দর থেকে দিল্লী উড়ে যাচ্ছেন, অন্তত এই দৃশ্যটি টেলিভিশনে দেখানো হবে। অতীতে এই ধরনের দৃশ্য অনেক বার দেখানো হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার বেলা ৪ টা পর্যন্ত একাধিক টিভি চ্যানেল ঘুরলাম। কিন্তু এই দৃশ্য দেখতে পেলাম না। কেন দেখানো হলো না সেটা আমার মাথায় আসছে না। এবারের আলোচনায় পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট মোতাবেক ভারত কানেকটিভিটিও দাবি করেনি। অর্থাৎ ট্রানজিট বা করিডোরকে অন্তত এই সফরে সাইড লাইনে রাখা হয়েছে। অতীতে এই দাবিটিকে খুব ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করা হতো। এবার করিডোরের ঢাকের বাজনার আওয়াজ খুব ক্ষীণ। ভারতের তরফ থেকে বার বার বলা হয়েছে যে মোদির সরকার দল বিশেষের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে না। তারা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে দুই দেশের জনগণ এবং সরকারের সাথে। এই বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই ভারতের সবগুলো রাজনৈতিক দল নয়, শুধুমাত্র কংগ্রেস দলের সাথে সম্পর্ক গড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং কংগ্রেসের সম্পর্ক ৫ দশকের পুরাতন। সেখানে বিজেপির কোন স্থান নাই। সেই পটভূমিতে যখন বলা হয় যে, ভারত দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন এবং সেটি নিবিড় করার ব্যাপারে আগ্রহী তখন সেটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন। এই চিঠিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের দাওয়াত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ঘরানা এই আমন্ত্রণকেও তাদের সাফল্য বলে প্রচার করছে। খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন যে, সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে আসার ফলে বেগম খালেদা জিয়ার মুখে নাকি চুনকালি পড়েছে। এই ধরনের মন্তব্য এতই বালখিল্য, হাস্যকর এবং অজ্ঞতাপূর্ণ যে মন্তব্যকারীকে করুণা ছাড়া আর কিছু করা যায় না। কেউ বেড়াতে এলে গৃহস্বামী খুশি হন। কিন্তু তাই বলে পাশের বাড়ির গৃহস্বামী ঐ প্রথম বাড়ির মেজবানের ওপর অসন্তুষ্ট হবেন কেন ? এগুলো হীনমন্যতা এবং সংকীর্ণ মনের পরিচয় দেয়। আমরা এতক্ষণ যা বললাম সেগুলো কতদূর সঠিক বা বেঠিক, সেটি বোঝা যাবে আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
আসিফ আরসালান
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন