সোমবার, ২ এপ্রিল, ২০১২

র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত ৭ : নরসিংদীতে ৬ জন ও ঢাকায় একজন



স্টাফ রিপোর্টার ও নরসিংদী প্রতিনিধি,আমারদেশ ০৩ এপ্রিল ২০১২ 
ঢাকা ও নরসিংদীতে র্যাবের ক্রসফায়ারে ৭ জন নিহত হয়েছে। রাজধানীর কাফরুলে সোমবার রাতে র্যাবের ক্রসফায়ারে আবদুল মমিন (৩২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। র্যাব বলছে, নিহত মমিন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার পুরো নাম মমিন ওরফে ল্যাংড়া মমিন। অন্যদিকে নিহতের স্ত্রী জোসনা আক্তার পলি জানান, তার স্বামী কাফরুল এলাকায় গার্মেন্টসের জিপারের ব্যবসা করত। তাকে র্যাব সদস্যরা আটক করে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। এদিকে গতকাল দুপুরে নরসিংদীতে র্যাবের ক্রসফায়ারে ৬ জন নিহত হয়েছে। র্যাবের দাবি, নিহতরা ডাকাত দলের সদস্য। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও দুই ডাকাত এবং দু’র্যাব সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা যায়। নিহতদের মধ্যে তাত্ক্ষণিকভাবে তিনজনের নাম জানা গেছে। এরা হলো অমর বিশ্বাস, মনির মিয়া ও শাওন মিয়া। অন্য তিনজনের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
আমাদের নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, বেলা ৩টায় সদর উপজেলার পুরনো মদনগঞ্জ রেললাইনের শালিধা গ্রামের ৫ নম্বর ব্রিজের কাছে র্যাবের সঙ্গে ডাকাত দলের ক্রসফায়ারে ৬ জন নিহত হয়। এ সময় আহত দু’জনসহ তিনজনকে র্যাব গ্রেফতার করে। র্যাব-১১-এর ইনচার্জ লে. কর্নেল আবু হেনা মো. মোস্তফা বিকাল সাড়ে ৪টায় সাংবাদিকদের জানান, এক ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই হওয়ার খবরের ভিত্তিতে র্যাব এ সড়কে সতর্ক অবস্থান নেয়। ওই ব্যবসায়ী তাকে আরও জানায়, মাধবদী থেকে নরসিংদী যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে তার কাছে থাকা ৪০ হাজার টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে পুরনো মদনগঞ্জ রেললাইন দিয়ে নরসিংদীর দিকে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীর দেয়া খবরের ভিত্তিতে ওই এলাকায় টহলরত র্যাব সদস্যরা একটি মাইক্রোবাস দেখে তল্লাশি চালানোর জন্য সেটিকে থামানোর নির্দেশ দেন। এ সময় ছিনতাইকারীরা মাইক্রোবাস না থামিয়ে গাড়ি থেকে র্যাবকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে এবং রাস্তা থেকে মাঠে নেমে পালানোর চেষ্টা করে। র্যাব তখন পাল্টা গুলি চালালে গাড়িচালক ও সামনের আসনে থাকা ডাকাত সদস্য ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
অন্য ডাকাতরা পালানোর চেষ্টা করলে র্যাব সদস্যরা তাদের ঘিরে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা র্যাবের ওপর গুলি চালাতে শুরু করে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালালে ৬ সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় র্যাব তাদের কাছ থেকে তিনটি পিস্তল, একটি কাটা বন্দুক, তিন রাউন্ড গুলি ও নগদ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করে। আহতদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় র্যাবের দু’সদস্য এস আই শহীদ ও সৈনিক সাইফুল আহত হয়েছে বলেও দাবি করেন র্যাব কর্মকর্তা।
এদিকে গোলাগুলির ঘটনায় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিহত ডাকাতদের দেখার জন্য আশপাশ এলাকার শত শত লোক ভিড় জমায়। নরসিংদী পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদউদ্দিনসহ জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। র্যাব ও পুলিশের সতর্ক পাহারায় নিহতদের লাশ উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ঘনটাস্থলে অতিরিক্ত র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে আহত ডাকাত দলের তিন সদস্যদের মধ্যে একজনের নাম অমর বিশ্বাস। তার বাড়ি রায়পুরা উপজেলার পিরিজকান্দিতে। অন্য দু’জন হলো মনির মিয়া। তার বাড়ি সদর উপজেলার পাঁচদোনায়। শাওন মিয়ার বাড়ি সদর উপজেলার বিলাসদী মহল্লায়। বাকি তিনজনের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
নিহত ৬ ডাকাত হলো—মোশারফ হোসেন বাবা আবদুল আউয়াল; আরিফ, বাবা আবুল হোসেন, ভেলানগর, নরসিংদী; সাইফুল মিয়া, মাসুদ আশরাফ, জামাল, কারারচর, শিবপুর নরসিংদী; নাহিদ, বাবা হোসেন মিয়া, দ. বিলাসদী। এদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি নরসিংদী জেলায় এবং দু’জনের বাড়ি নরসিংদী পৌর এলাকার বিলাসদী ও ভেলানগর মহল্লায়।
এদিকে কোন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করা হয়েছে র্যাব তা জানাতে অস্বীকার করায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে র্যাবের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এটি র্যাবের সাজানো নাটক। কোন ব্যাংক থেকে টাকা উঠানো হয়েছে, কার টাকা ছিনতাই হয়েছে এবং কোথায় ছিনতাই হয়েছে র্যাব এ ব্যাপারে যেহেতু মুখ খোলেনি তাই সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। এছাড়া র্যাব ডাকাতদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের কথা বললেও র্যাবের কোনো সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়নি। যে দু’সদস্য আহত হয়েছে তাদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। আহত র্যাব সদস্য এস আই শহীদ সদর হাসপাতালের বেডে শুয়ে সাংবাদিকদের জানান, ডাকাতদের ঝাপটে ধরতে গিয়ে তিনি আহত হয়েছেন। আহত অপর সদস্য সৈনিক সাইফুল কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি আহত শহীদের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেন।
ঘটনার সময় মাঠে কাজ করা প্রত্যক্ষদর্শী এক কৃষক জানান, দুপুর থেকেই এ রাস্তায় অনেক অচেনা লোকজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন তিনি। তাদের গতিবিধিও লক্ষণীয় ছিল বলেও জানান তিনি। হঠাত্ আনুমানিক বেলা ২টা-৩টার দিকে বিকট গুলির শব্দ পান। রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখেন একটি মাইক্রোবাসে তারা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। মাইক্রোবাসে বসে থাকা একজনের মাথার মগজ উড়ে যেতে দেখে তিনি হতবাক হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এরপর শুধু গুলির শব্দই শুনেছেন তিনি। মুখ খোলেনি পুলিশও। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাননি। রাত ৮টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সদর থানা সূত্রে জানা যায়, র্যাব সদস্যরা এ ঘটনায় ৩টি পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে।
রাজধানীতে ক্রসফায়ারে ব্যবসায়ী নিহত : রোববার রাতে কাফরুলে র্যাবের ক্রসফায়ারে আবদুল মমিন নামের এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। কাফরুল থানার এসআই তোফাজ্জল হোসেন জানান, রাত আড়াইটার দিকে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মমিন গুরুতর আহত হলে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের স্ত্রী জোসনা আক্তার পলি জানান, মমিন কাফরুলে এলাকায় গার্মেন্টসের জিপারের ব্যবসা করতেন। ব্যবসার প্রতিপক্ষ হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুবেলের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল এ কারণে তারা ৩-৪ মাস আগে কেরানীগঞ্জের কদমতলী ক্লাব এলাকায় বাসা বদল করে চলে আসে। গত রোববার দুপুর ১টার দিকে বাসার সামনে থেকে ৫-৬ জন সাদা পোশাকধারী লোক তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তার স্বাামীকে আটক করে হাতে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে নিয়ে যায়। পরে আর কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। গতকাল সকালে আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল তাকে ফোনে জানায় মিরপুর ১৩ নম্বর কৃষি ব্যাংকের সামনে তোমার স্বামীর লাশ পড়ে আছে। সেখানে যাওয়ার পর তার লাশ না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে এসে তার স্বামীর লাশ পাই। পলি আরও জানায়, রুবেল র্যাব ৪-এর সোর্স হিসেবেও কাজ করত। সে র্যাবকে দিয়ে মমিনকে সুকৌশলে হত্যা করিয়েছে।
এ বিষয়ে কাফরুল থানার ওসি আবদুল লতিফ জানান, ঘটনাস্থল থেকে র্যাব একটি পিস্তল দুটি গুলি ও কয়েক বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। নিহত ল্যাংড়া মমিন শীর্ষ সন্ত্রাসী তাজের সহযোগী। তার বিরুদ্ধে কাফরুল ও পল্লবী থানায় হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায় ৮টি মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান। ল্যাংড়া মমিনের বাবার নাম আবু সৈয়দ। তার গ্রামের বাড়ি বাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীননগর থানার গাজরীকান্দি এলাকায়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads