মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১২

সোহেল তাজের চিঠি- মন্ত্রিত্ব ছাড়ার ৩৩ মাস পরও কেন বেতন পাচ্ছি



বুধবার, ১৮ এপ্রিল ২০১২,মানব জমিন 
স্
টাফ রিপোর্টার: মন্ত্রিত্ব ছাড়ার ৩৩ মাস পরও কেন বেতন-ভাতা পাচ্ছি- এ প্রশ্ন তুলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো বিব্রত বোধ করছেন তিনি। গাজীপুর-৪ আসনের এই এমপি পরশু এবং গতকাল আলাদা দু’টি চিঠি দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞাকে। দু’টি চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মানবজমিনকে বলেন, দপ্তরবিহীন প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমেদ সোহেল তাজের দু’টি চিঠি পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরেই এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা ১২টায় সোহেল তাজের ব্যক্তিগত সহকারী আবু কাওসার চিঠি দু’টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের দপ্তরে জমা দেন। দুই চিঠির মধ্যে একটিতে প্রতিমন্ত্রীর বেতন ও ভাতা বন্ধ না হওয়ায় বিস্ময় ও উষ্মা প্রকাশ করেন সোহেল তাজ। অপর চিঠিতে পদত্যাগপত্র কেন এখনও কার্যকর করা হয়নি তা জানতে চেয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের পুত্র। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে দেয়া ১৬ই এপ্রিলের লেখা চিঠিতে দপ্তরবিহীন প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ বলেন, ২০০৯ সালের ৩১শে মে বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৮(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর হাতে আমার পদত্যাগপত্র দেই। ১লা জুন আবারও সেই পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠাই। এরপর থেকে অদ্যাবধি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি কোথাও কোন কিছুতে স্বাক্ষর করিনি। যা এরই মধ্যে চিঠি দিয়ে আপনাকে অবহিত করা হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, এরপরও ২০০৯-এর আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এক সঙ্গে পাঠানো প্রতিমন্ত্রীর মাসিক পারিতোষিক ও ভাতাদি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য বা কাম্য হতে পারে না। কারণ, প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে আমার নামে মাসিক বেতন-ভাতার চেক আমি নিজ স্বাক্ষরে গ্রহণ করেছি। যা আপনার জানা আছে। চিঠিতে সোহেল তাজ বলেছেন, যেহেতু আমি পদত্যাগ করেছি, এ জন্য উল্লিখিত সময়ে আমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পাঠানো সব অর্থ ফেরত নেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। ওদিকে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে দেয়া অন্য একটি চিঠিতে সোহেল তাজ বলেন, ২০০৯ সালের ৩১শে মে পদত্যাগ করার পরও এখন পর্যন্ত তা গেজেট নোটিফিকেশন করা হয়নি। যা সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও আমার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ছাড়াও এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি বলেন, আমার পাঠানো পদত্যাগপত্র গেজেট নোটিফিকেশন না করে উল্টো আমার অজান্তে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ২০০৯-এর আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর মাসিক বেতন-ভাতার চেক জমা দেয়া হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালের জুন মাস থেকে কোন কিছুতেই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমার স্বাক্ষর নেই। বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোরও অনুরোধ জানিয়েছেন সোহেল তাজ। এ বিষয়ে জানতে সোহেল তাজকে বার বার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। কারণ সোহেল তাজ বর্তমানে ওয়াশিংটনের উপকণ্ঠে মেরিল্যান্ডে অবস্থান করছেন। এর আগে সোহেল তাজ ২০১০ সালে প্রথম দফায় ৩১শে মে ও পরের দফায় ১লা জুন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে ঘোষণা দেন। পদত্যাগের পরও তিনি ৮ই জুন অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে যোগ দেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত বছরের ২৭শে জানুয়ারি ফিরে আসার পর বিমানবন্দরে তাকে প্রতিমন্ত্রীর প্রটোকল দিলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। তার জন্য নির্ধারিত সরকারি গাড়িতেও চড়েননি তিনি। তবে তার ব্যক্তিগত গাড়ির আগে-পিছে পুলিশের দু’টি গাড়ি ছিল। জাতীয় সংসদের পতাকাবাহী গাড়িটিও অনুসরণ করে তাকে। পরে তিনি তার নির্বাচনী এলাকা গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গেলেও তাকে প্রটোকল দেয়া হয়। কিন্তু তিনি তা গ্রহণেও অস্বীকৃতি জানান। এরপর আবার যুক্তরাষ্ট্রে যান সোহেল তাজ। এমন ঘটনার মধ্যেই ২০১০ সালের ২৪শে আগস্ট সোহেল তাজকে দপ্তরবিহীন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নতুন করে নিয়োগ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় সোহেল তাজের সামনে দপ্তরবিহীন প্রতিমন্ত্রীর পদবি এখনও বহাল আছে। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads