শুক্রবার, ৬ জুন, ২০১৪

‘আগে শৌচাগার পরে মন্দির’


প্রতিবেশী দেশ ভারতকে আমরা অসভ্য বলে আখ্যায়িত করতে চাই না। বিরাট এ দেশটির কেউ এখনও সভ্যতার আলো থেকে দূরে থাকুক, তাও আমাদের কাম্য নয়। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দিক থেকেও দেশটি প্রতিবেশীদের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু একটি বিষয়ে ভারত অনেক পিছিয়ে আছে। সেটি যেমন পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যহীনতার কারণ, তেমনই দৃষ্টিকটূ ও লজ্জাজনক। বিষয়টি খোলাসা করেই বলা যাক। যারা ভারতে দীর্ঘ রেলভ্রমণ করেছেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, সকালে রেললাইনের দু’ধারে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ছেলে-বুড়ো বসে বসে প্রাতঃকর্ম সম্পন্ন করছেন। খোলামেলা অবস্থায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বসে পড়েছেন। রেলগাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকানো বেশ বিব্রতকর। বিশেষত কলকাতা-দিল্লির পথে রেলগাড়িতে যাতায়াতকারীদের এ অভিজ্ঞতা অনেক পুরনো। সমগ্র উত্তর প্রদেশ, বিহার, এমনকি পশ্চিম বাংলায়ও এমন দৃশ্য রেলযাত্রীদের এড়ানোর উপায় নেই। মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, অন্ধ্র সবখানেই সকালবেলা রেলযাত্রীদের এমন প্রাতঃক্রিয়ার দৃশ্য অবলোকন করতেই হয়। এর ফলে শুধু দেশটির পরিবেশই নষ্ট হয় না, মানুষের মধ্যে নানা রোগ-বালাইও ছড়িয়ে পড়ে। বহু মানুষ মারাত্মক মহামারিতেও আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করে।
আশার কথা হচ্ছে, ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দামোদরদাস নির্বাচনের আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, দেশটির ঘরে ঘরে শৌচাগার করে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবার পরপরই তিনি আবারও ঘোষণা করেন, “আগে শৌচাগার পরে মন্দির।” অর্থাৎ উপাসনালয়ের চেয়ে শৌচাগারের গুরুত্বের দিকটা তিনি প্রথমে বিবেচনায় এনেছেন। নিশ্চয়ই এটা একজন জনপ্রিয় নেতার শুভ উদ্যোগ বৈকি। এছাড়া গুজরাটের একজন অতি সাধারণ পরিবারের মানুষ হয়ে তিনি নিজ প্রদেশের মানুষের জীবনযাত্রা গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে, আগে তো মানুষের পবিত্রতা, তারপর না পুজো-অর্চনা। মানুষ যদি পাক-পবিত্রই না থাকে, তাহলে তারা পুজো-অর্চনা কীভাবে সম্পন্ন করবে। ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ মহৎ উদ্যোগকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে। উল্লেখ্য, মোদির সরকার ঘরে ঘরে শৌচাগার তৈরি করে দেবার জন্য দেড় লাখ কোটি রুপি খরচের পরিকল্পনা করেছে। এ কাজ হয়তো অল্প সময়ে এবং এতো অল্প রুপিতে শেষ করা যাবে না। আরও অর্থ ও সময় লাগবে। কিন্তু উদ্যোগটা যে মহৎ এবং সুদূরপ্রসারি, তা না বললেই নয়। মোদি সরকারের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছেন ‘সুলভ শৌচাগার’ এর প্রতিষ্ঠাতা বিন্দেশ্বর পাঠক নামক এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, তাদের কাছে দু’হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার রুপির মধ্যে বিভিন্ন মডেলের শৌচাগার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় পরিচ্ছন্নতা মন্ত্রণালয়কে বিন্দেশ্বর পাঠক এ ব্যাপারে চিঠি দেবার উদ্যোগ নিয়েছেন। কম খরচে সারা দেশের ঘরে ঘরে শৌচাগার নির্মাণে তিনি সহযোগিতা করতে আগ্রহী। এ ব্যাপারে তিনি তরুণদের প্রশিক্ষণও দিতে চান।
পবিত্রতা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ। প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করে কীভাবে পাকসাফ হতে হয় মুসলমানদের তা জানা আছে। অসচেতনতা এবং সীমাবদ্ধতার জন্য ‘শৌচাগার সমস্যা’ আমাদের দেশেও রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরাও উদ্যোগী হতে পারি। এটা করলে অনেক দূষণ ও রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব খুব সহজেই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads