বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১২

যুবলীগের তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ পরিবারতন্ত্র ও লুটপাটে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তলানিতে



নিজস্ব প্রতিবেদক
ৰমতাসীন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা দিনদিন তলানিতে গিয়ে ঠেকছে মনৱব্য করে দলটির সহযোগী সংগঠন যুবলীগের তৃণমূল নেতারা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের অধিকাংশ এমপি যেভাবে পরিবারতন্ত্র ও লুটপাট চালাচ্ছেন তাতে দল তিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আগামী নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হলে তার দায়ভার এসব ওয়ানটাইম এমপিদেরই নিতে হবে।’ 
গতকাল রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যুবলীগের তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধি সভায় তারা এ কথা বলেন। সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সাথে মামলার রায় বাংলাদেশের প েআসায় আগামী ১৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘গণসংবর্ধনা’ দেয়ার সিদ্ধানৱ নিয়েছে যুবলীগ। ওই অনুষ্ঠান সফল করতেই বৃহস্পতিবার এ প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মতায় আছি, ভবিষ্যতেও হয়তো মতায় আসব। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এবারই শেষ সময়। এবার তাদের বিচার করা সম্ভব না হলে আর কখনোই তা হবে না।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিশাল অদৃশ্য শক্তি রয়েছে। তাদের অঢেল অর্থ রয়েছে। দেশে-বিদেশে যুদ্ধাপরাধীদের দোসর আছে। ‘ইউরোপ, আমেরিকাসহ মুসলিম দেশগুলো থেকে আমার কাছে প্রতিদিন ইমেইল আসে, তারা কখন কোথায় কোন দেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে তা জানা যায়। তাই কী পেলাম আর কী পেলাম না তার হিসাব না করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে যুবকদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তাদের অগ্রাধিকার না দিলে আওয়ামী লীগ বার্ধক্যে পরিণত হবে।’
তিনি বলেন, নতুন সমাজকে রাজনীতি, সংসদ ও মন্ত্রিসভায় আনতে হবে। রাজনৈতিক দলকে নতুন চেহারার মাধ্যমে রিনিউ করতে হবে। আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে তরুণদের জাতীয় নেতৃত্ব ও সংসদে দেখা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তৃণমূল নেতাদের ৰোভ : দীর্ঘ দিন বর্ধিতসভা না হওয়ায় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সাম্পাদকের কাছে ােভ প্রকাশ করেন যুবলীগের তৃণমূল নেতারা। পাশাপাশি তারা ‘অসহযোগিতার’ অভিযোগ আনেন স্থানীয় এমপিদের বিরুদ্ধে। তারা বলেন, শিগগিরই বর্ধিতসভা ডেকে স্থানীয় নেতাদের কথা না শুনলে দল তিগ্রসৱ হবে। তখন সুবিধাবাদীদেরও পাশে পাওয়া যাবে না।
গত তিন বছরে বর্ধিতসভা না হওয়ায় ােভ প্রকাশ করে বাগেরহাট জেলা যুবলীগ সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা তিন বছর ধরে অবহেলিত। আওয়ামী লীগ আমাদের ঘৃণা করে। ওয়ানটাইম মার্কা এমপিদের কারণে দলের জনপ্রিয়তা দিনদিন তলানিতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ এমপি যেভাবে পরিবারতন্ত্র ও লুটপাট চালাচ্ছে তাতে দল তিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আগামী নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হলে তার দায়ভার এসব ওয়ানটাইম এমপিদেরই নিতে হবে।’
যুবলীগের চাঁদপুর জেলা সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, দল মতায় আসার পর আমাদের আর ডাকা হয় না। অন্য কিছু না হোক, প্রাপ্য সম্মানটুকু না দিলে ভবিষ্যতে কেউ রাজনীতি করতে চাইবে না।
আওয়ামী লীগ মতায় গেলেও সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম।
গাজীপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোন করলে তারা ধরেন না।
যশোর জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ােভের সাথে বলেন, যুবলীগের শেকড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এটা ঠিক করুন। বিরোধী দলে থাকতে আমরা ইজ্জত পেতাম। আমাদের সেই সম্মান ফিরিয়ে দিন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে অভিযোগ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির। তৃণমূল নেতাদের সুখ-দুঃখের কথা শোনার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যান্য জেলার যুবলীগ নেতারাও কেন্দ্রীয় নেতা এবং স্থানীয় এমপিদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন। উপস্থিত নেতাকর্মীরা করতালির মাধ্যমে এ সময় তাদের বক্তব্যে সমর্থন জানান।
যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সরকারপ্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম এবং বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা বক্তব্য দেন। বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কয়েক শ’ প্রতিনিধি এতে উপস্থিত ছিলেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads