নকশা চূড়ান্তকরণ, নির্মাণ কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু এবং ঋণচুক্তি সম্পন্নের আগেই মেট্রো রেলের পাইলিং কাজ উদ্বোধন করে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হাস্যাস্পদ অবস্থার সৃষ্টি করেছেন বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরানুযায়ী গত বুধবার উত্তরা তৃতীয় পর্বে রীতিমতো মঞ্চ তৈরি করে তিনি উদ্বোধনী কাজ সম্পন্ন করেন। তবে বেরসিক বৈরী আবহাওয়া মঞ্চটি ল-ভ- করে দেয় এবং মন্ত্রীসহ অতিথিরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটাছুটি করতে থাকেন।
উল্লেখ্য যে, শুরু থেকেই মেট্রো রেল তার ডিপো স্থাপনের জন্য জমি সংকটে ভুগছিল। প্রকল্পের জাপানী উপদেষ্টা প্রাথমিকভাবে পল্লবী এলাকাকে তার ডিপো সাইট হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছাড়পত্রের অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ডিপো সাইট উত্তরা তৃতীয় পর্ব এলাকায় স্থানান্তর করেন।
জানা গেছে যে, গত ১১ জুন বুধবার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট তথা মেট্রো রেল প্রকল্পের কাছে ৫৪ একর জমি হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বলা বাহুল্য এর আগে মেট্রো রেল স্থাপনের ব্যাপারে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। এই মেট্রো রেলের দৈর্ঘ্য হবে ২০.৫ কিলোমিটার এবং ২০১১ সালে উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণীত পরিকল্পনা অনুযায়ী এতে ১৬টি স্টেশন থাকবে। এই প্রকল্পে খরচ পড়বে ২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তার মধ্যে জাপান সরকার ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আমরা মনে করি, প্রতিটি কাজেরই একটি নির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকে। এই নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটলে অনিয়ম, অপচয়, দুর্নীতির সম্ভাবনা দেখা দেয়। মেট্রো রেল রাজধানীবাসীর কাম্য, কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকারের কোন কোন মহল এ নিয়ে যে অতিরিক্ত উৎসাহ ও বাড়াবাড়ি প্রদর্শন করছেন তাতে এই প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। বুয়েটের একজন অধ্যাপক ও খ্যাতনামা স্থপতি বলেছেন যে, নকশা প্রণয়নের আগে পাইলিং কাজ শুরু করার কোনো সুযোগ নেই। আমরাও মনে করি অতি উৎসাহী মন্ত্রী ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে শৃঙ্খলা ও দূরদর্শিতার কোনো পরিচয় দেয়নি। সরকারি অর্থে সরকারি কাজ সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করে হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। মন্ত্রী যদি স্বয়ং নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন তা হলে তার পক্ষে তার অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মানুগ করা সম্ভবপর নয়, এর পরিণাম ভয়াবহ হয়। নিকট অতীতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত ও নির্মাণাধীন অনেকগুলো অনিয়ম-দুর্ঘটনার নজির রয়েছে। এর বেশিরভাগই নির্মাণ শৃঙ্খলাকে উপেক্ষা করে ব্যক্তির উচ্ছ্বাসকে প্রাধান্য দেয়া ও দুর্নীতিগ্রস্ততার কারণে ঘটেছে। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের গার্ডার ধসে ১৬ ব্যক্তির মৃত্যু ও দু’শতাধিক ব্যক্তির আহত হবার ঘটনা আমাদের স্মৃতি থেকে এখনো মুছে যায়নি। একইভাবে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের কেলেঙ্কারির কথাও দেশবাসী ভুলে যায়নি। এই কেলেঙ্কারির ধারাবাহিকতায় উদ্বোধনের পরও প্রকল্পটির একটি বিরাট অংশের কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়েছে। কাজের মান নিয়ে প্রশ্নতো রয়েছেই। কয়েকদিন আগে সিলেট স্টেডিয়ামের দেয়াল ভেঙ্গে ৩টি প্রাণহানি আমাদের বিবেককে নাড়া না দিয়ে পারে না। এর সবকিছু নির্মাণ ত্রুটি, অতি উৎসাহ ও অতিমাত্রার লোভের কারণেই হয়েছে।
আমরা আশা করবো সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দেবেন। তারা যত বালখিল্যতা পরিহার করেন ততোই মঙ্গল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন