মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০১৪

গড়ে তোলা হচ্ছে মেধাহীন এক প্রজন্ম


আমরা সাধারণত দেশের রাজনীতি নিয়ে বেশি কথা বলছি। এটি সম্ভবত এই কারণে যে, রাজনীতি অনেক কিছুর নিয়ন্তা। একটি দেশের রাজনৈতিক চরিত্র কী, তার উপর নির্ভর করে- সে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ভবিষ্যত বা কার্যত সবকিছু। এই রাজনীতির যেখানে যতো বেহাল দশা, সেখানে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের ভবিষ্যতও বেহাল হতে বাধ্য। যেমন, আমাদের দেশে গত সাত বছর ধরে এক ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকার বল প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করেছে। ফলে আর কোনো দিকে তারা নজরই দিতে পারেনি। বিরোধী দল দমন করতে গিয়ে তারা আইন, প্রশাসন, পুলিশ কিংবা বিচার বিভাগকে এমনভাবে ব্যবহার করেছে যে, এসব প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব দায়িত্ব ও স্বকীয়তা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। বিরোধী দল দমন করতে গিয়ে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি’র পাশাপাশি নিজেদের ছাত্র সংগঠনগুলোকেও যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এসব সংগঠনও তাদের নীতি-আদর্শ হারিয়ে ফেলেছে। আর সরকারপ্রধানের যথেচ্ছাচারের ফলে সরকারের ভেতরে অন্য মন্ত্রীরাও যথেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে। সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে কিছু বলবার মতো মুখ থাকছে না। এরকম পরিস্থিতিতে সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে চরম অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এ যাত্রায় শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উত্থাপিত হলেও সরকারপ্রধান সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি। এরকম দুর্নীতির হাজারটা প্রমাণ আছে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সাধারণত মনে হয় যে, তিনি এসব দুর্র্নীতিকে উৎসাহিতই করতে চান। কিংবা দুর্নীতিগুলোর সঙ্গে জড়িত তার ঘনিষ্ঠজনরাই কেউ। তাদের প্রতি আদর ও মমতার কারণে তিনি দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপনকারীদেরই বরং সব সময় একহাত নিয়েই ছাড়েন। যেমন, স্বাধীনতা যুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের যে সোনার মেডেল দেয়া হয়েছে তাতে ভরিতে তের আনাই খাদ পাওয়া গেছে। এটি বেশ আগেরই ঘটনা। তা নিয়ে গ্রহণযোগ্য বা দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো ব্যবস্থাই এ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে দেখা গেছে, অনভিজ্ঞ, অপেশাদার প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকের আত্মীয়কে এ কাজ দেয়া হয়। তারা কোটি কোটি টাকা লোপাট করেন। এবং নির্বিঘেœ আছেন। এটা স্বর্ণের চোরাচালান নয় যে, চোরাচালানীকে ধরা যায়নি। সরকারি উদ্যোগে, সরকারি নিয়ন্ত্রণে, সরকারের চিহ্নিত লোকেরাই এ কাজ করেছেন। ফলে তাদের ধরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া মোটেও কঠিন কাজ ছিলো না।
কিন্তু জাপান থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী সরকারিভাবে তৈরী করা মেডেলের সোনা চোরদের পক্ষে এমন সাফাই গাইলেন যে, লজ্জায় গোটা জাতির মাথা হেঁট হয়ে গেলো। তিনি বললেন, আমরা শুধু স্বর্ণ চুরিই দেখলাম, তিনি যে বিদেশীদের সম্মাননা দিলেন সেটা দেখলাম না। গোটা জাতি কী সাংঘাতিক অপরাধ করে ফেলেছে! আর তিনি একবারও বললেন না যে, ঐ স্বর্ণ চোরদের ধরে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থাৎ তার সোনার ছেলেরা না হয় খানিকটা স্বর্ণ চুরিই করেছে তা নিয়ে এতোটা হৈচৈ করতে হবে কেনো। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, এই স্বর্ণ চুরিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে। একই কা- তিনি করেছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে। যে কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা ভ-ুল হয়ে যায়। ঐ সেতু নির্মাণে প্রধান অর্থ ঋণদানকারী সংস্থা ছিলো বিশ্বব্যাংক। তাদের সঙ্গে ছিলো জাইকা ও এডিবি। সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী এই নির্মাণ প্রকল্পের শুরুতেই ৩৪০ কোটি টাকার ওপর ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন বলে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ তোলে। পরে বিশ্বব্যাংক একেবারে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে সরকারের কাছে সে অভিযোগ উত্থাপনও করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, আবুল হোসেন ভালো কাজ করছে বলে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে, তিনি একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। ফলে পরিস্থিতি এই পর্যায়ে গড়ায় যে, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর তাদের অনুসরণ করে সরে যায় জাইকা ও এডিবি।
তারপর কতো যে নাটক হলো, তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। বাংলাদেশের মানুষকে নিতান্তই বেকুব, ঠাউড়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন যে, স্কুলের বাচ্চাদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণ করবেন। যে সেতু নির্মাণের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন, স্কুলের বাচ্চাদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে তা করতে হাজার হাজার বছর লাগার কথা। তারপর বললেন, সরকারি কর্মচারীদের একদিনের বেতন অনুদান নিয়ে গড়ে তুলবেন পদ্মা সেতু। তা দিয়ে কয়েক লাখ টাকা তোলাও হয়েছিলো। কিন্তু এগুলো যে, নিতান্তই বাগাড়ম্বর সেটি গোপন থাকেনি। কোনো কোনো চামু-া প্রধানমন্ত্রীকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। এমনকি শিক্ষাঙ্গনে টাকা তুলতে গিয়ে সে টাকার ভাগ বাটোয়ারার কোন্দলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মী নিহত হয় ছাত্রলীগের অপর দলের হাতে। এসবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং এসব বালখিল্যতায় মানুষজন কেবলই হেসেছে। ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষাঙ্গনে। তাতে রক্ত ঝরেছে, ছাত্র নিহত হয়েছে। এমনই এক হাস্যকর সরকার এখন দেশ পরিচালনা করছে।
শুধু হাস্যকর হলে বোধকরি সমস্যাটা এতো প্রকট হতো না। সেই সঙ্গে এরা ফ্যাসিস্টও। এর পরিণতিতে যা হবার তাই হয়েছে। এখন শাসকগোষ্ঠী স্বার্থের দ্বন্দ্বে পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে। আর যা কিছুই ঘটুক প্রথমেই এই হানাহানির দায় বিরোধী দলের উপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়। ফলে এখন নির্বিঘেœ আওয়ামী লীগ নেতারা আওয়ামী লীগ নেতাদেরই খুন করছে। তারা জানে, পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেবে না। ফলে আরও উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার এবং ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যা- তার দু’টি জলন্ত উদাহরণ। এসব হত্যাকা-ে এক পক্ষ আর এক পক্ষকে খুন করছে বা করাচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। সবাই জানে কেউ তাদের টিকিটির নাগালও পাবে না। সরকারের তরফ থেকে যা করা হয় তা হলো- যে মারা গেছে সে তো গেছেই, যে সন্ত্রাসী জীবিত থাকলো তাকে প্রয়োজন বেশি। বিরোধী দল দমনে সেই হয়তো কাজে লাগবে। ফলে সরকার ঘাতকদের পক্ষই অবলম্বন করে। একই ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ ও ফুলগাজীতে।
রাষ্ট্র যখন এরকম একটি পরিস্থিতিতে তখন, চতুর্দিকেই যে সর্বনাশের ঘণ্টা বাজবে সে বিষয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ থাকে না। খুব নীরবে সে সর্বনাশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে জাতি। সন্ত্রাস হয়তো দূর করা সম্ভব। ঘুষ, দুর্নীতিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু একটি প্রজন্ম যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। ঐ ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রজন্ম যে প্রজন্মের জন্ম দেবে, তাদের কাছ থেকে তেমন কিছু আশা করা যাবে না। একটি জাতি পঙ্গু হতে হতে ধ্বংস হয়ে যাবে। জেনে বা না জেনে, বুঝে বা না বুঝে সে আয়োজনও সম্পন্ন করছে বর্তমান সরকার। আর তা হলো শিক্ষা। সরকার দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে অত্যন্ত সুকৌশলে ধ্বংস করে দেওয়ার খেলায় মেতে উঠেছে। যাতে এই জাতি কোনোদিন আর উঠে দাঁড়াতে না পারে। এ খেলা ভয়ঙ্কর।
এ সরকার ক্ষমতায় এসে শিক্ষার মান বৃদ্ধির ন্যূনতম উদ্যোগও গ্রহণ করেনি। বাহ্বাপ্রবণ সরকার যেভাবে বৃহত্তম মানব পতাকা ও লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে রং ঢং করেছে, গিনেজ বুকে নাম উঠলো কি উঠলো না তা নিয়ে মাতামাতি করেছে, ঠিক একইভাবে শিক্ষার মানের চেয়ে কতো সংখ্যায় পাস  করলো তা নিয়ে মাতামাতি শুরু করেছে। শিক্ষাঙ্গন নির্লজ্জভাবে দলীয়করণ করার ফলে শিক্ষক হিসেবে এসেছে মেধাহীনের দল। সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাদের পিয়ন হওয়ারও যোগ্যতা নেই, তারাই শিক্ষক হিসেবে শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে রত হয়েছে। যার নিজেরই শিক্ষার খবর নেই, সে করছে শিক্ষাদান। ফলে শিক্ষার মান একেবারে তলানীতে পৌঁছে গেছে। এখন ৯০-৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে এসএসসি-এইচএসসি’তে পাস করানো হয়েছে। তা নিয়ে সরকারের গর্ব ও ফুটানীর অন্ত নেই। জিপিএ-৫, গোল্ডেন জিপিএ-৫ এদের সংখ্যাও লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এরাই যখন উচ্চতর শেণীতে ভর্তি পরীক্ষায় বসে তখন ফেল করে যাচ্ছে। অর্থাৎ ঐ পর্যায়ের শিক্ষায় তারা তেমন কিছুই শেখেনি। এখন সরকারের যে মান যায়। আর তাই নিয়ম করার চেষ্টা হচ্ছে যে, ভর্তি পরীক্ষা নয়, এসএসসি পরীক্ষার ফল দেখে এইচএসসি’তে ভর্তি করিয়ে নেয়া হোক।
এর সঙ্গে নতুন উপসর্গ যুক্ত হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস। এবারের এসএসসি পরীক্ষার প্রায় সকল পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। যারা টাকার বিণিময়ে এসব প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেছে, তারা সারা বছর না পড়েও হয়তো সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেছে। আর মেধাবী যারা, যারা বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সত্যিকার শিক্ষা অর্জন করেছে, তারা পড়ছে পিছিয়ে। হয়তো তারা শত মেধা থাকা সত্ত্বেও ভালো কোনো কলেজে ভর্তিই হতে পারবে না। অপচয় হয়ে যাবে মেধার। ঝরে যাবে একটি মেধাবী প্রজন্ম। এই পাসের হার বেশি দেখানোর জন্য সরকার ক্লাসরুম শিক্ষার উপর জোর না দিয়ে, যেনতেনোভাবে পাস করিয়ে দেওয়ার উপর জোর দিয়েছে। সদ্য প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার উত্তরপত্রে বেশি নম্বর দিতে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো পরীক্ষকদের। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়। আগে পরীক্ষার খাতা বণ্টনের সময় পরীক্ষকদের মৌখিকভাবে এ নির্দেশ দেওয়া হতো। এখন লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে লিখিতভাবেই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থী ২৮ নম্বর পেলেও, তাকে পাস নম্বর ৩৩ দিতে বলা হয়। এছাড়া এ+ ও এ গ্রেডসহ বিভিন্ন গ্রেড পাওয়ার ক্ষেত্রে উত্তরপত্র সহানুভুতির সঙ্গে মূল্যায়ন করতে বলা হয়। এতে প্রায় সকল বিষয়ে অধিক নম্বর দেয়ার নির্দেশনা ছিলো। ঢাকা বোর্ডের ইংরেজী বিভাগের একজন পরীক্ষকের নেতৃত্বে ৪২ উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়। একজনও ফেল করেনি। এটা কি করে সম্ভব জানতে চাইলে ঐ পরীক্ষক বলেন, কোনো শিক্ষার্থী ফেল করলে তার জন্য কৈফিয়ত দিতে হয়। নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু সকল শিক্ষার্থীকে ১০০ নম্বর দিলেও কেউ কোনো প্রশ্ন করে না।
অর্থাৎ ক্লাসরুম শিক্ষকদের শিক্ষার মান বাড়ানোর তাগিদের কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু সে কেনো ফেল করলো তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে পরীক্ষকদের। এমন হীরক রাজার দেশ দুনিয়ার কোথাও আছে বলে জানা নেই। অথচ একসময় ভিন্ন নিয়মই ছিলো। কোনো স্কুলের শিক্ষার্থীরা ফেল করলে, ঐ স্কুলকেই তার জন্য জবাবদিহি করতে হতো, পরীক্ষককে নয়। এই যে ঠেলা-ধাক্কায় পাস, এই যে ধারাবাহিক প্রশ্নপত্র ফাঁস, এটা একটি প্রজন্মকে একেবারেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। পরবর্তী প্রজন্মের যারা রাষ্ট্রের হাল ধরবে, তারা হবে শিক্ষাহীন, মেধাহীন একঝাঁক তরুণ। তাদের হাতে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপণœ হতে বাধ্য।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads