সোমবার, ৩০ জুন, ২০১৪

অবৈধ তোরণ অপসারণ কি অন্যায়?


পবিত্র রমযানে দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে সংযম ও সদাচার কাক্সিক্ষত বিষয়। যারা দেশ পরিচালনা করেন, উন্নত সমাজ উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করেন, সেই রাজনীতিবিদরা যদি সংযম ও সদাচারের ক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন তাহলে তা জনমনে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু রাজনীতিবিদদের আচরণ যদি উল্টো হয়, তাহলে তো জনগণের দুঃখের মাত্রাই শুধু বাড়বে। অনাকাক্সিক্ষত হলেও উল্টো আচরণই লক্ষ্য করা গেল গত রোববার রাজধানীতে।
পুলিশের বিরুদ্ধে তোরণ অপসারণের অভিযোগ এনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং নগরবাসীর ভোগান্তির মাত্রা বাড়ে। দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মিত তোরণ ভাঙ্গার প্রতিবাদে রোববার বিকাল সোয়া তিনটা থেকে মিরপুরের পল্লবী থেকে গুলিস্তানগামী সড়ক এবং মিরপুর থেকে গাবতলীগামী সড়কগুলোয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার। অবরোধে মিরপুর থেকে গাবতলী ও গুলিস্তান সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানী জুড়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। অবরোধকারীরা জানান, কাফরুল ও ভাষাণটেক থানার ওসি’র নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শ্যাওড়া পাড়া, কাজী পাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর, কচুক্ষেত ও ইব্রাহীমপুরের ১২টি তোরণ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এ কারণে তারা অবরোধ করেন। এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রমযান উপলক্ষে নাগরিকদের যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে পুলিশ তোরণগুলো অপসারণ করেছে। এসব তোরণের কারণে রাজধানীর সড়কগুলোতে অতিরিক্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া এগুলো দুর্ঘটনারও কারণ হয়। পরে মিরপুর জোনের ডিসি এবং ভাষাণটেক ও কাফরুল থানার ওসির অপসারণ দাবি করে অবরোধ তুলে নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
আমরা জানি, যানজটের শহর রাজধানী ঢাকা। তার পরেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপলক্ষে রাজধানীর রাজপথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে আমরা তোরণ নির্মাণের কর্মকা- লক্ষ্য করেছি। এসব তোরণ নির্মাণের ফলে যে নাগরিকদের যাতায়াতে কষ্ট হয় এবং যানজটের মাত্রা বাড়ে সে বিষয়টি আমলে নিতে চায় না আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। তোরণ নির্মাণের প্রোপাগান্ডায় সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের কোন লাভ হয় কিনা তেমন বিশ্লেষণ করার ধৈর্যও বোধ হয় তাদের নেই। বিশ্লেষণে উদ্যোগী হলে তারা বুঝতে পারতেন রাজপথে তোরণ নির্মাণের কারণে জনগণ বিরক্ত হয় এবং তাদের সমর্থনের পাল্লাও হাল্কা হয়। আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে অভিযোগ করার মতো বা ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো অনেক বিষয় আছে। তবে পবিত্র রমযান মাসের প্রতি যুগ যুগ ধরে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সম্মান প্রদর্শন করে আসছে। রমযান মাসে রাজনৈতিক হাঙ্গামা ও হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে তারা বিরত থাকেন। পবিত্র রমযান মাসে ধর্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে তারা নীতি-নৈতিকতা ও সংযমের বাণীও উচ্চারণ করে থাকেন। তাই রমযানের পূর্ব মুহূর্তে আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তোরণ অপসারণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সড়ক অবরোধের তৎপরতাকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। অবৈধ তোরণ অপসারণ করে জনগণের ভোগান্তি কমাতে পুলিশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা যৌক্তিক বলেই বিবেচনা করতে হয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা যা ইচ্ছে তাই করে যাবেন, আর পুলিশ তাতে সমর্থন দেবে এমন তো হতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্রয় পেয়ে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের কেউ বাধা দেবে তা তারা মানসিকভাবে মেনে নিতে পারে না। ফলে তারা অবৈধ তোরণ অপসারণের ন্যায়সঙ্গত কাজকেও পুলিশের অপরাধ বলে বিবেচনা করছেন। তাই তারা এখন মিরপুর জোনের ডিসি এবং ভাষাণটেক ও কাফরুল থানার ওসির অপসারণ চাইছেন। জানি না সরকার অবৈধ তোরণ অপসারণের কারণে এই সব পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণের দাবি মেনে নেবেন কিনা? তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের এমন দাবিতে জনগণ বিস্মিত। পবিত্র রমযানের এই সময়েও যদি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা ও সংযমবোধ সৃষ্টি না হয় তাহলে আর কখন হবে?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads