মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১২

হায়দার আলীর বাড়িতে চাকরিপ্রার্থীদের ভিড়


বুধবার, ১৮ এপ্রিল ২০১২,মানব জমিন 
সিদ্দিক আলম দয়াল, উত্তরাঞ্চল থেকে: শ্রমিক লীগ নেতা হায়দার আলীর বাড়িতে চাকরিপ্রার্থীদের ভিড়। টাকা নিয়েও চাকরি না পেয়ে তারা দূর-দূরান্ত্ত থেকে আসছেন তার বোনাপাড়ার বাড়িতে। কিন্তু ইতিমধ্যে গায়েব হয়ে গেছেন। কোথায় আছেন কেউ মুখ খুলছেন না। পরিবারের সবার মুখে কুলুপ। গাইবান্ধার বোনারপাড়ায় কর্মরত এ ফায়ারম্যান রেল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হায়দার আলী। তার নাম এখন গাইবান্ধাজুড়ে সবার মুখে মুখে। অবসরে যেতে চলছেন তবুও কোনদিন তাকে অফিস করতে হয়নি। তারপরও নিয়মিত বেতন নিয়েছেন। বছরে একবার খাতায় স্বাক্ষর করে চাকরি জায়েজ করেন।
রেলের পশ্চিমাঞ্চলের শ্রমিক নেতা হায়দার আলী চাকরি দেয়ার নাম করে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। গাইবান্ধার বোনাপাড়ায় আবদুল মতিন নামে এক ব্যক্তি নগদ টাকা দিতে না পারায় জমি লিখে দিয়েছেন তাকে। তারপরও চাকরি জোটেনি। তিনি নাকি টাকা নিয়ে রেল সচিবসহ বড় কর্তাদের সঙ্গে বাটোয়ারা করতেন। কিন্তু রেল শ্রমিক নেতা ইদানীং পিএসএ-র গাড়িতে ধরা পড়া ৭০ লাখ টাকা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
রেল বিভাগের ছোট চাকরি করেও শ্রমিক নেতা হিসেবে কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। লোকে তাকে ট্রেন ফাদার বলে চেনেন। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া রেল বিভাগে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী তিনি। বাপ-দাদার মতো হতে না পারলেও তার চেয়ে কোন অংশে কম নন। কারণ, তিনি ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হলেও ওঠাবসা করেন মন্ত্রী-আমলাদের সঙ্গে। রেল শ্রমিক নেতা হওয়ার সুবাদে চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। ৬ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে একাধিক বাড়ি ও জমি কিনেছেন।
চাকরি দেয়ার নামে অনেকের কাছে টাকা নিয়ে রেলমন্ত্রীর এপিএসের কাছে টাকা দিয়ে এবার ধরা খেয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। তার কথা, তিনি নাকি থাকেন মন্ত্রীদের সঙ্গে, চলেন সরকারি আমলাদের নিয়ে। আর দেন-দরবার করেন। আর দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাজ করেন। তাই সময় হয় না চাকরির হাজিরা দিতে।
জাতীয় নেতা হিসেবে বোনারপাড়ায় পরিচিত তিনি। রেলের পোশাক পরে ডিউটি করার কথা থাকলেও কোন দিন  গায়ে রেলের পোশাক পরতে হয়নি। রেলকর্মী ও কর্মকর্তারা জানান, তার ভয়ে রেল ভবনসহ রেলওয়ে পশ্চিম জোন ও পশ্চিমাঞ্চল চলে তার নিয়ন্ত্রণে। তার কথায় ওঠে বসেন তার বড় কর্তারা। এ কারণে পশ্চিমাঞ্চলের শতাধিক লোকের কাছে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজে অর্ধেক আর অর্ধেক রেলমন্ত্রীর এপিএসের হাতে তুলে দিয়েছেন। ভেবেছিলেন এবার পার পেয়ে যাবেন। ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হলেও শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বলে দাবি করে তিনি বলেন, আমার জনপ্রিয়তার কারণে আমি ব্যস্ত থাকি। মিটিং করতে ঢাকা, চিটাগাং দৌড়াদৌড়ি করায় অন্য কাজে সময় পাই না। তার জনপ্রিয়তার কারণে নাকি তিনি রেলওয়ে সমবায় সমিতির ডিরেক্টর হয়েছেন। তাই বোনারপাড়ায় তাকে কখনও চাকরি করতে হয় না।
এরশাদের আমলে জাপা নেতা হিসেবে তেল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অপবাদ নিয়ে তিনি প্রথমে লাখপতি হন। তারপর সরকারি দলের শ্রমিকদের নেতা বনে যান। অপরদিকে বিগত জোট সরকারের সময় মাসে দুই একবার অফিস করে হাজিরা খাতায় সই করলেও এখন আর তা-ও করেন না।
ঢাকা, চিটাগাং, মন্ত্রী, রেলভবন আর দেন-দরবার করতেই সময় পার। তাই এখন পুরোপুরি দালালিতে নামেন। মানুষকে রেল বিভাগে চাকরি দেয়ার নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঢাকায় যান। এসব করে তিনি শ্বশুরবাড়ি সাঘাটার ধনারুহা গ্রামে স্ত্রীর নামে জমি কিনেছেন ৯০ বিঘা। এ জমির দাম অন্তত ২ কোটি টাকা। ছোট চাকরি করে এত টাকার মালিক হওয়ার নেপথ্যে কাহিনী এখন মানুষের মুখে মুখে। রেলমন্ত্রীর পিএসের সঙ্গে তার সখ্যের কারণে হায়দার আলী রেল পশ্চিমাঞ্চল থেকে টাকা নিয়ে যান তার কাছে। এই টাকা এপিএসকে দেন। কিন্তু এপিএসের গাড়িতে ৭০ লাখ টাকা ধরা পড়ায় বেকায়দায় পড়েন হায়দার আলী। তবে এই ৭০ লাখ টাকা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বলে তার নাম বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হওয়ায় পুলিশি ঝামেলা এড়াতে গাইবান্ধায় পালিয়ে এসেছেন। তিনি গাঢাকা দিয়ে আছেন। আর ম্যানেজ করছেন ওমুক আর তমুককে। গতকাল তাকে খোঁজ করতেই তিনি ছুটে আসেন মানবজমিন-এর উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধির কাছে। হাত ধরে বলেন, বিষয়টি ম্যানেজ হচ্ছে দলীয়ভাবে। তাই এসব নিয়ে লিখলে হয়তো আমি বিপদে পড়তে পারি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে হায়দার আলী সব অস্বীকার করে বলেন, আমি অফিস করতে পারি না মিটিংয়ের জন্য। ঢাকা, চিটাগাং দৌড়াদৌড়ি করতেই সময় পার হয়ে যায়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads