শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১২

হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ নিরপেক্ষ তদন্ত চায়



সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, সামপ্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশে বিরোধী নেতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের গুম হওয়ার ঘটনা ভয়ঙ্কভাবে বেড়ে গেছে।
গুমের হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এইচআরডব্লিউ বলেছে, সামপ্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশে বিরোধী নেতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের গুম হওয়ার বেড়ে গেছে। ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধানও এমনই একটি ঘটনা। এর আগে গত ৪ এপ্রিল শ্রমিক নেতা আমিনুল হকের গুম হওয়ার ঘটনায়ও উদ্বেগ জানিয়েছিল এইচআরডব্লিউ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধু ২০১২ সালেই অন্তত ২২ জন এভাবে গুম হয়েছেন। এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেন, এই যে ক্রমবর্ধমান গুম হওয়ার ঘটনা, বিশেষ করে বিরোধীদলীয় সদস্যদের উধাও হয়ে যাওয়া—এর গ্রহণযোগ্য ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সরকার এ পর্যন্ত গুম হওয়ার ঘটনাগুলোর তদন্তে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এ ধরনের ঘটনা বন্ধেরও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব অপহরণ এবং হত্যার মত ঘটনায় জড়িত বলে হিউম্যান রাইটস এর আগে তাদের তদন্তে দেখতে পেয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, যারা নিখোঁজ হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের সর্বশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতেই দেখা গেছে। এতে করে এমন আশংকাই জোরালো হচ্ছে যে নিরাপত্তা বাহিনী আগের পথ ছেড়ে নির্যাতনের একটা ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে।
এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে তিনি এও বলেছেন যে, সরকারের বিরুদ্ধে ‘আন্দোলনের ইস্যু’ তৈরি করতে দলের নেত্রীর নির্দেশেই লুকিয়ে আছেন ইলিয়াস। শেখ হাসিনার সরকার বহুবার প্রুতিশ্রুতি দিয়েছে যে, নির্যাতনের সংস্কৃতি বন্ধ করে সুবিচার, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। কিন্তু এরপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের সব অভিযোগই সরকার ক্রমাগতভাবে অস্বীকার বা উপেক্ষা করে আসছে। আর এ কারণেই জরুরি ভিত্তিতে গুম হওয়ার সব ঘটনার স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন— বলেন অ্যাডামস। বিরোধী দলের হরতালের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অত্যধিক শক্তিপ্রয়োগের ঘটনাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এইচআরডব্লিউ।
২১ এপ্রিল ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথে হরতাল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ দু’জন নিহত ও শতাধিক আহতও হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এ মানবাধিকার সংস্থা।
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে গুম হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক সাংসদ ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ইলিয়াস আলী। পুলিশ ওই রাতে তার গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। ইলিয়াসের সঙ্গে গুম হয়েছেন তার গাড়ির চালক আনসারও। ওই ঘটনায় ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর ১৮ এপ্রিল বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
এরপর গত ১১ দিনে র্যাব-পুলিশ পুবাইল, সিলেট, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও এই বিএনপি নেতার সন্ধান পায়নি। সরকারের অধীনস্থ এজেন্সিই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে—এমন অভিযোগ এনে গত রোববার থেকে টানা তিন দিন সারাদেশে হরতাল করেছে বিএনপি। হরতালে ইলিয়াস আলীর এলাকা বিশ্বনাথে ৩ জন প্রতিবাদকারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করা হয়েছে সারাদেশে। আজ শনিবারের মধ্যে তাকে পাওয়া না গেলে নতুন করে টানা হরতালের পরিকল্পনাও রয়েছে বিরোধী দলের।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads